ক্যাডেট কলেজ – ২০৫০ (দ্বিতীয় কিস্তি)

[ডিসক্লেমারঃ অনেক অনেক দিন আগে সেই সিসিবির শিশুকালে একটা উপন্যাস টাইপের গল্প শুরু করেছিলাম। কিন্তু কেন যেন এক পর্বের পর সেটা আর আগায়নি। সবাইকে ওপেন করে দিয়েছিলাম যে কেউ লেখতে পারে। দুষ্ট ছেলের দল কেউ লেখেনি। প্রথম কিস্তিটা লেখার পর সিসিবি বাড়ি বদল আমার দেশে যাওয়া এরপর বিশাল সময় সিসিবি থেকে দূরে থাকে ফিরে এসে অনেক মানুষের অনেক লেখার ভীড়ে এইটা আর আগায়নি। আজ নিজে নিজের পুরানো সব লেখা পড়ছিলাম। ভাবলাম সবাইকে আবার পুরাতন এটার কথা মনে করিয়ে দেই। যে কেউ পরের পর্ব লেখতে পারেন বিশেষ করে রবিন ভাই আপনি তো সাইফাই লেখেন আমাকে হেল্প করেন ভাইয়া। আমি নিজেই বিপদে আছি এই পর্বই কিভাবে লেখব।]
-মাশরুফ কি করিস? বলতে বলতে রুমে এসে ঢুকল রাহাত। “কিরে তোর মন খারাপ কেন এইবার তো সব কিছু কলেজে ঢুকায় ফেললাম রে পার্সোনাল ড্রেস সহ।
-আমিই তো তোদের জানালাম যে চেকিং কম্পিউটার ড্রেসের কালার ধরা শিখে ফেলেছে। আমাকে তো আর কেউ বলেনি আমি পারিনাই।
বলতে না বলতেই আরো কতজন এসে মাশরুফের রুমে ঢুকল। কে কি জিনিস এনেছে সেটা নিয়েই গল্প করছে । মাশরুফ ভাবছে তার লেজারফ্রেন্ডটা(প্রথম কিস্তি দ্রষ্টব্য) ও এখন বের করবে কিনা। এখন না বের করাই স্বিদ্ধান্ত নিল আজ যেহেতু বৃহস্পতিবার কাল তো বন্ধ আছে। আজ রাতে সবাইকে ও নিজের রুমে আসতে বলল। রাতেই সবাইকে টাশকি খাওয়ানো যাবে। নেক্সট উইকে আবার ইন্সপেকশন আছে তাতে যদি ধরা পড়ে যায় তাহলে বৃথাই হবে সব কষ্ট। হাউস প্রিফেক্ট আবার আগামী কাল ওনার পার্সোনাল ইন্সপেক্টর রোবটটা পাঠাবেন সেটা থেকে বাচতে পারলেই আর কোন ব্যাপার না কারণ কলেজের রোবটগুলা তো পুরান , প্রিফেক্ট দের বরাদ্দ গুলা ক্যাডেটরা নিজেদের বুদ্ধি দিয়ে অনেক উন্নত করে ফেলে। তার উপর ইমরান ভাইর সেই বুদ্ধি ইউজ করা যাবে না এই মাত্র মনে পড়ল কারণ ওনার বুদ্ধি নিশ্চয়ই উনি হাউস প্রিফেক্ট ফয়েজ ভাইকে বলেছেন আর সেই ১ মিটার জায়গা ধরার জন্য নিশ্চয়ই ফয়েজ ভাই অলরেডি ওনার ইন্সপেক্টরটাকে আপডেট করে ফেলেছে। আজকে পোলাপানের কাছে সেটা দেখাতে পারলে সবাই মিলেই বের করে ফেলা যাবে কোন উপায়। আর সব গেলেঅ এই লেজারফ্রেন্ডটা হারাতে মন চাচ্ছে না। মোবাইল ম্যানেজার দিয়ে ওর ধরা খাওয়া জিনিসগুলা উদ্ধার এর চিন্তা আপাতত বাদ দিল সে। ওগুলা খুব একটা ইম্পর্ট্যান্ট না।
ভাবতে ভাবতে বন্ধুদের অনেক কথাই ওর কানে ঢুকল না চট করে হাতের কাছে রাখা পাস্টমেমোরির বাটনটা চেপে দিল। এটা গতবার এনেছে ও। ধরা না খেয়ে এখনো ইউজ করছে। লাস্ট ১৫ মিনিটের কাহিনী মাথার ভিতরে স্টিমুলেশন করে পাঠিয়ে দেয়। এখন সবাই হাসছে নিশ্চয়ই কোন জোক্স হইছে এখন সবাইকে জিজ্ঞেস করলে মফিজ হতে হবে। এই পাস্টমেমোরিটা অনেক কাজে দেয় ওর। পরীক্ষার সময় বিশেষ করে। এই জন্য সবচেয়ে কঠিন কঠিন জিনিস ওকে পরীক্ষার ১৪ মিনিট আগে দেখতে হয়। এইটার কথা ওর জিগরি দুইতিনজন ছাড়া কেউ জানেনা। তবে এই ব্যাপারে ও একটা নীতি অবলম্বন করে বিশেষ করে পরীক্ষার সময়। ও ফার্স্ট হতে চায় না এরকম অন্যায় করে। শুধু যদি একেবারে পাশ করাটা কষ্টের হয়ে পড়ে তখন ব্যবহার করে। যেমন গতবার আমীর স্যার যখন অঙ্ক পরীক্ষা নিবেন বলেছিলেন তখনই সবার কান্নাকাটি শুরু হয়ে গেছিল। তখনই ও প্রথম ব্যবহার করে। স্যার কখনই বই থেকে প্রশ্ন করেন না এমন কি বইএর কোন সূত্র দিয়ে সরাসরি অঙ্কগুলা করা যায় না। তাই নকল করেও কোন লাভ হয় না। স্যারের সিস্টেম হল উনি পরীক্ষার আগে এসে একটা আধাঘন্টার লেকচার দেন সেখানে বই এর সূত্র গুলা কিভাবে ইউজ করে নতুন নতুন সূত্র বের করা যায় সেটার একটা হিন্টস থাকে তারপর প্রশ্ন দেন। যদিও স্যার ক্লাসে সেইরকম ভাবেই পড়ান তারপরও এই লেকচারটা বেশ ইম্পর্ট্যান্ট। যদিও ওদের ক্লাসের এই পর্যন্ত প্রতিটা পরীক্ষায় ফার্স্ট হওয়া কাইয়ূম কিন্তু ঠিকই ৯০ এর উপরে পেয়েছিল সেই পরীক্ষায়। এই ছেলে একেবারে জিনিয়াস কিন্তু ওদের সাথে সকল বাদরামিতে যখন থাকে তখন কেন যেন ওর মাথায় কোন বুদ্ধিই আসে না। ও তখন একনিষ্ঠ অনুসারী। সেখানে সবসময় লিড দেয় মাশরুফ। তাই ও কখনো চায় না অন্যায় ভাবে কাইয়ুম থেকে বেশি নাম্বার পাক। ও ঠিক করেছে এসএসসির সময় কাইয়ুমকে এইটার কথা বলবে। যদিও জানে কাইয়ুমের এইটা লাগবে না এমনিতেই ও পারফেক্ট জিপিএ ১০ স্কোর করবে। এইসব ভাবতে ভাবতেই শিডিউল টেলার (প্রথম কিস্তি দ্রষ্টব্য) বলে দিল আর ১৫ মিনিট পরে ডিনার কি কি মেনু। সবাই শোরগোল করতে করতে যার যার রুমে চলে গেল। মাশরুফ ও খুব দ্রুত তৈরি হয়ে গেল। একার জন্য মোটামোটি বড় এই ছিমছাম রুমটা পেয়ে ও খুবই খুশি যদিও ও সবচেয়ে ব্ল্যাক লিস্টেড বলে ওকে হাউস মাষ্টার থেকে কাছাকাছি রুম দিয়েছে। এতে অবশ্য ও খুশি হয়েছে জানা কথাই প্রদীপের নিচেই অন্ধকার থাকে। গত টার্মে ও ওর পার্সোনাল ড্রেস লুকিয়ে রেখেছিল হাউস মাষ্টারের রুমেই। কথাটা ভাবতেই ওর হাসি পেয়ে গেল। একই সাথে এবার ধরা পড়ে যাওয়ায় কষ্ট।

৩৫ টি মন্তব্য : “ক্যাডেট কলেজ – ২০৫০ (দ্বিতীয় কিস্তি)”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    লেখা ভাল হইছে, তবে পরের পর্বের জন্য আবার আগের মত গ্যাপ দিস না, তাইলে কাহিনি আসল ২০৫০ সালেও শেষ না হইতে পারে।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. আদনান (১৯৯৭-২০০৩)

    কলেজে মোবাইল ঢুকায়া তো জুনিয়র গুলা তৎকালীন কিউট টাইপের এক ম্যাডামের সাথে ফ্লার্ট-ও করসে (কাহিনী শুনসি); তারপর ধরাও খাইসে 😛

    যাই হোক, সায়েন্স ফিকশনের আমি বিশেষ ফ্যান... প্লীজ লেখা কন্টিনিউ করবেন। আমি নিজেও কলেজে থাকতে সায়েন্স ফিকশন লিখতাম কলেজ বার্ষিকীতে। সুস্থ থাকলে এটাও কন্টিনিউ করতাম কিন্তু হাতে ছ্যাচা খায়া অবস্থা খারাপ, টাইপ করতে জান বাইর হয়া যাইতেসে। মাপ কইরেন। ২ মাস পরে আমি সিকুয়েল ছারুম যদি তার মধ্যে শেষ না হয়া যায়...

    জবাব দিন
  3. মইনুল (১৯৯২-১৯৯৮)

    কামরুল, দারুন লাগলো পড়ে।
    তবে কাহিনি বেশি build up করার আগে সাধারন বাপারগুলো, এই যেমন, লেখাপড়া, পিটি প্যারেড, গেমস - এই গুলোর কিছু কিছু বর্ণনা দিয়ো। 🙂 🙂
    আমরা রুমের মধ্যে যেমন ইনডোর ক্রিকেট টুর্নামেন্ট করতাম, সেই টাইপের, কিন্তু নতুন কিছুর কথা লিখতে পারো।
    তবে শার্লীর মতন আমারো অনুরোধ থাকবে, প্লিজ নিয়মিত লিখো।

    জবাব দিন
  4. রবিন (৯৪-০০/ককক)
    যে কেউ পরের পর্ব লেখতে পারেন বিশেষ করে রবিন ভাই আপনি তো সাইফাই লেখেন আমাকে হেল্প করেন ভাইয়া।

    ভাই, আমি আগে সাইফাই দিতে চিন্তা করতাম সিসিবি তে। কিন্তু তোমার লেখা পড়ার পরই আমি আমার সিরিজ টা শুরু করি। আর প্রব্লেম নাই, লেখতে থাকো। লাগ্লে পরে ২/১ টা পর্ব লেখার ইচ্ছা আছে।

    জবাব দিন
  5. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)
    যদিও ওদের ক্লাসের এই পর্যন্ত প্রতিটা পরীক্ষায় ফার্স্ট হওয়া কাইয়ূম

    ২০৫০ সালে আমার মিতা প্রতিটা পরীক্ষায় ফার্স্ট হইতাছে দেইখা সেরকম খুশি লাগতাছে :clap: :clap:
    তপু, ডাক্তারের আপডেট কি?
    আর সিরিজটা কন্টিনিউ রাখিস। এই চান্সে যদি বোর্ডে ফার্স্ট হওয়া যায় B-)


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : কামরুলতপু (৯৬-০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।