হালখাতা

শুভ নববর্ষ ১৪১৮।
বাংলা ক্যালেন্ডার এমনিতেই পিছানো থাকে গ্রেগরিয়ান বছরের তুলনায়। পাক্কা ৫৯৩ বছর, ভাল ভাবে বললে ৫৯৩ বছর ৩ মাস ১৩ দিন ৬ ঘন্টার এদিক ওদিক। এই জন্যই বুঝি আমরা এখনো পিছিয়ে পশ্চিমের তুলনায়। শুধু তাই নয় দিন শুরুতেই পিছিয়ে পড়ি কমসে কম ৬ ঘন্টা। গ্রেগরিয়ান(যাকে আমরা ইংরেজি ক্যালেন্ডার বলি) দিন যেখানে শুরু হয় রাত ১২টায় আমাদের বাংলা দিন শুরু হয় ভোরে সূর্যের সাথে। আরবি দিন শুরু হয় চাঁদের সাথে। চাঁদের সাথে রোমান্টিকতা যতটা যায় সূর্যের সাথে ততটা যায় না। তবুও আমরা অনেক বেশি রোমান্টিক। যে বৈশাখ আসলে সবার সকল রকম যন্ত্রনা শুরু হবে তার জন্য ও কতটা রোমান্টিক ভাবে ডাকাডাকি। এত মধুর ডাকেও তার মোটেও মন ভরবে না। সেই গা পুড়িয়ে দিয়ে রোদ হবে, আকাশ কাল হয়ে ঝড় হবে, হঠাৎ করে বেড়ে যাবে ঘরে ফেরার যানবাহনের ভাড়া, আর বাসায় ফিরে টুপ করে চলে যাবে কারেন্ট। তবুও যেহেতু ডাকলেও আসবে না ডাকলেও আসবে তাই আমরা আমাদের মন ভরাতে তাকে সুন্দর করেই ডাকি,
” এসো হে বৈশাখ, এসো এসো”

সিসিবির হালখাতা হওয়া প্রয়োজন। অনেক অনেক তারকা ব্লগার এর বাকির খাতা দিনকে দিন লম্বা হয়েই চলছে। তারা আদৌ তা জানেন কিনা কে জানে সিসিবির পাঠকরা ঠিকই তাদের কাছে পাওনা ব্লগের হিসাব রাখে।

একজন একসময় খেরোখাতা লেখতেন। তার পর অনেক চন্দ্রভুক অমাবস্যা চলে গেছে উনিও এমবিএ ভর্তি হয়ে পাশ ও করে ফেলেছেন মনে হয় খেরোখাতা আর আসেনি। যাই হোক আমাদের মনে আছে।একজন ছড়াকার ছিলেন যিনি আবার সিসিবির প্রাণ। তার ছড়া হারিয়ে গেছে সিসিবির পাতা থেকে, আশা করি তার জীবনে ছড়া থামেনি। সময় সুযোগে সেই পাওনা ফিরিয়ে দিতে তাকে আবার পাওয়া যাবে। পড়ালেখা বিমুখ ব্লগারদের সাহায্যের জন্য এক আর্মি অফিসার ছিলেন, গাইড বইএর প্রচলন চালু করেছিলেন। পাঠ্যবই সব সোজা হয়ে যাওয়াতে তারও বাকির খাতা লম্বা হচ্ছে। একজন দুষ্ট কবি ছিলেন। যার অসম্ভব সুন্দর সুন্দর দুষ্ট কবিতা দেখে এক অ,আ,ক,খ পড়িয়ে এবং পড়ানে আপু তাকে রবীন্দ্রনাথ এর পরে প্রিয় বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তাদের দুজনের বাকির খাতাও সাদা নেই। ছোটগল্প লেখার জন্য এক রাশুর খুব ভক্ত হয়েছিলাম। সেই সাথে কঠিন কঠিন কথা দিয়ে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী(থুক্কু সত্যপ্রচার, আমি বুঝতাম না দেখে কল্পের মত লাগত) লেখত এক বিজ্ঞানমনস্ক ছেলের জ্ঞান দেখে চমৎকৃত হয়েছিলাম। তারা আমাদের চমৎকৃত করে দিয়ে লোপাট হয়েছে দীর্ঘদিন হল। আমার এক বন্ধু ছিল অদ্ভুত সুন্দর করে কঠিন সব ভাষার চমৎকার গাঁথুনি দিয়ে শব্দ নিয়ে খেলা করত। এই পরিমন্ডলে তার খেলা যদি ফুরিয়ে যায়, তবে ফুরোক, জীবনে যেন কখনো না ফুরোয়। খেলুক সে অনেক বড় বড় পরিমন্ডলে তবে তার দেনাও হিসেবে রাখছে সিসিবি। এক রাজকন্যা দিল্লী যাচ্ছিলেন, তার পথে যে কত বিপদ আপদ। এই রাক্ষসের খপ্পড়ে পড়ে তো আবার উঠে গগণবিদারী ঝড়। সব থেকে তাকে রক্ষা করার জন্য একজন রাজকুমার সাথে আছেন অবশ্য কিন্তু এখনো দিল্লীর পথ শেষ হয়নি। অপেক্ষা আর অপেক্ষা… । এক পুলিশ অফিসার ও আছে তাদের আশে পাশে। এ কিন্তু বাংলাদেশের যেন তেন পুলিশ নয়। পুরোপুরি তরুণ সুদর্শন এক আত্মবিশ্বাসী পুলিশ। সমস্যা একটাই উনিও নিয়মিতই গরহাজির। এক চিরকুমার ব্যাচেলর ছিলেন! সেমিস্টার সিস্টেম পার হয়ে ইয়ারলি শেষ হয়ে উনি এখন ওয়ান্স ইন এ লাইফটাইমে চলে গেছেন। আরেকজন কমেন্ট জাদুকর ছিলেন। তাদের দুজনকেই দাওয়াত দিলাম হালখাতায়।

এত লোকজনের বাকির হিসাব দিয়ে আর তাদেরকে লজ্জা দিলাম না। সবাই নিজের নিজের ব্লগে ঢুঁ মারলেই হিসাব পেয়ে যাবে। সিসিবির হালখাতার হিসাব অনেক বড়। একবার ও হয়নি যে। চলার শুরুর পর থেকে দিনে দিনে বেড়ে চলছে হারিয়ে খোঁজার পালা। সবাই বড় বেশি ভালবাসে সিসিবিকে। তাই বুঝি একে আর এত পাত্তা দেয় না। যত চোটপাট, অবজ্ঞা শুধু প্রিয়দের সাথেই।

এবার নিজের জীবনের হালখাতায় মন দেই।

২,৪৩২ বার দেখা হয়েছে

৩৪ টি মন্তব্য : “হালখাতা”

  1. সাব্বির (৯৫-০১)

    সবাই কে নববর্ষের শুভেচ্ছা!!
    কি তপু মিয়া মনডা ভালা?
    আসলেই তারকা ব্লগাররা ফাঁকিবাজ হইয়া গেছে,
    আমার মত তারকা পাঠকদের বড়ই দুঃসময় যাচ্ছে 🙁
    তারকা ব্লগারদের যাবজ্জীবন ফাঁসি চাইয়া গেলাম।

    জবাব দিন
  2. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    ধন্যবাদ তপু হালখাতার জন্য। সেই রাজা-জমিদার নেই, নেই প্রজা-সাথারণ। তাই খাজনা প্রথা জমিদারির সঙ্গেই বিলোপ পেয়েছে। ব্যবসায়ীরা তবু পাওনাদারের কাছ থেকে বকেয়া আদায়ে হালখাতা চালু করেছিল। সেটিও নিভু নিভু করে টিকে আছে। সিসিবির হালখাতায় তুমি খেলাপিদের তালিকা দিয়েছো। বড় বড় ঋণ রখেলাপিরা যেখানে সংবাদপত্রে নাম উঠলে লজ্জা পায় না, বরং নিজেদের তারকা ভাবে; সেখানে সিসিবির খেলাপিরা কি তাদের বকেয়া পরিশোধে উৎসাহী হবে! তবুও হালখাতা বেঁচে থাকুক। বেঁচে থাকুক সিসিবি। শুভ নববর্ষ তোমার জন্য আর সিসিবির সবার জন্য। ভালো থেকো।


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  3. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    সুন্দর হালখাতা দিয়েছ। লোকজন লেখেনা, কমেন্টও করে না। জুনিয়ররাও চুপ করে আছে। এখন তো ২০১১ পর্যন্ত বের হয়ে গেছে। আশায় আশায় থাকি কত কী লেখার আছে সেসব নিয়ে সিসিবিতে লেখা আসবে। কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ কেউ কেউ এসে আবার আসতে ভুলে যায়। চেনা পথ অচেনা হয়ে যায়। দেখি এখন হাল খাতার ঋণখেলাপীরা কোন কিস্তি পূরণ করে কিনা।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  4. তাইফুর (৯২-৯৮)

    কামতপু,
    হালখাতা কি রে ?? :-B

    (লেখা ভাল্লাগছে মামা ... বৈশাখের থিমে অন্যরকম এক বৈশাখী লেখা ...)


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন
  5. সামিয়া (৯৯-০৫)

    ইয়ে আমার দিল্লী আসবে, কসম, লিখাও শুরু করসিলাম, ছবিটবিও যোগাঢ় করসিলাম, কসম 🙁
    তপু ভাই কেমন আছেন? সবটি দৌড়ের উপ্রে থাকে, ছড়াকার সুইজারল্যান্ড প্রবাসী হয়ে যাবে যাবে করতেসে...রাশু আজকাল ফেসবুকে কি কি সব স্ট্যাট দেয়...স্থপতি সাহেব কি অবিমানে কেন নিজের সবকিছু ডিলিট করে দিয়েছেন...কমেন্ট জাদুকর চাকরী করে, তার আবার কার্ডও আছে...খেরোখাতা লেখক যে কি করেন...তিনিই জানেন...পুলিশ অফিসার ঘোড়ায় চড়েই মহা খুশি...আর্মি অফিসার কে কি বলব জানিনা, ছোট ছোট কমেন্ট দিয়ে কই যে দৌড়ায়...সিনিয়রদের মধ্যে এক লাবলু ভাইই মাঝে মাঝে একটু কমেন্ট করেন, অতিপ্রিয় আরেক কামরুল ভাই, যাঁর হোমপেইজই ছিল সিসিবি, তিনি যে কই...তিনি জানেন কিনা তাও আমার সন্দেহ... 🙁
    সেই দিনগুলাকে অনেক অনেক মিসাই...

    জবাব দিন
  6. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    বেশি বাকি পড়েছিল বলে হালখাতা'য় আসি নি... 🙁
    দৃশ্যমান বা অদৃশ্য-সাথেই থাকি... B-)

    কেমন আছিস রে, ব্যাটা?? :hug:


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আদনান (১৯৯৪-২০০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।