পোল-ভোল্ট রেকর্ড টা কি ভেংগেছে?

আজ থেকে ১৩-১৪ বছর আগের কথা!! ৯৬ সাল!! ঝিনাইদাহ ক্যাডেট কলেজে গিয়েছিলাম -ইন্টার ক্যাডেট কলেজ এথলেটিক্স মিটে। ক্লাস টেন-এ পড়ি তখন। ভীষণ উত্তেজনা, ভীষণ আনন্দ!! আজো স্মৃতিতে অম্লান।

সবাই জানি কলেজে এথলেটিক্স প্রতিযোগীতার সময় “পোল-ভোল্ট” আইটেম টা নিয়া কেমন ক্যারিক্যাচার হয়!নরমালি এই আইটেমটাতে কেউ ইন্টারেস্টেড হইত না। তখন বছরের শেষের দিক। ইন্টার হাউস ফাইনাল চ্যাম্পিয়নশীপ নির্ভর করছে এই একটা মাত্র আইটেমের উপর। এথলেটিক্স। আর মাত্র কয়েক দিন পরেই কম্পিটিশন। গেমস টাইমে তাই সবাই যে যার মত প্রাক্টিস করছে। এরকমই একদিন বিকাল বেলা আমি হাইজাম্প প্রাক্টিস করছিলাম। করতে করতে হঠাৎ চোখ গেল পাশেই রাখা পোল-ভোল্ট আইটেম টার দিকে। কেউ নাই। বেচারা লম্বা লম্বা স্ট্যান্ড দুইটা, ফোমটা আর দন্ডটা (পোল) একদম নির্লিপ্ত অবস্থায় পড়ে পড়ে ঝিমাচ্ছে। এক রকম শয়তানি করেই এগিয়ে গেলাম। পোলটা নিলাম। নেহায়েত নেড়ে-চেড়ে দেখা আর কি। যেই না নেয়া,অমনি ধরা। কোথায় থেকে জানি ক্লাদ টুয়েল্ভের জুলফিকার ভাই এসে হাজির। উনিও বোধয় এদিকেই আসছিলেন। কলেজে এই লোকটাই একমাত্র লোক তখন যিনি গত বছর ইন্টার ক্যাডেট কলেজ এথলেটিক্স মিটে এই আইটেমে কম্পিট করে এসেছেন। সেকারণে উনার এই বিষয়ে বেশ জ্ঞান গরিমা ছিল। উনি আমাকে পোল ধরা দেখেই বললেন…” কি দিতে পার জাম্প?” আমি বললাম -” জ্বি না ভাইয়া।” উনি আমাকে নগদ নগদ পোল ধরা শিখায়া দিলেন। এবং একটা জাম্প দিয়াও দেখায় দিলেন। এরপর বললেন -‘যাও একটা দাও দেখি”। আমি মনে মনে বলি- ” পড়বি তো পড় মালির ঘারে”। আমি কাঁপ কাঁপ করতে করতে রান-আপ নিতে নিতে এগিয়ে গেলাম। ভাগ্যিস ৬ কিংবা ৭ ফিট উচ্চতায় বার লাগানো ছিল। আমি এক্কেবারে পুরা বাংলা স্টাইলে এসে,গর্তের মধ্যে পোল ঠেকায়া কোনমতে শরীর টা উঠায়া দিলাম বারের উপর দিয়া। ওমা!! দেখি নিরাপদেই পার হয়া গেছি। বিপদ কাটছে। কিন্তু কিসের কি বিপদ কাটছে? তখন কে জানত, বিপদের কেবল শুরু!! আমার জাম্প দেখেই জুলফিকার ভাই বললেন -“সাব্বা বেটা, তোকে দিয়েই হবে”। এরপরের কাহিনী আর নাই বা বলি। লাগাতার শুরু হয়ে গেল জাম্প দেওয়া। ফলশ্রুতিতে ঐ বছর অন্যান্য আইটেমের সাথে পোল-ভোল্ট আইটেম টাও আমার যুক্ত হয়ে গেল।আমাদের হাউস প্রিফেক্ট বোধয় এই আইটেম থেকে কোন পয়েন্টই আশা করেন নি। হঠাৎ করে আমি সেখানে একটা সম্ভাবনা হয়ে দেখা দিলাম।

যাই হোক, সেই যে শুরু। আমি আর কলেজ ছাড়া অবধি এই আইটেম থেকে নিজেকে আলগা করতে পারিনি। ঐ বার কলেজ এথলেটিক্স প্রতিযোগীতায় প্রথম হয়ে গেলাম।জুলফিকার ভাইরা সেবার অংশগ্রহন করেনি।
সেই সুবাদে ইন্টার ক্যাডেট কলেজ এথলেটিক্স মিটের জন্য কেলজ টিমে চান্স পেলাম। বাইরে থেকে কোচ আসল। আমার এই আইটেমের উপর আরো গভীর ট্রেনিং হল।

ফিরে আসি ৯৬ এর কথায়। ঝিনাইদাহ ক্যাডেট কলেজের মাঠে সেদিন সকাল বেলা এই একটা মাত্র আইটেমই অনুষ্ঠিত হল। আমি কেমন কেমন করে যেন সব্বাই কে টপকে ফার্স্ট-ই হয়ে গেলাম। সেকেন্ড পজিশন টাও অবশ্য আমাদের কলেজেরই ছিল। মাসুম ভাইয়ের। ঐ বার আমরা বিপুল ব্যবধানে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। সে এক বিশাল আনন্দ। আমাকে রেকর্ড জাম্প অফার করা হল। আমার এই স্মৃতিচারণের সবচেয়ে মজার, রোমাঞ্চকর আর চুম্বক অংশটাই হল এইটা। আমি আমার প্রাকটিস লাইফে জীবনেও ১০ ফিট পার হইতে পারি নাই। ঐ দিন মরাল এমন হাই। আর বডীও এমন ফিট ছিল যে প্রথম বারের রেকর্ড জাম্পেই আমি ১০ ফিট পার কইরা ফালাইলাম। ওরে আল্লাহ্‌। কি আর বলি। পুরা রংপুর ক্যাডেট কলেজ টিম আমার উপর ভাইংগ পরলো!! আমি রেকর্ড কইরা ফালাইলাম। আমার জীবনের খুব বড় ধরনের একটা স্মরনীয় ঘটনা এইটা।

আজ হঠাৎ খুব জানতে ইচ্ছা করছে…এই রেকর্ড টা কি ভেংগেছে কিনা। নতুন কোন রেকর্ড? কেউ কি ১০ ফিট এর বেশি পার করেছে? কে করল? খুব জানতে ইচ্ছা করছে। নাকি এখনো কম্পিটিশনের সময় ছাপানো লিফলেট গুলোতে এই আইটেমের রেকর্ডের পাশে আমারই নাম লেখা থাকে?

৬,৬০৫ বার দেখা হয়েছে

৯১ টি মন্তব্য : “পোল-ভোল্ট রেকর্ড টা কি ভেংগেছে?”

  1. জিহাদ (৯৯-০৫)

    আমি যদি ভুল না করে থাকি তাইলে আমাদের কলেজের জুয়েল ভাই(৯৫-০১) রেকর্ড ব্রেক করসিলো অথবা রেকর্ড স্পর্শ করেছিল।
    মাহমুদ ভাই(৯৫-০১) তো অনলাইনে। উনি ভাল বলতে পারবেন আরো 🙂


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  2. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    জানি না ভাই 🙁 🙁 🙁 🙁 🙁 🙁


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  3. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    ৯৬ এর ঐ আইসিসি মিট ছিল আমাদের দেখা সেরা... :thumbup:
    এক সাথে এথলেটিক্স এবং ক্রিকেট... :awesome:
    হেব্বি মজা হইছিল... :tuski:


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  4. বন্য (৯৯-০৫)

    আমরা যখন ইন্টারমিডিয়েট গ্রুপে ছিলাম তখন পোলভোল্টের অবস্থা খুব খারাপ..৬ জনের মধ্যে ৩জন কোনরকম দিতে পারত...শেষে অবস্থা বেগতিক দেখে স্যাররা নিয়ম একটু চেন্জ করল...দৌড়ে এসে বাশ ফেলে দিয়ে হাইজাম্প... :khekz: :khekz: :khekz: :khekz:

    জবাব দিন
  5. নাঈয়াদ (৯৮-০৪)

    ভাইয়া, আপনাদেরকে আমরা ক্লাস ১২ এ পেয়েছিলাম। সেই সুবাদে আপনার 'পোল-ভোল্ট' জাম্প নিজ চোখে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। আমরা কলেজে থাকাকালীন ইন্টার ক্যাডেট কলেজ এথলেটিক্স মিটে পর পর ৩ বার বিজয়ী হয়ে রংপুর ক্যাডেট কলেজ মরিস ব্রাউন কাপটি পারমানেন্টলি নিয়ে আসে। B-) যতদূর মনে পড়ে, ঐ বারও আপনার রেকর্ড কেউ ব্রেক করতে পারেনি!! :hatsoff:

    জবাব দিন
  6. শার্লী (১৯৯৯-২০০৫)

    কি অবস্থা? আমাদের কলেজ রেকর্ডই ছিল ১০ ফুট। ৯৫-০১ ব্যাচের রাশেদ ভাই দিয়েছিল। কলেজে এর চেয়ে বেশি উচু করার মত বার ছিল না তাই আর বেশি দিতে পারেন নাই। তবে আমার মনে হয় এর বেশি উঠানো গেলেও উনি পারতেন।

    আমাকে বাধ্য করে কলেজ লাইফে ৩ টা ইভেন্টা পাঠানো হয়েছিল। একটা ৪০০ মিটার হার্ডেলস। ফলাফল ৬ষ্ঠ। আরেকটা পোল ভোল্ট। ফলাফল ৬ষ্ঠ। শেষ পর্যন্ত, লাফ-ধাপ-ঝাপ। আশ্চর্যজনক ভাবে ফলাফল ৩য় B-) B-) ।

    জবাব দিন
  7. সামি হক (৯০-৯৬)

    কলেজে একবার পোলভল্ট দেওয়া দেখসিলাম কোন এক সিনিয়ররের, সে হেভভি ভাব নিয়ে প্র্যাকটিস করত। তা মেইন ইভেন্টের দিন খুব ভাব নিয়ে দৌড়ায় এসে দিল লাফ, ক্যামনে জানি কি হলো দেখি বেচারা ফোমের দিকে না পড়ে তার উলটা দিকে পড়ল। এর পরের জন আরো ভালো করছিল সে কিছুক্ষন পড়েই নাই স্টিক নিয়ে শুন্যে ঝুলে ছিল তারপর বার টার সব কিছু নিয়ে পড়ছিল। :grr:

    কালবেলা, খুব ভালো লাগলো লেখাটা। রংপুর তো দেখি পুরা এ্যাথলেটিক্সে পাথ্রায়।

    জবাব দিন
  8. কামরুলতপু (৯৬-০২)

    ক্লাস নাইনে থাকার সময় আমাকে কিসে জানি পাইছিল এক গাদা কম্পিটিশনে গিয়েছিলাম প্রায় সবগুলাই ভাল করেছিলাম। তখন কি মনে হতে পোলভল্টে হাউজে কেউ নাই দেখে ওটায় ও গিয়েছিলাম। প্র্যাকটিসে ভাল করার পর ও ফাইনালে গিয়ে ১০০ মিটারের পরেই ওটা পড়েছিল দেখে মনে হয় ৫ম হয়েছিলাম। আমার এথলেটিক্স লাইফ নিয়ে একটা পোস্ট দিব দেখি।

    জবাব দিন
  9. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    খালেক,

    কি অবস্থা? প্রোফাইলে কি তোমার ছবি নাকি? আরেকটু স্পষ্ট ছবি দিও।

    তোমার এথলেটিক স্কিলের প্রশংসা নতুন করে আর কি করবো? আমরা কলেজেই ত দেখে এসেছি।

    সিসিআর রকস, জাহাঙ্গীর হাউস রকস B-) ।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
  10. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    এই খানেতো দেখি সব বিরাট এ্যাথলেটরা জমায়েত হইছে।
    অবশ্য কোন কম্পিটিশনে সর্বাধিক বার লাস্ট হয়ার রেকর্ড বোধ হয় আমার।
    নাইনে থাকতে তিন ইভেন্টে লাস্ট হইছি।
    ক্লাশ টুয়েলভেও একটায় লাস্ট হইছি। হাউসের কেউ নাই দেইখ্যা হাইজাম্পে গেছিলাম। ৫ ফুট পার হইয়াও হাইজাম্পে লাস্ট হওয়াটা রেকর্ড হওয়ার চান্স আছে।

    জবাব দিন
  11. মামুন (০০-০৬)

    লেখাটা অনেক দিন পরে পড়লাম 🙁 🙁 🙁
    খালেক ভাই আগেই আপ্নের পাংখা আছিলাম এখন তো আপ্নের আরো বিশাল বড় পাংখা হয়ে গেলাম :boss: :boss: :boss: :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff:
    আমি আপ্নের মতো রেকর্ড হোল্ডার আছিলাম না কিন্তু কলেজ লাইফে ২০০ মিটার আর লাফ-ধাপ-ঝাপ এ কুনোদিন ১ম ছাড়া ২য় হই নাই 😀 😀 😀

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : কালবেলা (৯৩-৯৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।