প্রবাসে প্রলাপ ০১৬

১।
আমার প্রবাস জীবন প্রায় ৮ বছর হতে চলল। ৮ বছরে প্রায় ১৫ খানা ঈদ করেছি একা একা। বেশির ভাগ ঈদই ক্লাস করে কিংবা ঘুম দিয়ে পার করে দিয়েছি। এবারের কোরবানি ঈদ একেবারে ব্যতিক্রম কাটল। একটাবারের জন্য ও মন খারাপ হয়নি। খুব খারাপ হলেও একবারের জন্য ও মনে হয়নি যে দেশে থাকলে ভাল হত। সত্যি বলতে কি দেশ ই আমার সাথে ছিল এবার। আমার আম্মু ছিল এইবার আমার কাছে। আল্লাহ মাঝে মাঝেই মানুষকে বেশ কিছু সারপ্রাইজ দিয়ে দেয়। কখনো ভাবিইনি আমার সাথে প্রবাসে আম্মু এসে থাকবে। লম্বা ভিসা প্রক্রিয়া, প্লেনের টিকেট কাটা, সাথে আসার নির্ভরযোগ্য লোক খোঁজা এইসব করে শেষ পর্যন্ত একদিন আম্মু এসে হাজির হয়ে গেল আমার কাছে। এয়ারপোর্টে আম্মুকে বের হতে দেখেও আমার নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছিল না। সাথে ছিল আমাদের কলেজেরই দুই ব্যাচ জুনিয়র একটা ছেলে। ওকে ঠিকমত ধন্যবাদ ও জানানো হয়নি, আম্মুকে পেয়ে আমি এত এক্সাইটেড হয়ে গিয়েছিলাম। অবশ্য ক্যাডেট বলে কথা তাও নিজের কলেজের এসবে ধন্যবাদ জানানোই কেমন ফরমালিটিস এবং বাহুল্যতা।

জাপানে আম্মু

জাপানে শুভাগমন

২।
অন্যান্য ঈদে যেমন কোনমতে ঘুম থেকে উঠেই নামাজ পড়ে নিত্যদিনের কাজ শুরু করে দিতাম এবার তেমনটি হয়নি। একে তো আম্মু ছিল আমার সাথে তার উপর রবিবারে পড়েছে ঈদ। নামাজ পড়ে এসে বহুদিন বাদে আম্মুকে সালাম করলাম। যদিও আম্মু ঈদের সালামি দেয়নি। তবে আম্মুকে জড়িয়ে ধরে প্রথম যে কথা মনে হয়েছে যারা প্রতি ঈদে এই সুযোগ টুকু পায় তারা আমার থেকে অনেক অনেক সৌভাগ্যবান। আর আমার ছোটভাইটা এইবার জীবনে প্রথম আম্মু ছাড়া ঈদ করল।

ঈদ আনন্দ

ঈদ আনন্দ

৩।
প্রতিদিন আম্মু একবার করে আমাকে মনে করিয়ে দেয়, আমাকে ছাড়া আম্মু একা একা ফিরতে পারবে না। এবং আমার লাইফস্টাইল দেখে আম্মু সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে আমাকে আর জাপানে ফেরত পাঠাবে না। আম্মুর হিসেব মতে আগামী ফেব্রুয়ারী বা মার্চ মাসে আমার এখানকার অস্থায়ী সমস্ত জিনিসপত্র নিয়ে আমাকে বগলদাবা করে আম্মু বাংলাদেশ ফেরত যাবে। তাহলে এপ্রিল থেকে আমার আর প্রবাসে প্রলাপ লেখা লাগবে না। দেখা যাক উপরে যিনি বসে বসে সব কিছু ঠিক করেন তিনি কি সারপ্রাইজ রেখেছেন।

অনেকদিন পর লেখলাম। ইদানিং আর একদমই ব্লগাব্লগির মুড আসে না।

১,২৬৩ বার দেখা হয়েছে

২৪ টি মন্তব্য : “প্রবাসে প্রলাপ ০১৬”

  1. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    ভাল্লাগলো পড়ে।তোর চেয়ে স্ট্রাইক রেটে দেখি আমি আগায়া। মাত্র ১৪ মাস বিদেশে থেকে ৪টা ঈদ করে ফেলসি। 🙂 🙂

    তোরে খুশি দেখলে ভাল্লাগে কোন কারণ ছাড়াই !!!

    জবাব দিন
    • কামরুলতপু (৯৬-০২)

      এখন খুব মজায় সময় কাটাচ্ছি তবে মনে হচ্ছে এই মজার কারণে আর একা একা বিদেশ থাকতে পারব না।
      সময় যে খুব ভাল যাচ্ছে তা না কিন্তু। অনেক ঝামেলায় ও আছি বিভিন্ন জিনিস নিয়ে। আম্মু সাথে আছে দেখে কপাল ভাল নইলে পাগল হয়ে যেতাম মনে হয়।

      জবাব দিন
  2. সামিয়া (৯৯-০৫)

    কি ভালোলাগলো লেখাটা...কেমন আদর আদর একটা পোস্ট...

    তাহলে এপ্রিল থেকে আমার আর প্রবাসে প্রলাপ লেখা লাগবে না।

    এই কথাটাতে কত যে খুশি উপচে পড়ছে পাঠক মাত্রই বুঝতে পারব। ভালো লাগলো তপু ভাই। আপনি দেশে ফিরে এসে আপনার যাবতীয় মন খারাপ ভাব কাটায় উঠেন...

    জবাব দিন
  3. আমার বিদেশ জীবন তোর থেকে বছর দেড়েক কম , তবে আমি তোর মতো সৌভাগ্যবান না......কিন্তু আম্মু র আগমন নিয়ে তোর উচ্ছাস আমাকে ক্ষণিকের জন্য যেমন পুলকিত করেছে তেমনি হিংসিত করেছে .........তবে সান্তনা কনককের কথা মনে করে...... তোর এই লিখা আবার স্বপ্ন দেখাচ্ছে তিন ভাই এক সাথে ঈদ গায়ে যাচ্ছি......।

    জবাব দিন
  4. সামি হক (৯০-৯৬)

    আমি ভাবলাম অগোছালো দেখে ওইখানেই কোন মেয়ে দেখে ছেলের বিয়ে দিয়ে দিবেন আন্টি। অবশ্য বলা যায় না বগল দাবা করে ঢাকা নিয়ে বিয়ে দিয়ে দিতে পারেন 😀 ।

    তপু খুব ভালো লাগল, আর তোমার আনন্দটা ছুয়ে গেল।

    জবাব দিন
  5. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    তপু,
    তোমাকে হিংসে হচ্ছে।ফাটিয়ে মজা করে নাও ক'দিন। প্রবাসে বাড়ির আনন্দ কেমন অবিশ্বাস্য ঠেকে, না? বাইরে থেকে ফেরার সময় মনে হয়, আরে, সত্যিই বেল বাজালে মা দরজা খুলে দেবে! চিমটি কেটে দেখতে ইচ্ছা করে, স্বপ্ন দেখছি নাতো! 🙂

    জবাব দিন
  6. আহ্সান (৮৮-৯৪)

    তপু,
    তোমার লেখা পড়ে আমার উপলব্ধি, "আল্লাহ আসলেই অনেক ভালো রেখেছেন আমাদেরকে (যারা দেশে পরিবারের সান্নিধ্যে আছি)"।
    দোয়া করি দেশে এসে অতি শীঘ্রই তোমার জীবনের আরো সুখী ইভেন্টগুলো ঘটে যাক... 😀

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : শহীদ (১৯৯৪-২০০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।