ক্যাডেট কলেজ -২০৫০ (প্রথম কিস্তি)

[এই লেখাটা মাশরুফ কে উৎসর্গ করা। এই লেখার থিম ও আমাকে দিয়েছে। কেউ যদি এই লেখা চালাতে চাও আমার আপত্তি নাই। তবে কেউ নাই মনে হয় ঐরকম]

-“ক্যাডেট মাশরুফ আপনি প্লিজ হলুদ বক্সের ভিতরে এসে দাড়ান”
ঘড়ঘড়ে একঘেয়ে যান্ত্রিক গলা শুনেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল মাশরুফের। শালার বাসা থেকে কলেজে ঢুকার সময়ে এই চেকিংটা না হলেই কি নয়? নতুন ৯ এ উঠেছে ও। কত কিছু যে এইবার নিয়ে এসেছে। না ধরা পড়লেই হয়। চেকের আবার কত রকম বহর দেখ না। যান্ত্রিকভাবে স্ক্যান হবে ওর সারা দেহ। ব্যাগ হবে আরেক জায়গায়। আগে এক সময় নাকি পোলাপান গায়ের মধ্যে বেধে দুষ্টু বই কলেজে ঢুকাতো। গত মাসে রিইউনিয়নে এক ভাইয়া এই কথা বলে গেল। ওরা সবাই হা হয়ে গেছে ওদের এত আরাম দেখে। তখন নাকি স্টাফ বলে একটা জিনিস ছিল ওনারা চেক করত। শালার তাহলে কি আর ওকে এত ভাবতে হয় কিভাবে জিনিস ঢুকাবে। এইসব ভাবতে ভাবতেই হলুদ বক্সের ভিতরে দাঁড়াল ও।
-“ক্যাডেট মাশরুফ আপনাকে আপনার হাত দুটা বক্সের সীমানায় ঢুকানোর অনুরোধ করা হচ্ছে। আপনার হাত দুটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।”
ওরে বাবা এই সিস্টেম উন্নত হইল কবে? আগে তো হাতের মধ্যে বই নিয়ে হাত দুটা বক্সের বাইরে রাখলেই কেউ বুঝত না। এখন দেখি এই ব্যাটা যন্ত্র আমার হাত পাও খুঁজাখুঁজি করে। ধুত্তোরি বইটা কি করি এখন। একটাই বই অবশ্য কিন্তু তার ভিতরে পাতা কেটে সিগারেট ঢুকানো আছে। আর কিছু জায়গায় নিষিদ্ধ কিছু বই এর পৃষ্টা সাঁটানো আছে। কি যে করি। দেখি আপাতত এরে থামাই ব্যাগের সেলোফিনের ভিতরে রাখতে হবে। ওইরকম করে ব্যাগের ভিতরে আবার আছে লেজারফ্রেন্ড* এবং বন্ধুদের চমকে দেওয়ার জন্য আরো কিছু জিনিসপত্র। বইটা তাই হাতে করে ভিতরে ঢুকানোর ইচ্ছা ছিল ওর। পারা গেল না । দিন দিন এই চেকিং রোবটটা বেশি স্মার্ট হয়ে যাচ্ছে। আজকের পোলাপান দেরি করে আসতেছে কেন। ও বেশি তাড়াতাড়ি এসে গেল নাকি?
চেক শেষ করে হাউসের দিকে যাচ্ছে মাশরুফ। আজ তার কপাল খারাপ সব জিনিস ঢুকাতে পারলেও personal dress বুঝে ফেলেছে। তাই ওটা রেখে আসতে হয়েছে। দেখা যাক মোবাইল ম্যানেজারটা* তো সাথেই আছে। আজকে রাতের আগে একটা অপারেশন চালানো যায় কিনা। রাতের মধ্যে না আসতে পারলে জিনিস গুলা জমা হয়ে যাবে একসাথে। অবশ্য এখনই অন্যদের জানিয়ে দিতে হবে যে ব্যাগের মধ্যে কাপড়চোপড়ের কালার ধরে ফেলতে শিখে গেছে যন্ত্রটা। ধুর ওর জিনিসগুলাই ধরা খেল। হাউসের দিকে যেতে যেতে আজকের দিনের কর্মকান্ড সম্পর্কে শুনছে ও। রাস্তার ধারের শিডিউল টেলার ওকে জানিয়ে দিচ্ছে ও হচ্ছে ওদের হাউসের ওদের ক্লাসের প্রথম ক্যাডেট। ডায়নিং হল এ গেলে ও এখন ওর জন্য বরাদ্দকৃত দুপুরের খাবার খেতে পারবে। আরো হেনতেন। মাশরুফ এখনো তার পোশাকের দুঃখ ভুলতে পারছে না। কত সিস্টেম করে এইবার কিছু সাদার ভিতরেই কাজ করা পাঞ্জাবি এনেছিল আর একটা রঙ্গিন টুপি। ওই দুইটা কলেজের ভিতরে পড়াও টাফ হত অবশ্য। সেই দুটাও ধরে ফেলল ।
রুমের সামনে এসে নিজের আঙ্গুলের মাথা স্ক্যান করে রুমের ভিতরে প্রবেশ করল মাশরুফ। কেউ যখন আসেনি এই ফাঁকে নিয়ে আসা জিনিসপত্র লুকানোর ব্যবস্থা করে ফেলবে ও। গতবার ইন্সপেকশন রোবটটা যখন অনেক জ্বালানো শুরু করল তারপর অনেক পরে তারা জানতে পারল রুমের দরজা থেকে প্রথম এক হাতের অংশের নিচের ১ ফুট জায়গায় রোবটটার চোখ মানে ওর স্ক্যানার যায় না। ঐখানেই রাখতে হবে সিস্টেম করে। এই আবিষ্কার অবশ্য ওদের না। রকির টেবিল লিডার ভাইয়া আবার ফিজিক্সে বস। রহমান স্যার ও নাকি ওনার কাছে কিছু না। উনিই অনেক হিসাব নিকাশ করে এইটা বের করেছেন। টেবিলে গল্প করছিলেন তখন রকি শুনে ফেলেছে। পরে ঐটা সত্যি কিনা দেখার জন্য ওরা গত টার্মে শেষ ইন্সপেকশনটায় সব ময়লা সেই জায়গাটুকুতে জমা করে রেখেছিল। কিন্তু ধরা খায়নি। এইবার সেই জায়গায় ওদের অবৈধ জিনিসগুলা রাখা হবে। লেজারফ্রেন্ডটা নিয়ে ও অবশ্য একটু চিন্তায় আছে। সেটা আবার ফ্রিকোয়েন্সি রিসিভ করে। মোবাইল ম্যানেজার তো অফ করে রাখা যায়। কিন্তু লেজারফ্রেন্ডটা বন্ধ করলেও কিছু ফ্রিকোয়েন্সি অন থাকে। সেটা না আবার রোবট এর সাথে কনফ্লিক্ট করে। এই জিনিসটা মাশরুফের খুব শখের। একই সাথে টিভি, স্যাটেলাইট পিসি সব কিছুর কাজ করে এইটা। অথচ একটা ক্যালকুলেটর থেকে বড় নয়। পিসির ব্যাপারটা খুব মজার। দু পাশ থেকে লেজার বের হয়ে সামনে মনিটর হয় আর এই পাশে হয় কি বোর্ড। এইটার ভিতরে করে ও এইবার সেইরকম জিনিস এনেছে। অন্তত ১০ টা ফ্ল্যাশ মেমোরি এনেছে জিনিসপত্র ভর্তি। সবাইকে টাশকি লাগিয়ে দেবে।

১৭ টি মন্তব্য : “ক্যাডেট কলেজ -২০৫০ (প্রথম কিস্তি)”

  1. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

    আমারও চরম লাগছে। যদি কেউ কিছু মনে না করেন, আমিও একটা পর্ব লিখতে চাই। কিন্তু আবীরের মতই বলছি, পরীক্ষার পরে। ততদিনে আরও কয়েকটা পর্ব এসে গেলে তো আরও ভাল।

    জবাব দিন
  2. রকিব (০১-০৭)

    এই সেই স্মরণীয় পুষ্ট, যেইটায় রায়হান ভাই আমারে ভাইয়া কইছিল 😛 😛 ।
    এই পুষ্টটার একটা গতি করেন কেউ। রায়হান ভাই, মুহাম্মদ ভাই, কামরুলতপু ভাই- কেউ কথা রাখেনি :(( :((


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : তারিক

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।