সারারাত ঘুম হল না!

আমাদের আগের কালের লোকেরা এভাবে বলতেনঃ “সকাল বেলা যদি একটা পিঁয়াজ খাও, এরপর সারাদিন ভর পোলাও কোর্মা, কালিয়া কোপ্তা যা-ই খাও না কেন, রাতে ঘুমানোর সময় যে ঢেকুর দিবা তাতে পিঁয়াজের ই গন্ধ থাকে।”
কি মাস্ত কথা!! কি মাস্ত কথা!! খেয়াল করে দেখারই মত!!

সেই যে ছোটবেলায় অপচয় রোধের পিঁয়াজ খেয়েছিলাম কয়েকটা লাইনের মাধ্যমে, সেটা আজো ঢেঁকুর দেয়, আর দেয় বলেই বোধয় স্রষ্টা আজো প্রদীপ হীন করে দেন না আমার জীবন।লাইনগুলো সবারই জানা-

যে জন দিবসে, মনের হরষে, জ্বালায় মোমের বাতি
আশু গৃহে তার, দেখিবেনা আর নিশীথে প্রদীপ ভাতি।

এই অপচয় রোধের শিক্ষা সেই যে শিশুকালে ভিতরে বপিত হয়েছিল, আজ অবধি তা নিজের অজান্তে লালিত হয়ে চলেছে। এই গুরু দ্বায়িত্ব যেমন আমাদের শিশুকালে আমাদের শিক্ষক/শিক্ষিকা, মা-বাবা বা গুরুজনেরা পালন করেছিলেন, তেমনি আজ আমাদেরও সময় আমাদের শিশুদের ভিতরে এই ধরনের শিক্ষাগুলো কে বপন করে দেওয়া। আর এটি করতে হবে ছোট্ট বেলা থেকেই। তাহলে পরবর্তী জীবনে নিজের অজান্তেই সেটা স্বতঃস্ফুর্তভাবে ভিতরে ভিতরে কাজ করে যাবে।

এই যেমন আমি। আমার নিজেকে দিয়েই বিচার করি।

আমার সরকারী বাসা, সরকারী পানি। কতখানি পানি গেল না গেল সে হিসাব আমার না। তবুও দিনের শুরুতে শেভ করার সময় প্রথমে মুখ ভিজিয়ে নেয়ার পর ট্যাপটা খুলেই রাখি না। ফোম লাগানোর সময় টুকু র জন্য বেসিনের ট্যাপটা বন্ধ করে নেই কিংবা ব্রাশ করার সময় ট্যাপটা বন্ধই রাখি- ব্রাশ শেষ হলে আবার ট্যাপ ছেড়ে কুলি করি-মুখ ধুই, গোসলের সময় গায়ে সাবান মাখার সময়টুকুতে শাওয়ারটা বন্ধই করে নেই।

শুধু নিজের বাড়ি বলে নয়। ক্যাডেট কলেজের মত কমন বাথরুম ওয়ালা জায়গাতেও যদি দেখেছি কোন একটা ট্যাপ ভালো করে লাগেনি বলে টিপ টিপ করে পানি পড়ছে, নিজেই গিয়ে টাইট করে লাগিয়ে দিয়েছি। কেন করেছি? অটোমেটিক্যালি করেছি। সেই লাইন দুটো শুধু ভেসে উঠেছে মনে মনে।

গতকাল সারা রাত ঘুম হল না। টপ টপ পানির শব্দে। বাথরুমের ফ্ল্যাশটা নষ্ট হয়েছে।

১৮ টি মন্তব্য : “সারারাত ঘুম হল না!”

  1. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    পড়লাম লেখাটা। মনে হলো আমার উপর এমন প্রভাব আছে শেখ সাদীর সেই বিখ্যাত গল্প। ফল হইছে যেমন তেমন পোশাকে যেখানে সেখানে চলে যাওয়ার স্বভাব। অবশ্যি ছোট বেলায় আমার এক নাম সাদী ছিল এটাও কারণ হইতে পারে। কলেজ থেকে বের হওয়ার দশ বছরের মধ্যে চাকরির খাতিরে কয়েকমাস জুতা পরা হইছে। ইদানিং অফিসেও যাই স্যান্ডেল পইরা। 🙂 🙂

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : কালবেলা (৯৩-৯৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।