এক ব্যাক বেঞ্চারের চোখে শুভ আলামত…!!

ছোট বেলা থেকেই আমি সবসময় পেছনের বেঞ্চে বসতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করতাম। পেছনে বসার কি জানি এক অমোঘ আকর্ষণ আছে। যারা সবসময় সামনে বসে অভ্যস্ত তারা আমার কথা-বার্তা খুব একটা বুঝবেন না হয়ত। আমার মনে আছে, ছোট বেলায় স্কুলে থাকতে আমি একবার এক স্যারের কাছে পেছনে বসার জন্য মার পর্যন্ত খেয়েছিলাম। কেমন করে জানি আমার গায়ে ভাল ছাত্রের তকমা ছিল, আর স্যারের কথা মতন ভাল ছাত্রদের নাকি সবসময় ক্লাসে একেবারে সামনের বেঞ্চে বসার নিয়ম…আজব! আমি আজও বুঝি না, এক জন ছাত্র/ছাত্রী ভাল, কি মন্দ তার সাথে ক্লাসের কোথায় বসবে তার কি সম্পর্ক???

কলেজে থাকতে মাঝে মাঝে ফর্ম মাষ্টারের চাপে পড়ে সিট বদলাতে হত, তবে সামনে বসার সাথে সখ্যতা সেখানেও কখনো গড়ে ওঠে নি…এরপর গ্রাজুয়েশন…আর এখন পোস্ট গ্রাজুয়েশন…ক্লাসেই ঠিক মতন যাওয়া হয় না…সামনে বসা তো দূরের কথা…!!!

যাই হোক, নিজের কথা অনেক বললাম। এবার লেখার শিরোনামে ‘শুভ আলামত’ প্রসঙ্গে কিছু কথা বলি…
গত পরশুদিন জাতীয় সংসদে সামনে বসা নিয়ে কি কান্ডটাই না হয়ে গেল…বিরোধী দল শেষ পর্যন্ত তো সামনে বসতে বা পেরে ওয়াক আউটই করে গেল…শাব্বাস বাংলাদেশ!!! শাব্বাস আমাদের সংসদ সদস্যদের!!! সামনে বসা নিয়ে এত মাতামাতি মানে এবার তাঁরা (চন্দ্রবিন্দুটা মন থেকে দেই নি, সাংসদ বলে প্রটোকল মেইনটেন করেছি মাত্র…) সংসদকে হয়ত সত্যি সত্যি কার্যকর করে তুলতে চাইছেন…কারণ, কে না জানে তারাই সামনে বসতে চায়- যারা মনোযোগী এবং পড়াশুনায় ভাল…!!!

আমার অবশ্য অফ টপিকে দুইটা কথা ছিল-

এক, কি দরকার ছিল এই সামান্য ব্যাপারটা নিয়ে বিরোধীদলের এত হাঙ্গামা করার? সংসদ থেকে ওয়াক আউট করা কিন্তু প্রতিবাদ জানাবার অনেক বড় একটি পন্থা। খেয়াল করলে দেখা যায়, এর মাধ্যমে বিরোধী দল আসলে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। কিন্তু আমাদের রাজনীতিবিদরা যেভাবে কথায় কথায় ওয়াক আউট করে, তাতে ব্যাপারটা অনেকটা মিটিং থেকে উঠে গিয়ে টয়লেটে যাবার মতন হয়ে গেছে…সংসদের পবিত্রতা যদি সাংসদরাই রক্ষা না করেন, তাহলে আর করবে কে???

দুই, বিরোধী দলকে সামনে বসতে না দিয়ে সরকারী দল কি এমন লাভটা করল??? এ থেকে কি তারা এটাই প্রমান করতে চাইল যে, এবার সংসদে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা কত বেশি??? এটা তো সবাই জানে…অথচ তারা যদি একটু বড় মনের পরিচয় দিয়ে বিরোধী দলের এসব ছোট-খাট চাওয়া মেনে নেয়, জনগনের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা কত বাড়ে- এই সহজ সত্য আমাদের দেশের কুশিক্ষিত, অশিক্ষিত, মূর্খ রাজনীতিবিদরা কবে বুঝবেন???

যা হোক, আমাদের মতন সাধারণ মানুষদের অতটা না বুঝলেও চলবে…দেশের দায়িত্ব তো আমরা ‘সুযোগ্য’ হাতে দিয়েই দিয়েছি…আর কি চিন্তা??? আবার আগামী নির্বাচনের আগে চিন্তা করার অনেক সময় পাওয়া যাবে…আপাতত সাংসদদের সামনে বসা নিয়ে যে শুভ আলামত দেখা গেল, তাকে স্বাগত জানাই… :hatsoff:

২,৫৪৫ বার দেখা হয়েছে

৩০ টি মন্তব্য : “এক ব্যাক বেঞ্চারের চোখে শুভ আলামত…!!”

  1. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    সবেতো শুরু।
    আজকে সামনের সিট
    কালকে মাইক
    পরশু ফাইল
    তারপর চেয়ার ছোড়াছুড়ি।
    দুষ্ট চক্রও এর চেয়ে অনেক মধুর কোন কিছু আমি নিশ্চিত 🙁


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  2. তাইফুর (৯২-৯৮)

    জুনা, সংসদ অধিবেশন আমি ব্যাপক মজা নিয়ে দেখি ... অনেকটা থ্রী-স্টুজেস, মিঃ বিন টাইপ চরম হাসির ছবি'র মতই লাগে।

    কিন্তু আমাদের রাজনীতিবিদরা যেভাবে কথায় কথায় ওয়াক আউট করে, তাতে ব্যাপারটা অনেকটা মিটিং থেকে উঠে গিয়ে টয়লেটে যাবার মতন হয়ে গেছে…সংসদের পবিত্রতা যদি সাংসদরাই রক্ষা না করেন, তাহলে আর করবে কে???

    আমার মনে হয় সংসদের পবিত্রতা রক্ষা করার জন্যই এরা চেয়ারে বসে ইয়ে না করে টয়লেটে যায়, মানে ওয়াক আউট করে। বারবার কেন যায় সেটা একটা প্রশ্ন বটে ...


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন
    • রহমান (৯২-৯৮)

      ডায়রিয়া হইছে মনে হয় :-B

      সংসদ অধিবেশন চলাকালে এই ডায়রিয়া প্রকট আকার ধারণ করে।

      আমার মনে হয় সংসদের পবিত্রতা রক্ষা করার জন্যই এরা চেয়ারে বসে ইয়ে না করে টয়লেটে যায়, মানে ওয়াক আউট করে।

      পরবর্তীতে রান আউট দেয়ার জন্য আম্পায়ার থুক্কু স্পীকারের কাছে আপিল জানাই।

      জবাব দিন
  3. সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯)

    ব্যাপারটা আসলেই হতাশাজনক...
    ছোটখাট ব্যাপার নিয়া কাঁদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ হইতেসে না...জীবনেও বন্ধ হবেনা...কথায় বলে না, খাইসলত(স্বভাব) যায়না ম'লে x-(


    "আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
    আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"

    জবাব দিন
    • সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯)

      যাইহোক, আমার মনে হয়, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসাবে সরকারী দলেরই দায়িত্ব এবং সুযোগ ছিল উদারতা দেখানোর...

      আরেকটা ব্যাপার হইল গায়ের জোরে তথ্যবিকৃতির ব্যাপারটা...আ'লীগ দাবী করে যে ২০০১ এর সংসদে তাদের ৬২টা আসনের বিপরীতে সামনের সারিতে ৬টা আসন দেওয়া হইসিল, আবার বিএনপি বলে যে- না, আমরা ৮টা আসন দিসিলাম...কারটা বিশ্বাস করুম? 🙁


      "আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
      আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"

      জবাব দিন
  4. সাব্বির (৯৫-০১)

    তোর লেখায় তুই চ্রম নিরপেক্ষতার পরিচয় দিসিস। যা কাল থেইক্কা তুই বাংলাদেশের পুরধান মন্ত্রী। আর তোর সিট হইব সবার পিছে।

    অফটপিকঃ দেশের পরিবর্তন নিয়া যে যত বেশি চিন্তা করছিল সে তত বেশি কষ্ট পাইতাছে। আমি খুব বেশি আশা করি নাই। জানতাম যেই লাউ সেই কঁদু।

    জবাব দিন
  5. মঞ্জুর (১৯৯৯-২০০৫)
    অথচ তারা যদি একটু বড় মনের পরিচয় দিয়ে বিরোধী দলের এসব ছোট-খাট চাওয়া মেনে নেয়, জনগনের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা কত বাড়ে- এই সহজ সত্য আমাদের দেশের কুশিক্ষিত, অশিক্ষিত, মূর্খ রাজনীতিবিদরা কবে বুঝবেন???

    ভাইয়া,এইটা যদি ওরা বুঝতো তাইলে তো হইতোই......

    জবাব দিন
  6. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    এখানে আম্লীগের উদারতা দেখানোটা জরুরি। সামনের সারিতে আরো দুই-তিনটা আসন দিলে তাদের বিরাট কোনো ক্ষতি হতো না। বরং বিরোধী দলকে সংসদে রাখাটা সরকারি দল ও স্পিকারের দায়িত্ব।
    এর আগে বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার করবো বইলাও করে নাই। এখন বলছে সংবিধান সংশোধন করতে হইবো।


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : তাইফুর (৯২-৯৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।