আমার কাজলাদিদিরা -৩ (চামু)

আমার কাজলাদিদিরা ২
ওর আসল নাম হচ্ছে চামেলী। আমার খালাত বোন। কলেজে ৯ এ উঠার সময় এক ছেলের সাথে আমার বাজি হল পরের টার্মে ওর থেকে আমি বেশি চিঠি পাব। কিন্তু টার্ম শুরু হওয়ার পর বুঝতে পারলাম খুবই অসম্ভব ব্যাপার। আমার বাসা থেকেই আমাকে মাসে একখানা চিঠি লেখে। আর ও প্রতি সপ্তাহে ৩-৪টা চিঠি পেয়ে যাচ্ছে। কি আর করা বাজিতে হারব বুঝে গেলাম। কিন্তু চিঠি পাওয়ার খুব ইচ্ছে থেকেই আমি চিঠি লেখা শুরু করলাম। কিন্তু লেখার মানুষ তো আমার বেশি নেই। সেই চিঠি লেখা থেকে মনে হয় আমার পরিবর্তন শুরু হল। ছোটবেলা থেকে যাদের মনে মনে পছন্দ করতাম কিন্তু বলতে পারতাম না চিঠি লিখতে গেলে দেখলাম খুব সহজেই পছন্দের কথা বলা শুরু করলাম। তখন আমার এই খালাত বোনকে চিঠি লেখা শুরু হল। সেও আমাকে উত্তর দিত। শুরু হল আমার চামু আপুর কাহিনী। চামেলী নামটা হারিয়েই গেল। শেষ কবে যে ওকে চামেলী আপু বলে ডেকেছি মনে পড়ে না। আপুও ডাকতামনা। ও হয়ে উঠল আমার এক কাজলা দিদি, চামু।
আমার কাজলাদিদির মধ্যেই ঐ একমাত্র আমার ফ্যামিলির ভিতরে। কিন্তু তবুও ওকে পেতে আমার অনেক দেরি হয়েছে। ছোটবেলা থেকেই আমার যে চিন্তা সবাই বুঝি আমার থেকে আমার ভাইদেরকেই বেশি আদর করে ওর বেলাতেও তাই হয়েছে। তবে এখন ওকে জিজ্ঞেস করি যদি তখন তো আমাকে আদর করতা পান্থ ভাইয়া আর কনকই বেশি আদর পেত তোমাদের, তখন সে বলে তোরে কইছে। একটু পরে অবশ্য বলে তুই তো চুপচাপ থাকতি এই জন্য বেশি আদর পাইতি না। কথাটা অবশ্য ভুল না। ছোট থাকতে আমি আদর নিতেই মনে হয় জানতাম না। ইশশ চুপচাপ না হয়ে যদি আরেকটু দুষ্ট হতাম তাহলে মনে হয় ছোটবেলা থেকেই অনেক আদর পেতাম। চিঠি লিখতে লিখতেই চামুকে পাওয়া। এর আগ পর্যন্ত ও ছিল আমার খালাত বোন অন্য সবার মত। তখনই সে আস্তে আস্তে হয়ে উঠল আমার খুব প্রিয় এক আপু। ওর বিয়ের আগ পর্যন্ত প্রতি টার্মে চামুর একটা করে চিঠি পেতাম। আমি অবশ্য লেখতাম অনেক। সবজায়গায় যেমন হয় ওর বিয়ের পর দুরত্ব বেড়ে গেল আপুর সাথে। তখন আমরা কলেজ থেকে বের হব হব। ওরা তখন নতুন ঢাকায় এসেছে আমাদের বাসার পাশেই। আমি কত প্ল্যান করছি যে অনেক মজা হবে অনেক দিন পরে আমি বাসায় ফিরছি। এবার আর বেড়ানো নয় একেবারে বাসাতেই থাকব। আর আমার পাশেই থাকবে আমার আপু চামু। কত কিছু ভাবতাম এই করব ওই করব। কিন্তু সব কিছু শুরু হওয়ার আগেই দেখলাম চামুর বিয়ে হয়ে গেল আর ও চলে গেল কুমিল্লাতে। ঢাকায় আসলাম কিন্তু চামুকে নিয়ে আমার কল্পনাগুলা আর বাস্তব হল না। ও যখন ঢাকায় আসত প্রতিদিন আমি যেতাম ওর সাথে গল্প করতে কিন্তু কেন যে মেয়েরা বিয়ের পর বদলে যায় সেটা তখনো বুঝতে পারতাম না এখনো পারিনা। ওর সাথে কথা বলতেই ভাল লাগত কিন্তু ও খুব চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল। কলেজ থেকে বের হওয়ার পর আর কখনো চিঠি লেখা হয়নি ওকে ও ও কখনো চায়নি। কলেজ থেকে বের হয়ে খুব অল্প দিনের জন্যই বাসায় ছিলাম। এরপর বাইরে চলে আসলাম । চামুর সাথে দুরত্ব বেড়ে যাচ্ছিল একটু একটু করে। ওর দুটি ছেলে হল সংসারকাজে ব্যস্ত আমার আপু। দেশে গেলে এক-দুইবার ওর সাথে দেখা হয় । এরকম করেই হয়ত চলত কিন্তু ও ঢাকা শিফট করল চাকরী নিল। ওর চাকরীটাই আবার আমাকে আমার চামু আপুকে পাইয়ে দিল। অফিসে ও সারাদিনই ইয়াহুতে থাকে। আর আমি তো সারাদিনই ফ্রি। ওর সাথে অনলাইন কথাবার্তা শুরু হল। একসময় আমি খুব মেন্টালি আপসেট ছিলাম। ও সবসময় খালি জিজ্ঞেস করত আমার কি হয়েছে। ওকে কেন কাউকেই ঠিক করে বুঝিয়ে বলতে পারিনি আসলে আমার কি হয়েছিল। যাই হোক আমার এই আপুটাকে আবার ফিরে পেয়ে আমি অসম্ভব খুশি। ওকে আমি অনেক পছন্দ করি আর সেকথাও ও জানে। ওকে যদি জিজ্ঞেস করি জানিস আমাদের ফ্যামিলিতে আমি সবচেয়ে বেশি কাকে পছন্দ করি ও তখন বলে আমাকে। চামু তোকে অনেক ভালবাসি আপু। আদর করিস সবসময় এখন যেমন করিস।

৪৯ টি মন্তব্য : “আমার কাজলাদিদিরা -৩ (চামু)”

  1. তৌফিক (৯৬-০২)

    আগেও বলছিলাম, এখনো বলি। আমার দুইটা বোন আছে, দুইটারেই নিয়া যাইতে পারস। 😀

    বাসায় যখন বাজারে যাইতে হয় বা কোরবানির মাংস ম্যানেজ করতে হয় তখন একটা ছোট ভাইয়ের জন্য বুক হাহাকার করে। ছুডু একটা ভাই থাকলে ওরে দিয়া এইগুলা করায়া নিজে আরাম করতে পারতাম। বোন দিয়া কোন কাম হয় না, এরা থাকে খালি পিছে লাগার ধান্ধায়। 🙁

    জবাব দিন
  2. জ়ে এম সারোয়ার মুজিব ( এডিসন) (১৯৭৯-১৯৮৫)

    আমার বড়বোন কিন্তু আমার মা'য়ের মতো। ও আমার থেকে মাত্র ৪ বছরের বড়। আমার মা শিক্ষিকা ছিলেন তাই ছোটবেলায় আমার আপা গোসল করান, ভাত খাওয়ান সব দায়িত্ন পালন করতো। এখন বাবা মা বেঁচে নাই আপা কিন্তু মা'য়ের জায়গাতেই আছে।

    জবাব দিন
  3. আন্দালিব (৯৬-০২)

    আমার একটা পিচ্চি বোন আছে, বয়সে মাত্র চার বছর ছোট, কিন্তু সারাজীবনেও আমার চোখে 'বড়' হতে পারবে না মনে হয়। যখন দুই, কি তিন বছর বয়স, একবার পড়ে গিয়ে খুব ব্যথা পেলো। বাসায় কেউ ছিলনা। আমি খুব ঘাবড়ে গেলাম ওর কান্নায় আর ও খালি বলছিল, "বাইয়া, ব্যতা কলে!" সেই আধোবোল এখনও কানে বাজে...।
    তোরলেখা পড়তে পড়তে মনে হলো একদিন আমার বোনেরও বিয়ে হয়ে যাবে আর যোগাযোগটাও হয়তো আস্তে আস্তে কমে আসবে। এক শহরে থেকেও হয়তো দেখা হবে না, কথা হবে না! ব্যাপারটা ভাবতেই মন খারাপ! ধুর!

    জবাব দিন
  4. কামরুলতপু (৯৬-০২)

    এডিসন ভাই, আন্দালিব আর কামরুল ভাইর প্রতি ভীষণ রকম হিংসিত। একটা ডায়লগ দিতাম আগে

    আমার দুর্ভাগ্য আমার কোন বড় বোন নাই আর পৃথিবীর তাবৎ মেয়ের দুর্ভাগ্য কেউ আমার বোন হইল না একেবারে মাথায় তুইলা রাখতাম।
    জবাব দিন
  5. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    যথারীতি তপুর খুবই আবেগময় লেখা, আমাদের মত বোন-লেস ক্রিয়েচারদের হাহাকার শতগুণে বাড়ায় 🙁 জগতের সকল বোন-ধারী ভাইদের জন্য ব্যাপক হিংসা আনে 🙁 🙁


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  6. কামরুলতপু (৯৬-০২)

    এই লেখাটা আমার বোন পড়েছে। এরপর আমার বাসায় গিয়ে মহা খুশিতে আম্মুকে এইটার কাহিনী বলেছে, " তপু আমাকে কাজলাদিদি বানাইছে"। আমার মা বেশি কিছু বুঝে নাই তাই ছোটভাইকে জিজ্ঞেস করছে ব্যাপারটা কি।

    জবাব দিন
  7. সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯)
    কিন্তু কেন যে মেয়েরা বিয়ের পর বদলে যায় সেটা তখনো বুঝতে পারতাম না এখনো পারিনা।

    আমার মনে হয়, এই প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারবে তোমার বিয়ের পর তোমার শ্যালক :grr:


    "আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
    আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : জ়ে এম সারোয়ার মুজিব ( এডিসন) (১৯৭৯-১৯৮৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।