বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে বলছি…

১। কয়েকমাস আগে আমাদের ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে ১২ তম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান হয়েছে। ৩ দিন ধরে চলা এই অনুষ্ঠানে বর্তমান-প্রাক্তন ক্যাডেটদের মিলনমেলা বসেছিল। বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্মৃতিচারণ, সম্বর্ধনা, খেলাধুলাও এই মিলনমেলার অংশ ছিল।

আমাদের ইনটেক (ব্যাচ) থেকে আমরা একটি উদ্যোগ নিয়েছিলাম যে পুরো অনুষ্ঠানটি আমরা ইউটিউব চ্যানেলে লাইভ টেলিকাস্ট করব। আমাদের এক বন্ধু পুরো কলেজে ওয়াই-ফাই এর ব্যবস্থা করেছিল। আমাদের শুধু দরকার ছিল ভাল মানের কয়েকটি ওয়েব ক্যাম। শেষ পর্যন্ত কিছু কারিগরি ত্রুটি ও নিরাপত্তাজনিত কারণে আমরা ওয়েব ক্যাম স্থাপন করতে পারি নি। তবে, ল্যাপটপের বিল্ট ইন ক্যামেরা দিয়ে কিছুটা হলেও লাইভ টেলিকাস্ট করা সম্ভব হয়েছিল।

মান তেমন ভাল না হওয়া সত্ত্বেও দেশ-বিদেশ থেকে আমরা অনেক সাড়া ও ধন্যবাদ পেয়েছিলাম। যারা দেশকে মিস করেন, কলেজকে মিস করেন- তাদের জন্য ভিডিওর কোয়ালিটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।

২। এত কথা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে উদ্দ্যেশ্য করে কেন বললাম?
কারণ খুব সাধারণ। বিসিবি চাইলে খুব সহজেই ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ডিভিশন কাপের সরাসরি সম্প্রচার করতে পারত। আমরা তো ঝকঝকে এইচ ডি প্রিন্ট চাচ্ছি না! শুরুতে না হয় নিম্নমানের ওয়েব স্ট্রিমই করত! কত টাকাই আর এতে খরচ হত? আমরা এখন ক্রিকইনফো’র লাইভ স্কোর বা টাইগার ক্রিকেট ডট কম ডট বিডি’র সাইটে বারবার রিফ্রেশ করে স্কোর জানতে চাইছি- এর চেয়ে তো নিশ্চয়ই ভাল হত!

৩। ইংল্যান্ড , অস্ট্রেলিয়ার ২য় বা ৩য় শ্রেণির অনেক ক্রিকেট খেলা মাত্র ২ টি ক্যামেরা দিয়েই কাভার করে। দুই প্রান্তে দুই ক্যামেরা পিচের উপর ফিক্সড করা থাকে। আমাদের তো ওরকম হলেও চলত! মাঝে মাঝে নিচে স্কোর দেখালে আর কি বেশি কিছু লাগত? অন্তত প্রথম দিকে আমরা এতেই খুশি থাকতাম!

৪। লাইভ কাভারেজ বর্তমান দুনিয়ায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নিজের চোখে না দেখলে বা নিজের কানে না শুনলে কোন জিনিসের প্রতি তেমন আগ্রহ জন্মায় না। শুধু তাই নয়, লাইভ কাভারেজ থাকলে আরও অনেক সুবিধা পাওয়া যেতঃ
ক। দর্শকদের আগ্রহ বাড়ত, মাঠে উপস্থিতিও নিঃসন্দেহে বেড়ে যেত।
খ। রেডিও, টেলিভিশনের জন্য নতুন নতুন ধারাভাষ্যকার তৈরি হত। আমরা নতুনদের সুযোগ দেবো না এবং মুখে বলব ‘অমুক, তমুক ছাড়া আমাদের আর কে আছে?’- তাহলে তো হবে না!
গ। খেলোয়াড়দের মধ্যেও পারফর্ম করার তাগিদ বাড়ত, তাদের মধ্যে আরও বেশি উৎসাহ-উদ্দীপনা আসত।
ঘ। নবীন খেলোয়াড়গণ খুব সহজেই মানুষের নজর কাড়তে পারত।
ঙ। সর্বোপরি আমাদের দেশের সো কল্ড দ্বিতীয় ধনী ক্রিকেট বোর্ডের দৈন্যদশা দেখতে হত না!

৫। বিভিন্ন দেশের ক্রিকেট বোর্ড দর্শককে মাঠে আনার জন্য কত চেষ্টা-তৎবির করে। কত প্ল্যান, প্রোগ্রাম হাতে নেয়। বোর্ডের বাড়তি ইনকামের জন্য দলের জার্সি, স্মারক, লোগো সম্বলিত ক্রিকেট গিয়ার, সৌজন্য টিকিট ইত্যাদি বিক্রি করে। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া এই মৌসুমে বেশি দর্শক সমাগমের উদ্দ্যেশ্যে টিকিটের মূল্য পর্যন্ত কমাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে! অথচ, আমাদের ক্রিকেট বোর্ডের এরকম কোন চিন্তাই নেই! সত্যি কথা বলতে কি দেশের ক্রিকেটের ব্যাপারে তাদের দীর্ঘমেয়াদী কোন পরিকল্পনা আদৌ আছে কি না- তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে!

Bangladesh_Cricket_Board_Logo.svg

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে বলছি,
বাংলাদেশ ক্রিকেটের বর্তমান উত্থাণ শুধুমাত্র ক্রিকেটারদের জন্য হয় নি, দেশের কোটি কোটি সাধারণ দর্শকের ভালবাসা এবং সমর্থনও এর একটি অন্যতম কারিগর। আমাদের ভালবাসাকে ফর গ্র্যান্টেড নেবেন না। আমরা যেমন ভালবাসতে জানি, তেমনি যে কাউকে দূরে সরিয়ে দিতেও দ্বিধা করি না!
এখন আপনারাই ঠিক করুন- আপনারা আমাদের কাছ থেকে কি চান!!!

৮ টি মন্তব্য : “বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে বলছি…”

  1. ইসতিয়াক আহমেদ (৯৮-০৪)

    এবার লীগে বেশ কিছু ম্যাচ নাটকীয়তা ছড়িয়ে শেষ বল মিমাংসা হয়েছে। এছাড়া অনুর্ধ ১৯এর বেশ কিছু প্রতিভাবান খেলোয়ার আছে যাদের খেলা দেখার আগ্রহ আছে সবার। উত্তম প্রস্তাব ভাই। মাহবুব আনাম ভাই (ফকক) আগে বোর্ডে ছিলেন, ওনার সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।


    শ্রান্ত পথিক আমি, বেলাশেষে-
    চারপাশে অভেদ্য-দুর্গম পাঁচিল তুলে
    বসে থাকি নষ্ট ঘরে
    হিসাবের খাতা মেলে খুঁজি কতোটা অপচয় হলো।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।