কালো ঘোড়ার আরোহী!!! পর্ব তিন

পর্ব ১
পর্ব ২

৫।

কেটদের বাড়ি যাবার ট্রেইলটা কিছুটা রুক্ষ হলেও দুই পাড়ের অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মাইককে মুগ্ধ করল। অনেক দূরের পর্বত শ্রেনী তার বিশালতার মধ্য দিয়ে এই সৌন্দর্যকে শতগুণে বর্ধিত করেছে। ট্রেইলের এক পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে সরু জলধারা। পথ থেকে বেশ খানিকটা নিচে। সম্ভবত এটা ফ্লাশ ষ্ট্রিম, বর্ষাকালে বা পাহারী ঢল নামলে মনে হয় পানি অনেক বেড়ে যায়। এটাই যে এই এলাকার মানুষ এবং প্রানীদের খাবার পানির উৎস তা বুঝতে কষ্ট হল না। আঁকাবাঁকা হবার কারনে জলধারাটা হঠাৎ হঠাৎ খুব কাছে চলে আসছে, আবার বেশ দূরে। ঘন গাছ-পালার ফাঁক দিয়ে পানিতে প্রতিফলিত সূর্যের আলো মাঝে মাঝেই চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে।

সামনে হঠাৎ একটা বাঁক ঘুরতেই কেটদের র‌্যাঞ্চ চোখে পড়ল। বাড়ির সামনে কিছু শুয়োর এবং মুরগি দেখা যাচ্ছে। বাড়িটা সুন্দর এবং মজবুত। বোঝাই যায় কেটের বাবা অনেক সময় নিয়ে, যত্ন করে বানিয়েছিলেন। দরজায় কেটকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। বেশ মায়া-কাড়া চেহারা। তবে এই মুহুর্তে চিন্তিত, উৎকন্ঠিত। ডেভকে দেখে মুখে হাসি ফুটল।
-ওফ! এসে গেছ!! বাবার বুকের ব্যথাটা আবার বেড়েছে…!

ডেভ ঘোড়া থেকে নেমে ওর ডাক্তারি ব্যাগটা হাতে নিল। মাইককে বারান্দায় রাখা চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে দ্রুত ঘরের ভেতরে চলে গেল। কেট ওর পিছু নিল। একা হবার পর মাইক চারিদিকটা ঘুরে দেখল। একেবারে ছোট না র‌্যাঞ্চটা। শ’ চারেক গরু ওর চোখে পড়ল। এছাড়া কিছু এলাকা জুড়ে শাক-সব্জির ক্ষেতও দেখা যাচ্ছে। সব কিছু সুন্দরভাবে সাজানো গোছানো। বোঝা গেল বাবা অসুস্থ হলেও দুই ভাই-বোন মিলে বেশ দক্ষতার সাথেই সব চালাচ্ছে।

মিনিট দশ পর ডেভ এবং কেট ঘর থেকে বের হয়ে আসল। ডেভ কেটকে বলছে,
-আমি ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছি। টানা কয়েক ঘন্টা ঘুমোলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। আসলে বয়স বেশি হয়েছে তো, মাঝে মাঝেই শরীর আর কুলিয়ে পারছে না। যাই হোক, আর টেনশন কর না।’

এতক্ষণে কেটকে একটূ নিশ্চিন্ত মনে হল। এবার ডেভ কেটের সাথে মাইকের পরিচয় করিয়ে দিল। বারান্দার টেবিলে বসে তিনজন গল্প করা শুরু করল। এভাবে অনেকক্ষণ গল্প চলার পর ডেভ মাইকের সাথে উইলিয়াম্‌স এর কথা কাটা-কাটির কথা জানাল। কেট এটা শুনে আবার মুখ কালো করে ফেলল। মাইককে বারবার ওদের ব্যাপারে সাবধান করে রান্না ঘরে গেল, দুই ভাই এর জন্য পাই বানাবে।

****************************************

বিকাল বেলা। ওঠার কথা বলতেই কেট এমন করুন চোখে তাকালো যে, শেষ পর্যন্ত মাইক ডেভকে রাতটা থেকে যেত বলল। বলা তো যায় না, রাতে আবার শরীর খারাপ করতে পারে। তারচেয়ে বরং রাতটা দেখে কাল সকালে একবারে আসাই ভাল। কিছুক্ষণ ভেবে ডেভ রাজি হয়ে গেল। ওকে থাকার জন্য অনেক অনুরোধ করলেও ‘শহরে গিয়ে তিন বদমায়েশের উপর নজর রাখতে হবে’ বলতেই ডেভ আর না করল না।

ফেরার পথে একা হবার কারনে মাইক ব্লাককে ইচ্ছেমতন ছুটতে দিল। ব্লাকও মনের সুখে ছুটতে লাগল। চলার পথে মাইক আপন মনে কেট এবং ডেভ এর কথা ভাবতে লাগল। ঠিক করে ফেলল, আর ভবঘুরে জীবন না। এই জর্জটাউনেই ও স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করবে। সঞ্চয়ের কিছু পয়সা আছে, দরকার হলে কিছুদিন চাকুরি করে আরো পয়সা জমিয়ে একটা র‌্যাঞ্চ কিনবে। নিজের জায়গা, নিজের জমি…এরপর মনের মতন কোন মেয়ে পেলে হয়ত…!!! চিন্তায় মগ্ন ছিল বলে ব্লাকের অস্থির ভাবটা দেখতে পেল না। হঠাৎ করে ব্লাক জোরে হ্রেস্বা করতেই বাস্তবে ফিরে এল মাইক, কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে…লাফ দিয়ে নিচে নামতে যাবে এমন সময় বুকে ধাক্কা খেয়ে মাইক ট্রেইল থেকে ছিটকে পড়ল, গড়াতে গড়াতে ঝোঁপ-ঝাড় ভেঙ্গে একেবারে অনেক নিচে। প্রায় সাথে সাথেই সামনের একটা ঝোঁপের আড়াল থেকে বন্দুক বের হয়ে এল রেমন্ড।

মাইক পড়ে যাবার পর ব্লাক ছুটের পালিয়ে না গিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ল্যাসো দিয়ে ব্লাককে ধরে নিয়ে আপন মনে শিষ দিতে দিতে রেমন্ড শহরের দিকে রওনা হল।

৬।

কিছুক্ষণ পরের কথা। সন্ধ্যা হয়ে গেছে।

নিজের অফিসে বসে উইলিয়াম্‌স এর সাথে কথা বলছে মরগান। শহরের যে কেউ এখন শেরিফকে দেখলে চমকে উঠত। তার চোখে মুখে অনিশ্চয়তা এবং দুর্বলতার চিহ্ন মাত্র নেই। বরং দেখা যাচ্ছে প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসী এবং নেতৃত্বপরায়ন কাউকে। তবে এই মুহুর্তে সে খুব বিরক্ত এবং রাগান্বিত।
-কতবার বলেছি তোমার দুই চেলাকে সামলে রাখতে, সামান্য এই কাজটুকু তুমি করতে পার না??? ওদের জন্য কিছু হলে পস্তাবে কিন্তু তুমি নিজেই…কি দরকার ছিল মাইককে মেরে ফেলার, অন্ততঃ এখুনি!! আর মেরেছে ভাল কথা, ওর ঘোড়াটা আনল কেন?? শহরের প্রতিটি মানুষ জানে ঐ বিশাল কালো ঘোড়াটা কার। কাল যখন ওর লাশ পাওয়া যাবে তখন কি জবাব দেবে শুনি???
-কাম অন মরগান, কাম ডাউন…কিছুই হবে না। মাইকের ঘোড়ায় কোন ব্রান্ড করা নেই। তাছাড়া রেমন্ড কোন কাঁচা কাজ করে না, গুলি করার সময় আশে পাশে কাক-পক্ষী পর্যন্ত ছিল না…
-দিনের পর দিন তোমাদের কু-কর্ম ঢাকতে ঢাকতে আমি বিরক্ত হয়ে উঠছি…শহরের কেউ যদি কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের করে ফেলে সেক্ষেত্রে আমি কিন্তু কিছুই করব না…হিসহিস করে শেরিফ সামনে বসে থাকা উইলিয়াম্‌স কে শাসাল।

শেরিফের এই হুমকিতে উইলিয়াম্‌স এর কোন ভাবান্তর দেখা গেল না। শান্ত-স্বরে সে বলল,
-দেখ শেরিফ, এইসব হুমকি-ধামকি তুমি অন্য কাউকে দিও-আমাকে না। কারন তুমি ভাল করেই জান, আমি যদি ডুবি তাহলে তোমাকে সাথে নিয়েই ডুববো। আমি তোমার নাড়ি-নক্ষত্র জানি। তোমার আয়রন সেফ-এ যে লুটের লক্ষাধিক ডলার আর অলংকার আছে তা তোমাকে একা ভোগ করতে দেব ভেবেছ??? তাই, যদি নিজের ভাল চাও আগের মতনই মাইকের ব্যাপারটাও যত দ্রুত সম্ভব ধামা-চাপা দাও।

শেরিফ কড়া গলায় আরো কিছু বলতে যাবে এমন সময় বাইরে কাতর আর্তনাদ শোনা গেল। এরপরই কানে এল চিৎকার, ঘোড়ার ছুটে যাওয়া এবং গুলির শব্দ। হুড়মুড় করে দু’জন বের হয়ে দেখল ভয়ানক দৃশ্য। রেমন্ড বুক চেপে ধরে রাস্তায় পড়ে আছে, তার মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে। এদিকে ফিলি মাইকের কালো ঘোড়ার পিছনে ছুটছে আর গুলি করছে। রেমন্ডের কাছে যেতেই ওরা দেখল ওর শরীরটা একটা ঝাঁকি দিয়ে স্থির হয়ে গেল। উইলিয়াম্‌স ওর পাশে হাঁটু গেড়ে পাল্‌স চেক করে দেখল তারপর শেরিফের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল। ততক্ষণে ফিলি চলে এসেছে।
উইলিয়াম্‌স ফিলিকে প্রশ্ন করল,
-কি হয়েছিল??
-রেমন্ড ঐ ঘোড়াটায় চড়তে গিয়েছিল, কিন্তু ত্যাঁদোড় ঘোড়াটা ওকে ফেলে দেয়। এতে রেগে গিয়ে ও পিস্তল বের করে গুলি করতে উদ্যত হতেই ঘোড়াটা ওকে লাথি মারে এবং ছুটে পালিয়ে যায়। এরপর আমি…
-বাকিটুকু আমরা দেখেছি…কঠোর স্বরে শেরিফ বলে উঠল।

এদিকে এত শব্দ শুনে কৌতুহলী কিছু মানুষকে দেখা গেল উঁকি-ঝুঁকি মেরে ওদেরকে দেখছে। শেরিফ দ্রুত চিন্তা করে নিচু গলায় উইলিয়াম্‌সকে বলল,
-পাজরের হাড় ভেঙ্গে ফুসফুসে আঘাত করেছে বোধহয়…যাক, ভালোই হয়েছে। মাইকের ঘোড়াটা নিয়ে কেউ আর প্রশ্ন করবে না…তুমি তাড়াতাড়ি রেমন্ড-এর কবর দেবার ব্যবস্থা কর। বাকিটা আমি সামলাচ্ছি।

দ্রুত কথাগুলো বলে সে উৎসুক জনতার দিকে এগিয়ে গেল।

৫৯ টি মন্তব্য : “কালো ঘোড়ার আরোহী!!! পর্ব তিন”

    • জুলহাস (৮৮-৯৪)
      হঠাৎ করে ব্লাক জোড়ে হ্রেস্বা করতেই বাস্তবে ফিরে এল মাইক, কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে…বন্দুকের গুলির শব্দ শোনা গেল। লাফ দিয়ে নিচে নামতে যাবে এমন সময় বুকে ধাক্কা খেয়ে মাইক ট্রেইল থেকে ছিটকে পড়ল, গড়াতে গড়াতে ঝোঁপ-ঝাড় ভেঙ্গে একেবারে অনেক নিচে।

      এই টুকুতেও কি যেন একটা সমস্যা আছে...ঠিক ধরতে পারছি না...। :bash: :bash: :bash:

      জোরে

      হবে বোধহয়...... 🙁 🙁

      গুলির শব্দ শুনলে বোধহয় আর গুলি লাগার কথা নয়... কি জানি!!!!

      কাইয়ুম ভাই কি বলেন????? :grr: :grr: :grr: :grr:


      Proud to be an ex-cadet..... once a cadet, always a cadet

      জবাব দিন
  1. রকিব (০১-০৭)

    আপনার লেইখা পইড়া মিয়া মনে হয় জীবনে এখনো কিছু শিখতার্লাম না। মাঝে মাঝে আপনার টুইস্ট পইড়া দুয়েকটা লেখার ট্রাই করতাম, আইজকাল ওয়েস্টার্ন, আর স্পাই থ্রিলার পইড়া ভাবতাছি এইগুলাতেও গুতা দিমু কিনা। আপনি গুরু, সত্যি কইতাছি। (এমনেতেও আগাছার গুরু বড় গাছগুলাই হয়) লাইফে খালি এক জায়গায় আপনারে হারাইতে পারছি। :grr: :grr:
    সিরিজটা দারুন হইতেছে। :boss: :boss: :boss:


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  2. তানভীর (৯৪-০০)

    এই পর্বটা অনেক ভালো হয়েছে।

    অফটপিকঃ আমি ভেবেছিলাম আজকে ফোন দিয়ে ঝাড়ি মারব এখনও লেখা দেস নাই কেন এই ভেবে! 😀 তুই তো আমার মনের কথা বুঝে গেলি রে :hug:

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : তানভীর (৯৪-০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।