বেপরোয়া নাবিক

 

কলেজের প্রথম দিন জড়সড় ভাবে বাতাসের সাথে মিশে থাকার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায় নাজেহাল হচ্ছি। বাবা মায়ের বিদায়ের সময় ঘনিয়ে আসছে, অডিটোরিয়ামের কোনায় বসে নিজেকে আড়াল করে মায়ের আঁচল ভেজাচ্ছি।এভাবে কেঁদেও সুখ নেই!  চারপাশে অনেকেই শরমের তোয়াক্কা না করে প্রাণ খুলে কাঁদছে।

এমন শোকসন্তপ্ত পরিবেশে উচ্ছল হাঁসির শব্দে চমকিত হয়ে অদূরে বসা ছেলেটিকে দেখলাম। আর সবার থেকে আধা হাত লম্বা, কাল লিকলিকে গড়নে জীবন্ত কংকাল। ভাবখানায় ফুর্তিবাজ ছোকরা যেন রেল স্টেশনে বসে আছে, ট্রেনটি এলেই মামা বাড়িতে লম্বা গ্রীষ্মের ছুটি! মায়ের পাশে চেয়ারে পা লম্বা করে আধাশোয়া হয়ে বসে ঘন ঘন সশব্দে জুতার হিল মেঝেতে ঠুকছে।অস্থির ভাব যেন অপেক্ষায় হাঁপিয়ে উঠেছে। সেদিন বুঝলাম, প্রথম দর্শনে শুধু প্রেমই হয় না, সীমাহীন বিদ্বেষও জন্ম নিতে পারে!

তার খাড়া জুতার ব্রাশের মত চুল আর ঢেঙা বেয়াড়া চেহারাতে আর যাই থাক কোন জড়তার ভাব ছিল না। ঊর্ধ্বাংশের তুলনায় অস্বাভাবিক লম্বা দুখানা পায়ে তার ডানেবামে দুলে চলার ভঙ্গীও কোনক্রমেই আকর্ষণীয় নয়। বালকসুলভ কমনীয়তা যেন বহু আগেই পালিয়ে বেঁচেছে। ভুরু কুচকে তাকানো আর ঘন ঘন কাঁধ ঝাঁকানোর ভঙ্গিতে বেপরোয়া ভাব; সাথে হেঁড়ে গলা আর দ্রুতলয়ের বাচনভঙ্গি যোগ করলে প্রথম দেখায় তাকে আদবহীন গোঁয়ার বলেই ধারনা হ্য়।

ড্রিল প্রশিক্ষন শুরু হতেই তার সহজাত প্রতিভার দেখা মিলল। এক দিনেই সে মিলিটারি কায়দায় হাত পা চালনার জটিল কৌশলটি রপ্ত করে ফেলল। তাতে স্টাফ বিমোহিত হলেও আমরা বিধাতার অবিচার দেখতে পেলাম! আর সবাই স্টাফদের বিস্তর মগজ ধোলাই আর রগড় শেষে কোন রকমে লাইনে আসলাম। দুজন তো  নভিসেস ড্রিলের দিন সকালেও ‘যে হাত সেই পা’ চালিয়ে স্টাফদের ঘামিয়ে নাকাল করে ছাড়ল।

তার সাথে আলাপ হতে আমার প্রায় মাস তিনেক লেগেছিল আর বছর চারেক তুমি থেকে তুই ডাকতে। তার আজব সম্মোহনী ক্ষমতা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতো, আবার অদৃশ্য কাচের দেয়াল যেন তাকে সযত্নে দূরে রাখত। কারো সাথে তার সহজ বন্ধুত্ব হয়ে উঠল না।

তার নিজের মত ভাবার ক্ষমতা, সোজাসাপ্টা বলার সরলতাকে আমরা  নির্বুদ্ধিতা মনে করতাম, আর সিনিয়র বা শিক্ষকরা বেয়াদবি। এ ধারনা তার উপকারে না আসুক, অন্যদের এতে বেশ সুবিধা হত। দশ জনের সাথে অপরাধে ধরা পড়লে সিনিয়ররা তাকেই পালের গোদা হিসেবে ধরে নিতেন। তেমনি রেস্ট আওয়ারে কথা বলা, জানালার কাঁচ ভাঙ্গা ইত্যাদি নানান অপরাধ প্রমান ছাড়াই তার ঘাড়ে পড়ত। করুণ চাহনিতে গোবেচারা ভাব ফুটিয়ে তোলার কায়দাটা সে কিছুতেই রপ্ত করতে পারল না।

প্রায়ই দুপুরের খাবারের পরে, মাগরিবের আগে বা ছুটির দিনের অলস প্রহরে তার সভ্য হওয়ার কসরত দেখতাম।নির্লিপ্ত ভঙ্গিমায় সে সকল নসিহত হজম করে যেত।  দায়িত্ববান সিনিয়ররাও উজ্জীবিত হয়ে নব নব শিক্ষাদান পদ্ধতি অন্বেষণের গবেষনায় নিবেদিত হতেন। তবে সিনিয়রদের কাছে টু শব্দটি না করলেও আসল অপরাধীর স্বস্তিতে থাকার উপায় ছিল না, ক্লাশের ফাঁকে অথবা প্রেপ আওয়ারে তার নিজস্ব বিচার বসত। ক্রমে দুষ্টের দল ঠেকে শিখলো, বরং সিনিয়রদের কবলে পড়লে ছলনার সুযোগ আছে!

যে কোন বিষয়ে তার আগ্রহের সীমা ছিলোনা। ট্যালেন্ট শোতে কবিতা আবৃত্তির  প্রচেষ্টায় বদরাগী ফর্ম মাস্টারের ঝাঁজালো মন্তব্য, হাউস জুনিয়র বাস্কেটবল দলের বাছাইয়ে হাস্যকর ক্রীড়া শৈলী প্রদর্শন, ইত্যাদি নানান ঘটনা নিয়মিত হাস্যরসের জোগান দিত। আমাদের অবসরের বড় অংশ জুড়ে থাকত তার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের বিশ্লেষণ। বলা বাহুল্য, সাদাকালো সত্যর সাথে কল্পনার নানা রঙ যুক্ত হয়ে তা হয়ে উঠত আরও চিত্তাকর্ষক।

এর মাঝে হঠাত একদিন বাংলা বানান প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার জিতে নিল। আমরা বললাম, -‘ তাতে কি! কেমন হাস্যকর ভাবে সে পুরস্কারটা দুহাত উঁচিয় সবাইকে দেখাচ্ছিল, যেন আর কেউ কোনদিন জিতেনি’। কেউ বলল, ‘এটুকুতেই এত দেমাগ!’ বরাবরের মত অনায়াস অবহেলায় সে আমাদের মন্তব্য অগ্রাহ্য করল।

প্রকৃতির নিয়মেই বছর পার করে আমরা নতুন ক্লাশ সেভেনের অর্বাচীনদের হেদায়েত করার পবিত্র দায়িত্ব তুলে নিলাম। এতগুলি ক্ষুদ্র প্রান আমাদের বিশেষ যত্নে বেসামাল হয়ে উঠল। নতুন অনুসংগ পেয়ে আমরা তাকে প্রায় ভুলতে বসলাম।তবে ততদিনে আমরা জেনে গেছি আর সবার চেয়ে সে আলাদা।

সদ্য গজানো পাখায় মন খুলে উড়াল দেওয়ার পথে কেবল হান্নান স্যার তার ‘রেন এন্ড মারটিন’ এর ইংরেজি গ্রামার বইটি নিয়ে বাধা হয়ে দাড়ালেন। আমাদের সব  সুখ একটি লাল বইয়ের আঘাতে কিভাবে গুড়িয়ে যেতে পারে তা ভাবলে আজো অবাক হই। ব্রিটিশ আমল হলে চোখ বুজে স্বদেশীর দলে ঢুকে ইংরেজদের বোমা  মারতাম!

একদিন হান্নান স্যার তাকে আচ্ছা ধোলাই দিলেন, সে স্বভাবসুলভ কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে হজম করল। ক্লাশ শেষে সমবেদনা জানাতে গেলে ঠান্ডা চোখে আমাদের দিকে তাকিয়ে সে পবিত্র লাল বইটি সশব্দে ডেস্কের উপর আছড়ে ফেলল, এবং ইংরেজী শেখার জেদ তাকে পেয়ে বসল।

ক্রমে উদ্ভট শব্দ আর বাক্য বিন্যাসে তার চারপাশে দুর্ভেদ্য দেওয়াল গড়ে উঠল। আমরা তার কান্ড নিয়ে আমোদের নতুন উপলক্ষ খুজে পেলাম।  তবে সবাইকে আরেকবার চমকে দিয়ে ফাইনাল পরীক্ষায় ইংরেজীতে বাঘাদের টপকে সে তার ভেল্কি দেখাল। হান্নান স্যার অদৃশ্য ফুলের মালা পরিয়ে তাঁর ‘মাই বয়’ ক্লাবে তাকে বরন করে নিলেন। আমরা যে যার মত ‘স্নেক চারমার’, ‘গ্রাস হপার’, ‘হ্যাপি গো লাকি ফেলো’ ইত্যাদি হয়ে কোনক্রমে টিকে রইলাম।

দশম শ্রেণীতে উঠে গেলাম। ততদিনে সে ক্যাডেটদের অধিকার আদায় আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক আপোষহীন নেতা! অতিরিক্ত লাইব্রেরী ক্লাশ আদায়, গোবেচারা বন্ধুদেরকে ফিচেলদের তামাসা থেকে উদ্ধার করা, নব্য খাদকদের  নাস্তায় অতিরিক্ত পরোটা নিশ্চিতকরণ, অবিবেচক সিনিয়রদের অন্যায় আচরনের প্রতিবাদ ইত্যাদি নানা বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকায় সে নিজেকে আমজনতার মুখপাত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করল। ক্রমে তার কর্ম পরিধি বিস্তৃত হয়ে শিক্ষক আর কলেজ প্রশাসনকেও সম্পৃক্ত করল। একবার ড্রিল ফাঁকি দিয়ে ঘুমিয়ে থাকা চার বন্ধুর হয়ে এডজুটেন্টের সাথে দরবার করতে গিয়ে তার নামে সাতটি এক্সট্রা ড্রিল ইস্যু হলো।

এস এস সি পরীক্ষা এসে গেল। তবে প্রথা অনুযায়ী রাত্রিকালীন চা আর বাড়তি একঘন্টা বাতি জ্বালিয়ে রাখার অনুমতি না হওয়া পর্যন্ত পরীক্ষার্থীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে কি ভাবে! জানা গেল পরবর্তী টার্ম থেকে এই বিশেষ ব্যাবস্থা চালু হবে, সে অর্থে আরও তিন মাস।এই অবহেলা আমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির পথে বিশেষ অন্তরায় হিসেবে দেখা দিল। হাউস মাস্টার আর এডজুটেন্টের কাছে ধর্না দিয়ে লাভ হলো না, উপাধ্যক্ষ হিসেব কষে বুঝিয়ে দিলেন পড়াশুনার ইচ্ছে থাকলে সময় কোন বাধাই না। দাবী আদায়ের অনেক সম্ভব অসম্ভব কর্মপদ্ধতি আলোচনায় এল, এমনকি অনসন, ক্লাশ বর্জন বা প্রিন্সিপ্যাল স্যারের অফিসে স্মারকলিপি প্রদানের মত বিপ্লবী পদক্ষেপের কথাও উঠল। তবে কাজ কিছু হল না, প্রস্তুতির অপ্রতুল সময় আর বঞ্চনার আলোচনায় পড়াশুনা মাথায় উঠল। সিদ্ধান্ত হলো সরাসরি প্রিন্সিপ্যাল স্যারের সাথে ফয়সালা করা হবে। কিন্তু কে যাবে…ব্যাপারটা সেখানেই ঝুলে গেল!

একদিন গেমস আওয়ারে আমাদের অবাক চোখের সামনে সে প্রিন্সিপ্যাল স্যারের সামনে দাঁড়িয়ে গেল। নিরাপদ দূরত্ব থেকে কথা না শুনলেও মারকুটে প্রিন্সিপ্যাল স্যারের আক্রমণাত্মক অংগ সঞ্চালন আর তার ঘাড় বেঁকিয়ে চির চেনা কাঠ হয়ে দাড়ানো দেখে অনুমান করলাম নিছক সৌহার্দপূর্ণ কুশল বিনিময় চলছে না! কি আলোচনা হয়েছিল আল্লাহই মালুম, দেখলাম স্টাফ পরিবেষ্টিত হয়ে সে নির্বিকার ভাবে ফুটবল মাঠে ফিরে এল।

পরদিন ক্লাশ থেকে সে প্রিন্সিপ্যাল অফিসে সৌজন্য সাক্ষাতের দাওয়াত পেল। আমাদের উৎসুক চোখের সামনে স্টাফ তাকে বেল্ট টাইট করিয়ে ড্রিলের তালিম দিতে দিতে অফিসের দিকে নিয়ে গেলেন। আলোচনার পরিবেশ আর বিষয়বস্তুর গবেষণায় আমাদের সম্পূর্ণ জীব বিজ্ঞান প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাশটি ব্যয় করেও কোন কুলকিনারা পেলাম না! গোয়েন্দা মুনীর পাকা সংবাদ দিল, সে নাকি মাঠে স্যারকে বলেছে ‘যত্ন না নিলে গরু দুধ দিবে কি ভাবে?’ উত্তরে স্যার বলেছেন, ‘আমার গরুর কোন প্রয়োজন নেই’!

এ বিষয়ে তার মতামত পাওয়া গেল না, তবে ঘন্টা খানেক পরে ফেরার পথে স্টাফের সমীহ ভাব দেখে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের আভাস মিলল। জানা গেল সে নাকি  স্যারের সামনে বসার বিরল সৌভাগ্য অর্জন করেছে, সেই সাথে স্টাফ নিজে ওয়েটারকে দু’কাপ চা নিয়ে অফিসে ঢুকতে দেখেছেন। রহস্য উন্মোচনে সবাই ফেল মারলো। শুনেছি একমাত্র ভাইস প্রিন্সিপ্যাল স্যার ছাড়া আর কেউ কখনও তার অফিসে বসেননি, এমনকি অফিসে কেউ গেলে তিনি নিজেই দাঁড়িয়ে কথা বলেন; তাতে নাকি মূল্যবান সময় অপচয়ের সুযোগ থাকে না। তবে পরের সপ্তাহে প্রত্যাসিত সংবাদে আনন্দের বন্যা বয়ে গেল।

পরীক্ষার পরে লম্বা ছুটি। ঘুম আর আলসেমির স্টক শেষ, বিশেষ আদরের মর্যাদা হারিয়ে পরিবারের সাধারন সদস্যে পরিনত হয়েছি অনেক আগেই। নিয়মমাফিক রাজশাহীর এগার জন সকালে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। শহরময় টহল দিয়ে বেড়াই, কখনও গ্রামের দিকে চলে যাই। আর্থিক অনটনে আড্ডার অনুষঙ্গ চা সিংগাড়াও অনিয়মিত, মাহিদুলের খ্যাপ খেলার রোজগারই যা ভরসা! ক্রমে হাঁপিয়ে উঠে অর্থহীন কলেজেই ফেরার দিন গুনছি, যেখানে অর্থের জন্য জীবন থেমে থাকে না।

এসময়ে মাহিদুল নওগাঁর পোরসায় কি এক ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলতে যাবে,

……‘যাবি নাকি?’

রাজি হয়ে গেলাম। জানা গেল ফিরোজদের গ্রাম আলমডাঙ্গার সাথে পোরসার ফাইনাল খেলা। সব ছাপিয়ে ব্যাটা গোঁয়ারকে জব্দ করার উত্তেজনাই মুখ্য হয়ে উঠল। হেরে যাওয়া ফিরোজের করুন চেহারার কল্পনা আমাদের পথের ক্লান্তি ভুলিয়ে দিল।

বাস স্ট্যান্ডে পৌছে খেলা পন্ড হওয়ার খবর পেলাম। এলাকা থমথমে, নেতাগোছের কেউ খুন হয়েছে কাল রাতে। ক্লাবের কর্তা এক ভদ্রলোক বিস্তর মাফ চেয়ে দুইশ টাকা ধরিয়ে দিয়ে সটকে পড়ল। বজ্য্রাহত দুজন মিস্টির দোকানে বসলাম।জানা গেল ফিরতি বাস সেই বিকেলে, তাও যাত্রী হলে; আর না হলে কালকে ভোরে। বাজারে হোমিওপ্যাথির দোকানে জিজ্ঞাসা করে জানা গেল তার বাড়ি কাছেই। হায়রে কপাল, শেষে ওর কাছেই ধরা পড়তে হল!

খানিক পরে বরেন্দ্র এলাকার উঁচু নিচু ভূমির লাল মাটির পথ ধরে বাজার ছাড়িয়ে আমরা দিগন্তজোড়া মাঠে এসে পড়লাম। মৃদু বাতাসের আন্দোলনে ধান ক্ষেতে তখন অবিরাম সবুজ ঢেউ, যেন সীমাহীন সাগরের বুকে ভেসে চলেছি।জীবনে প্রথম দেখা অবারিত প্রকৃতির বিশালতা ততক্ষনে আমাদের স্তম্ভিত করেছে।

মাঠ পেরিয়ে প্রাচীন বটগাছের নীচে চায়ের দোকানে জিজ্ঞাসা করতেই বাড়িটি দেখিয়ে দিল। মাটির পাঁচিল ঘেরা প্রাচীন আম, জাম, তেঁতুল গাছের সারি পেরিয়ে বিশাল বাড়ির বৈঠকখানায় পৌঁছলাম। উঠানে ধান মাড়াইয়ের কাজ চলছে, একপাশে লম্বা দোচালা খড়ের ছাউনির নীচে অন্তত দশটি চুলা। জনাদশেক মহিলা কাজে ব্যস্ত, ধান সিদ্ধের কাজ চলছে।

একটু পরেই খালাম্মা এলেন, জানালেন আমাদের সবাইকেই তিনি চেনেন। ছেলের মুখে সারাদিন বন্ধুদের গল্প শুনে আমাদের সব খবর তার জানা। জাহিদের পায়ের প্লাস্টার খুলেছে কিনা জানতে চাইলেন; মাথা হেঁট করে বসে রইলাম, আমাদের জানা নেই!ফিরোজ ফুটবল খেলা দেখতে গেছে। আমাদের ঘরে বসিয়ে তিনি খাবারের বন্দোবস্তে গেলেন।

সেই ফাঁকে চারদিকে নজর দেওয়া গেল। টেবিলে কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সাইক্লোস্টাইল করা ব্রসিয়ার। দেওয়ালে আমাদের মামুনের জলরঙে আঁকা বাদল দিনের ছবি, এলবামে কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ছবি, অধিকাংশ ছবি অন্যের! কাশিম হাউস জুনিয়র ফুটবল দলের সাথে আমাকেও খুজে পেলাম, তেমনি একশ মিটার চ্যাম্পিয়ন মাহিদুল  আর রানার আপ শওকতের হাস্যজ্জল। মাথা হেঁট করে বসে আছি, কতক্ষন জানিনা।

আমরা তাকে নিয়ে হাস্য পরিহাসে বিভোর থেকেছি, অথচ পরম মমতায় সে আমাদের আনন্দময় মুহূর্তগুলিকে ধারন করেছে। আমরা প্রতিনিয়ত যখন তাকে অপদস্থ করার নতুন উপায় খুঁজেছি তখন আমাদের সাফল্যের আনন্দ আর গর্বকে সে নিজের করে নিয়েছে।

খাওয়া শেষে তেঁতুল গাছের নীচে মাচায় বসলাম। শেষ বিকেলে তার দেখা মিললো। কান ঢাকা লম্বা চুল ঘাড় পর্যন্ত বিস্তৃত। ছাপা লুঙ্গির সাথে খয়েরি পাঞ্জাবী, তাগড়া শরীরে সত্যিকার গ্রাম্য যুবক। মাহিদুলকে জড়িয়ে ধরলো, আর আমাকে নিরুত্তাপ গলায় গিজ্ঞেস করল, ‘আছো কেমন?’ মাথা নাড়লাম…মানে হ্যা, নাকি না!

……দুদিন কাটিয়ে দিলাম। চার বছরে তার সাথে বলতে গেলে কথাই হয়নি, এ যেন অন্য আমি আর অন্য ফিরোজ! অজান্তেই আমরা তুমি থেকে তুই এর সম্পর্কে উপনীত হলাম।

ছুটি শেষে কলেজে ফেরত এসেছি। ঘোরের মাঝে দিনগুলো কেটে যাচ্ছে। আমার মত অনেকেই পড়াশুনা শুরু করার উপযুক্ত শুভদিনের অপেক্ষায়, তবে সেদিন না আসায় খুব যে হতাশ তাই বা কিভাবে বলি! প্রথা অনুযায়ী সবাই যেন প্রতিভা বিকাশের দ্বিতীয় পর্যায়ে। একদল গীটার, বঙ্গো আর তবলার তালিম নিয়ে  শিল্পকলায়  নিবেদিত; আরেকদল গল্প,কবিতা আর মঞ্চ নাটকের মাতাল হাওয়ায় বুঁদ; কেউ আবার যত অনিয়ম দূর করে সপ্নের সুশৃঙ্খল কলেজ ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর; আর আমার মত কিছু অবান্তর পড়ে রইলাম খেলাধুলায় মাঠে ময়দানে। শুধু সেই থেকে গেল অবিকল এক হয়ে একা এক দলে। সে যেন সবার সাথে থেকেও নেই। তাকে চিনেছি বলেই জেনে গেছি সে এমনই। অবশ্য ততদিনে তার ভিতরের নরম ছেলে মানুষটাকে বুঝতে শিখেছি। যদিও আর সবার সামনে তার বন্ধু হওয়াকে লজ্জার ব্যাপার ভেবে সাবধানে এড়িয়ে চলি।

শিক্ষা সফরের সময় এসে গেল। কলেজের সবচেয়ে আনন্দময় সাত দিনের চিন্তায় আমাদের ঘুম মাথায় উঠেছে। ঘোড়েলরা লাইটস অফের পর লুকিয়ে আনা রঙিন জামাকাপড়ে মহড়া দিতে লাগল। চালবাজ মামুনের সানগ্লাসটা অলস দুপুরে চোখে চোখে ঘুরতে লাগল। বিশেষ ব্যস্ততার কারনে অধ্যক্ষ বা এডজুটেন্টের যোগ দিতে না পারাটা বাড়তি আনন্দের অনুসংগ যোগ করল। নির্ধারিত দিনে অসহায় দু’জন ফর্ম মাস্টার আর ততোধিক অসহায় একজন স্টাফের তত্তাবধানে আমাদের কলেজ বাস খুলনায় বি এন এস তিতুমীরের দিকে যাত্রা করল।

বি এন এস তিতুমীরে আমাদের লম্বামত ব্যারাকে থাকতে দেওয়া হল। একজন লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মজুমদার যান্ত্রিক কন্ঠে নৌবাহিনীর মহিমা ব্যাখ্যা করে ব্রীফ করলেন, ঘুমের ঘোরে শুধু শেষ বাক্যটুকু শুনতে পেলাম, Join Navy See the World। জীবনে প্রথম দোতলা খাটের নিচের বিছানায় শুয়ে কিছুতেই ঘুম এলনা, সারাক্ষন ভয় কখন না ভেঙ্গে পড়ে।(নৌবাহিনীর বন্ধুরা অপরাধ নিবেন না, এই অভিশাপেই সেনা বাহিনীতে এসে বিছানা পিঠে নিয়ে ঘুরে বেড়াই। কপাল ভাল হলে বিছানা মেলার সুজোগ পাই; না হলে মসজিদ, মন্দির, স্কুলের বারান্দা বা গাছতলা!)

ভ্রমনের বিস্তারিত মনে না থাকলেও নৌবাহিনীর টহল জাহাজ বি এন এস মেঘনা নাকি যমুনায় মংলা বন্দর থেকে হিরন পয়েন্টে নৌবিহারটি স্মরণীয় হয়ে আছে। জাহাজে উঠতেই জাহাজের ক্যাপ্টেন ভাবলেশহীন কন্ঠে আমাদের স্বাগত জানালেন, বক্তৃতায় আমদের জাহাজে পেয়ে তিনি আপ্লুত হয়েছেন জানালেও তার গম্ভির মুখচ্ছবি কিছুতেই তা  প্রকাশ করল না। একজন অফিসার নিরাপত্তা ও বিভিন্ন পরিস্থিতে করনীয় সম্পর্কে অবহিত করলেন, তাতে জাহাজ ডুবিতে করনীয় সম্পর্কেও জানা গেল। এর পরেই আমাদের সবাইকে একটি করে লাইফ জ্যাকেট দেওয়া হল। ততক্ষনে অপরিসর টহল জাহাজে স্থানাভাবে ডেকে গাদাগাদি করে অবস্থান, ইঞ্জিনের বিরামহীন শব্দ, পায়রার খোপের মত ছোট কেবিন আর চড়া রোদের উত্তাপ নিমেষেই ভ্রমনের আনন্দ শুষে নিয়েছে। মংলা বন্দর আর মোহনায় নোঙর করা দেশি বিদেশি জাহাজ আর ছোট বড় নৌকা গুলিকে পাস কাটিয়ে সুন্দরবনে ঢুকতে আমরা উচ্ছ্বসিত হলেও ক্রমে দুপাড়ে নদীতে নুয়ে পড়া বৈচিত্রহীন একঘেয়ে গাছের সারি দুচোখে জ্বালা ধরিয়ে দিল। বেয়াড়া কয়েকটি গাংচিল নাছোড়বান্দার মত জাহাজের সাথে লেগে রইল। শুধু একজন মুগ্ধ নিমগ্নতায় রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে রইল।

শেষ বিকেলে  হিরন পয়েন্টে পৌঁছলাম। রাতটি নৌবাহিনীর শিবিরে কাটিয়ে পরদিন ফিরতি জাহাজে উঠলাম।

এই শিক্ষা সফর আমাদের জীবনের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে বিশেষ অবদান রাখল। প্রায় সবাই সম্ভব্য পেশার তালিকা থেকে নৌবাহিনীকে বাদ দিলাম। দুএকজন মাত্রা ছাড়িয়ে জানালো; বরং না খেয়ে থাকব, তাই বলে এত কষ্ট! শুধু একজন দ্বিধাহীন ভাবে জানিয়ে দিল…Navy or nothing! আমরা অবাক হলাম না। তার পক্ষেই সম্ভব!

যথা সময়ে পাশ করে কলেজ থেকে বের হলাম। ফিরোজ প্রত্যাসিত ভাবেই নৌবাহিনীতে নির্বাচিত হল। সেই সাথে সবার মত নিজেকেও অবাক করে আমি সেনাবাহিনীর গ্রীন কার্ড নিয়ে ফিরে এলাম। কপালের ফেরে নাকের কি হাবিজাবি সমস্যার কারনে অপারেশন করাতে হলো, নাকের মধ্যে এই মোটা প্লাস্টিক টিউব নিয়ে রাজশাহী সদর হাসপাতালে একঘেয়ে জীবন কাটাচ্ছি, মায়াহীন নার্সের দল দিনে চারবার মোটা সুঁই দিয়ে পেনিসেলিন না কি যেন ইঞ্জেকশন দেয়।

একদিন সন্ধ্যায় আধো ঘুমে যেন তার গলা শুনতে পেলাম।

-‘শেষে কিনা নাক কেটে আর্মিতে!’

-রাগে গা রিরি করে উঠল, -‘আর্মিই ভালো, জেনে শুনে সাগরে ডুবতে যাব নাকি’,  তার চেয়ে বরং………কথা খুজে পেলাম না!

মিলিটারী একাডেমীতে যোগ দিলাম। শুনতে পেলাম ফিরোজ জার্মানিতে যাচ্ছে সেখানের একাডেমীতে প্রশিক্ষন নিতে। চমকিত হলাম, আমাদের ফিরোজ!

মিলিটারী একাডেমী পেরিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে বেয়াড়া স্বপ্নগুলিকে শৃঙ্খলার কঠোর শাসনে পর্যুদস্ত করার সংগ্রামে লেগে আছি। বন্ধু বান্ধবের সাথে যোগাযোগ নেই বললেই চলে। মাঝে মধ্যে খবর পাই, ফিরোজ আজ এদেশ তো কাল সেদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাঝে চট্টগ্রামে কি এক অনুষ্ঠানে তার সাথে দেখা, সে তখন মিলিটারী একাডেমিতে প্রশিক্ষক।

স্বভাব সুলভ পরিহাসের ভঙ্গিতে জানাল,

-সাগরে মরন নাই, বুঝলি! তাই আর্মিতে বদলী।

-আরে দূর! সাগরে ডুবে মরা তো সম্মানের ব্যাপার, তোর মত ছিঁচকের মরন হবে এঁদো ডোবায়!

-মানলাম, তুই মরবি আরামে শুয়ে শুয়ে সন্দেশ খেতে খেতে! তুই বায়েজীদ বোসতামীর পুকুরের কাছিম হয়ে শত শত বছর বেচে থাক, মরবি কাছিম হিসেবেই!

-পাগল নাকি, কাছিম কেন! আমি রয়েল বেঙ্গল টাইগার, মরব বাঘের মত!

-ওই হলো, লাভ কি বল; যাবি তো সেই জাহান্নামেই!

-আচ্ছা যা, তুই মরলে সারেদেশে খবর হবে।আহারে, আমাদের সোনার ছেলে…।   যুতসই আর কিছু খুজে পেলাম না।

এরপর বহুদিন খবর নাই। নবপ্রতিষ্ঠিত ফেনি গার্লস ক্যাডেট কলেজে এডজুটেন্ট হিসেবে বদলী হয়েছি। গুনীরা বলে, যাবতীয় মন্দ কাজের প্রায়শ্চিত্ত হবে এ জীবনেই। কথার সত্যতা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছি। নাহলে আমার মত বেয়াড়া লোক নিয়ম কানুনের কারবার করে!

 

২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৬। রবিবারে কলেজ এসেম্বলী। দ্রুত অফিস থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। অসময়ের ঝড় বাদলে ক্যাম্পাস লন্ড ভন্ড, চারিদিকে থৈ থৈ পানি।  দুদিন ক্যাম্পাসে কারেন্ট নেই। আমার শিক্ষক, বর্তমানে সহকর্মী প্রান বন্ধু বিশ্বাস স্যারকে প্রবল বাতাসে উল্টে যাওয়া ছাতা মাথায় ভিজতে ভিজতে উদ্ভ্রান্তের মত ছুটে আসতে দেখলাম।

……ফিরোজের খবর শুনেছ?

……কোন ফিরোজ, স্যার?

স্যার যেন আমার কথা শুনতেই পেলেন না। বারবার বিলাপ করতে লাগলেন,

……‘কি ভাবে সম্ভব, কি ভাবে সম্ভব!’

আজও মেলাতে পারিনি, তবে জানি সম্ভব! কোন সংকট কখনও তাকে দমাতে পারেনি। হোক না প্রকৃতির অসীম ক্ষমতা, মাথা নোয়ানো তার মানায় না!

———————————————————————————————-

১৯ সেপ্টেম্বর ২০০৬ সন্ধ্যায় আমার বন্ধু লেফটেন্যান্ট কমান্ডার ফিরোজ কবীরের অধীনস্থ জাহাজ বি এন এস সহিদ ফরিদ সুন্দরবনের হীরন পয়েন্টের কাছে আমবারিয়া চ্যানেলে নোঙর করে ছিল। উত্তাল সাগরের ঢেউ আর ঝড়ের আশঙ্কায় তিন নম্বর স্থানীয় বিপদ সংকেতের মাঝেই জাহাজটি মংলার আকরাম পয়েন্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। প্রবল ঝড়ে জাহাজটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে হংসরাজ চ্যানেলের তিনকোনা চরে আটকে যায়। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ‘মেরিটাইম সার্চ এন্ড রেসকিউ অপারেশনে’ বি এন এস সহিদ ফরিদকে উদ্ধার করা হয়। জাহাজের সকল নাবিক জীবিত উদ্ধার হলেও ফিরোজকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সম্ভবত টর্নেডো চলাকালীন বিশাল ঢেউ তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। তবে এখনও মাঝে মাঝে মনে হয়, হঠাত একদিন হয়ত হাজির হবে; সেদিন তাকে তর্কে হারিয়ে দিব!

৪,৮৬৮ বার দেখা হয়েছে

২০ টি মন্তব্য : “বেপরোয়া নাবিক”

  1. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    জুনাইদ ভাই,
    ছেলেবেলার ছবিগুলো এতবছর পরেও কত জ্বলজ্বলে আপনার লেখায়!
    এ লেখা লিখতে গিয়ে কি পরিমাণ রক্তক্ষরণ হয়েছে আপনার হৃদয় থেকে, কিছুটা অনুমান করতে পারি।
    আপনার স্বাদু আর মুচমুচে গদ্যে মন বসাতে পারছিলাম না শেষে কি আছে সেই আশংকায় -- সেটাই সত্যি হলো!

    জবাব দিন
  2. মনে পরে বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমি তে ফিরোজ স্যার এর কথা। অনেক ভাল একজন প্লাটুন কমান্ডার ছিলেন। দোআ করি আল্লাহ তাকে বেহেস্ত নসিব করুন।

    জবাব দিন
  3. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    সমূদ্রের কাছে গেলে আমার প্রতিবার মনে হয় এরমাঝে হারিয়ে যাওয়া, নিঁখোজ হওয়া, ডুবে যাওয়া বলে কিছু নেই। মানুষ সমূদ্রে গিয়ে ফেরত আসেনা কারণ তারা সেখানে থেকে যায়।ফিরোজ ভাই নিখোঁজ হননি, হারিয়েও যাননি। তিনি সমূদ্র থেকে গিয়েছেন, কারণ জলের উপরের জীবনও বড় বৈচিত্র্যহীন হয়ে গিয়েছিল।

    চোখের পানি অনেকদিনের বকেয়া হয়ে ছিল। আজকে পরিশোধ করলাম লেখাটা পড়ার সময়। লেখাটার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। :hatsoff:


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
    • জুনাইদ ( ৮৩-৮৯)
      সমূদ্রের কাছে গেলে আমার প্রতিবার মনে হয় এরমাঝে হারিয়ে যাওয়া, নিঁখোজ হওয়া, ডুবে যাওয়া বলে কিছু নেই। মানুষ সমূদ্রে গিয়ে ফেরত আসেনা কারণ তারা সেখানে থেকে যায়।ফিরোজ ভাই নিখোঁজ হননি, হারিয়েও যাননি। তিনি সমূদ্র থেকে গিয়েছেন, কারণ জলের উপরের জীবনও বড় বৈচিত্র্যহীন হয়ে গিয়েছিল।

      এই কথাটাই আসল। তোমার এই স্তবকটি যেন আমার গল্পের অলংকার! কৃতজ্ঞতা জানাই আমার আবেগকে নিজ গুনে অনুধাবন করার জন্য।


      লোকে যারে বড় বলে বড় সেই হয়!

      জবাব দিন
  4. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    অসাধারন লিখেছেন, চোখে পানি চলে এসেছে পড়তে পড়তে :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff:


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মোকাব্বির (১৯৯৮-২০০৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।