আজ আমি বাড়ি যাচ্ছি…!!!

(আমার এই লেখাটা আমি শফি ভাইকে উত্সর্গ করছি…ওনার পোস্ট পড়তে গিয়েই আমার মাথায় এটার আইডিয়া আসে। যদি লোকজনের ভাল লাগে তাইলে কুন কথা নাই…যদি খারাপ লাগে তাইলে সব দোষ শফি ভাইয়ের! আমি লিখতে পারি না, এইডা যতই সত্য হোক মানবো না…!!)

সকাল থেকেই মনটা আমার আজ খুব ফুরফুরে…প্রথমে বুঝতে পারছিলাম না কেন…আচ্ছা, আজ কি বৃহঃস্পতিবার?? ক্যালেন্ডারের পাতায় চোখ রাখতেই দেখলাম জ্বলজ্বল করছে ১০ই মে ২০৪২, মঙ্গলবার। না,তো! তাহলে? বিদ্যুত্‌ চমকের মত মনে পড়ে গেল আজ কি…আরে, তাই তো! আজ তো আমি ওল্ড ক্যাডেট্‌স হোম-এ যাচ্ছি…!!!
ওল্ড ক্যাডেট্‌স হোম…কত কিছু মনে পড়ে গেল…আজ থেকে বহু বছর আগে, বরিশাল ক্যাডেট কলেজের শফি ভাই এর আইডিয়া ছিল এটি। তবে এটি যে একদিন সত্যি সত্যি হবে তা কি উনি নিজেই ভেবেছিলেন?? হোমটি হবার পিছনে ১৮টি ক্যাডেট কলেজের প্রায় হাজার ৫০ ক্যাডেট এর কম বেশি সবারই অবদান রয়েছে। এত কিছু করে তবেই না ৩০০ একরের উপর বিশাল হোমটি কক্সবাজারের মত জায়গায় করা সম্ভব হল…মাথাটাকে বেশ কয়েকবার ঝাঁকিয়ে বাস্তবে এলাম। বুয়াকে ডেকে বললাম,
-‘আমার কাপড়-চোপড় আর দরকারী টুকটাক জিনিস ব্যাগে গুছিয়ে দাও তো…আর করিমকে বল ফ্লাইং শাট্‌লটা বের করে ব্যাগগুলো নিয়ে যেতে।’
-‘ভাইজান, আপনে সত্য সত্যই চইলা যাইবেন?? আমগো কি হইব??’
-‘তোমাদের তো চিন্তা করার কোন কারন দেখি না…সব কিছু আগের মতই চলবে, ম্যানেজার সাহেবকে সব কিছু বলা আছে…যখন যা কিছু প্রয়োজন তাকে জানাবে। আর আমি তো আছিই।’
ঠিক করেছি ১০ টার দিকে স্টার্ট করব। এখন বাজে সাড়ে সাতটা। আর মাত্র আড়াই ঘন্টা…!!!
নীলার কথা আজ খুব মনে পড়ছে…আচ্ছা, ও বেঁচে থাকলে কি আমার সাথে যেত?? মনে হয় না, উলটো আমার যাওয়াটাই বন্ধ করে দিত। কারন, এক মাত্র ছেলের সাথে থাকাটা ওর কাছে বেশী গুরুত্বপূর্ণ হত, হোক তা অন্যদেশে তবুও…এসব নিয়ে কতবার যে ওর সাথে ঝগড়া হত…আমার বেশীরভাগ কার্যক্রমই ওর পছন্দ হত না, নিয়মিত শেভ করি না কেন? শপিং এ যাই না কেন?? সিসিবি’তে সারাক্ষণ পড়ে থাকি কেন?? ছেলেকে কল করি না কেন??- হাজার কমপ্লেইন…আর আজ! আমাকে বিদায় জানাবার জন্য ও কেউ নেই…নাহ্‌, আজ কিছুতেই মন খারাপ হতে দেয়া যাবে না…’নীলা, আজ আর আমার চিন্তায় এস না, আজ আমার জীবনে বহুদিন পরে আনন্দ এসেছে…’

ব্রেকফাস্ট শেষ করে চা নিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসলাম। ঘড়িতে বাজে সাড়ে আট। চা’টা খেয়ে গোসল করতে হবে…গালে হাত বুলিয়ে দেখলাম খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি…শেভ করব নাকি? শুনেছি হোমের ইনচার্য এ আছেন আহসান ভাই(বিসিসি ১৯৮৮-৯৪)…খুবই কড়াকড়ি করে হোম চালাচ্ছেন…আর্মি থেকে অবসর নিয়েছেন ১০/১৫ বছর হল, তবে সেই ভাবসাব আজও যায় নাই…বরং বাড়ছে!!! সেদিন নাকি আমাদের কাকে জানি টানা এক ঘন্টা হাঁটিয়েছেন…ওর অপরাধ ও নাকী ঘুম থেকে দেরী করে উঠেছে…তবে যেহেতু আমার আজ প্রথম দিন, আশা করি শেভ না করার কারনে কিছু বলবেন না…১০টা ৮ মিনিট। গোসল করে, কাপড় পড়ে রেডি হয়ে বসে আছি…আমাদের আরিফ(বিসিসি)-ও যাবে আমার সাথে…ও আসলেই আমরা রওনা করব। ব্যাটা এখনও আসে না কেন?? ওর কপালি খারাবি আছে…ওর যে স্বভাব নির্ঘাত প্রতিদিন আহসান ভাইএর কাছে পাঙ্গা খাবে…ভাবতেই মনটা ভাল হয়ে গেল…দেরী স্বত্ত্বেও ওইটা ভেবে ওকে মাফ করে দিলাম…!
ডিং ডং…ডিং ডং… কলিং বেল? তারমানে ও চলে এসেছে??
-‘কিরে দোস্ত, কেমন আছিস??’ ঘরে ঢুকেই আরিফের প্রশ্ন।
-‘এসব পরে হবে। আমরা কিন্তু অলরেডি লেট…’
-‘আরে ব্যাপ্‌স না…প্রথম দিন…হইতেই পারে…হে হে হে ‘
-‘তোর লাগেজ উঠিয়েছিস?’
-‘জি ভাইয়া!!!’
আমি লাফ দিয়ে আগে গিয়ে ড্রাইভিং সিটের পাশেরটায় গিয়ে বসে পড়লাম। আরিফ হায় হায় করে উঠল,
-‘এত খানি পথ আমি ড্রাইভ করব??’
-‘আরে শুরু তো কর, পরে নাহয় আমিও করব…ব্যাপ্‌স না…হে হে হে…’
সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিলাম…দেখি সবাই চোখ মুচছে…এদিকে আমার তো আর তর সইছে না…
-‘কি রে শাট্‌ল চালু কর।’
-‘করব, তার আগে বল কেমন লাগছে??’
-‘মনে হচ্ছে বাড়ি যাচ্ছি…’
-‘আশ্চর্য! আমারও একই রকম লাগছে…’
-‘হইছে, হইছে…এবার স্টার্ট কর।’
ও শাট্‌ল চালু করল। যান্ত্রিক কন্ঠে প্রশ্ন এল,
-‘শাট্‌ল অটোমেটিক চলবে নাকি মেনুয়াল?’
-‘ম্যানুয়াল!! দুইজনে একসাথে চিত্‌কার করে বললাম।’
-‘ম্যানুয়াল মোড অন করা হল, আপনাদের যাত্রা শুভ হোক।’

অবশেষে আমরা বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম।

৩,৫২৯ বার দেখা হয়েছে

৩৮ টি মন্তব্য : “আজ আমি বাড়ি যাচ্ছি…!!!”

  1. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    ওল্ড হোমের ইনচার্যের পুরা নাম দেই নাই...মিসটেক হয়ে গেছে 🙁
    ওনার পুরা নাম জেনারেল(অবঃ)মোঃ আহসান হাবিব...(সাবেক সেনা প্রধান)
    এবার হইছে... 😀 😀


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  2. আহ্সান (৮৮-৯৪)

    কবির এবং মাসরুফ,
    আমারে কি ব্লগ থাইক্কা বিতাড়িত করবার চাইতাছিস রে বাপ?
    গরীব মানুষ, চাকুরীটা খুব বেশী প্রয়োজন... অবেলায় চাকুরী হারাইতে চাইনা... 😛 এইডি কি লিখছো????? আয় হায়...।

    লেখাটি খুবই ভালো লাগছে...। আমি চাই এই লেখাটা আরো চলুক...। আর ইন-চার্জ-হিসেবে আমি আজীবন থাকতে রাজি...। আমার র‌্যাঙ্ক মেজর জেনারেল না হোক, অন্তঃত (জেনারেল) মেজর তো হইছে? আমি অতেই খুশী...। নাকি তোমরা (জেনারেল) মেজর র‌্যাংকের কাউকে দিবানা ঐ পোষ্ট????

    আর কবির, খবরদার, লেট করার চিন্তা ভুলেও আনবানা মনে...। আরিফ রে ও স্মরণ করাইয়া দিও। চুল, দাড়ি যেন ঠিকমত কাটা এবং শেভ করা থাকে...। শেভ করা যদি ছাইড়া দিয়ে থাকো, অর্থাৎ তোমাগোর যদি দাড়ি থাকে, তাহলে তা সঠিকভাবে ছাটাই কইরা আসবা। কলপ করার অভ্যাস থাকলে সঠিক রঙের কলপ সঠিক মাত্রায় হইতে হইবে। জুতার পলিশ যেন ঠিক থাকে। বেগাইরত ক্যাডেটের মতো আবার হোমে ঢোকার আগে প্যান্ট তুইলা জুতার টো পায়ে পড়া মোজার সাথে ঘষার চেষ্টা করবানা...।

    আপাততঃ এইটুকুই। বাকি ইন্সট্রাকশন হোমে জয়েন করার পরে ইভিনিং রোলকলে পাইয়া যাইবা...। Wish Arif and you a safe journey to the Home....

    (ইয়া মাবুদ, রহম কর...ইন-চার্জ হবার আগেই না আবার পদটা হারাতে হয়... 😕 )

    জবাব দিন
    • জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

      আরিফ, দোস্ত গাড়ি ঘুরা রে... 🙁
      আহসান ভাই, প্রথম দিন হিসাবে আপনের কাছে এইডা আশা করি নাই... :(( :(( :bash:


      ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

      জবাব দিন
    • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)
      বেগাইরত ক্যাডেটের মতো আবার হোমে ঢোকার আগে প্যান্ট তুইলা জুতার টো পায়ে পড়া মোজার সাথে ঘষার চেষ্টা করবানা…।

      আহসান ভাই,বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সু পলিশ পদ্ধতি হিসাবে এইটাকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আগামী ২০৪৩ সালের এক্স চীফ সম্মেলনে দাবী তুলার ভার আপনার উপর অর্পিত হইল। 😀

      আহ, কতবার যে এমনে কইরা এডজুট্যান্টের রুমে ঢুকছি...
      কলেজের সূক্ষ্ণ থাইকা সূক্ষ্ণতম স্মৃতিগুলা মনে পইড়া যাইতেছে...

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : তৌফিক (১৯৯৬-২০০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।