প্রবাসে প্রলাপ ০০৬

গতকালরাতে আমার ঘুম আসছিল না। শুয়ে শুয়ে কত কথা মনে পড়ে। অনেক আগে একসময় ঘুম না আসলেই একজনকে মেসেজ পাঠাতাম। ভার্চুয়ালি সে এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে যেত। চোখ বন্ধ করলে ঠিক যেন অনুভব করতাম স্পর্শটা। কাল অনেক চেষ্টা করলাম, স্পর্শটা ভুলে গেছি। স্পর্শ মনে করার সেই চেষ্টা আমার ঘুমকে আরো দূরে সরিয়ে নিল। মাথায় হাত বুলানোটা আমার এত্ত পছন্দের।
পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল, সামনে দুই মাসের মত প্রায় বন্ধ। কিচ্ছু করার নেই। এরকম সময় বেশি খারাপ লাগে। পরীক্ষার সময় যেখানে পড়তে বসলেই মনে হত শেষ হোক আগে তারপর টানা দুই-তিনদিন খালি ঘুমাব দেখা যায় যে সেই ঘুমই ছুটি নিয়ে ফেলে। সারাদিনের অসহ্য কাজহীন সময় পার করা বড়ই কষ্ট। রাতে কখন ঘুমিয়ে পড়লাম সেটা আর মনে নেই কিন্তু বেশ সকালেই ঘুম ভেংগে গেল সেটা অবশ্য ঘড়ির কল্যাণে। আমার রুম ৯ তলায় আর পূর্বদিকে একটা টানা জানালা। সেইদিকে একটা বিশাল সূর্য আস্তে আস্তে করে কেমন কোমল থেকে প্রখর হয়ে গেল তাই দেখলাম এতক্ষণ ধরে। একটু একটু করে সেটার তীব্রতার কাছে হার মেনে এখন চোখ সরিয়ে নিলাম। একটু আগেই কি সুন্দর কোমল ছিল দেখতে কত মিষ্টি লাগছিল। রূপ বদল করে ফেলল কিছুক্ষণের মধ্যেই। ভোরে উঠলে এই জিনিসটা ফাউ পাওয়া যায়।
একটা পার্ট টাইম করি নইলে সারাদিন ধরে শুয়ে শুয়ে এইসবই দেখতে হত সূর্য কিভাবে রঙ বদলায়। আমার অফিসে আমার টেবিলটাও একটা জানালার পাশে। সেটা যদি পশ্চিমমূখী হত তাহলে বেশ ভাল হত। কাজ করতে করতে সূর্যের জৌলুস হারানোটাও দেখতে পেতাম। কম্পিউটারে কাজ করতে করতে মাঝে মাঝে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি কখন যেন ছায়া লম্বা হতে শুরু করে দিয়েছে। কেমন যেন একটা অবসাদ পেয়ে বসে তখন আমাকে। ছোটবেলায় এই সময়ের জন্য অপেক্ষা করতাম। এরপর বেরিয়ে পড়তাম ঘর থেকে। আম্মু ঘুমে থাকলে সমস্যা হত , কারন আম্মুকে না বলে বাইরে যাওয়া নিষেধ ছিল আমাদের। বিকেলে খেলা শেষে আমরা যখন বাসায় ফিরতাম তার আগে একটা মজার ব্যাপার ছিল। আমরা বলতাম সন্ধ্যা কিল। সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার আগে একটা কিল দেওয়া যাবে । কিলের হাত থেকে বাঁচার জন্য পিঠে এক হাত দিয়ে আমরা ছুটতাম কার পিঠে হাত নেই তাকে একটা সন্ধ্যা কিল দেওয়ার জন্য। ভুল করে নিজে যদি একটা খেয়ে ফেলতাম তাহলে সেদিন রাতে প্ল্যান করতে হত কিভাবে তাকে পরেরদিন কিল ফিরত দেওয়া যায়। দিনের শুরুতেই আমি কেমন নষ্টালজিক হয়ে পড়ছি। আমার আপুসোনা আমাকে বলত তোর ছুটি না থাকাই ভাল। সারাদিন ক্লাস করবি প্রতি সপ্তাহে পরীক্ষা দিবি। ছুটি হলেই তোর সমস্যা মন উড়াল দেয়। ও বিরক্ত হবেই কারণ আমার মন খারাপ মানেই ওকে বিরক্ত করা বেড়ে যাওয়া।
সবাইকে সূর্যোদয়ের দেশ থেকে শুভ সকাল। যদিও এখানে এসে জানতে পারলাম এরা নিজেরাই জানে না যে জাপান সূর্যোদয়ের দেশ। আমরা কোথা থেকে শিখলাম সেটা। পরে আমিও হিসাব করে দেখলাম অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ জাপান থেকেও পূর্বে তাই সূর্য সেখানেই আগে উঠার কথা। কত কিছু যে আমরা পড়েছি।

৫০ টি মন্তব্য : “প্রবাসে প্রলাপ ০০৬”

  1. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ... :-B
    তোমার দুইমাসের ছুটি শুনে মন ভাল হয়ে গেল... 😀
    নিশ্চয়ই অনেক অনেক লেখা পাব... :thumbup:

    ভাল কথা এইটা ০০৫ হবার কথা নাকি ০০৬????
    একটু দেখ তো...


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  2. শার্লী (১৯৯৯-২০০৫)

    মন খারাপ কইরেন না। মন খারাপ করলে দুর্বলতা আপনাকে গ্রাস করার চেষ্টা করবে। তাই নিজেকে দুর্বল হওয়ার চান্স দেয়াই উচিৎ না বলেই মনে হয় আমার। আমার মন খারাপ হলে আমি বলি, "দূরে গিয়া মর শালা"।

    জবাব দিন
  3. রকিব (০১-০৭)

    মনের আর কী দোষ, তাকে তো আর লাগাম দিয়ে রাখা যায় না। আপনার মন খারাপের প্রহরগুলো সিসিবির সবাই ভাগাভাভগি করে নেবো। 🙂 🙂


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  4. তৌফিক (৯৬-০২)

    দিলি তো মনটা খারাপ কইরা। এই প্রবাসে মন খারাপ হইলেই একটা জিনিস খালি মনে হয়, এই যে সবাইরে ছাইড়া এতোদূর পইড়া আছি, এর কি কোন দরকার আছে?

    যাউজ্ঞা, মন ভালো কর। মন খারাপ কইরা থাইকা লাভ নাই। আজকে একটা কথা মনে হইল, তোর সাথে আমার দেখা হইছে খুব বেশি হইলে দশবারের মতো। শেষ দেখা মনে হয় হইছিল, বুয়েটে ২০০৩ সালের ৪ঠা জুন। এরপর চলে গেলি জাপান। ভালো কথা সুশি খাস? 😀 আমাদের এইখানে একটা সুশি বার আছে। কাঁচা মাছ খাওয়ার সাহসটা করতে পারলেই একদিন চইলা যাবো। 🙂

    জবাব দিন
  5. ভাইরে আপনারা পরবাস জীবনে এত কিছু থেকেও বলেন পরবাস একা? মন খারাপ করতে চান 🙁 . আমি যেই পরবাস জীবনে থাকি সেইটা হল আরো বহুত কঠিন। এইখানে মন খারাপ টাই স্বাভাবিক। তপুকে আমার হিংসা হয়। বিদেশ জীবনে আমি ওর থেকে জুনিয়র কিন্তু অনেক একা। ওরে প্রায়ই শুনি এই বাসায় ওই বাসায় ভাইয়ার বাসায় দাওয়াত ছিল আরো কত কি। আমার ফ্ল্যাট, আর রুমমেটগুলা আর জব প্লেস এর একজন ছাড়া আমার কোন সার্কেল নাই।আমি যেখানে থাকি সেটা পুরা গ্রাম। কোন বাংগালী সোসাইটি নাই। নির্মল বিনোদনের কিছু নাই এখানে শুধুই একাকীত্ব। যারা এই সমাজে মানাতে পারে তারা ছাড়া। আর মানানো মানে বখে যাওয়া।

    জবাব দিন
  6. তানভীর (৯৪-০০)

    তপু, তোমার লেখা পড়তে সবসময়ই আমার ভালো লাগে।
    লেখাটায় অনেক নিঃসঙ্গতার ছাপ।

    অনেক আগে একসময় ঘুম না আসলেই একজনকে মেসেজ পাঠাতাম। ভার্চুয়ালি সে এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে যেত। চোখ বন্ধ করলে ঠিক যেন অনুভব করতাম স্পর্শটা।

    থাক, আর কিছু বললাম না।
    আশা করি আরও ভাল থাকবে।

    জবাব দিন
  7. ইউসুফ (১৯৮৩-৮৯)

    কামরুল

    খুব ভাল লাগল তোমার লেখাটা পড়ে। দেশের ও মায়ের জন্য এই মন খারাপ লাগাটা দূর না করে জমিয়ে রেখ। জমানো সব দু:খ-কষ্টের এই তাড়নাই তোমাকে দেশের জন্য বড় কিছু করার প্রত্যয়ে ফিরিয়ে আনবে একদিন - আর আমরা ফিরে পাব আমাদের হারিয়ে যাওয়া মেধাবী ছেলেদের একজনকে।

    জবাব দিন
  8. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    মাইর দেয়া দরকার, মাইর দিলে লাইনে চিন্তা করব, মাইরের উপ্রে ওষুধ নাই।

    শুধু লেখার জন্য হইলে "ঠিকাছে"। তয় লেখাটা মারদাংগা হইছে। :hatsoff:


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  9. তাইফুর (৯২-৯৮)

    মাথায় হাত বুলানোটা যদি এতই পছন্দের হয় তাইলে হবিবা টা কইরা ফালা ... 😀
    আমি বুলানোর উপর আছি ... 😉


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন
  10. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    বিষন্নতা একটি রোগ। এই রোগের ওষুধ হচ্ছে ব্লগ খুঁইজ্জা খুঁইজ্জা জুনার কমেন্ট পড়া!! শুরু কইরা দাও। 😀 😀 😀


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আদনান (১৯৯৪-২০০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।