আর নয় বিরক্তি – শুধুই অনুভব

এবার নিশ্চয়ই আপনারা হাফ ছেড়ে বাচলেন, বিরক্তি নামের অভিব্যক্তি আর অবলোকন করতে হবে না। আমি যদি ও সবসময় ই আশাবাদী, কিন্তু বাস্তবতা প্রায়শই আমাদের, বিশেষ করে আমাকে ঐ রাস্তায়ই নিয়ে আসে। এখনকার দিনে যান্ত্রিক পদ্ধতি চালু হওয়ার পরে খুব কমই ” কাধে জোয়াল, মুখে জাল বাধা, গরু জোড়া ” কে দেখা যায়। বাস্তবে দেখা না গেলে ও, আয়না তে দাড়ালে কেন জানি ঐ দৃশ্যটাই ভেসে ওঠে।

মুখ বাধা, তাই ইচ্ছে হলে ও বলা যাবে না, খিদে পেলে ও খাওয়া যাবে না। কাধে যখন জোয়াল, তখন নিজের ইচ্ছেয় তো চলা যাবে না। শক্তিটুকু নিংড়ে নেবার দায়িত্ব কৃ্ষকের। যে গরু চাষ করার কাজে লাগে তার কিন্তু অনেক দাম, তথাপি সে যখন জোয়াল কাধে পায়, তখন চালিকাশক্তি তার পিঠে যে ছড়ি ঘোরায়, তার কাছে। আসল ধনী তো সে, যার হাতে ছড়ি ঘোরানোর অধিকার।

অবলা প্রানীদের অধিকার থাকতে নেই। সমাজবিজ্ঞানীরা বলবেন, বন্যরা বনে সুন্দর, কেবল শিশুরাই মাতৃক্রোড়ে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমরা আজ যেখানে বাস করছি, তার চেয়ে বনের আইন ও অনেক যুক্তিসঙ্গত। বনের কোন প্রানী আজ পর্যন্ত পচা মাংস খেয়ে মৃত্যুবরন করেছে বলে শুনি নি, কিন্তু জীবন রক্ষার জন্য প্রস্তুত ” প্যারাসিটামল সিরাপ” খেয়ে সভ্যতম প্রানী মানুষ যে মারা গেছে, তা তো আর গুজব নয়।

অনেক তদন্ত হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে। তথ্য যা পাওয়া যাবে (যদি পাওয়া যায়) তার বিবর্তন, পরিবর্তন, পরিমার্জন ও সংশোধন শেষে আমরা যা জানবো, তাকে কেবল ” মূষিকের পর্বত প্রসব ” এর সাথে ই তুলনা করা যাবে। এ বিষয়ের অবতারনা কেন করলাম, এ কথা যদি কেউ জিজ্ঞেস করেন তাহলে আমার উত্তর একটাই – আমরা আর কতো ধনী হতে চাই, সেটা কি আমরা নিজেরা জানি?

একজন ঔষধ প্রস্তুতকারী সংস্থার মালিক ধনী হতে চান, তার চাওয়ার মধ্যে ও আমরা কোন দোষ দেখি না। কিন্তু চলুন দেখি তার আকাঙ্ক্ষায় সৃষ্টির সেরা জীবের জন্য সৃষ্ট সামাজিক দায়বদ্ধতার সামান্য ছিটেফোটা ও আছে কিনা? আমি হয়তো এতটা খারাপ ভাববো না যে তিনি সামান্য লাভের জন্য ঔষধে ভেজাল মেশাতে চাইবেন, কারন ফলাফল টা এসব ক্ষেত্রে হয় অত্যাবশম্ভাবী। সুতরাং একে আমরা যথাযথ তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত SABOTAGE (বস্তুর বিরুদ্ধে আক্রমন) বলে ধরে নিতে পারি, যদিও যথাযথ তথ্য কোনদিন ই পাবো কিনা জানি না।

প্রাসঙ্গিক কথাটা হলো, ঔষধে ভেজাল মেশালে ই যে তা দূষিত হবে এমন নয় বরং সমুহ সম্ভাবনা থেকে যায়, মেয়াদোত্তীর্ন কাচামাল ব্যবহার করার প্রসঙ্গ। এটা আমাদের সমাজে নুতন নয়। গ্রাফিক্স, প্রিন্টিং এবং মেধার অপ-ব্যবহারের মাধ্যমে মেয়াদোত্তীর্নতা কে পুনঃমেয়াদে বহাল করানো আমাদের কাছে (যারা অতিস্বত্তর ধনী হতে চান) ডিজিটাল যুগের আশীর্বাদ বলেই প্রতীয়মান। মুল সমস্যা (যদি আপনি এটাকে সমস্যা বলে মনে করেন) হলো, সবাই অতিস্বত্তর ধনী হতে চাই। যার এটা পরীক্ষা করার কথা তিনি এটা না করার জন্য ধনী হবেন। যার এটা না কেনার জন্য পরামর্শ দেবার কথা তিনি এই পরামর্শ না দিলে ধনী হবেন। যার বিবেক এখনো কাজ করছে তিনি এদের দেখে বিবেকের ঘরে তালা দিলে ধনী হবেন।

অনুগ্রহ করে ভুল বুঝবেন না, আমার এই লেখা ধনী হবার (101 ways to become rich) কোন গাইড বই নয়। আত্মোপলব্ধির জন্য লিখলাম, নিজের বিবেক কে শাসানোর জন্য লিখলাম মাত্র, নিজে কে ই বলছি ” বল তুই আর কত ধনী হতে চাস? “

৮৪৯ বার দেখা হয়েছে

৯ টি মন্তব্য : “আর নয় বিরক্তি – শুধুই অনুভব”

মওন্তব্য করুন : মেহেদী হাসান (১৯৯৬-২০০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।