আমার আপুসোনা – ৩ ( দেশে ফেরা )

ডিসক্লেমার
আমার পুরান একটা সিরিজ আছে এই নামে। সেটার একটা পার্ট লিখলাম। আজ সারাদিন শুয়ে শুয়ে মন ভাল করার জন্য দেশে প্রথম যাওয়ার কথাটা চিন্তা করলাম । সেটার সাথে যোগ করে দিলাম আমার সেই ছোট্ট বেলা থেকে বয়ে আনা আপুসোনার কল্পনা। এর আগের দুটা পর্ব হল
আমার আপুসোনা – ১
আমার আপুসোনা – ২
তখন যখন লিখেছিলাম অনেকে বলেছিল বেশি ন্যাকামি হয়ে যাচ্ছে। মনে মনে নাহয় একটু ন্যাকামি করলামই। বাস্তব জীবনে তো সেজেগুজে বসে থাকি ফিটফাট হয়ে। আমার কল্পনা সবার সাথে শেয়ার করলাম।
*************************************************************************************************
বহুদিন পরে দেশে যাচ্ছি। সময়ের হিসাব করলে অবশ্য হবে না। সময়ের হিসাব ধরলে মাত্র ১৫ মাস কিন্তু মানসিক ভাবে এই ১৫ মাস আমাকে ১৫ বছরের কষ্ট দিয়েছে। দেশ থেকে আসার সময় ১১ মাসকেই মনে হচ্ছিল অনন্তকাল। কত্ত দিন পর আজ মাকে দেখব। প্লেনটা মনে হয় আস্তে চলছে। একটা ঘুম দিয়ে দিব নাকি? ঘুম থেকে উঠেই দেখলাম আমার দেশ। চোখ বন্ধ করে একটু চিন্তা করি এয়ারপোর্টে কি হবে। আম্মু তো আসবেই। সেই ক্লাস ৭ এ ক্যাডেট কলেজে যাওয়ার পর থেকে আমার আজ পর্যন্ত যত আগমন এবং গমন সবসময়ই আম্মু শত কাজ থাকলেও আমাকে নিতে এবং দিতে আসবে। আর কে কে আসবে? কনক তো আসবেই। এয়ারপোর্ট বলে কথা ছেলেমানুষ একজন তো থাকতেই হবে। আম্মু কি এবারো কাঁদবে। দেশ ছাড়ার সময় কান্নার ব্যাপারটা বুঝতে পারি কিন্তু দেশে আসার সময় কেন আম্মু কাঁদে? আমারও বা কেন চোখ ভিজে যায়। দেশ যখন ছাড়ছিলাম তখন অবশ্য বুঝিনি এত তাড়াতাড়ি দেশে যেতে পারব। সবাই দেখে ২-৩ বছরের আগে আসে না। সেই হিসেবে ভালই লাগছে।
আমার আপুসোনাটা কি আসবে? আমি যখন দেশ ছাড়ছিলাম তখন আমার আপুসোনাটা আসেনি আমাকে তুলে দিতে । আম্মু অনেকবার বলার পরও তার একই কথা আমার পিচ্চিটা আমাকে ছেড়ে চলে যাবে সেটা আমি সহ্য করতে পারবনা। ওখানে নাকি সে কাঁদতে কাঁদতেই মরে যাবে । সিনক্রিয়েট এর হাত থেকে বাঁচার জন্য সে যাবেনা। তাও যা করল। আমি বের হবার আগ পর্যন্ত বেশ হাসিমুখেই ছিল। কিছুক্ষণ পরপরই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, জড়িয়ে ধরে গাল টিপে আদর করে দিচ্ছে আর বারবার বলছে কোন ব্যাপার না প্রতিদিন আমরা মেসেঞ্জার এ কথা বলব ওয়েবক্যামে তোকে দেখব তুই আমাদের দেখবি দেখবি খারাপ লাগবেই না। আমি একবার আম্মুকে জড়িয়ে ধরি আরেকবার ওকে । বুকের মাঝে যে কান্নার দলাটা পাকিয়ে উঠছিল সেটা গলা পর্যন্ত এসে থেমে যায়। কি যেন অনেক কথা বলার ছিল। বলতে পারিনা। কিন্তু যেই আমি গাড়িতে উঠে গেলাম তখন বুঝতে পারলাম আমার আপুসোনাটা এতক্ষণ আমাকে নয় নিজেকেই স্বান্ত্বনা দিচ্ছিল। আমাকে দেখাবে না সেইজন্য সে ভিতরের রুমে গিয়ে শুরু করল কান্না। আম্মু আর আপু মিলে সে কি কান্না। আমি দাঁড়িয়ে আছি দরজায়। বের হতে পারছিনা। একবার মনে হল কেন যাব বিদেশে। কি দেবে আমাকে বিদেশ। কেন আমাদের যেতে হয়। না গেলেই কি নয়?
আমার আপুসোনার একটা কথা গত ১৫ মাসের সবসময় আমার কানে বেজেছে । ও কাঁদছিল আর বলছিল,” আমার পিচ্চি ছাড়া এখানে আমার যে বুকটা হুহু করবে।” আম্মু অনেকক্ষণ ওকে বুঝিয়ে আমাকে নিয়ে বের হয়ে গেল। আমার আপুসোনাটা আর আমার সামনে আসল না। আমিও আর কাঁদতে চাইনি। গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার পর থেকে মনে হচ্ছিল কত্ত দিন আমি আমার আপুসোনাটাকে দেখবনা। দৌড় দেই। একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা যে ওকে বলা হয়নি। ওকে বলা হয়নি আমি আপু তোকে কত ভালবাসি। মাকে জড়িয়ে ধরলাম। আম্মু বুঝতে পেরে আরো নিবিড় করে আমাকে জড়িয়ে ধরল। ফোনে কথা বলা শুরু করলাম আপুসোনার সাথে। আমি শুধু আপুসোনাটা উচ্চারণ করতে পেরেছিলাম। আর আপু বলেছিল পিচ্চি আমার একটুও কাঁদবি না। তুই যেদিন আসবি এয়ারপোর্টে নেমেই আমাকে দেখবি ।
ও তো অনেক ব্যস্ত। আজও ওর অফিস আছে। আসবে কি আমার আপুসোনা এয়ারপোর্টে।
———
এয়ারপোর্টে নেমে ঝামেলা শেষ করে গেট দিয়ে বের হয়ে আসলাম। কোথায় আমার আম্মু কোথায় আমার আপুসোনা। এদিক ওদিক তাকাই কেউ নেই দেখি। এমন সময় দেখলাম কনক ডাকছে আমাকে। আমার অতি আদরের ছোট ভাইটা দেখি একটু বড় হয়ে গেছে। আমাকে কি সুন্দর গাইড করে বের করে নিয়ে যাচ্ছে। ওর উপর নির্ভর হতে হল আমাকে। পিচ্চি কনক দেখি অনেক বেশি দায়িত্বশীল ও হয়েছে। আম্মুকে দেখে আবার সেই কলেজের মত ছবি। আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছি।প্রথন দৃশ্যতো শেষ হল আমি এদিক ওদিক তাকাই আমার আপুসোনাটা কই? আম্মু কনক দুজনই বুঝতে পারে কিন্তু কিছু বলে না। এগিয়ে যাই গাড়ির দিকে হঠাৎ দেখি নরম দুটা হাত আমার চোখ ধরেছে। আর কিছু বুঝতে হল না আমাকে উলটা ঘুরেই বললাম ” আমার আপুসোনা”।

১৬ টি মন্তব্য : “আমার আপুসোনা – ৩ ( দেশে ফেরা )”

  1. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)

    ক্লাস টুয়েলভে ওঠার পর আমার সেকেন্ড হাইটেবিলমেট ওমর শরীফ আর তার ছোট ভাই দুজনে মিলে আন্টির কাছে যেয়ে একটা বোনের জন্য আরেকবার "ট্রাই" 😀 করতে বলে দাবড়ানি খেয়েছিল 😛 । হাসিমুখে বলা গল্পটা শুনে আমরা হাসলেও একটা বোনের জন্য ওমরের হৃদয়ের হাহাকার ঠিকই টের পেয়েছিলাম। নিজেকে সেই তুলনায় অনেক ভাগ্যবান মনে হয়।


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  2. ক্লাস টুয়েলভে ওঠার পর আমার সেকেন্ড হাইটেবিলমেট ওমর শরীফ আর তার ছোট ভাই দুজনে মিলে আন্টির কাছে যেয়ে একটা বোনের জন্য আরেকবার “ট্রাই” 😀 করতে বলে দাবড়ানি খেয়েছিল 😛 । হাসিমুখে বলা গল্পটা শুনে আমরা হাসলেও একটা বোনের জন্য ওমরের হৃদয়ের হাহাকার ঠিকই টের পেয়েছিলাম। নিজেকে সেই তুলনায় অনেক ভাগ্যবান মনে হয়।

    ভাইরে, দাবড়ানিটা আমিও খাইছিলাম। :(( :(( :((

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : Nahid (1996-2002)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।