সিংহ মামা


ইন্টার পরীক্ষার আর বেশি বাকি নাই। আমরা তখন সারাদিন ব্লকে থাকি। কোথাও যাইনা। সারাদিন নাইটড্রেস পড়ে ঘুরে বেড়াই ঘুম ঘুম চোখে। সবাই ভাবে দিন রাত পড়তে পড়তে আমাদের ঘুমেরও সময় নাই। ঘুম ঠিকই হয়না তবে শুধু যে পড়ি তা না। অনেকে পড়েনা ঠিকই কিন্তু ঘুমায় না। candidate ঘুমাইলে প্রেস্টিজ থাকে না। আমার আবার একটা নির্দিষ্ট রুটিন আছে। সব কিছু ভাগ করে রাখি। রাতের বেলা লাইটস অফ এর পর পড়তে বসি। ১ টার দিকে যাই এক রুমে গান শুনতে। তারপর যাই অন্য হাউসে পোলাপানের পোংটামি দেখতে। তারপর এসে আবার পড়তে বসি। তারপর একসময় ঘুমিয়ে পড়ি। তখনো পড়ালেখা ভালো করে জমে উঠেনি।সবে আমরা শুরু করেছি। একদিন পড়ছি আমি। দেখি একে একে সবার লাইটস অফ হয়ে গেল।( আমাদের জুনিয়র কলেজ গুলায় ৩ হাউস এক বিল্ডিং এ তাই রুম থেকে বের হলেই সবার রুমের আলো জ্বলছে কিনা বুঝা যায়)…শুধু একটা ছাড়া। আমি ঠিক করলাম আজকে সবার শেষে ঘুমাব। আমি পড়ার ভান করি আর একটু পরে পরে ওই রুমের দিকে তাকাই। নাহ ওইটা আর বন্ধ হয়না। ধুর আর কত এই ভেবে ঘুমিয়ে গেলাম। পরেরদিন জিজ্ঞেস করলাম ওরে- কিরে কাল হেভি পড়লি ? উত্তরঃ না তো। কাল তো লাইটস অফের পরেই ঘুমায়া পড়লাম। লাইটস অফ করলে কেমন লাগে টুয়েলভ হয়ে এত তাড়াতাড়ি ঘুমাইতাছি। তাই লাইটস অফ করিনাই। (এই প্রসংগে একটা অফ টপিক গল্প , আমার বড় ভাই (ক্যাডেট না ও ) ওর এসএসসি পরীক্ষার সময় একবার এইরকম রাত জেগে পড়ে আর জানালা দিয়ে দেখে দূরে একটা লাইট জ্বলে। ওইটা নিভলে ঘুমাবে। ওইটা আর নিভেনা। পরেরদিন ও গেছে খবর নিতে , ঐখানে গিয়ে দেখে ঐটা মুরগির খামার)

কলেজ থেকে বেরিয়ে যাব। বাস এসে গেছে হাউসের সামনে। সবাই কাঁদছি। তার ১ সপ্তাহ আগে থেকে শুরু হয়েছে আমাদের কান্নাকাটি। শুরুটা আমিই করেছি। হাউস মস্ক এ আমি নামাজ পড়াতাম। তো আমরা চলে যাব সেই জন্য একটা মোনাজাত এর সময় সবার থেকে বিদায় নিতে গিয়ে শুরু হল বিদায় কান্না। এরপর প্রতিদিন একটা কিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে আর আমরা কাঁদছি। ইলেভেন আমাদের ডেকে চানাচুর বিস্কুট খাওয়ায়। চানাচুর মাখতেছে ওইটার দিকে তাকিয়ে আছি। চোখ ভিজে গেল জলে। তারপর কিছুক্ষণ পরে সেটা হাউমাউ কান্নায় গিয়ে ঠেকল। আর্টস পার্টি চলে যাবে ৪ জন দুই দিন আগে। ওদেরকে বিদায় দিচ্ছি আর কাঁদছি। ফেয়ারওয়েল হচ্ছে আর আমরা কাঁদছি। তো ফাইনাল কান্না হচ্ছে বাসকে দাঁড় করিয়ে রেখে। ওদিকে ট্রেনের সময় হয়ে আসছে।দেরি হয়ে যাবে। মজার কথাটা বলার আগে কান্নার আরো একটু বিবরণ দিয়ে দেই। বাসে উঠতে কাঁদছি। এরপর সিলেট পার্টি এক এক জায়গায় নেমে যাচ্ছে বাস থেকে আর আমাদের মধ্যে কান্নার রোল উঠছে। ট্রেনে উঠে আবার আমরা ঠিক হয়ে গেলাম। কার্ড খেলছি, হাসি ঠাট্টা করছি , কলেজ থেকে বের হওয়ার আনন্দে কেউ বা বিড়ি ফুঁকছে কেউ বা স্যারদের গালিগালাজ করছে। এয়ারপোর্ট স্টেশন আসল। কিছু পোলাপান নেমে যাবে। আবার শুরু হল কান্না। ট্রেনের মানুষ অবাক। এতক্ষণ জ্বালাচ্ছে যেই পোলাপান ওদের হঠাৎ কি হল। এরপর আসল কমলাপুর। আমরা সবাই ব্যাগ নিয়ে নেমে সবাই এক জায়গায় জড় হলাম। দূর থেকে আমাদের প্যারেন্টস আসতেছে। আসতে আসতে সবাই থেমে গেল। আমরা শুরু করে দিয়েছি আমাদের কান্না। কেউ আর আমাদের কাছে আসেনা। এ ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছি। প্রায় ১৫ মিনিট পরে বাবা-মা রা ভাবলেন অনেক হয়েছে আর না। তারপর আবার বাসায় গিয়ে বললাম আহহ কতদিন পরে বাসায় বেড়াতে আসিনি।
যে কাহিনীটা বলতে চাচ্ছিলাম সেটা ঐ কান্নার মধ্যেকার একটা সময়ের কথা। কলেজ থেকে বাসে উঠার সময় আমি কাঁদছি এক বন্ধুকে জড়িয়ে। এরপরও কান্নার রেশ আছে আর খুঁজছি এবার কাকে ধরব। তখন এক বন্ধু আমার কাছে এসে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলছে- দোস্ত তোর দেখি অনেক সাহস। তুই সিংহের কোলে মাথা দিয়ে কান্না করছিলি।(এর আগের বন্ধুর গোপন টিজ নেম হল সিংহমামা)। আমি হাসব না কাঁদব?

৫ টি মন্তব্য : “সিংহ মামা”

  1. কুচ্ছিত হাঁসের ছানা

    অশ্লীল: অশ্লীল: অশ্লীল: অশ্লীল: অশ্লীল: অশ্লীল: অশ্লীল: অশ্লীল:

    "প" should be replaced with "ক"

    "পাশপিয়া পাশপিয়া, তুমি আর পেঁদো না, তাহলে আমিও পেঁদে দেব।"

    অশ্লীল: অশ্লীল: অশ্লীল: অশ্লীল: অশ্লীল: অশ্লীল: অশ্লীল: অশ্লীল:

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : mashroof

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।