প্রবাসে প্রলাপ – ০১৩ ( অগোছালো দিনলিপি )

১।
সিসিবিতে লেখা হয় না অনেকদিন। আমার ছোটভাই জিজ্ঞেস করে তোমার কি হল ভাইয়া সিসিবিতে আর আসোনা যে? কেউ কেউ জিজ্ঞেস করে সিসিবির আবেদন কমে গেল নাকি তপু? আমি তাও সাড়া দিতে পারি না। দুটো প্রশ্নের উত্তর দেবার কোন প্রয়োজন নেই। সিসিবিতে আমার কোনরকম চিন্তাভাবনা করে আসা লাগে না। ব্রাউজার খুলে একটু পরে এমনিতেই সিসিবির এড্রেস লিখে ফেলি আর আবেদন আদৌ কি কোনদিন কমবে? তাও আমার সিসিবিতে লেখা হয় না। আমি এমন কিছু লেখি না যে টপিক লাগবে কিন্তু ইদানিং লেখার সময় করে উঠতে পারি না। আজ লেখতে গিয়ে দেখি আজ ও আন্দলিবের সাথে একসাথে লেখা দেওয়া হয়ে যাচ্ছে। ওর সাথে আমার লেখার সাইকেল এর মিল আছে দেখি। তবে ক্ষতিটা হয়ে যায় আমার। তারকা ব্লগার দের সাথে লেখা দেওয়ায় আমার ব্লগের হিট যায় কমে।
২।
থিসিসের সময় আসলে মনে হয় সবারই আমার মত অবস্থা হয়। প্রতি সপ্তাহে আমার রুটিন এখন স্যারের সাথে ২-৩ বার মিটিং করা আর রাতে এসে থিসিস শম্বুকের গতিতে আগানো। আবার যেটুকু আগাই সেটুকু আবার পরের মিটিং এ স্যার লাল কালি দিয়ে দাগিয়ে আবার পিছিয়ে দেয়। আমার অবস্থা তাই এখন তৈলাক্ত বাঁশে বেয়ে উঠা বানরের মত। সময় ও বেশি নাই আর এখনো সিম্যুলেশন এর রেজাল্ট বের করা হয়নি। সেটা দিয়ে পারফরম্যান্স পর্যালোচনা করতে হবে। আগামী বেশ কিছুদিন মনে হয় তৈলাক্ত বাঁশ বাওয়া ছাড়া আমার উপায় নেই। আমি আবার মাস্টার্স এ ইউনিভার্সিটি চেঞ্জ করছি তাই আমার স্যার এমনিতেই আমার উপর ক্ষেপে আছে। প্রথমদিকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছিল যেন ওনার ল্যাব না ছাড়ি। শেষে একবার হুমকিও দিয়েছিল আমার পাশ করা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে। এখন হাল ছেড়ে দিয়ে আমাকে দিয়ে যতটুকু সম্ভব কাজ করানোতে মনোযোগ দিয়েছে। ওনার সাথে আমার এখন দুরকমের মিটিং হয়। যেদিন ভাল কোন আপডেট থাকে সেদিন উনি আকারে ইংগিতে আমাকে বোঝায় যে এখানে থাকলে আমার পিএইচডি পর্যন্ত সুবিধা হত আর যেদিন আপডেট থাকেনা সেদিন বলে যে ঠিক মত পাশ করতে পারব তো। অনেক পড়ালেখার কথা বলে ফেললাম।
৩।
শুধু যে ল্যাব নিয়েই ব্যস্ত তা না অবশ্য। শনি,রবি আবার এখানে ওখানে অনেক রকমের দাওয়াত নিয়ে কেটে যায় যার কারণে কোন কিছু এগিয়ে রাখা যায় না। তার মধ্যে গত সপ্তাহ দোকানদারিতে কেটে গেল। ইউনিভার্সিটির ওপেন ক্যাম্পাসে বাংলাদেশিরা মিলে একটা বাংলাদেশি খাবার দোকান দিয়ে দিল। মোটেও উৎসাহ ছিল না এইসব ঝামেলার কাজে কিন্তু সবার চাপে পড়ে আমাকেও কাজ করতে হল। দুজন ভাবী ছিল ওনারা রান্নার দায়িত্বে ছিলেন। আমরা ছেলেরা করলাম সব বিদঘুটে কাজ। সিংগাড়া বানাবার জন্য ময়দা মলা, রুটি বানানো সব কষ্টের কাজ করে শেষ পর্যন্ত শুনি সিংগাড়া বানাবার সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট নাকি প্যাচ দেওয়া , যথারীতি স্বাদের সব ক্রেডিট মেয়েদের। তবে দোকানদারিতে ব্যাপক সম্ভাবনার ইংগিত দিলাম। চিল্লাফাল্লা করে একেবারে জমিয়ে দিলাম স্টল। আশেপাশের দোকান কে খালি রেখে যখন আমাদের স্টলের সামনে লম্বা লাইন পড়ে যাচ্ছিল তখন দেখতে আসলেই ভাল লাগছিল।

টোকিওতে দোকানদারি

টোকিওতে দোকানদারি


৪।
কতদিন দেশে যাই না। একটু একটু করে বিষাদ ভর করছে, ইচ্ছা করছে ১ সপ্তাহ হলেও একটু ঘুরে আসি। কিন্তু সামনে কোন আশা দেখতে পারছি না। মনে হয় অগাস্টের আগে আর যাওয়া হবে না। এতগুলা দিন কিভাবে যে যাবে। আগামী সপ্তাহে আবার ঈদ আমার ১২ নম্বার প্রবাসী ঈদ। আবার শুনি সিসিবি নাকি বিশাল ২য় বর্ষ উদযাপনের প্ল্যানে আছে। অনেক ইভেন্টই মিস করি আর সেই সাথে মিস করি অনেক গুলা প্রিয়জনকে প্রতিনিয়ত। কতদিন ঈদের নামাজ পড়ে এসে আম্মুকে জড়িয়ে ধরি না। মনটা আরো খারাপ হয়ে যাবার আগে আগেই লেখা শেষ করে দেই দিনের শুরুতেই মন খারাপ করা খুব একটা ভাল কাজ হবে না।

৩,০০৩ বার দেখা হয়েছে

৩৭ টি মন্তব্য : “প্রবাসে প্রলাপ – ০১৩ ( অগোছালো দিনলিপি )”

  1. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    তপু ব্যপার্স্নারে, মন খারাপ করিসনা। সিসিবি গেট টুগেদার তেমন বেশি কিছু হবেনা, খুব বেশি হলে ঢাকায় বা এর আশেপাশেই একটা স্পট এ বিশাল মাহফিল হয়ে ব্যাপক খানাদানা হবে, সাথে তুমুল আড্ডা আর মাস্তি হবে, এর চেয়ে বেশি কিছু হবেনা, নিশ্চিন্তে থাকতে পারিস 😛

    ঈদের শুভেচ্ছা এডভান্স। আমাদের জন্য তোদের স্টলের সিঙ্গারা পাঠাইস।


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  2. এহসান (৮৯-৯৫)

    তপু লেখার শেষ অংশ পড়ে মন খারাপ হয়ে গেলো। ব্যাপার না... দেখতে দেখতে দেখবা অগাস্ট মাস চলে আসছে। আশাকরি ভাবীদের দাওয়াত খেতে খেতে প্রবাসে ১২ নম্বর ঈদটাও ভালোই কেটে যাবে। ভালো থেকো... ঈদের শুভেচ্ছা রইলো।

    জবাব দিন
  3. রকিব (০১-০৭)

    সেইদিন একজনের সাথে আপনাকে নিয়ে কথা হচ্ছিল; মজার ব্যাপার হচ্ছে আজকে ল্যাবে বসে সিসিবি ওপেন করতেই আপনার লেখায় ঢুকেছিলাম; পাশ থেকে এক বাঙ্গালী তন্বী আপনার প্রোফাইল ফটুক (পেন্সিল ঘষা যেইটা) দেখে আমাকে জিজ্ঞেস করছে, উনি কে? আমি কলার উঁচাইয়া জব্বর ভাব নিয়া বললাম, উনি আমার বড় ভাই; ফার্ষ্ট স্ট্যান্ড করা পাবলিক। B-) মাইয়া কয় ভাইয়ারে বড় হ্যান্ডসাম লাগে, উনার রঙ্গিন ফটুক দেখাও। :bash: :bash:

    বহুদিন পর লিখলেন ভাইয়া।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  4. তানভীর (৯৪-০০)

    অনেক অনেক দিন পর লেখা দিলা তপু।
    এতো বেশি মন খারাপ কইর না মিয়া, দেখবা হুট করেই অগাস্ট চলে আসবে, সেই সাথে তুমিও চলে আসবা দেশে। আমরা তখন সিসিবির আরেকটা গেট-টুগেদার করব যেটাতে তুমি চু্টিয়ে মজা করতে পারবা। 🙂
    ঈদ মোবারক।

    জবাব দিন
  5. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    বেশি প্রেশার নিস না, নিজে আগে ভাল থাক, তারপর বাকি সব।

    ( সেঞ্চুরি মারার পর থেকেই তুই চরম ফাঁকিবাজ হইয়া গেছস)


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  6. তারেক (৯৪ - ০০)

    মেলবোর্নের একটা বৈশাখী মেলায় একবার আমরা কয়েকজন মিলে একটা খাবার দোকান দিয়েছিলাম। আগের দিন রাত জেগে সবার সে কি পরিশ্রম, এটা বানাও, সেইটা ভাজো। সবচেয়ে পরিশ্রমের কাজটা করেছিলাম আমি, দোকানের জন্যে একটা নাম ঠিক করেছিলাম বসে বসে। নাম দিয়েছিলাম- হাউ মাউ খাউ। 🙂


    www.tareqnurulhasan.com

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সামিয়া'৯৯

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।