কালো ঘোড়ার আরোহী!!! পর্ব দুই

পর্ব ১

৩।

পরের দিন।
টানা ঘুম দেবার পর সকাল বেলা জম্পেশ নাস্তা করে বেশ ঝরঝরে লাগছে মাইকের। হ্যাটটা মাথায় দিয়ে সেলুন থেকে বের হয়ে রাস্তায় নামল। ঝলমলে একটি রৌদেজ্জ্বল দিন। রোদ পিঠের উপর পড়তেই বেশ আরাম লাগল। হাঁটতে হাঁটতে ডাক্তারের চেম্বারের সামনে চলে এল। ‘যাই ডাক্তারের সাথে পরিচিত হয়ে আসি’ ভেবে চেম্বারের ভিতরে প্রবেশ করল।
-গুড মর্নিং ডক…!

এদিকে ডাক্তার তখন দেয়ালে ঝুলানো একটি চার্ট সোজা করছিল। সম্ভাষণ শুনে ঘুরে মাইককে দেখে খুশিতে গদগদ হয়ে উঠল।
-গুড মর্নিং। তুমি নিশ্চয়ই মাইক। তোমার কথা রবার্ট এর কাছে শুনেছি। আমি ডেভিড টেইলর। নাইস টু মিট ইউ। বলতে বলতে মাইকের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল।

বিড়বিড় করে ‘মি ঠ্যু’ বলে চিন্তিত ভঙ্গিতে মাইকও হাত বাড়িয়ে দিল। কেন জানি মনে হচ্ছে ও ডাক্তারকে আগে কোথাও দেখেছে, খুবই চেনা চেনা লাগছে ওর চেহারাটা…!
-আচ্ছা ডক, তুমি এর আগে কোথায় কোথায় ছিলে বল তো? তোমাকে খুব চেনা চেনা লাগছে…!
-প্রথমেই বলি, তুমি আমাকে ডেভ বলে ডাকতে পার, আমার বন্ধুরা আমাকে এই নামেই ডাকে। এর আগে? টেক্সাসে ছিলাম কিছুদিন। আর টেক্সাসের আগে পুরোটাই ছিলাম পুবে, নিউইয়র্ক এ। ওখানেই আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা, পড়াশুনা-সবকিছু। ডাক্তারী পাশ করার পরপরই বাবা-মা এক্সিডেন্ট করে মারা গেল। ওখানে আর মন টিকছিল না বলে সব ছেড়ে ছুড়ে পশ্চিমে চলে এলাম। প্রথমে কষ্ট হলেও এখন বেশ মানিয়ে নিয়েছি। তাছাড়া পশ্চিম যতই রুক্ষ আর নির্মম হোক না কেন, ডাক্তারদের কদর আছে সবখানেই।

-হ্যাঁ ডাক্তার এবং আন্ডারটেকারের অনেক কদর এদিকে! হা হা হা…কিন্তু এখনো বুঝতে পারছি না, তোমাকে কেন চেনা চেনা লাগছে?? একটা কথা জিজ্ঞাসা করি, অবশ্যই তুমি যদি কিছু মনে না করো…
-আরে কি যে বল না…রবার্ট এর কাছ থেকে তোমার সম্পর্কে শুনেই আমি তোমার ফ্যান হয়ে গেছি…সো, এনিথিং ফর ইউ…!
-তোমার বাবার পুরো নাম কি?
-এরিক টেইলর।
-এরিক?? নামটা শোনার পরই মাইকের মনে প্রায় অসম্ভব এক সম্ভাবনা উঁকি দিল।
-আচ্ছা, তোমার কাছে কি তার কোন ছবি আছে??
-ছবি?? থাকার তো কথা, কিন্তু কোথায় যে রেখেছি…বলে ডেভ বেশ কয়েকটি ড্রয়ার আতি পাতি করে খুঁজ়ে অবশেষে একটা ছবি বের করল। ছবিটি অনেক আগে তোলা হলেও বেশ স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে। মাইক যা আশা করেছিল ঠিক তাই, ওর সেই হারিয়ে যাওয়া আংকেলের ছবি!!!

-মাই গড! এ তো আমার আঙ্কেলের ছবি। এরিক টার্নার!! অনেক আগে বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছিল। শুনেছি গ্রান্ডপা’র সাথে কি জানি ঝামেলা বেঁধেছিল…।
-কি??? বাবা তার আত্মীয়-স্বজনদের ব্যাপারে আমার সাথে কখনোই কোন আলাপ করতেন না। একবার অবশ্য মুখ ফসকে সান্তা ফে’র নাম বলে ফেলেছিলেন। পরে আবার ‘কেউ বেঁচে নেই’ বলে দ্রুত প্রসংগ বদলান। তোমরা কি সান্তা ফে’তে থাকতে??
মাথা ঝাঁকিয়ে মাইক সায় জানালো। তারপর নিজের মনেই বলতে থাকল,
-তারমানে আংকেল বাড়ি ছেড়ে বের হয়ে শেষ পর্যন্ত পৌঁছান নিউইয়র্ক। সেখানে গিয়ে নাম বদলে ফেলে এরিক টার্নার থেকে হয়ে যান এরিক টেইলর। এজন্যই তার খোঁজ পাওয়া যায় নি। তুমি অনেকটা আংকেলের যুবক বয়সের চেহারার মতন দেখতে বলেই তোমাকে আমার এত পরিচিত লাগছিল!
-তারমানে…তারমানে…আমরা দুই ভাই!!! ডেভ কোন মতে কথাটা বলতে পারল।

-ওফ! আমার যে কি রকম অনুভূতি হচ্ছে তোমাকে বোঝাতে পারব না। এতদিন জানতাম এই বিশাল পৃথিবীতে আমার কেউ নেই। আমি একা, সম্পূর্ন একা! এখন হঠাৎ করেই জীবনটা অন্যরকম হয়ে গেল।

জীবনের বেশিরভাগ সময় পুবে কাটানোর কারনে ডেভের আবেগের বহিঃপ্রকাশ একটু বেশি, সে ছূটে এসে মাইককে জড়িয়ে ধরল। এমনকি মাইকের চোখের কোণাও যেন একটু চিকচিক করে উঠল।
-এক কাজ করি, রবার্ট এর সেলুনে যাই। এত বড় একটা ঘটনা হল, সেলিব্রেট না করলে কেমন হয়???
-চলো। বলে মাইক হাসি মুখে সায় দিল।

৪।

-তারমানে তুমি এবং আমি ছাড়া আমাদের পরিবারের আর কেউ বেঁচে নেই???
-নাহ্‌, কেউ নেই…কিছুই নেই…
কথার মাঝখানেই রবার্ট শ্যাম্পেইন এর একটা বোতল দিয়ে গেল। যাবার আগে বলে গেল ‘তোমাদের ফ্যামিলি রি-ইউনিয়ন উপলক্ষে আমার তরফ থেকে শুভেচ্ছা উপহার’।
রবার্টকে ধন্যবাদ দিয়ে ডেভ মাইককে জানাল,
-ও আমার খুব ভাল বন্ধু। কথা একটু বেশি বলে, তবে মানুষ খুব ভালো।
-ভালো মানুষ মনে হয়েছিল বলেই তো কাল কিছু বলিনি। তা না হলে কি আর এত বকবক করার পরও ওকে দুই চারটা ঘুসি না মেরে ছেড়ে দেই!!

এটা শুনে ভেংচি কেটে রবার্ট অন্য খদ্দেরদের দিকে এগিয়ে গেল। ও জানে মাইককে এখন আর ভয় পাবার কিছু নেই…

-ভাল কথা, আমাদের রি-ইউনিয়ন সবার কাছে ভাল লেগেছে এটা ঠিক বলা যাবে না। নিচু গলায় কথাটা মাইক ডেভকে বলে দূরের একটা টেবিলের দিকে ইশারা করল। দেখা গেল ওখানে রেমন্ড বসে খাচ্ছে। আর মাঝে মাঝেই ওদের দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে।

-ব্যাপারটা আমার ভাল লাগছে না। নিশ্চয়ই কালকের জন্য ওরা তোমার উপর ক্ষেপে আছে। কখন যে কি করে বসে! আমার কিন্তু বেশ টেনশন হচ্ছে।
-আরে দূর, টেনশনের কিছু নেই। ওদের টাইপ আমার জানা আছে। কেউ কিছু বলে না বলে মাথায় উঠে গেছে। তবে ওদেরও জানার সময় হয়ে গেছে, পৃথিবীতে ওদের চেয়েও অনেক বেশি টাফ মানুষ আছে। কথাটা এমন শীতল গলায় মাইক বলল যে ডেভ এর গায়ে হালকা কাঁটা দিয়ে উঠল।

এমন সময়ে সেলুনের মধ্যে ১৬/১৭ বয়সি একটা ছেলে এসে ঢুকল। চারিদিকে তাকিয়ে ডেভকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে এগিয়ে গেল।
-থ্যাংক গড, তুমি এখানে। তাড়াতাড়ি বাসায় চল। কেট আমাকে পাঠিয়েছে। বাবার শরীর নাকি বেশি ভাল না।
-তাই নাকি। আমি এমনিতেই আজ একটু পর যেতাম। ভাল কথা, টেরি, এ হচ্ছে মাইক…আমার ভাই। আর মাইক ও হচ্ছে টেরি।

পরিচয় পালা শেষ হলে টেরিকে বাড়ি যেতে বলে ডেভ মাইককে বলল,
-টেরি হচ্ছে আমার হবু শালা। ওর বোন, কেট এর সাথে আমার বাগদান হয়ে গেছে। ওদের বাবা ছোট একজন র‌্যাঞ্চার। শহর থেকে মাইল পাঁচেক উত্তরে ওদের র‌্যাঞ্চ। বেচারার বয়স হয়ে গেছে। প্রায়ই শরীর খারাপ থাকে। বিশেষ করে হার্ট এর অবস্থা তো খুবই খারাপ। এদিকে সংসারে ভাই বোন ছাড়া আর কেউ নেই। তাই দ্রুত বিয়েটা সেরে ফেলব বলে ভাবছি। তুমিও চল, সবার সাথে পরিচয় করে দেব।

দশ মিনিটের মধ্যে মাইক এবং ডেভ তৈরি হয়ে আস্তাবল থেকে ঘোড়া নিয়ে রওনা করল। ডেভ এর ঘোড়াটা ব্লাকের মতন না হলেও বেশ ভাল জাতের ঘোড়া। ওরা দু’জন বেশ দ্রুতই পথ চলতে থাকল।

এদিকে ওদের জানার কথা না, তবে ওদের কিছুক্ষণ পরপরই রেমন্ড তার ঘোড়া নিয়ে শহর থেকে বেরিয়ে গেল। মাইক এবং ডেভ যেদিকে গেছে সেদিকেই…!!!

৫৭ টি মন্তব্য : “কালো ঘোড়ার আরোহী!!! পর্ব দুই”

  1. টিটো রহমান (৯৪-০০)
    বাকিরা তো শুধু হাসি দিয়া ভাগল…

    আরে মাইন্ড করিস না...
    আমি ভাবছিলাম যে যততম সে সেইকয়টা হাশি দিয়া নিজের অবস্থান জানান দিব............... 😕 :-B


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন
  2. মান্নান (১৯৯৩-১৯৯৯)

    আজ পরীক্ষায় যথারীতি বাঁশ খেয়ে তারপর এমন এটা ওয়েস্টার্ন লেখা পড়ে নস্টালজিক হয়ে পড়লাম । বুয়েটে প্রতি বাঁশের পরেই ওয়েস্টার্ন মুভি ছিল মন ভালো করার সবচেয়ে সেরা মা্ধ্যম।

    যথারীতি দেখা শুরু করলাম টপ ক্লাসিক ওয়েস্টার্ন মুভি লিস্টের " The Treasure of the Sierra Madre" ,ট্রেজার হান্ট +ওয়েস্টার্ন দুটো একসাথে মিলে গেলে সোনায় সোহাগা।

    জবাব দিন
  3. রকিব (০১-০৭)

    অধীর আগ্রহে :gulli: :gulli2: :gulli: অপেক্ষায় আছি। পরের পর্বে সামান্য হইলেও ইয়া ডিসুম, অই ডিসুমাইক, ঠাই ঠাই আইনেন পিলিজ। নেন :teacup: খাইয়া পরের পর্ব নামিয়ে ফেলেন ভাইয়া। :ahem:


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  4. কামরুলতপু (৯৬-০২)

    মাইক আতকা ডাক্তারের সাথে দেখা করতে গেল কেন বুঝলাম না। শহরে ঢুকে সবাই শেরিফ এর সাথে দেখা করে ডাক্তারের সাথে দেখা করতে এই প্রথম দেখলাম।
    আগেরটার মত উত্তেজনা ছিল না হয়ত ঘোড়া আর পিস্তলের কথা কম ছিল বলে।

    জবাব দিন
  5. সামীউর (৯৭-০৩)
    টেরি, এ হচ্ছে মাইক…আমার ভাই। আর মাইক ও হচ্ছে টেরি।

    দীর্ঘদিন দুই ভাই এর দেখা হবার 'সিন' এ একটা গান হইলে ভালো হইতো..দুই 😀 ভাই ঘোড়ায় চইড়া হারমোনিকা বাজায় বাজায় গান গাইতো...

    জবাব দিন
  6. বন্য (৯৯-০৫)

    :thumbup: :thumbup: :thumbup:
    সুপ্রিয় সেলিব্রেটি ব্লগার জুনা ভাই,
    আপনার সিরিজটি পড়ছি...আপাতত ইতিহাসের সাক্ষী হওয়ার জন্য মন্তব্য দিয়া গেলাম...সিরিজ শেষ হোক..বিশাল মন্তব্য করব..বলা যায়না,আবেগের চোটে ইমোশনাল হয়ে মানপত্র টাইপ কিছুও রচনা করে ফেলতে পারি!!! :grr: :grr: :grr:

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।