কালো ঘোড়ার আরোহী!!! পর্ব চার

পর্ব ১
পর্ব ২
পর্ব ৩

৭।

স্বপ্ন দেখছে মাইক। বাবা, মা, গ্রান্ড পা সবাইকে দেখা যাচ্ছে। ওর জন্য ক্রিসমাস গিফট এনেছে বাবা। খেলতে খেলতে হঠাৎ করে ও মাটিতে পড়ে গেল। ওকে তুলতে কে জানি হাত বাড়িয়ে দিল। মুখের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল আংকেলকে!! ওর নাম ধরে ডাকছে। ঝপ করে সব কিছু উধাও হয়ে গেল, আংকেলের বদলে দেখতে পেল ডেভ এর মুখ। লন্ঠনের আলোয় দেখা গেল ওর দিকে ভয়ার্তমুখে তাকিয়ে আছে, আর নাম ধরে ডাকছে।
-থ্যাংক গড, তুমি বেঁচে আছ!! উপর থেকে দেখে মনে হচ্ছিল তুমি বুঝি আর…কথাটা ও আর শেষ করল না।
-আমাকে পেলে কিভাবে?? অনেক কষ্টে মাইক বলতে পারল।

ডেভ মাইকের ক্ষত পরীক্ষা করতে করতে জবাব দিল,
-তোমার ঘোড়া আমাকে নিয়ে এসেছে। একটু আগে সে কেটদের বাসায় এসে হাঁক-ডাক করছিল। আমি বাইরে বের হয়ে শুধু ঘোড়া দেখে বুঝলাম, তোমার কিছু হয়েছে। আমার ঘোড়া নিয়ে ওর পিছু পিছু আসতেই এখানে নিয়ে এল। এরপর রক্তের চিহ্ন দেখে তোমাকে খুঁজে পাই। কি হয়েছিল, বল তো? অবশ্য গুলি খেয়েছ, তা নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছি।
-রেমন্ড…গুলি…করেছে…এটুকু বলতেই ওর জান বের হয়ে যাবার মত দশা হল।
-থাক এখন আর কিছু বলতে হবে না। ভাগ্য ভাল, গুলিটা অল্পের জন্য তোমার ফুসফুস মিস করেছে…রক্তপাত বন্ধ হয়ে গেছে, তবে তুমি প্রচুর রক্ত হারিয়েছ…আর গুলিটাও ভিতরে রয়ে গেছে, ওটা বের করে তাড়াতাড়ি ভাল করে ব্যান্ডেজ করা দরকার। বলে মাইককে দাঁড় করিয়ে দেবার চেষ্টা করল। এতক্ষণ ডান কাঁধে কোন সাড়া পাচ্ছিল না মাইক, কিন্তু নড়াচড়া করতেই ডান কাঁধের কাছে যেন আগুন ধরে গেল। ব্যথার চোটে হালকা গুঙিয়ে উঠল ও। ডেভ খুব সাবধানে মাইকের বাম হাত ওর কাঁধে রেখে নিজের দুই হাত দিয়ে ওকে ধরে রাখল।

এরপর বহু কষ্টে দু’জন ঢাল বেয়ে ট্রেইলের দিকে উঠতে লাগল। কাঁটাময় ঝোঁপ-ঝাঁড়ে ওদের গা কেটে কেটে যাচ্ছে। গুলি খেয়ে গড়িয়ে পড়ার সময় মাইকের কেমন কষ্ট হয়েছিল ভাবতে গিয়ে ডেভ এর মুখ থমথমে হয়ে উঠল। অবশেষে ওরা উপরে উঠে আসল। মাইককে দেখে ব্লাক খুশিতে বার কয়েক মাটিতে পা ঠুকে দিল। লন্ঠনের আলোয় দুজনেই দেখতে পেল ব্লাকের পিঠের কাছে আঘাতের চিহ্ন। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে গুলি লেগেছে। রাগের চোটে মাইক থরথর করে কেঁপে উঠল।
-ডেভ আমাকে দ্রুত সুস্থ করে দাও। আমি বেজন্মাগুলোকে খুন করব, কাউকেই ছাড়ব না…বলতে বলতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল।

এদিকে আকাশে মেঘ করে এসেছে। টুপ টুপ করে পড়তে পড়তে হঠাৎ জোরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। ‘মন্দ না, বৃষ্টিতে সব ট্র্যাক মুছে যাবে’ বলে ডেভ আলতো করে ওকে ব্লাকের পিঠে তুলে দিয়ে জিনের সাথে বেঁধে ফেলল, যাতে ঝাঁকিতে পড়ে না যায়। এরপর নিজের ঘোড়ায় চড়ে খুব ধীর গতিতে কেটদের বাড়ির দিকে রওনা হল।

৮।

দুই দিন পর।
চোখ খুলে প্রথমে মাইকের বুঝতে কষ্ট হল কোথায় আছে। নড়ার চেষ্টা করতেই ডান কাঁধে ব্যাথা পেয়ে সব মনে পড়ে গেল। এমন সময় দরজায় কেটকে দেখা গেল,
-গুড মর্নিং মাইক! এখন কেমন বোধ করছ???
-জীবিত…কিন্তু চরম ক্ষুধার্ত!!
-হা হা হা…গত দুই দিন ধরে স্রেফ স্যালাইনের উপর আছ তুমি। ক্ষুধার্ত থাকাটাই স্বাভাবিক। আমি তোমার জন্য স্যুপ নিয়ে আসছি। নড়াচড়া করার বেশি চেষ্টা কর না, ক্ষত এখনো পুরোপুরি শুকায় নি। আমি টেরিকে শহরে পাঠাচ্ছি, ডেভকে ডেকে নিয়ে আসুক।
-শহরের কি খবর??
-তা তো বলতে পারছি না, ডেভ সেদিন যাবার পর আর আসে নি। এদিকে আমি বা টেরিও এখনো শহরে যাই নি…
-সমস্যা নেই, ডেভ আসলে ওর কাছ থেকেই সব জানা যাবে। ভাল কথা, তোমার বাবা এখন কেমন আছেন??
-বাবা তো ভাল হোক খারাপ হোক, সারাক্ষণ বিছানাতেই থাকেন। তবে আজ তাকে বেশ সতেজ মনে হল!
-গুড, এটা অনেক ভাল লক্ষণ!
-আগে নিজে সুস্থ হয়ে নাও, তারপর পরের কথা ভেব।
-ওকে, ম্যাম। আচ্ছা, ব্লাক কোথায়? কেমন আছে ও?
-তোমার ঘোড়া? ভালো আছে। গুলির আঁচড় লেগেছিল, ডেভ ঔষধ দিয়ে দিয়েছে। অবশ্য খুব লাফালাফি করছিল। তুমি ছাড়া অন্য কাউকে বোধহয় ও কাছে ঘেঁষতে দেয় না, না??
-হ্যাঁ। শুধুমাত্র আমার কথাই শোনে ও।

কেট জানালার পর্দা সরিয়ে দিতেই সকালের আলোতে সারা ঘর ভরে গেল। ঘরের মধ্যে যে অসুখ অসুখ ভাবটা ছিল, তা নিমেষেই উধাও হয়ে গেল। ঘরটা মোটামুটি গোছানোই ছিল, তারপরও কেট হালকা ঝাঁড়া-মোছা করল।
-খবরদার, নড়াচড়া করবে না…বলে শাসিয়ে কেট ঘর থেকে বের হয়ে গেল। একটু পর ঘোড়ার শব্দ শুনে মাইক বুঝতে পারল টেরি শহরের দিকে রওনা হল।

কেট স্যুপ নিয়ে এলে সেটা গোগ্রাসে গিলে মাইক আবার বিছানায় শুয়ে শুয়ে আপন মনে চিন্তা করতে থাকল। কতদিন পর এমন ঘরোয়া পরিবেশে শুয়ে আছে ও। খালি খালি লোকে ‘হোম-সুইট হোম’ বলে না! এই রকম শান্তিময় পরিবেশ বাসা ছাড়া আর কোথাও কি পাওয়া যাবে??

***********************************************************

আবার বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছিল মাইক। ঘোড়ার আওয়াজ কানে আসতেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। দোরগোড়ায় দেখা গেল হাস্যোজ্জ্বল ডেভ এর মুখ।
-মর্নিং ব্রাদার! এখন কি অবস্থা?? কেমন লাগছে?
-বেশ ভালো। ব্যথাটাও মোটামুটি সহনীয় পর্যায়ে এসেছে।

বিছানায় বসে ব্যান্ডেজটা পরীক্ষা করে দেখে ডেভ জানালো,
-আর দিন দু’একের মধ্যেই ব্যান্ডেজটা খুলে ফেলা যাবে, প্রায় শুকিয়ে গেছে।
-আগে বল গুলি ছোড়ার মতন অবস্থা কখন হবে?? শীতল গলায় জানতে চাইল মাইক।
-তা ধরো খুব বেশি হলে আর ছয়/সাত দিন। কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে ডেভ জানালো।
-এবার শহরের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাও।
-ওহ হো…আসল কথাই তো তোমাকে জানানো হয় নি। গত দুইদিনে তো শহরে অনেক কিছু হয়ে গেছে। সেদিন তোমাকে গুলি করে রেমন্ড ব্লাককে শহরে নিয়ে গিয়েছিল। এরপর ওর পিঠে ওঠার চেষ্টা করে, ব্লাক ওকে লাথি মেরে পালিয়ে এসেছে। লাথি খেয়ে রেমন্ড এর মৃত্যু হয়েছে। পাজরের হাড় ভেঙ্গে ফুসফুসটাকে একেবারে ছিন্ন-ভিন্ন করে দিয়েছিল। ব্লাক পালিয়ে যাবার সময় ফিলি গুলি করেছিল। ভাগ্য ভালো, হাল্কা আঁচড় লাগা ছাড়া ওর কোন ক্ষতি হয় নি। আমি অবশ্য মলম লাগিয়ে দিয়েছি।
-থ্যাংক্‌স ম্যান। আমি সারা জীবন তোমার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব!
-কি বলছ এসব? তুমি আমার ভাই, আর ভাই এর জন্য এইটুকু করব না?? খবরদার, এভাবে আর বলবে না!
-আচ্ছা ঠিক আছে। আর বলব না। এবার বল শেরিফের সাথে তোমার কি কথা হয়েছে?
-শেরিফকে নিয়ে তো আরেক কাহিনী হয়েছে। সে শহরের সবাইকে বলেছে, তুমি নাকি ইন্ডিয়ানদের হাতে মারা গেছ। তোমার লাশের এমন করুন দশা হয়েছিল যে, শহরে আর নিয়ে যায় নি। ট্রেইলের ধারেই কবর দিয়েছে। আর তোমার ঘোড়াকে পথে একা পেয়ে রেমন্ড শহরে নিয়ে গিয়েছিল। অথচ গত ৭/৮ বছরে এদিকে কোন ইন্ডিয়ান আক্রমনের কথা শোনা যায় নি…!!
-আশ্চর্য! শেরিফ এমন কেন বলবে?
-আমার মনে হয় উইলিয়াম্‌স ওকে হুমকি দিয়ে এসব বলিয়ে নিয়েছে। আর উইলিয়াম্‌স কিছু বললে তা অগ্রাহ্য করার মতন সাহস শেরিফের নেই। শেরিফকে তাই আর তোমার ব্যাপারে কিছু বলিনি। ভাবলাম, তুমি সুস্থ হয়ে যা ভাল বোঝ করবে। মোট কথা, শহরের সবাই জানে তুমি মৃত। এমনকি রবার্টও। দুইদিন আমি খুব মন খারাপ করা ভাব নিয়ে থেকেছি…
-হা হা হা। খুব ভালো কাজ করেছ। ওদেরকে চমকে দেয়া যাবে। এখন শুধু আমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে নেই, তারপর সবার সব দেনা-পাওনা মেটাব, বিশেষ করে ফিলি’র!!!
-আমি কিন্তু একটা জিনিস বুঝতে পারছি না। তুমি বলেছিলে রেমন্ড তোমাকে গুলি করেছিল, কিন্তু ও তো বন্দুকে খুবই ওস্তাদ টাইপের…
-আসলে রেমন্ড এর অতি-আত্মবিশ্বাসের কারনে আমি বেঁচে গেছি…ও যদি নিশ্চিৎ হবার জন্য নিচে নামত…তা হলেই…তাছাড়া ব্লাক আমাকে সাবধান করেছিল। প্রথমে খেয়াল করিনি, শেষ মুহুর্তে সরে যাবার চেষ্টা করেছিলাম বলে পুরোপুরি এড়াতে পারি নি। অবশ্য একেবারে মরে যাবার চাইতে এটা অনেক ভালো হয়েছে, কি বল?
-তা আর বলতে!!

৫৩ টি মন্তব্য : “কালো ঘোড়ার আরোহী!!! পর্ব চার”

  1. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    আলীমুজ্জামান ভাই কই? আমাদের ওয়েস্টার্ন গুরু।

    ভাইয়া ও ভাইয়া, আপনি কই, দেখেন জুনা ওয়েস্টার্ন লেখে। 🙂

    ভালো হয়েছে, তোমরা দুই ভাই দেখি উপন্যাসে উপন্যাসে সিসিবি ভরায় ফেলছো। :thumbup:


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  2. জুলহাস (৮৮-৯৪)

    পুলা তো নয় যেন "পশ্চিমা" :gulli2: :gulli2: :gulli2: :gulli2: :gulli2: :gulli2: :gulli2: :gulli2: :gulli2: রে !!!!!!!!!!!!
    তোর লেখা তো প্রায় ( ;;; ;;; ) হচ্ছে রে দাদা!!! :hug: :hug: :hug: :hug:

    অঃ টঃ এ যেন এক বিরিক্ষ ...আরেক বিরিক্ষ -কে বলিতেছে..."গাছ!!!!!!!!!" 😛 😛 😛


    Proud to be an ex-cadet..... once a cadet, always a cadet

    জবাব দিন
  3. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    দুইভাই মিল্লা পোস্টটার বারোটা বাজাইছে!! :chup: :chup: :chup:

    যাউগ্যা, খেলা জমতে সময় নিতাছে। অহনো ভালোবাসা জমে নাই। যাই একটু ঘুমাইয়া লই!! ;;;


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
    • জুলহাস (৮৮-৯৪)

      দাদা, এমনিতেই তোর জ্বালায় বাঁচি না... :grr: :grr: :grr: তার উপরে আলীমুজ্জামান ভাই তোর প্রশংসা করেছেন......!!! :shy: :shy: :shy:
      আমরা...মানে...জ্যাকফ্রুট জনতা তো শ্যাষ!!!!!! :bash: :bash: :bash: :bash:
      তুই কিন্তু এর পর থেকে মাটিতে নামা শিখিস্‌!!! 😛 😛 😛
      :clap: :clap: :clap:
      অঃটঃ আমার লেখায় কমেন্ট করতে গিয়ে...জুনা-র লেখায় কমেন্টটা লিখে ফেলার অফ্রাদে ( ;;; ;;; ) আলীমুজ্জামান ভাই-রে ভ্যাঞ্চাই!!!
      **কেউ কিছু কওনের আগেই :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: দেয়া শুরু করি...(আমরণ লাগাইলেও...প্রথমবারের মতন ইরাম এট্টা কাজ করতি পাইরে... আমি কিন্তু বিতাল...খুশী!!!)
      :awesome: :awesome: :awesome: :goragori: :goragori: :goragori:


      Proud to be an ex-cadet..... once a cadet, always a cadet

      জবাব দিন
    • জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

      আলীম ভাই,
      ব্যাপক ভালো লাগল... 😀
      একটু কেমন কেমনও লাগতেছে... :shy:
      ধন্যবাদ, বস... 🙂

      @দাদা, এত বড় হইলি, কিন্তু বড় হইতে পারলি না... x-(


      ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আদনান (১৯৯৪-২০০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।