সুন্দরবনে বন্য প্রাণির আনাগোনা বন্ধ করা হোক!

পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের অববাহিকায় বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত এই অপরূপ বনভূমি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালি ও বরগুনা জেলা জুড়ে বিস্তৃত। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভবন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি। ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে। বর্তমানে মোট ভূমির আয়তন ৪,১৪৩ বর্গ কি.মি. (বালুতট ৪২ বর্গ কি.মি. -এর আয়তনসহ) এবং নদী, খাঁড়ি ও খালসহ বাকি জলধারার আয়তন ১,৮৭৪ বর্গ কি.মি.। (উইকি)

এই বিশাল বনভূমি এবং বনের মধ্যে জালের মত ছড়িয়ে থাকা নদী, খাল, খাঁড়িগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে দেশের সবচেয়ে বড় অবৈধ মালামাল চোরাচালানের রুট। অবশ্য নদীপথে বৈধ মালামাল যেমন ফারনেস তেল, কয়লা, বালি ইত্যাদিও পরিবহন করা হয়। বৈধ এবং অবৈধ পণ্য মিলিয়ে প্রতি বছর এই এলাকায় হাজার কোটি টাকার জিনিসপত্র লেনদেন হয়ে থাকে।

সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে সুন্দরবনের বন্য প্রাণিদের জন্য এই বিশাল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আজ হুমকি মুখে। প্রতি বছরই বন্য প্রাণির আক্রমণে বহু লোক হতাহত হচ্ছে। বাঘের আক্রমণ, সাপের কামড়, পোকা-মাকড়ের কামড় থেকে সৃষ্ট অসুখ ইত্যাদি কারণে প্রতি বছর কয়েক শ মানুষ মারা যায়। শুধু তাই ই নয়, জলপথেও পরিবহন ব্যবস্থাও আজকাল নিরাপদ নয়।

sundarban_from_jalpaiguri

গত বছর ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে ৩.৫৮ লাখ লিটার বহনকারী একটি ট্যাঙ্কার পানিতে ডুবে যায়। মালিকের প্রচুর ক্ষতি হয়। ট্যাঙ্কার চালক এবং মালিক ভয়ে মুখ না খুললেও তাদের ইঙ্গিতে বোঝা গেছে এর পেছনে বিরল প্রজাতির ডলফিনের হাত (অথবা লেজ) আছে। অত্যন্ত ভয়ঙ্কর এবং ক্ষমতাবান পরিবেশবাদীদের ভয়ে তারা পরিষ্কার করে কিছু না বললেও জানা গেছে দুষ্ট প্রজাতির ইরাবতী ডলফিনের উপর্যুপুরি আক্রমনের কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল। কিন্তু একটি বিশেষ মহলের চাপে শেষ পর্যন্ত ডলফিনগুলো ঠিকই ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে।

এদিকে গত ২৭ তারিখে আবার একটি বার্জ ঐ একই শ্যালা নদীর পানিতে ডুবে গেছে। এম.ভি রাজ নামের ঐ বার্জটিতে ৫১০ টন কয়লা ছিল! সম্ভবত বার্জ মাস্টার বুলু খান মানুষখেকো হরিণ কিংবা ভয়ঙ্কর বানরের ডাক শুনে বাহনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। যদিও তিনি ভয়ে এখনো মুখ খোলেন নি…এদিকে ভেসেলটির মালিক দিল খান তড়িঘড়ি করে সেটাকে ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা করছেন। বোঝাই যাচ্ছে সত্য চাপা দিতে পরিবেশবাদীরা তার উপর চাপ প্রয়োগ করছে।
আমরা বন্য প্রাণি এবং পরিবেশবাদীদের করাল গ্রাস থেকে বাঁচতে চাই। আমরা চাই সরকার অবিলম্বে সুন্দরবনে সকল প্রকার বন্য প্রাণির চলাচল নিষিদ্ধ করবে। তা না হলে দেশের চোরাচালান শিল্প হুমকির মুখে পড়ে যাবে। সময় ফুরিয়ে যাবার আগেই সরকারের ঘুম ভাঙ্গার প্রতীক্ষায় রইলাম!

৫ টি মন্তব্য : “সুন্দরবনে বন্য প্রাণির আনাগোনা বন্ধ করা হোক!”

মওন্তব্য করুন : মোস্তাফিজ (১৯৮৩-১৯৮৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।