প্রবাসে প্রলাপ ০০৪

অনেকদিন কিছুই লেখা হচ্ছে না। পড়ালেখার মধ্যে থাকলে ৬ মাস অন্তর অন্তর সবাইকে যে একখানা ঝামেলায় পড়তে হয় আমি এখন সেই ঝামেলায় আছি। সামনে পরীক্ষা ১০ তারিখে শুরু হবে। ক্লাস শেষ হয়ে গেছে, সারাদিন তাই বাসায় বসে বসে পড়ার চিন্তাভাবনা করি কখনো পড়তে বসি আবার কিছুক্ষণ পরেই দেখি পড়া বাদ দিয়ে অন্য কাজ শুরু করে ফেলেছি। এই যাচ্ছে কিছুদিন। তাই বলে অবশ্য আমার অন্য কোন কাজ থেমে নেই এই শনিবারে গিয়েছিলাম এক বড় ভাইর বাসায়। ওনারা দেশে ঘুরে এসেছে। আসার সময় সবাই বেশ কিছু খাওয়া দাওয়া নিয়ে আসে, তাই কেউ দেশ থেকে ঘুরে আসলে ওখানে বেড়াতে যাওয়ার একটা মজা আছে। এবার আমি দীর্ঘ ৫ বছর পরে বরই খেলাম। বরই বলে যে একখানা ফল আছে বাংলাদেশে তা ভুলেই গিয়েছিলাম। তাই ভাবতে বসেছিলাম আর কি কি খাইনা বহুদিন। লিষ্ট অনেক বড় হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। খাওয়া দাওয়া দেশে থাকতে খুব একটা পাত্তা দিতাম না কিন্তু বিদেশে এসে কেন যেন কি মিস করছি ভাবলে প্রথমেই খাওয়ার কথাই মনে আসে। আমি অবশ্য ইমোশনাল এটাচমেন্ট গুলা বেশি মিস করি তবে সেটা ডিফাইন করা অনেক বেশি ঝামেলার।
আমার এক খালাত ভাই আছে অস্ট্রেলিয়ায় থাকে। ওই খালা গিয়েছে ভাইয়ার কাছে বেড়াতে ওর মেয়ে হয়েছে সেই উপলক্ষ্যে। আমি ফোন করেছিলাম কি যে হিংসিত হলাম আহারে কি মজায় আছে এখন ভাইয়া। পরীক্ষা শেষ হলে দুই মাসের একটা বন্ধ পাব। খুব একটা খুশি লাগছে না। দুই মাসের ছুটিতে যদি দেশে যেতে পারতাম। আগে ভাবতাম দেশে বছরে একবার গেলে বাকি বছরের জন্য গিয়ার পাওয়া যায়। দিনদিন এইটা দেখি কমে যাচ্ছে। এখন দেশে থেকে ঘুরে আসলে ৩ মাস পার হলেই আর ভাল লাগে না। দিনদিন দেখি বাচ্চা হয়ে যাচ্ছি।
আলমের পোষ্টটা পড়ে তাড়াতাড়ি হাউসফুল নাটকটা দেখলাম। আমিও ইদানিং এই নাটক দেখছিলাম। (আগে থেকে কাহিনী বলে দেওয়ার জন্য আলমের ব্যাঞ্চাই) মিথিলার অসুস্থ হওয়ার পর্বটা দেখে চোখে পানি চলে আসল। সবাই জানে আমার আবার বোনের জন্য একটা বিশাল সফট কর্ণার আছে। কেন যেন আমার খুব খারাপ লাগল মনে হল নিজের বোনের এরকম হলে কি হত ফিলিংসটা অনুভব করলাম। ফ্যামিলি আসলেই এমন একটা জিনিস এর আবেগগুলা কখনোই কারো জন্যই বদলায় না। মা মনে হয় মানুষের সেরা সম্পদ। কোথায় যেন পড়েছিলাম বিধাতা সবার সাথে থাকতে পারে না বলেই নাকি সবাইকে একটা করে মা দিয়েছে। আর ভাই বোন এর স্থান মনে হয় এর পরেই। বাবারা কি একটু খানি পিছিয়ে থাকে এই জায়গায়? দায়িত্ববোধ আর কর্মব্যস্ততা? আমি অবশ্য ঠিক বুঝি না কারণ আব্বুর সাথের স্মৃতিগুলা সেই পিচ্চি বয়সের তখন ভয় পেতাম। বড় হয়ে ফ্রি একটা সম্পর্ক হলে কেমন হত তা ঠিক কল্পনা করতে পারি না। এখনকার পিচ্চিদের যাদের বাবা মা দুজনই চাকরী করে তাদের বাবা মার প্রতি ফিলিংস গুলা কেমন হয় আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে।
একটা ছোট কাহিনী বলি। এটা আমার অনুকাহিনী সিরিজে দেওয়া যেত। কেমন লেখাটা একটু ভারী হয়ে গেল শেষে এসে তাই একটু হালকা গল্প
” আমার এক মামাতো বোন (পিয়াপু) এর বাচ্চা হওয়ার পর ওকে দেখতে গিয়েছিলাম হাসপাতালে। ও ছিল মনোয়ারা না আনোয়ারা বলে কি একটা হাসপাতাল আছে বেইলি রোডে সেখানে। তো হাসপাতালে গিয়ে নিচে ভাইয়ার সাথে দেখা। ওনাকে জিজ্ঞস করলাম ভাইয়া আপু কেমন আছে , পিচ্চি কেমন হল। বলল যা দেখ তোর আপুকে আর আমার পিচ্চি হইছেই সেইরকম। জিজ্ঞেস করলাম মানে কি? বলে যে তোর আপু যেই কেবিনে আছে সেটার পাশে একটা জানালা আছে যেটা দিয়ে তাকালেই সামনে ভিকারুন্নিসা স্কুল দেখা যায়। আমার পিচ্চি হওয়ার পর থেকে একচোখ বন্ধ করে সেদিকে তাকিয়ে আছে। ”

২৮ টি মন্তব্য : “প্রবাসে প্রলাপ ০০৪”

  1. জ়ে এম সারোয়ার মুজিব ( এডিসন) (১৯৭৯-১৯৮৫)

    বিধাতার অনেক রুপ যা বাবা আর মায়ের মধ্যে ভাগ করে দেন। কোথাও মা বেশী আদর করে আবার কোথাও বাবা। দূজনের যোগফলই বিধাতার বৈশিষ্ট। সুধু আদর পাইলে তো মাথায় উঠতা, তাই ডান্ডার ব্যবস্থা বিধাতাই করে দিয়েছেন পৃথিবীতে।

    জবাব দিন
  2. বিধাতা সবার সাথে থাকতে পারে না বলেই নাকি সবাইকে একটা করে মা দিয়েছে। আর ভাই বোন এর স্থান মনে হয় এর পরেই।

    মানুষ এরকম উক্তি করে কিভাবে। বুকের ভেতরটা এফোড়-ওফোড় করে দেয়। আজীবন মস্তিস্কে পারমানেন্ট ইমপ্রিন্ট হবার মত কথা।

    জবাব দিন
  3. রহমান (৯২-৯৮)
    যা দেখ তোর আপুকে আর আমার পিচ্চি হইছেই সেইরকম।
    তোর আপু যেই কেবিনে আছে সেটার পাশে একটা জানালা আছে যেটা দিয়ে তাকালেই সামনে ভিকারুন্নিসা স্কুল দেখা যায়। আমার পিচ্চি হওয়ার পর থেকে একচোখ বন্ধ করে সেদিকে তাকিয়ে আছে

    শেষের লাইন পড়ে বুঝলাম পিচ্চিটা পুত্র সন্তান 😀 :awesome: 😉

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : জুনায়েদ কবীর(৯৫-০১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।