অ্যালবাট্রসটা খসানো দরকার…!!!

আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম!
না, আমি খুব বেশি আগের কথায় যাচ্ছি না। এই তো মাস দু’য়েক আগেও আমার দিনগুলো কম সুন্দর ছিল না…বাড়িতে ল্যাপটপ ছিল, ফ্রি ব্রডব্যান্ড কানেকশন…আহ!!

ভাই চিটাগাং চলে যাবার পর হঠাৎ করেই আমার সাইবার জীবন হুমকির মুখে পড়ে গেল। বাপে বলল, ‘চিন্তার কিছু নাই, বাড়িতে মনিটর তো আছেই, খালি এক খান সিপিইউ কিনে ফেলা।’ একথা শুনে দাঁত বের করে হাসি দিয়ে আমি বসে গেলাম মনের মতন সিপিইউ’র কনফিগারেশন ঠিক করতে। এমন সময় দৃশ্যপটে হাজির হল আমাদের ইনটেকের হাতেম তাই, সকলের নয়নের মনি, আমার দোস্ত, আমার ভাই- জাফর এর। আমি সিপিইউ কিনতে যাচ্ছি শুনে জানালো, ‘এখুনি কেনার কি দরকার? ল্যাপটপ কেনার পর আমার পিসি তো পড়েই আছে, তুই আপাতত এইটা দিয়ে কাজ চালা।” খুশিতে বাগবাকুম হয়ে মনিটরে টিভি দেখি, আর সিপিইউ কবে ঢাকা পৌঁছবে (জাফর তখন চিটাগাং) তার অপেক্ষা করি। তখনো বুঝি নাই আমার ভাগ্যাকাশে ঘনিয়ে আসছে খারাপ সময়ের ঘনঘটা!!!

একদিন সুন্দর সকালে মনিটরের কালার নাই হয়ে গেল। আমি ভাবলাম ‘মেশিন তো, নষ্ট হতেই পারে!!’ দোকানে ঠিক করতে দিলাম। কি কি হাবিজাবি নষ্ট হবার কথা বলে সেসব ঠিক করে বাসায় দিয়ে গেল। ইতোমধ্যে সিপিইউ চলে এসেছে। আমি খুশিতে সারাদিন ফ্রি-সেল খেলি আর ঠিক করি মডেম হিসেবে ব্যবহার করা জন্য কোন সেট কিনব…!!

যাই হোক, সেট কেনার আগেই সিপিইউ বিগড়ে গেল। চলতে চলতে হঠাৎ করে সেই যে বন্ধ হল, আর অন হয় না…কি করা! মেশিন তো, নষ্ট হতেই পারে…!!! সিপিইউ পাঠানো হল কম্পিউটারের দোকানে। দুইদিনের মধ্যে মনিটর বাবাজিও আবার নষ্ট হল। আমি ভেবে দেখলাম, ব্যাপারটা মন্দ হল না! এবার দুটো একসাথে একেবারে টিপটপ হয়ে আসবে!!! প্রথমেই সুস্থ হয়ে এল মনিটর।’ যাক টিভি হিসেবে অন্ততঃ দেখা যাবে!!!’ এর মধ্যে এক আংকেল জানালেন ‘ঠেক’ হিসেবে তার সিপিইউ নিয়ে আসতে। ইন্টেরিম গভঃ টাইপ আর কি!! আমি আবার খুশি হয়ে আংকেলের সিপিইউ নিয়ে আসলাম। কিন্তু হায়, দুই দিনের মাথায় সেটাও নষ্ট হল। তখন প্রথমবারের মতন আমার সন্দেহ হতে লাগল, কাহিনী কি??? আমার সাথে এমন কেন হচ্ছে??? বাপ বলল, ‘এত ঝামেলা না করে সিপিইউ যে কেন কিনলি না????’

দুই সিপিইউ, এক মনিটর হাসপাতেলে পাঠিয়ে দিয়ে আমি তখন যাকে বলে-জিম্বাবুয়ে হয়ে গেছি…হারাবার কিছু নেই…কয়েকদিনের মধ্যে একে একে সবাই সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরতে লাগল…একদিন একটা মোবাইল সেটও কিনে ফেললাম। এই যখন অবস্থা, ঠিক তখন নষ্ট হল টিভি কার্ড!!! মেশিন তো!!! সেটাও ঠিক করা হল!! মাঝে দুইদিন মাঝে দুই/ তিনটি বিরল দিন কাটালাম যখন বসার সব ইলেক্ট্রিক যন্ত্রপাতি ঠিক থাকল। অবশেষে গতকাল রাতে বাসার টিভি নষ্ট হল! বাপ-মা’কে যখন জানালাম, আম্মাজান বললেন, ‘শিওর তোর কুফা লাগছে! খবরদার ফ্রিজে হাত দিবি না। একমাত্র ঐটাই এখন পর্যন্ত ভাল আছে!’ আমি জানি, সিসিবি এবং ফেইসবুকে আমার অনেক শুভাকাংখী আছেন যারা এটা শুনে গিরগিরায়া, ভূরি দুলিয়ে হাসছেন আর ভাবছেন ‘কেমন লাগে?? পারলে এখন ফ্রিজ থেকে মিষ্টি খা…’

অনেক হয়েছে! ঘাড়ে চেপে থাকা অ্যালবাট্রসটা না খসালে আর হচ্ছে না। শুনেছি টানা খারাপ সময় চলতে থাকলে বড় কিছু সদকা দিতে হয়।
‘ঐ জামাই মাস্ফু, কেমন আছিস??? কাল কি ফ্রি আছিস?? থাকলে বাসায় চলে আসিস তো…!!!’ :grr:

পুনশ্চঃ আজ সকালে ইব্রাহীম কার্ডিয়াকে জাফরের আব্বার বাই পাস অপারেশন হয়েছে। অপারেশন সাকসেসফুল এবং বিকাল পাঁচটার দিকে খালুর জ্ঞান ফিরেছে। তবুও ৭২ ঘন্টা যাবার আগ পর্যন্ত নিশ্চিৎ করে কিছু তো বলা যায় না…আপনারা সবাই প্লিজ প্রাণভরে খালুর জন্য দোয়া করবেন।

২,৩৯৪ বার দেখা হয়েছে

৪১ টি মন্তব্য : “অ্যালবাট্রসটা খসানো দরকার…!!!”

  1. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)
    দুই সিপিইউ, এক মনিটর হাসপাতেলে পাঠিয়ে দিয়ে আমি তখন যাকে বলে-জিম্বাবুয়ে হয়ে গেছি

    আশা করি ৭২ ঘন্টা পর ভালো সংবাদই অব্যাহত থাকবে।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  2. তানভীর (৯৪-০০)

    এখন সব ঠিকঠাক আছে তো? কম্পিউটার ছাড়া পড়াশুনা করতে পারবি তো? আমি এটা নিয়েই বেশী চিন্তা করছি। ;)) ;))

    মাস্ফ্যুকে তাড়াতাড়ি সদকা দিয়ে দে, শুভ কাজে দেরী করতে নাই। ;;;

    আংকেল সুস্থ হয়ে উঠুন তাড়াতাড়ি এই প্রার্থনা করি।

    জবাব দিন
  3. রকিব (০১-০৭)

    আংকেল দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন এই দোয়া করি।
    জুনা ভাই, আমার মনিটর আপনার এই পোষ্টটা পড়ার সময় আচমকা বন্ধ হয়ে গেছিলো, কুফাডা কি টেলিট্রান্সফার করলেন নাকি!!!! 😕 😕


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  4. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    খালু এখন ভাল আছেন এবং সবকিছু স্বাভাবিক আছে।
    আরো এক দেড় দিন হয়ত আইসিইউ তে থাকবেন।

    যাই হোক, সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ। 🙂


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রেশাদ (৮৯-৯৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।