শুভ জন্মদিন, ভাইয়া

আমার ছোটভাই কনক। ওর পিচ্চি বেলার কথা এখনো আমার মনে আছে। আমি ওর অল্প বড় হলেও ওকে নিয়মিত গল্প শোনাতাম। কখনো গল্পের বই থেকে কখনো বানিয়ে বানিয়ে। সেও ছোট্টবেলা থেকে ও আমার সাথে সাথে থাকত। ৩ ভাইয়ের মাঝে আমরা দুজন থাকতাম সবসময় একসাথে। পিচ্চিটাকে নিয়ে চলত আমার সারাদিনের সকল কাজ। খেলাধূলার ব্যাপারে ওর প্রায় সব খেলার হাতেখড়ি মনে হয় আমার হাতেই। পিচ্চিবেলায় ও যখন মাত্র পড়ালেখা শুরু করে তখন একবার নিজের বানান করেছিল এইভাবে cng কনইক্যা। সেই থেকে অনেকদিন পর্যন্ত ওকে আমরা ওইভাবেই ডাকতাম cng কনইক্যা। আমার অসম্ভব আদরের ছোটভাই। আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু, মানুষ হিসেবে যাদের আমি শ্রদ্ধা করি তাদের মধ্যে একজন।
ছোটবেলায় আমরা দুই ভাই মিলে একসাথে টাকা জমাতাম। টাকা না বলে পয়সা বলাই ভাল। এখন কেমন যেন সবার হাতেই অনেক টাকা। তখন তেমন ছিল না। আমি নিজেকে অনেক পুরাতন ভাবি না কিন্তু কেমন যেন দেখি আসলেই বর্তমানের জেনারেশন এর সাথে আমাদের মিল নেই। আমরা ছোট থাকতে চারপাশে এত টাকাপয়সা দেখিনি। টাকা সেটা বিশাল ব্যাপার সেটা তো বাবা মায়ের কাছে থাকে কখনো কখনো ডিম কেনা বা টুকটাক কিনে আনার জন্য আমাদের দেওয়া হয়। একটা ডিমের দাম আড়াই টাকা থাকার সময় ডিম কেনার আগ্রহ ছিল আমাদের অপরিসীম , প্রায় কম্পিটিশন করে ডিম কিনতাম। কারণ তাহলে আব্বুর দেওয়া ৩ টাকা থেকে আটআনা পয়সা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে ফেলা যেত। যেদিন তাই একসাথে দুটা ডিম আনতে দেওয়া হত সেদিন আর ভাল লাগত না। আটআনা করে জমিয়ে দুই ভাইয়ের যেদিন ১ টাকা হয়ে যেত সেদিনই আমরা দুই ভাই একটা আইসক্রিম কিনে আনতাম। দু ধরণের আইসক্রিম ছিল একটা ছিল লাঠি আইসক্রিম আরেকটা পাইপ আইসক্রিম। আমরা সবসময় পাইপ আইসক্রিম কিনতাম তাহলে সেই পাইপটাকে ছুরি দিয়ে দুই ভাগ করে দুইজনে নিতে পারতাম। কত্তদিন হয়ে গেছে দুই ভাইয়ে ভাগ করে আইসক্রিম খাইনা। সেই ৯১-৯২ সালের কথা।
ওকে সাথে করে বাসার ভিতরে আমি কত ক্রিকেট টুর্নামেন্ট খেলেছি , খেলেছি কলম বাকিয়ে হকি কখনো বা দাবা কখনোবা ফুটবল কম্পিটিশন। এক এক কালার এর কলম ছিল এক এক দলের জার্সি। সাদা ইকোনো অনেকদিন দেখি না সেটা ছিল মোহামেডানের জার্সি আর ইকোনোর এক প্যাকেট এর ভিতরে একটা কলম ছিল হলুদ আর নীল সেটা ছিল আরামবাগের জার্সি। দাবা খেলার একটা বই ছিল আমাদের বাসায়। সেখানে বেশ কিছু বিখ্যাত খেলার চাল দেওয়া ছিল । যেগুলো ড্র ছিল সেইসব ম্যাচ সাজিয়ে আমরা দুই ভাই দুদিকে বসে যেতাম কেউ কারপভ কেউ বা কাসপারভ। কখনো কখনো দেশী টুর্নামেন্ট খেলতাম নিয়াজ মোর্শেদ, চম্পক হয়ে। এই করতে করতে আমি ক্যাডেট কলেজে চলে গেলাম। আমি কলেজে যাওয়াতে আমার বাসায় সবচেয়ে একা হয়েছিল আমার এই পিচ্চি ভাইটা।

আম্মুর সাথে পিচ্চি কনক

আম্মুর সাথে পিচ্চি কনক


কলেজে ২ বছরের অপেক্ষার পর আমার ছোটভাই চলে আসল আমার কলেজে। আম্মু যখন ওকে নিয়ে হাউস মাস্টার রুমে ঢুকলেন তখনকার হাউস মাষ্টার আম্মুকে বললেন , ” আমরা আশা করছি আপনার ছোট ছেলেটি কামরুলের মতই হবে” তখন আমার আম্মু বলেছিল , ” আমার এই ছেলে আপনাদের কামরুল থেকেও ভাল”। এই কথাটা খুবই জনপ্রিয় ছিল স্যারদের মধ্যে। এবং আমার ভাই আমার মায়ের কথা ঠিকভাবেই রেখেছিল। ক্লাস ১২ এ থাকার সময় এক স্যার আমাকে বলেছিল,” তুমি মনে হয় ভাল ছাত্র তবে রায়হান(কনক) এর মত না”। যে কোন বড় ভাই মাত্রই বুঝতে পারবেন এরকম কথা নিজের ভিতরে কি অসম্ভব আনন্দের তৈরি করে ।
আমার সেই পিচ্চি ছোটভাই এখন আর ছোট্ট নেই। আর একটু পরেই ওর ২৪ তম জন্মদিন। ২৪ বছরের টগবগে যুবক যে কিনা অপেক্ষা করছে আর কিছুদিন পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ পরীক্ষা দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করে দেওয়ার। আমি ওকে দেখলে এখনো ওর পিচ্চি বেলার চেহারাটা খুঁজি। যখন পায়ের উপর ওকে বসিয়ে নিজেকে সাইকেল বানিয়ে ওকে আনন্দ দিতাম আমি। মানুষ হিসবে কখন যে ও খুব শক্ত একটা ব্যক্তিত্ব অর্জন করে ফেলেছে আমার চোখে পড়েইনি। এখন দেখি সে শুধু ছোট হিসেবে আমার আদর পায় তাই না মানুষ হিসেবেও আমার শ্রদ্ধা কেড়ে নেয়।
আমার ছোট ভাইটাকে আমি অসম্ভব আদর করি। গতবার দেশে গিয়ে একদিন দেখছি ও ঘুমাচ্ছে , আমি ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম ইচ্ছে করছিল খুব একটু আদর করে দেই জড়িয়ে ধরে বলি ভাইয়া তোকে অনেক ভালবাসি। সব কিছু শেষ পর্যন্ত করা হয়ে উঠেনা। আমার পিচ্চি ভাইটাকে জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আমার বলা লাগবে না আমি জানি ও জানে তাকে আমি কতটা ভালবাসি।

শুভ জন্মদিন কনকা

৫৮ টি মন্তব্য : “শুভ জন্মদিন, ভাইয়া”

  1. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    কিরে তপু বিভাগে তো লেখার তো কিছু বাদ দেস নাই... 😛
    তা তোদের অন্য ভাইটা কি দোষ করল, তার নামও দিয়ে দে... :-B

    যাই হোক, কনক হেপ্পি বার্থ ডে ছুড ভাই... :party:


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  2. কনক রায়হান (৯৮-০৪)

    ভাইয়া
    পড়তে পড়তে চোখে পানি চলে আসলো..আমার সব জন্মদিনই আমার কাছে খুব্বি ভালো লাগে...কিন্তু এবার মনটা অনেক খারাপ ছিলো,তোমার লেখাটা পড়ে অসম্ভব অসম্ভব ভালো লাগছে...বেস্ট গিফট ফর মী...
    তুমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এভার এবং আমার আদর্শ।ছোটবেলা থেকে তোমাকে দেখেই বড় হয়েছি...সারাজীবন তোমার মতই হতে চেয়েছিলাম..কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হতে পারি নি।অনেক দূরে সরে গিয়েছি...
    তোমার মতন বড় ভাই হয় না,বন্ধু হয় না।
    ভাইয়া তোমার জন্যে অনেক অনেক শ্রদ্ধা।।

    জবাব দিন
  3. রাশেদ (৯৯-০৫)

    শুভ জন্মদিন কনক ভাই :party:
    আপ্নেরে আমি খুব ভালা পাই তাই নেন একটা গান শুনেন :guitar:

    অফটপিকঃ কামরুলতপু ভাই লেখাখান সিরাম হইছে তাই লেখা পড়ে আমার মনে হচ্ছে আহারে আমার যদি ইরাম একখান বড়ভাই থাকত 🙂


    মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

    জবাব দিন
  4. সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯)

    cngকইনক্যা,
    শুভ জন্মদিন :party: ...

    তপু,
    লেখাটা আসলেই কঠিন কঠিন হইসে...সম্ভবত আমার পড়া তোমার সেরা লেখা :hatsoff: ...

    বাই দ্যা ওয়ে, অসম্ভব মেধাবী আর অসম্ভব চমৎকার এই দুই ভাই কিন্তু আমাদের বাসাবোর ছেলে B-) সো, আমি ডাবল গর্বিত...


    "আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
    আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"

    জবাব দিন
  5. আন্দালিব (৯৬-০২)

    কামরুল, তোর পোস্ট পড়ে এই সকাল সকাল মন খুব ভাল হয়ে গেল! সোজা প্রিয় পোস্টে। তোর ভাইটা যে তোর কত আপন সেইটা বুঝা যায় খুব সহজেই, তবে পড়ার পরে আরো যেটা বুঝা যায় সেটা হইলো তুই কত আবেগী একটা মানুষ!

    তোর জন্যে অনেক অনেক শুভকামনা রইলো দোস্ত!

    জবাব দিন
  6. তানভীর (৯৪-০০)

    cng কনইক্যা, শুভ জন্মদিন। অনেক অনেক ভালো হোক তোমার এই বছরটা।

    তপু, তোমার মত আবেগী মানুষের পক্ষেই এত সুন্দর করে লিখা সম্ভব।

    তোমাদের দুই ভাইকেই :salute:

    জবাব দিন
  7. তারেক  (১৯৯৮-২০০৪)
    আপনার ভাইটাকে আমি মাইর দিবো… B-) ও দেশে থেকে আমাকে ফেসবুকে উইশ করে কেক খাইতে চাইসে…কি করা উচিত আপু আপনি বলে দেন…

    অই...তরে আমি wish করিনাই রাতে কারন তুই অই সময় ব্যস্ত থাকবি...।দুপুরে কল দিসি নাহ...ব্লগ টা মাত্র পরলাম...কথা গুলা খুবি touchy সিল...আহারে,...দস্ত ভাইয়ারে লম্বা কইরা :salute: মাইরা দিস...

    তরে ত পরে দেখতাসি :duel: ...কেক কি একাই খাইসস...এই সময় ত কাউরে চিনস নাহ...

    ভাইয়ারে বল সালাম...ভাল থাকিস..CNG রাইহান...মুরগি ওরফে কনক
    সব সময় হাসিস এই ভাবে......মিস U dostoo

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সাজিদ (২০০২-২০০৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।