যে চিঠি ঠিকানায় পৌছায়নি………

……
তোমাকে কি সম্বোধন করবো ঠিক বুঝতে পারছিনা,কারন আমাদের সম্পর্কটাতো কখনো কোন সম্বোধনের বেড়াজালে জড়ায়নি। কখনো বন্ধু,কখনো বন্ধুর চেয়েও বেশি-যখন যেমন প্রয়োজন তেমন ভাবেই তুমি আমার কাছে এসেছিলে। আমি বুঝতে পারিনি ঠিক কখন তুমি আমার সমগ্র সত্তায়,আমার’আমি’তে মিশে গেছো।বুঝতে পারিনি তুমি ছাড়া আমি কতটুকু অসহায়,বুঝিনি আসলেই আমি তোমায় কতটুকু ভালোবাসি। আজ যখন আমি সব বুঝতে পারছি তখন তুমি আমার থেকে অনেক অনেক দুরে,অথবা তোমার দুরে চলে যাওয়াতেই হয়তো আমি বুঝতে পারছি তুমি আমার কত কাছের ছিলে,আমার ঠিক কতটা জুড়ে ছিলে।

আমাদের সম্পর্কটা খুব বেশিদিনের না। তোমার মনে আছে কিনা আমি জানি না ঠিক দুবছর আগে এমনি একটা বিজয়ের মাসে তোমার সাথে দেখা হয়েছিল। প্রথম দিনেই হয়তো তুমি জয় করে নিয়েছিলে আমার সমগ্র সত্তাকে। তোমাকে জয় করতেও আমার বেশি একটা সময় লাগেনি। জানিনা তার কিছুদিন আগে খুব প্রিয় কারো কাছ থেকে খুব বেশি কষ্ট পেয়েতুমি অনেকটাই নিজের মাঝে গুটিয়ে ছিলে কিনা,জানিনা আমার বন্ধুতায় তুমি সেই প্রিয় বন্ধুকে ভুলতে চেয়েছিলে কিনা। আমি জানতেওচাইনি এত কিছু। আমি শুধু চেয়েছিলাম তোমাকে,চেয়েছিলাম তোমার বন্ধুতা। সেদিনই হয়ত মনে মনে শপথ করেছিলাম যেমন করেই হোক তোমার সেই বিষন্ন চেহারায় আমি হাসি ফুটাবো,তোমার অতীতের যত দুঃখ আমি ভুলিয়ে দিবো আমার মুখের হাসি দিয়ে। আমার সব হাসির বিনিময়েও আমি তোমার হাসি চেয়েছিলাম,সেদিন আমি বুঝিনি বিধাতা আমার এই ভাবনাটাকেই সত্য করে অনেক বেশি কঠিন করে আমাকেই ফিরিয়ে দিবেন।

হ্যা তোমাকে পেয়ে আমিও যেন অন্যরকম হলাম। ঘরকুনো,বেরসিক আমি আবারো হাসতে শিখলাম,পেছনের দুঃখকে ভুলতে শিখলাম,নিষ্প্রাণ ইট কাঠের ক্যাম্পাসটাকে আবারো ভালোবাসতে শুরু করলাম। আমি আবারো আগের আমি হতে শুরু করলাম। না হয়তো আগের আমি না ,এ আমি যেন অন্য আমি।

ভালোবাসার চূড়াটা কোথায় আমার জানা নাই,তবে এটুকু বুঝতে পারি সেই চূড়ায় পৌছাতে আমাদের খুব একটা সময় লাগেনি। তোমার মনে আছে তখন আমার একটা ফোনের জন্য তুমি কতটা অপেক্মায় থাকতে,একদিন আমি ফোন না করলে তুমি কতটা কষ্ট পেতে,কতটা রাগ করতে আমার ওপর। একদিনের না দেখায় তুমি কতটা ছটফট করতে তা আমি বুঝতে পারতাম..আর তাই রাত যতই হোক তোমার বারান্দার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখিয়ে তবেই বাসায় ঢুকতাম। কত কত চিঠি আমি পেয়েছি তোমার কাছ থেকে,কত কথা,কত রকমের সম্বোধন। চিঠি পড়ে আমি যেন তোমার আরও অনেক কাছে চলে আসতাম। তোমার যখন অনেক অনেক মন খারাপ হতো আমার চিঠি আর মেসেজ পড়ে তুমি মন ভালো করতে।আমিও সারাটাখন চিন্তা করতাম কি করে তোমার মন ভালো করা যায়,চাইতাম যেকরেই হোক তোমার হাসিমুখ আমি দেখবো।

তোমার কি সেই ঈদের কথা মনে আছে?আমি গ্রামে ঈদ করতে চলে যাওয়াতে তোমার কতটা মন খারাপ হয়েছিলো,ঈদের আগেরদিন থেকেই তুমি তোমার মোবাইল বন্ধ করে দিয়েছিলে,আমি ছাড়া ঈদ তোমার সহ্য হবে না তাই। বোকা আমি তোমার কষ্টটা সহ্য করতে পারিনি সেদিন।
তাই ঈদের পরদিনই বাসার সবার সাথে ঝগড়া করে একাই চলে আসলাম তোমার মন ভালো করতে। আমার সেই অনুভূতি কি সেদিন তোমার মন ছুঁয়েছিলো??

তখন আমার ভয় হতো.এই আমি ছাড়া তুমি কি করে থাকবে? আমি যদি না থাকি তুমি কতটা কষ্ট পাবে সেটা ভেবে আমিও কষ্ট পেতাম। মাঝে মাঝেই তাই তোমার থেকে দূরে যেতে চাইতাম যেন আমি ছাড়াও তুমি ভালো থাকতে পারো,কিন্তু আমি পারতাম না। আমি যত দূরে যেতে চাইতাম তুমি ততই আমাকে আঁকড়ে ধরতে।আমি আরও কাছে চলে আসতাম তোমার।

হঠাত করে যেন সব কিছু বদলাতে লাগলো। তুমি হাসতে শিখলে,সবার সাথে মিশতে শিখলে। তোমার অনেক বন্ধু হলো। তোমার সেই বন্ধুদেরকে নিয়ে ভালো থাকা আমারও ভালো লাগতো কারন তোমার হাসিই যে আমি সবসময় চাইতাম। কিন্তু আমি ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম তোমার জীবনে আমার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে।বুঝতে পারলাম আমি ছাড়াও তুমি অনেক হাসতে পারো,বুঝলাম আমার উপস্থিতি আগের মত তোমাকে প্রেরণা জোগায় না। বুঝলাম আমার জন্য তোমার সেই আবেগ আগের মত নেই। তোমার চোখে আমার জন্য রাখা সেই ভালোবাসাও আর খুঁজে পেলাম না। আমি তোমার কাছে কোথায় তা আমি বুঝতে পারলাম পরের ঈদে সাত দিনের ছুটির একটা দিনও যখন আমার জন্য তুমি দিতে পারলে না। কিন্তু তোমার সাথে ঈদ করবো ভেবেই যে আমি এবার গ্রামের বাড়িতে যাইনি তা যে আমি তোমাকে বলতেই পারিনি। তোমার কাছে আমার অবস্থান কোথায় তা আমি বুঝতে পারলাম যখন আমি দেখলাম আমার ফোন পেয়ে তুমি বিরক্ত হতে থাকলে,আমার অনেক অনেক মেসেজ পেয়েও তোমার রিপ্লাই করার অনীহা দেখে। আরও অনেক, অনেক কিছু দেখে আমি বুঝতে পারলাম আমার সময় বুঝি শেষ হয়ে এলো। ভালোবাসার চূড়া থেকে তুমি আমাকে একেবারেই তলানিতে নিয়ে আসলে।

তোমার এই দুরে যাওয়াতেই যেন বুঝতে পারলাম কতটা ভালোবাসি আমি তোমায়,কতটা জায়গা জুড়ে তুমি ছিলে। কিন্ত দেরি হয়ে গেছে অনেক । আমার ভালোবাসাটা আমি জানাতেই পারলামনা তোমাকে। তাই অভিমানটুকু নিয়ে নিজেই সরে গেলাম তোমার থেকে অনেক দুরে।

বিধাতা আমার কথা রেখেছেন। আমার সবটুকু হাসি নিয়ে তোমার মুখে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তুমি যেখানেই থাকো,এই হাসিটুকু নিয়েই যেন থাকতে পারো …। আমার শুভ কামনা সবসময়ই তোমার সাথে রইলো……

৭,০২৯ বার দেখা হয়েছে

৭১ টি মন্তব্য : “যে চিঠি ঠিকানায় পৌছায়নি………”

  1. কনক রায়হান (৯৮-০৪)

    ব্লগে আমার নিজের বড় ভাই আছেন।ভাইয়ার উদ্দেশ্যে...........
    "লেখাটা পড়ে তুমি যেন অন্য কিছু মনে করে বাসায় কিছু বলা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করছি 😀 "

    এটি একান্তই লেখকের অনুর্বর মস্তিষ্কের কল্পনা....... 😀

    জবাব দিন
  2. জাফর (৯৫-০১)

    অসাধারণ...... :thumbup: :thumbup:

    কখনো বন্ধু,কখনো বন্ধুর চেয়েও বেশি-যখন যেমন প্রয়োজন তেমন ভাবেই তুমি আমার কাছে এসেছিলে।
    আমি বুঝতে পারিনি ঠিক কখন তুমি আমার সমগ্র সত্তায়,আমার’আমি’তে মিশে গেছো।
    জবাব দিন
  3. আহ্সান (৮৮-৯৪)
    বিধাতা আমার কথা রেখেছেন। আমার সবটুকু হাসি নিয়ে তোমার মুখে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তুমি যেখানেই থাকো, এই হাসিটুকু নিয়েই যেন থাকতে পারো ...। আমার শুভ কামনা সবসময়ই তোমার সাথে রইলো......

    ঠিকানাহীন কোন এক প্রাপকের জন্য...

    কনক,
    তোমার অনুভূতিকে :salute:

    জবাব দিন
  4. কামরুলতপু (৯৬-০২)

    ভাইয়া এই কষ্ট গুলা মানুষের জীবনে আসে যখন তখনকার অনুভূতি আমি জানি। যারা নিজেদের সব কিছু বিলিয়ে দিয়ে মানুষের সুখ কিনতে চায় তারাই এই কষ্ট গুলা পায়। কিচ্ছু করার নাই , পৃথিবী বাস্তবতা সব এইরকম, একে মেনে নেওয়া অনেক কষ্ট । তোর বড় ভাই বলে না, বন্ধু হিসেবে বলব সব কিছু নিজের মধ্যে ধরে না রেখে এইভাবে বা অন্য যে কোন ভাবে ছড়িয়ে দেয় নিজেই বুঝবি ভাল হবে কিনা। এইসময় গুলোতে সবারই মনে হয় এমন কোন জায়গায় যাই এমন কাউকে শেয়ার করি যে আমাকে চিনবে না আমার পরিমন্ডলে নেই। সেক্ষেত্রে ব্লগ অনেক ভাল একটা জায়গা। আমি না থাকলে তোর জন্য আরো ভাল হত।

    জবাব দিন
  5. হাসনাইন (৯৯-০৫)

    কনক ভাই... ভালা করছেন।
    আর... একটা মাত্র উইকেট পড়ছে মিয়া। খেলতে খেলতে সেট হইয়া যাবেন, তারপর ব্যাটে-বলে মিললে ছক্কা।। এরপরেরবার যেন 'নীল চিঠিখানার উত্তর পেলুম' শিরোনামে একখান ব্লগ দেখি। 😡

    মোরালের ঘাটতি পড়লে আমাগো মাস্ফু ভাইরে বস মাইনেন। 😀 :ahem:

    জবাব দিন
  6. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    কনক ভাই জটিল লিখছেন :boss: :boss:


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  7. সামিয়া (৯৯-০৫)

    কনক ভাই, একবার মুখ ফুটে বলেন, গুলি করে আসি একটা :gulli:
    আর একটা কথা কনক ভাই, এগুলা কিছু না। দুইদিন পরই ভুলে যাবেন, যাকে নিয়ে এত কষ্ট পাচ্ছেন তাকেই ভুলে যাবেন, কিসের কী।
    মানুষ খুবই অদ্ভুত 🙂 এটা মনে করেই আপাতত শান্তি পান

    জবাব দিন
  8. শরিফ সাগর (৯৭-০৩)

    কনক ছুডুভাই,আছো কেমন?তুমিও আমার খুউব কাছে আইসা দূরে চলে গ্যাছো ~x( ।পরে অনেক মিস করছি তোমারে 🙁 🙁 ।খুউউব ভাল লিখছো।চিঠিটা পৌছায় নাই বাইচা গ্যাছো।এইবার মনের সব ঘৃণা একসাথে করে আরেকখান চিঠি লেইখা রেজিষ্ট্রি করে পাঠায়ে দাও।এইটা মিস কইরো না :gulli: :gulli: :gulli: ।

    জবাব দিন
  9. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)

    কনক,
    তোমার লেখাটা পড়তে পড়তে এমআইএসটি'র এক ছোট ভাইয়ের কবিতার কথা মনে পড়ে গেল,

    অনেকদিন তোমার চোখে চাই না।
    ও চোখে আগে ছিল
    আমার জন্য ভালোবাসা
    এখন আর কিছুই দেখতে পাই না।
    তোমার ওই নষ্ট হৃদয়ের গন্ধে
    আমার গা গুলিয়ে ওঠে ঘৃণায়
    অহংকার আর শঠতার অবোধ কাঠিন্যে
    ও হৃদয় ভরে থাকে আবর্জনায়।
    আস্তাকুঁড়ে মুখ গুঁজে থাকে
    খাদ্যলোভী নোংরা কুকুর।
    আমি কুকুর হতে পারি না
    তাই অনেক দিন তোমার খোঁজ রাখি না।

    শুভকামনা।


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  10. নাসির (৯৮-০৪)

    আল্লাহ গোওওওওওওওওওওওওওওওও। কনকের এমন হৃদয়বিদারক কাহিনী পইড়া মনটা একটু দুঃখ দুঃখ কমেন্ট এর জন্য রেডী করছিলাম। কিন্তু কমেন্ট পইড়া হাসতে হাসতে কিরম জানি হইয়া গেলাম। তাই কমেন্ট পড়া বাদ দিয়া সরাসরি কমেন্ট লিখতে আইসা পরসি।
    কনক তোর এই কাহিনী পড়ার পর এইটা তুই লিখসিস মিলাইতে পারছিলাম না। তোর থেকে এতো প্যাথেটিক লিখা পাব, তা বিশ্বাস হয় নাই। আমি নিজের লাইফ থেকে একটা জিনিস তের পাইছি। মেয়েরা যদি বুইঝা যায়, মেয়ে তোর পরান পাখি, তখনই খেইল খতম। তখন নাগিনী নাচন দেয়। আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারতা ছিল একেবারে ঘোমটা ছাইড়া খ্যামটা নাচ---আমিও তখন গান ধরসি,

    আমার করার কিছু ছিল না

    যাই হোক, ব্যাপার না। বিয়ে কইরা ফেল, আমিও ফাইনাল প্রেম অইখানেই করব বইলা থিক কইরা ফেলছি।

    অফ টপিকঃ

    এই জন তো বিয়াই কইরা ফালাইছে, আর একজন বুক চাপড়াইতেছে।

    কামরুল ভাই কি বিবাহিত নাকি? কবে করলো??

    জবাব দিন
  11. তানভীর (৯৪-০০)

    কনক, এতদিন তোমার লেখার জন্য অনেক অপেক্ষা করলাম, আর যখন লিখলা তখন পড়ার সময় হইলনা।
    তোমার লেখার হাত খুব ভালো, এইটা আর নতুন করে নাই বা বললাম।

    যখন আমরা দেখি কেউ আমাদের উপর নির্ভরশীল, তখন আমরা তার ব্যাপারে উদাসীন হয়ে যাই। এজন্যই এইসব সমস্যা তৈরী হয়।

    খুব খুব সুন্দর করে লিখছ। তোমাদের দুই ভাইকেই :salute:

    জবাব দিন
  12. রাব্বি (১৯৯৮-২০০৪)

    দোস্তো প্রথম বাউন্সারটা সাম্লানই এক্তু কষ্ট। :just: সাম্লাইয়া নিতে পারলে পরে দেখবা বলে বলে :gulli2: । আর

    আমি কুকুর হতে পারি না
    তাই অনেক দিন তোমার খোঁজ রাখি না

    রে সসত্র সালাম

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : জিহাদ (৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।