শুভ জন্মদিন ভাইয়া……

ক্লাস সেভেন’এ প্রথম সাত দিনের মধ্যেই একটা পরীক্ষা হতো।সম্ভবত ওইটাকে সার্ভে টেস্ট বলতো।ওই পরীক্ষায় কোনমতে সব সাবজেক্টে পাস করাই ছিলো অনেক বড় ব্যপার।আমাদের সার্ভে টেস্টের পর একাডেমী ব্লকের টয়লেটে ক্লাস এইটের আরেফিন ভাই আমাকে ডেকে বলতেসে তোমার রেজাল্ট কি।আমি তো খুশিমনে বললাম ভাইয়া সব সাবজেক্টে পাস করছি 😀 ।আরেফিন ভাই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকায় বললো তুমি কামরুল ভাইয়ের ভাই না? আমি বললাম জী ভাইয়া। তখন ভাইয়া আমাকে বললো তুমিতো দেখি কামরুল ভাইয়ের ইজ্জত ডুবাবা।উনি তো কলেজে কখনো সেকেন্ড হয় নাই…(এই আরেফিন ভাইয়ের কাছে আমি অনেক কৃতজ্ঞ ::salute:: ,আমার পরবর্তি সব ভাল রেজাল্টের পেছনে উনার এই তিরষ্কার এর বিরাট একটা অবদান আছে)…

এই হলো আমার ভাই…তপু (ব্লগের সবাই চেনে কামরুল তপু নামে )।ও আমার ভাই , আমার বন্ধু ,আমার পিচ্চি কালের সব খেলার সঙ্গী,আমার সবসময়ের আইডল।ও হচ্ছে আমার দেখা সবচাইতে ভালো ছেলে।আম্মু যখন ওকে একটু বেশী আদর করে (যদিও আমার মা এইটা স্বীকার করে না…)তখন কেন যেন হিংসা হয় না,বরং মনে হয় ওকে যদি বেশি আদর না করে তাহলে কাকে করবে?ওইতো এইটার যোগ্য 🙂 ।

তবে ওর মতো হাই ফিগার ভাই থাকার অনেক ঝামেলা যেইটা আমি আর বড় ভাইয়া হাড়ে হাড়ে টের পাই 🙁 ।আমার ভাই কখনো সেকেন্ড হয় নাই,ফার্স্ট স্ট্যান্ড করা,বুয়েটের…তো এইসব দেখে আশেপাশের সবাই যখন বলে পান্থ কনক ভালো কিন্তু…তপুর মতন না…মেজাজটা যে কেমন লাগে তখন…আরে ভাই সবাই কি তপু হইতে পারবে???আবার অনেক গর্বও হয়…আমার এমন একটা ভাই আছে……

সবচেয়ে মজার ব্যপার হলো আমার ক্যাডেট কলেজের গাইড হলো আমার ভাইয়া।অন্য বন্ধুরা যখন গাইডের অত্যাচারে জর্জরিত আমি তখন মহাআনন্দে আমার গাইডের রুমে বসে ওর সাথে আড্ডা মারি।গাইড হিসাবে ভাইয়া আমাকে একটা মাত্র জিনিস শিখানোর ট্রাই করসিলো।একদম প্রথম দিনে ভাইয়া বলতেছে “কনক তুই সব সময় সিঙ্গেল লাইনে হাঁটবি…মানে রাস্তার একদম সাইড দিয়ে আর কি”. .আমি বললাম তোমার কথা মতন??আমি মাঝখান দিয়ে হাঁটবো (তখনো বুঝি নাই…কোন দুনিয়ায় আসছি…)…তখন ভাইয়া বলতেছে ঠিক আছে ভাইয়া ,তোর যেভাবে ইচ্ছা সেইভাবেই করিস।।

কলেজের প্রথম রাতে ঘুমাতে পারি নাই।শক্ত বালিশে ঘুম আসে না আমার ।ভাইয়াকে বললাম ও তখন ওর নিজের তুলতুলে নরম বালিশটা আমাকে দিয়ে আমার ইটের মতন শক্ত বালিশটা নিজের জন্যে নিয়ে গেলো।শক্ত বালিশে ভাইয়াওতো ঘুমাতে পারে না এইটা ভাবার মতন বুদ্ধি তখনও হয় নি আমার।
নভিসেস ড্রিল এর অত্যাচার শেষ হবার পর প্রথম যেদিন গেইমস করলাম কি যে আনন্দ তা বোঝানোর মতন না।কাদা ভর্তি মাঠে ৫০ জন মিলে একটা বল লাথি মারার মতন এতো আনন্দ আর কখনো পাই নি।কিন্তু সমস্যা হলো গেইমসের পরে যখন আবিষ্কার করলাম আমাদের সবার সাদা পিটি স্যু চকলেট কালার হয়ে গেছে।আমি মন খারাপ করে ভাইয়ার কাছে গেলাম…ভাইয়া বলতেসে ঠিক আছে ভাইয়া তুই আমার কাছে রেখে যা আমি ধুয়ে দিবো।আমার ভাইয়াটা তখন আমার পিটি সু ধুয়ে ,হোয়াইট চক দিয়ে ঘষে একবারে চকচকে বানিয়ে আমার কাছে দিয়ে গেলো।খুব ছোটখাট এই ঘটনাগুলো কেন যেন খুব বেশি মনে পরে।

ভাইয়াকে নিয়ে আমার গল্পের শেষ নাই।বাচ্চা কাল থেকে একসাথে বড় হইছি,খেলছি,মারামারি করছি …কত কত আনন্দের স্মৃতি…এখনো পিঠাপিঠি পিচ্চি দুইটা ভাই দেখলে আমার খুব হিংসা হয়।নিজের ফেলে আসা আনন্দের সময় গুলো খুব ফিরে পেতে ইচ্ছে করে।

আজ আমার এই অসম্ভব প্রিয় মানুষটার জন্মদিন (জাপানে ১৪ তারিখ হয়ে গেছে)…তাই এই দিনে আমার ভাইয়াটাকে জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
শুভ জন্মদিন ভাইয়া…।।গিফট হিসাবে তোমার সবচেয় প্রিয় মানুষটাকে (আমার মা) অনেক আগেই জাপানে পাঠিয়ে দিয়েছি।প্রায় ৮ বছর পর আম্মুর সাথে নিজের জন্মদিন করা নিশ্চয়ই অনেক বড় গিফট তাই না ভাইয়া??

ভালোবাসার মানুষকে হয়তো অনেকবার বলা হয় ভালোবাসি,ভালোবাসি কিন্তু নিজের এতো প্রিয় ভাইয়াটাকে ওইভাবে কখনো বলা হয়নি যে “ভাইয়া তোমাকে অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি।আমার অনেক অনেক গর্ব হয় তোমার মতন এমন একটা ভাই পেয়েছি।এমন একটা ভাই পেলে নিজের অনেক দুঃখকে দুঃখ মনে হয় না আর।যেকোন সমস্যাতে মনে হয় আমার এই ভাইয়াটাতো আমার পাশেই আছে…আমার আর কি চাই বলো??জীবনে হয়তো অনেক উলটাপালটা কাজ করতে গিয়েছি কিন্তু কেন যেন শেষ পর্যন্ত আর করা হয়নি…একটা জায়গায় গিয়ে থেমে যেতে হয়েছে…তোমার কথা তখন খুব মনে পড়েছে…আর সবাইকে হারাতে রাজি থাকলেও আমি তোমাকে কখনো হারাতে চাই না ভাইয়া…যেখানেই থাকো অনেক অনেক সুস্থ থাকো আর আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ হয়েই থাকো।আমার আর কিচ্ছু চাই না ভাইয়া…..জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা…

৫,৭৬৬ বার দেখা হয়েছে

৩৫ টি মন্তব্য : “শুভ জন্মদিন ভাইয়া……”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    অসাধারন... এর থেকে বেশি কিছু বলার খুঁজে পাচ্ছি না।

    শুভ জন্মদিন তপু :party:


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    শুভ জন্মদিন :party: :party: :party:
    কনক ভাই এইভাবে নিজের ফিলিংস জীবনেও প্রকাশ করতে পারব না যাষ্ট অসাধারন, আপনারে ::salute::
    হায়রে এই পোষ্টে আগে হইলে এতক্ষনে মিনিমাম ৫০০ কমেন্ট পরত আর এখন ৫ টাও পরে না 🙁


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  3. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    যখন ঠিক করি সিসিবি থেকে দূরে থাকবো তখনই এমন একটা পোস্ট আসে কমেন্টাইতে ঢুকতে হয়।

    ও হচ্ছে আমার দেখা সবচাইতে ভালো ছেলে।

    এই কথায় খুব বেশি সহমত। আমার ধারণা তপুকে যারা দেখছে সবাই এই কথা স্বীকার করবে। ওড় এত এত গুণের কোনটি যদি নাও থাকতো শুধু মাত্র একজন খুব ভালো মানুষ হিসাবেই তপু বন্ধু হয়েও আমার কাছে শ্রদ্ধার জায়গায়। আর ওর সব গুণ অবশ্য আমি জানি না কনকই বলে দিছে অনেক সুন্দর করে।

    কনক তোরে অনেক দিন পরে দেখলাম। তোর খবর টবর কি? আপডেট জানাইলি না তো কোন??

    আর তপু তোরে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

    ভালো থাকিস। (এইটা দুইজনরেই)

    জবাব দিন
  4. সামিয়া (৯৯-০৫)

    লেখাটাও চমৎকার, যেই মানুষটার জন্মদিন সেও চমৎকার।
    তয় তপু ভাই, সিসিবির এখনকার পুলাপান কিন্তুই আপনারে চিনেই না 😀 । তাড়াতাড়ি নিজেকে চিনানোর ব্যবস্থা করেন। 😛
    আর জাপান থেকে আমাদের জন্য একটু সুশি টুশি পাঠান...একটু আপনার জন্মদিন সেলিব্রেট করি ...

    জবাব দিন
  5. রাব্বী (৯২-৯৮)

    তপু কোনদিন সেকেন্ড হয় নাই! ছিহ ছিহ ... 😛
    আমি এইসব পোলাপানের সাথে মিশি না। ভবিষ্যতে তপুর পোষ্টে কমেন্ট না করার ইচ্ছা রাখি 😀

    কেক্কুক কই?


    আমার বন্ধুয়া বিহনে

    জবাব দিন
  6. রুম্মান (১৯৯৩-৯৯)

    শুভ জন্মদিন রে ব্যাটা । কিন্তু কোনদিন সেকেন্ড না হওয়ার অপরাধটা কোনভাবেই ক্ষমার যোগ্য না 🙁


    আমার কি সমস্ত কিছুই হলো ভুল
    ভুল কথা, ভুল সম্মোধন
    ভুল পথ, ভুল বাড়ি, ভুল ঘোরাফেরা
    সারাটা জীবন ভুল চিঠি লেখা হলো শুধু,
    ভুল দরজায় হলো ব্যর্থ করাঘাত
    আমার কেবল হলো সমস্ত জীবন শুধু ভুল বই পড়া ।

    জবাব দিন
  7. কামরুলতপু (৯৬-০২)

    জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো সকল সিসিবিয়ান কে ধন্যবাদ।
    আসলেই আমার জীবনের অন্যতম একটি জন্মদিন কাটালাম।

    চোখে পানি এনে দেওয়ার জন্য কনকের ব্যাঞ্চাই।
    আম্মুকে এই লেখা পড়ানো হয়েছে। পড়া শেষে ডায়লগ

    কনক তোকে আসলেই বেশি ভালবাসে

    মনে হইল হিংসিত তার থেকে আমারে বেশি ভালবাসে নাকি সেটা নিয়ে। 😉

    জবাব দিন
  8. রাশেদ (৯৯-০৫)

    মাত্র চার পাচ দিন দেরিতে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালাম কামরুল ভাই 😀
    শুভ জন্মদিন 🙂
    কনক ভাই কে কতদিন পর দেখা গেল 🙂
    আর এইরকম দারুণ একটা জন্মদিনের পোস্টে মাত্র ৩০/৩১ টা কমেন্ট 🙁


    মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

    জবাব দিন
  9. আহ্সান (৮৮-৯৪)

    প্রথমেই তপু কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

    কনক,
    নিজেকে অনেক ইমোশনাল বলে জানি। কিন্তু তোমার এই লেখা পড়ে যেকোন মানুষই ইমোশনাল হতে বাধ্য। অসাধারণ লেখা ভাই। তপুর জন্মদিনে এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ উপহার আর কি হতে পারে তোমার তরফ থেকে তা আমার জানা নেই। লেখার মধ্যে তোমার প্রতি তপু'র কেয়ারিং এটিচুড এর অংশটুকু পড়ে এতটা-ই ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম যে, কখন যে চোখ ভিজে গেছে বুঝে উঠতে পারিনি।

    রায়হান নামে আমারও একটা ছোট ভাই আছে। খুব চেষ্টা করি আমার সব কিছু দিয়ে ওকে আগলে রাখতে। চেষ্টা করি সব সময় খেয়াল রাখতে যেন বিপথগামী কখনো না হয়। আমার জীবনে আমি যা কিছু থেকে বঞ্চিত হয়েছি, চেষ্টা করি ও যেন সেগুলো পায়। ছোট ভাইকে নিয়ে আমার মনের সব ভাবনাগুলো তোমার লেখার মাঝে পেয়ে আরো বেশী ইমোশনাল হয়ে গেছি রে ভাই।
    তোমার এবং তপুর ভাই ভাগ্য দেখে হিংসে হয়। দোয়া করি তোমাদের দু'জনের জন্য।

    কর্ম ব্যস্ততার কারণে ব্লগে নিয়মিত না। কিন্তু আমি তোমার ভাইয়ের লেখার প্রচন্ড অনুরাগী। জিজ্ঞেস করে দেখ ওকে। আমরা খুব ভালো অনেক সময় কাটিয়েছি এই ব্লগে।আজ অনেক দিন পরে ব্লগে এসে তাই আমার প্রিয় এই মানুষটা সম্পর্কে লেখা দেখে অনেক ভালো লাগলো।

    ভালো লেগেছে লেখা। প্রচন্ডভাবে হৃদয় স্পর্শ করার জন্য এবং চোখ ভেজানোর জন্য তপু'র মত আমিও তোমার ব্যান চাই...।

    তপূ,
    কেমন আছিস রে ব্যাটা...মনে পড়ে?
    ভীষন মিস করি রে ভাই...
    অনেক ভাগ্যবান তুমি কনকের মত একটা ভাই আছে তোমার...
    দোয়া রইল... আন্টিকে সালাম দিও।
    আবারো শুভ জন্মদিন।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : কনক রায়হান (৯৮-০৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।