ক্যাডেট ডায়েরী ( ১৯৯৬ )—- ২

পূর্ব পাতা
মার্চঃ ২৪
ওফফ আজ ক্যাডেট কলেজের ভাইভা পরীক্ষা ছিল। একটা অবশ্য মজা হয় ক্যাডেট কলেজের এই পরীক্ষাগুলার দিন। বেশ পিকনিক পিকনিক ভাব হয়। আমার পরীক্ষা ছিল শহীদ রমিজউদ্দীন স্কুলে। ক্যান্টনমেন্ট এর স্কুল গুলা কেমন যেন। কখনো আমি এর আগে ক্যান্টনমেন্ট এ যাইনাই ক্যাডেট কলেজের পরীক্ষা দেওয়ার আগে। আজ অবশ্য আমার বেশ টেনশন হচ্ছিল। কারণ আব্বুর সামনে ভাইভা প্র্যাকটিস করা ছাড়া আমি আসলে আর কিছুই করিনাই। আমাকে অনেকে বলেছে গ্লোব থেকে নাকি প্রশ্ন আসবে। আমি কিচ্ছু জানিনা। এমনকি বাংলাদেশের মানচিত্র থেকেও যদি কিছু জিজ্ঞেস করে আমার অবস্থা খারাপ হবে। হয়েছেও তাই। তার আগে এক ভাইয়া বলেছে যেই খানে পরীক্ষা হবে সেই বিল্ডিং এ কত গুলা সিঁড়ি থাকতে পারে সেটাও নাকি জিজ্ঞস করতে পারে। তাই সকালে দোতলায় উঠার সময়ই আমি সিঁড়ি গুনে উঠেছি।
প্রথমে ঢুকার পর আমাকে একটা অঙ্ক করতে দিল। অঙ্ক যেহেতু একটু নিশ্চিন্ত মনেই পেড়ে গেলাম। এরপর জিজ্ঞেস করল ট্রান্সলেশন। প্রথমটা পারলাম কিন্তু দ্বিতীয়টা গুলিয়ে ফেললাম। রংপুর এর প্রিন্সিপ্যাল ছিলেন উনি আবার ভাল মানুষ আমাকে বেশ হেল্প করলেন ফলে কোনমতে বলে দিলাম। এরপরই আমাকে বিশ্বের গ্লোবখানা এগিয়ে দিয়ে একটা দেশ বের করতে বলল। কোন দেশ সেটা শোনার আগেই আমি বলে ফেললাম স্যরি স্যার। এইটা শিখে এসেছিলাম। না পারা নাকি ব্যাপার না কিন্তু সেটা খুব স্মার্টলি কাটানো নাকি বিশাল ব্যাপার। আমিও তাই মুখে স্যরি রেডি করেই রেখেছিলাম। এরপর আমাকে বলে আসো তাহলে বাংলাদেশের মানচিত্র দেখাও। আমার মাথা আবার গেল খারাপ হয়ে। আমি আবারো বললাম স্যরি স্যার আমি ম্যাপ ভালো জানিনা। উনি বলেন আরে আসো নিজের দেশ পারবা আসো। কিন্তু আমাকে বলল কুয়াকাটা দেখাতে। কুয়াকাটা যে দেশের কোন দিকে তাই জানিনা। আবার সেই স্যরি। কিন্তু উনি নাছোড়বান্দা। শেষ পর্যন্ত আমাকে বলেছিল ঢাকা দেখাতে। আমাকে তখন স্যরিতে পেয়েছে। কি আর করা। আজ আবার শ্রীলংকা আর ভারতের খেলা ছিল স্বাভাবিক ভাবেই সেটা থেকে প্রশ্ন করল। এইটা আমার একটা লাভ হইছে। এমনিতেই সাধারণ জ্ঞাণ আমার অসাধারণ ভাবে খারাপ। খেলাধূলা হলে অবশ্য এমনিতেই জানি। সেই ভাবে বেঁচে গেলাম।
পরীক্ষা শেষ করে অবশ্য মনে হল ৬০-৪০ চান্স। দেখা যাক কি হয়। তবে একটা লস হয়েছে। ভাইভার আগ পর্যন্ত তো আব্বু জ্বালাত ভাইভার প্র্যাকটিস করার জন্য এখন আবার পড়ালেখা শুরু করে দিবে। নাহ টিকে গেলে আবার ২ মাসের জন্য শান্তি পাব। এখন যেন একটু একটু ক্যাডেট কলেজে পড়ার ইচ্ছা জাগছে।

৫ টি মন্তব্য : “ক্যাডেট ডায়েরী ( ১৯৯৬ )—- ২”

    • মান্নান (১৯৯৩-১৯৯৯)

      আমাদের প্রিন্সিপাল ছিলেন তখন লে: কর্নেল ওবায়দুর আনোয়ার। উনি আসলেই অসাধারন লোক ছিলেন, খুব হাসিখুশি, সাংঘাতিক স্মার্ট, হাসতেন দরাজ গলায়।

      উনি আমার ভাইভার সময় আমাকে জিগ্ঙেস করলেন "তোমার ওজন কতো ?"। আমার ওজন ছিল তখন মাত্র সাতাশ কেজি। কিন্তু ক্যাডেট কলেজের শর্ত ওজন হতে হবে কমপক্ষে তিরিশ কেজি। আমি আমার ওজন বললাম "সাতাশ কেজি স্যার"। উনি বললেন, "তোমার ওজন তো একটা বড় রাম খাশির সমান"। বলেই হাসতে থাকলেন উচ্চস্বরে, "হা হা হা"। সাথে তার সাগরেদ, ভাইস প্রিন্সিপাল স্যার ও এডজুট্যান্ট ও হা হা করে হাসতে থাকলেন । আমি বেকুবের মতো বসে থাকলাম। নিজেকে কেন জানি আসলেই রামছাগল রামছাগল মনে হচ্ছিল।

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মান্নান (ও-৮৮৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।