পুরনো দিনের গান, আজো ভরে মনপ্রাণ ( ২ )

কামরুল ভাইয়ের পুরনো দিনের গান আজো ভরে মনপ্রান পড়ে অনুপ্রাণিত হয়ে। কমেন্টেই অনেক কথা লেখা হয়ে গেছে তাও অনেক কিছু মনে পড়ে গেল কলেজ ফাংশন নিয়ে। কলেজে সব ব্যাচ ঢুকার পরই একটা ফাংশন করতে হত আমাদের কলেজে সেটাকে বলত ট্যালেন্ট শো। সেখানেই বের হয়ে পড়ত কারা গান গায় কারা কি পারে, এবং পরবর্তী ৬ বছর তাদের দিয়েই সব ফাংশন করানো হত। সবচেয়ে হিট হত মোটামোটি হিন্দি গানটা তাই হিন্দি গানটা করানো হত সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট কাউকে দিয়ে। আমাদের ব্যাচের এমরান গেয়েছিল ক্যায়া করেগা ক্যায়া করিয়ে ক্যায়সে মুশকিল হ্যায় এই গানটি। কিন্তু গানের পর থেকে ওর নাম হয়ে গেল ক্যাক্কারেকা। এই এমরান ই পরবর্তীতে আরেকটা হিন্দি গান গেয়ে জমিয়েছিল কিন্তু সেবার আমরা ডুয়েট গান বানিয়েছিলাম ওর সাথে নারী কন্ঠ দিয়েছিল উপল। গানটা ছিল অজয় আর সোনালীর ক্যাহতা এ পাল পাল তুমসে। সেই গান এ প্রথম প্যারা এমরান গাওয়ার পর আমরা বুঝে গিয়েছিলাম এই গান হিট কিন্তু যেই উপল নারী কন্ঠ দিল সাথে সাথে পুরা অডিটোরিয়াম ভর্তি হাসি। এমরানের আর হিট হওয়া হল না। ট্যালেন্ট শো তে আরেকটা গান গেয়েছিল মাহবুব স্যারের ছেলে তানিম। তানিম গান গেয়েছিল মেরি মেহবুবা সাথে সাথে সবাই হাসি স্যার মনে হয় বিব্রত হয়েছিলেন।

আমরা ৮ এ উঠে পেয়েছিলাম ফুয়াদ ভাইদের ব্যাচের ফাংশন (৯১-৯৭ ব্যাচ )। সেইরকম একটা ফাংশন হয়েছিল। আমার দেখা সেরা ফাংশন। সেবার স্টেজ ও বানিয়েছিল ভাইয়ারা সেইরকম । নরমাল স্টেজের সাথে বাড়তি অংশ বানিয়ে অনেকটাই টিভিতে দেখা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের মত স্টেজ। সেই ফাংশনে ফুয়াদ ভাই গেয়েছিল বাচ্চুর জ্বালা জ্বালা গান। এটা বেশ হিট হয়ে গিয়েছিল কিন্তু এইটার প্যারোডিটা আমাদের মধ্যে বেশি হিট ছিল। সেই ব্যাচে তখন জুনিয়র হাউস প্রিফেক্ট ছিল মঞ্জুর ভাই আর মশিউর ভাই। দুজনেই সেইরকম কড়া। আমরা তখন গাইতাম ” হায় জ্বালা জ্বালা জ্বালা এই মঞ্জুরে , হায় জ্বালা জ্বালা জ্বালা এই মশিউরে “। আরেকটা গান ছিল যেখানে একটা বিশাল টান ছিল গানটা ছিল “সকালের আকাশে মেঘের আসর” । সেখানে রিমঝিম ধারা বলার পর হেভি একটা টান দিতে হত ব্যাস আমাদের গোসলখানায় সেই টানের রেওয়াজ শুরু হয়ে গিয়েছিল। সবাই একে একে গোসলে ঢুকছি আর রেওয়াজ করছি ” ক্লান্ত আমি কান পেতে শুনি …… রিমঝিম ধারাআআআআআআআআআআআআআআআআ”। এরপর একদিন প্রসেনজিত ভাই আমাদের এক ক্লাসমেট কি হাউস মস্কের পিছনে নিয়ে গিয়ে রিমঝিম ধারা শুনিয়ে দিলেন সেই থেকে আমাদের রেওয়াজ বন্ধ হয়ে গেল। সেবারই সাব্বির ভাই হেভি মাঞ্জা মারা একটা গান গেয়েছিল। গানটা ছিল “ঘাসফুল কাশবনে আকা আনমনে” । সেটার মাঝখানে একটা লাইন ছিল ” আসে যদি যন্ত্রনা তাও কিছু মন্দ না … ভাল লাগা মন্দ না” তো সেখানে আগে থেকে একটা চেয়ার ছিল ভাইয়া গান গাচ্ছিল চেয়ার কে পিছনে রেখে হঠাৎ করে সেই চেয়ার এক হাতে ধরে সামনে এনে সেটাকে উলটা করে বসে বললেন ” ভাল লাগা মন্দ না”। সেইরকম রোমান্টিক পরিবেশ কিন্তু সোহরাব আলীর পছন্দ হল না সাথে সাথে উনি বললেন সাব্বির উঠ। পরদিন নাকি ভাইয়াকে রুমে ডেকে নিয়েছিলেন এরপর কি হয়েছিল আমি জানিনা দুষ্ট লোকে বলে ভাল লাগা কেমন তা নাকি দেখানো হয়েছিল।

সোহরাব স্যারের জ্বালায় ঠিক মত গান বাছাই করা যেত না। সব ঠিকঠাক করার পর স্যার কে লিরিকস দেখানো হত স্যার রাজি হলেই সেই গান গাওয়া যেত। কমেন্টে বলেছি তাও আবার বলি কলেজ ফাইনাল ফাংশনে তাই শাহরিয়ার ভাইকে দিয়ে গান গাওয়ানো হয়েছিল “মেড ইন ইন্ডিয়া ” গানটাকে চেঞ্জ করে ” মেড ইন বাংলাদেশ ” ।

আমাদের দুই ব্যাচ জুনিয়র একটা ব্যাচের ট্যালেন্ট শো তে এক ছেলে একটা গানের সুর ভুল করে মাইকেই বলে ফেলল “মিসটেক” সেই থেকে তার নাম হয়ে গেল মিসটেক। আমি এখনো তার নাম ভুলে গেছিলাম আমার ছোট ভাইর থেকে তার নাম উদ্ধার করলাম তার নাম নাকি ছিল রাকিব। আরেক ছেলে গান গেয়েছিল লাল ঝুটি কাকাতুয়া সেই থেকে তার নাম হল পাখিভাই। সেই ছেলের নাম মনে হয় ছিল তারেক। ওদের ব্যাচেরই এক ছেলে রাশেদ একবার গান কম্পিটিশনে গিয়েছে নজরুল সংগীতে। তো তার গান শেষ হওয়ার আগেই কে যেন হাততালি দিয়ে দিয়েছে বেচারা গানের মাঝখানেই মাইকে বলছে যে “না আরেক প্যারা আছে তো “।

আমরা টেনে থাকতে একটা ফাংশনে ফ্যাশন শো এর আয়োজন করেছিলাম। আমাদের রিয়াদ সেইরকম মাসল দেখানো একটা ড্রেস পরে স্টেজের একেবারে সামনে এসে ক্যান কোক এর ক্যান খুলেছিল। সেই কোক এর ছলকানি এসে পড়েছিল প্রিন্সিপ্যাল স্যারের ম্যাডামের গায়ে। ফলাফল পরদিন রিয়াদের ইডি কারণ দেখানো হয়েছিল “অশ্লীল ড্রেস ও অঙ্গভঙ্গি” ।
ইশশ কলেজ ফাংশনের সাথে কত স্মৃতি সব একসাথে আসে না। জানি অনেক কিছু বাকি রয়ে গেল । খুব ইচ্ছে করছে সেইরকম একটা বৃহস্পতিবার পেতে অডিটোরিয়ামে ফাংশন দেখে এসে স্পেশাল ডিনার খেতে। আমি জানি এখানকার সবারই তাই ইচ্ছে করছে।

৩১ টি মন্তব্য : “পুরনো দিনের গান, আজো ভরে মনপ্রাণ ( ২ )”

  1. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)
    হায় জ্বালা জ্বালা জ্বালা এই মঞ্জুরে , হায় জ্বালা জ্বালা জ্বালা এই মশিউরে

    =)) =)) আমরা আকটার প্যারোডি গাইতাম, মন কিযে চায় বলো, যারে দেখি লাগে ভালো প্যারোডি কি গাইতাম কওন যাইবোনা, কইলে এডু আমারে ইডির সেঞ্চুরি লাগায়া দিবো ;))


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  2. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    আমাদের ট্যালেন্ট শোতে হোয়াইট মনোয়ার আর সাদত মিল্লা একটা গান গাইছিল, পুরা মনে নাই তয় লাষ্টে কইত "ব্যাংগের আবার সর্দি, ব্যাংগের আবার সর্দি"।

    আহারে বেচারা, কেন যে গানটা গাইছিল, পুরা ছয় বছর টিজ শুনল অই একটা গানের জন্য।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  3. কামরুল
    চমৎকার। দারুন।
    আগের পর্বের চেয়ে এইটা মজা হইছে বেশি।
    আরো কিছু পর্ব লিখবি নাকি, আমি হেল্প করুম।
    একটা তুই, একটা আমি।
    পুরোনো দিনের গানের সিরিজ। 😀 😀 😀 😀

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : তৌফিক (৯৬-০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।