এসএসবিঃ সর্ষেয় ভূত!!! শেষ পর্ব

প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব

৭।

-‘স্যার, নিজাম বলছি।’
-‘বল নিজাম।’
-‘স্যার, লোকটার পিছু নিয়ে আমরা মিরপুর ২ এসেছি। প্রায় মিনিট বিশেক হল সে এক বাড়িতে ঢুকেছে। আশপাশের লোকজনের কাছ থেকে জানতে পারলাম ওটায় এক পরিবার থাকে। অনেক দিন ধরেই নাকি ওরা এখানে আছে।’
-‘তোমরা কতজন ওখানে আছ?’
-‘স্যার, এই মুহুর্তে তিনজন। অবশ্য অফিস থেকে আরো দুইজনকে আসতে বলেছি, যে কোন সময়ে ওরা এসে পড়বে।’
-‘ঠিক আছে, তোমরা ওখানেই থাক। আর ঐ ব্যাটা বের হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর। বের হলেই দুইজন ওর পিছু নেবে। আর একজন বাড়ির ভেতরে ঢুকবে। দেখবে ওখানে কারা থাকে। যদি দেখ আমাদের সাংবাদিক সাহেবের পরিবার ওটা, তাহলে আমাকে খবর দেবে। অন্যথায় এমন কিছু করবে না, যাতে কারো কোন সন্দেহ হয়। ঠিক আছে?’
-‘ঠিক আছে, স্যার।’

ঘন্টা খানেক পর নিজামের ফোন এল।
-‘স্যার, আমি বাড়ির ভেতরে ঢুকেছিলাম। ওটা ঐ লোকেরই বাসা। ওর আসল নাম মকবুল, চিহ্নিত সন্ত্রাসী ‘সামছু’ গ্রুপের। এই মুহুর্তে মিরপুর দশের দিকে যাচ্ছে। জিয়া এবং হুমায়ুন ওর পিছু নিয়েছে।’
-‘ভেরি গুড। বাড়িতে কে কে আছে???’
-‘স্যার, লোকটার স্ত্রী, পাঁচ বছর বয়সী এক ছেলে এবং বুড়ি মা।’
-‘এক কাজ কর, ওদের কাছে জিজ্ঞাসা কর সাংবাদিকের কাছে কোন মোবাইল আছে কিনা। থাকলে নম্বরটা নিয়ে সেই টেলিকমকে ফোন করে কল ট্যাপ করার ব্যবস্থা কর। আর ওদের সবাইকে ধরে হেড কোয়ার্টারে নিয়ে এস। আমি আসছি। আর হ্যাঁ, বাসাটা ভাল করে সার্চ করবে।’

কায়সার মোবাইল রেখে ইন্টারকমে নাদিয়াকে ডেকে পাঠালো। আজকের মতন অফিসের কাজ শেষ।
-‘আমরা কি এখন বের হচ্ছি?’
-‘হ্যাঁ, হেড কোয়ার্টার।’
-‘তোমার হাতে কি???’
-‘এটা? ডেটাবেজ এর মিটিং এর সময় যারা যারা উপস্থিত ছিল, তাদের লিস্ট।’
-‘তোমার কি মনে হয়, এদের কেউ দায়ী???’
-‘ওয়েল, টু আর্লি টু সে দ্যাট। বাট ইউ নেভার নো…’
-‘আমি একটু দেখতে পারি???’
-‘শিওর’ বলে লিষ্টটা নাদিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিল।

পার্কিং থেকে কায়সার ওর গাড়ি নিয়ে বের হল। ওয়াকিটকিতে জানিয়ে দিল ওরা বের হচ্ছে। ওপার থেকে কনফার্মেশন পেয়ে ওরা বিল্ডিং এর এলাকা থেকে বের হয়ে রাস্তায় নামল। নাদিয়া তখনো নিবিষ্ট মনে লিষ্টে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে।
-‘আশ্চর্য ব্যাপার!’ নাদিয়া একসময়ে বলে উঠল।
-‘কি হয়েছে??’
-‘লিষ্টে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর নাম দেখে বলছি। আমার জানামতে উনি এই ডেটাবেজ এর ব্যাপারে প্রথম থেকেই বিপক্ষে আছেন, আমরা নাকি এখনো টেকনিক্যালি প্রস্তুত নই ওটা তৈরির ব্যাপারে।’
-‘বল কি?? আর ইউ শিওর???’
-‘হান্ড্রেড পার্সেন্ট। যতদূর শুনেছি এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কাছেও তিনি কয়েক দফা বিরোধিতা জানিয়েছেন…’
-‘হুম!’

নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটতে কাটতে কায়সার কি জানি ভাবতে থাকল। এরপর মোবাইলে স্পীড ডায়ালে চীফের নম্বর চেপে হেড ফোনটা কানে দিল,
-‘স্যার, আমরা একটি লীড পেয়েছি…’

এরপরে দুই মিনিট একনাগারে এতক্ষনের রিপোর্ট দিয়ে শেষে প্রশ্ন করল,
-‘স্যার, হাউ ফার ক্যান উই গো???’
-‘ইউ নো দ্যা প্রটোকল। ইউ ক্যান গো এজ ফার এজ ইট টেক্‌স…বাট মেক শিওর, ইউ আর ইন দ্যা রাইট পাথ।’
-‘ওকে স্যার। সেক্ষেত্রে আমি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ফোন ট্যাপ করতে চাই, মোবাইলও…’
-‘গো এহেড।’
-‘থ্যাংক ইউ স্যার।’

ফোনটা রেখে ওদের আইটি স্পেশালিষ্ট জামানকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিল ফোন ট্যাপের ব্যাপারে। এরপর জিয়াকে ফোন দিয়ে সাংবাদিক ওরফে মকবুলের বর্তমান অবস্থান জানল। লোকটা এই মুহুর্তে আছে শেওড়াপাড়ার এক গ্যারেজের ভিতরে। গ্যারেজের বাইরে থেকে নাকি তালা দেয়া। অবশ্য, জিয়া অপটিক্যাল ক্যামেরা দিয়ে ভিতরে অনেক লোক থাকতে দেখেছে। সেখানে অনেক ফায়ার আর্মস আছে বলেও ও আশঙ্কা করছে। ওয়াকিটকিতে পেছনের গাড়িটাকে সামনে আসতে বলল, এরপর নাদিয়াকে জানালো,
-‘তুমি ঐ গাড়িটাতে করে হেড কোয়ার্টারে চলে যাও। আমি শ্যাওড়াপাড়া যাচ্ছি।’
-‘ওখানে কি গোলাগুলি হতে পারে???’
-‘হবার চান্স বেশি, তবে আশা করছি দুই একজন বিগ শটকে পাব। এখন তুমি যাও, ঐ যে গাড়ি চলে এসেছে।’

৮।

নেভী হেডকোয়ার্টারের সামনে যে ভাস্কর্যটা আছে, ওখানে নাদিয়াকে অন্য গাড়িতে তুলে দিয়ে একটু এগিয়ে গিয়ে ষ্টাফ রোড থেকে বামে মোড় নিয়ে ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে ঢুকল। এবার ওয়াকিটকিতে নির্দেশ দিয়ে আরো কিছু এজেন্টকে শ্যাওড়াপাড়া যাবার নির্দেশ দিল। একটু পর ওর গাড়ি জাহাংগীর গেট দিয়ে বের হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে অবস্থিত আগারগাঁ যাবার বাই পাসে উঠে পড়ল। আইডিবি ভবনের সামনে সিগন্যালের মধ্যে থাকা অবস্থায় শোল্ডার হোলস্টার থেকে স্মীথ এন্ড ওয়েসনের পিস্তলটা বের করে চেক করে নিয়ে ড্যাশ বোর্ডে রেখে দিল। এটা ওর সবচেয়ে প্রিয় অস্ত্র। মডেল এস ডব্লিউ ১৯১১, ৯ মিমি ক্যালিবারের। চেম্বারে একটি সহ মোট ১১টা গুলি ধরে। হাতলটা খোদাই করা কাঠের তৈরি। আর অন্যান্য অংশ অর্থাৎ ব্যারেল, স্লাইড এবং ফ্রেমটা স্টেইনলেস ষ্টীলের। কাঠের অংশটুকু ছাড়া পুরো পিস্তলের রঙ ম্যাট সিল্ভার।

গ্যারেজের কাছে পৌঁছে কায়সার দেখল বেশ কয়েকজন এজেন্ট ইতোমধ্যেই চলে এসেছে। গাড়ি থেকে নেমে প্রথমে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পড়ে নিল এরপর অন্যান্যদের নির্দেশ দিতে থাকল, “সিভিলিয়ান লোকদের নিঃশব্দে সরিয়ে দাও। গ্যারেজের চারপাশে অবস্থান নেবে, সাবধান! কোন শব্দ যেন না হয়। সবাই যার যার কম (কম্যুনিকেশন) ডিভাইস অন কর। গ্যারেজের এন্ট্রান্স দুটো, সামনে এবং পেছনে। আমি সহ ৪ জন সামনে থাকছি, বাকিরা পেছনে চলে যাও। গুলি করার সময় খুব খেয়াল করে করবে। কোন সিভিলিয়ানের যেন কোন ক্ষতি না হয়। আর হ্যাঁ, আমি বলার আগে কেউ মুভ করবে না, ঠিক আছে? প্রথমে আমরা ওদেরকে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেব। না মানলে সামনের দরজা ভেঙ্গে ঢুকব। নাউ টেক ইউর পজিশন্স…মুভ, মুভ…”

লাউডস্পীকার হাতে নিয়ে কায়সার বলল, ‘গ্যারেজের ভিতরে যারা আছেন, তাদের বলছি- এসএসবি আপনাদের চারপাশে ঘিরে আছে। কেউ পালাবার চেষ্টা করবেন না। আপনারা কথা না শুনলে আমরা শক্তি প্রয়োগ করতে বাধ্য হব’। পাঁচ সেকেন্ড কোন আওয়াজ পাওয়া গেল না। এরপর হঠাৎ একটি জানালা খুলে ভেতর থেকে কে জানি গুলি করল।
-‘ওকে বয়েজ, লেটস রক এন্ড রোল…’

প্রথমে গ্রেনেড মেরে ওরা গ্যারেজের দরজা উড়িয়ে দিল। ধোঁয়া, ধুলা সরে যেতেই কয়েক জনকে দেখা গেল কাশতে কাশতে গুলি করতে উদ্যত অবস্থায়। টাশ টাশ করে গুলি করে এসএসবি এজেন্টরা তিনজনকে ফেলে দিল। একজন শুয়ে থাকা অবস্থায় গুলি করতে যাচ্ছে দেখে কায়সার তার দিকে গুকি ছুড়ল। হৃদপিন্ডের একেবারে মাঝখানে গুলি খেয়ে লোকটি স্থির হয়ে গেল। এমন সময় গ্যারেজের পেছনে গুলি শোনা গেল। সবাই বুঝলো পিছন দিয়ে পালাতে গিয়ে বাকিদের সামনে পড়েছে সন্ত্রাসীরা। দুই তিন রাউন্ড গুলি করে ওরা ফাইট করার চেষ্টা করল, কিন্তু পরবর্তীতে কোন উপায়ন্তর না দেখে জীবিতরা হাত তুলে আত্মসমর্পণ করল।

দেখা গেল সন্ত্রাসীদের মোট আট জনের মধ্যে দুইজন মারা গেছে। আহত তিনজন, এদের মধ্যে অতি পরিচিত ‘সাংবাদিক’ সাহেবও আছেন। হিংস্র চোখে সে কায়সারের দিকে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
-‘তুই তাইলে জামশেদ আলম না…’
-‘বাহ্‌, তোমার মাথা মোটা হলেও বুদ্ধি তো কম না…ঠিকই বুঝে ফেলেছ…যেভাবে আমি বুঝেছিলাম, তুমি সাংবাদিক নও, বরং সামছু গ্রুপের মকবুল।’

এজেন্টদের একজন গুলি খেয়েছে। নাহিদ নামের জুনিয়র একটা ছেলে পায়ে গুলি খেয়ে পড়ে আছে। সবাই মিলে ধরাধরি করে ওকে এম্বুলেন্স-এ তুলে দিল। সেটা কিছুক্ষণ পর ‘প্যাঁ পুঁ’ করতে করতে রওনা হয়ে গেল। এদিকে সন্ত্রাসীদের দলনেতা ‘কোপা সামছু’কেও পাওয়া গেল। বেচারা কাঁধে গুলি খেয়ে প্রচুর রক্ত হারিয়েছে…কায়সার তার কাছে গিয়ে প্রশ্ন করল,
-‘এই তোদেরকে কে ভাড়া করেছে???’
একদলা থুথু ফেলে সামছু চুপচাপ রইল। কায়সার এবার ওর কাঁধে পিস্তল দিয়ে হাল্কা চাপ দিয়ে প্রশ্নটা আবার করল। পশুর মতন গুংগিয়ে উঠে সামছু বলল, ‘আমি কইত্তেরি না। আমারে হেয়তে নাম কয় নাইক্ক্যা। খালি ছবি আর টেকা দিয়া কইছিল সবাইরে শ্যাষ কইরা দিতে।’
-‘তোর সাথে কথা হত কিসে??’
-‘মোবাইলে।’
-‘কোথায় সেটা?’
-‘এই যে আমার পকেটে। বলে সামছু মোবাইলটা বের করে দিল।’

কায়সার এবার মোবাইলটা থেকে জামানকে ফোন করে এই মোবাইলের লাস্ট কলগুলো চেক করতে বলল। ইতোমধ্যে দেখা গেল পুলিশ এসে পড়েছে। পুলিশকে হাল্কা করে সব বুঝিয়ে দিয়ে সন্ত্রাসীদের ওদের হাতে তুলে দিল। এবার সব এজেন্টদেরকে জায়গাটা সার্চ করতে দিয়ে ও গাড়িতে উঠে হেড কোয়ার্টারের দিকে রওনা হল।

৯।

বিশ্বরোডের কাছাকাছি আসতেই জামানের ফোন এল।
-‘স্যার, সামছুর লাস্ট দশটা কলের মধ্যে তিনটা হচ্ছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহেবের পিএ সুমন রায়ের সাথে।’
-‘মন্ত্রী না প্রতিমন্ত্রী????’
-‘স্যার, মন্ত্রী।’
-‘ঠিক আছে, বাকিদের পরিচয় পেলেই আমাকে জানাবে।’

এবার ও চীফকে ফোন দিয়ে রিপোর্ট করল। শেষে জামানের কথার পুনরাবৃত্তি করতেই চীফও বিস্ময় প্রকাশ করলেন। তিনি নাকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন। তাঁর কাছে খুবই আশ্চর্য্য লাগছে ওনার মতন একজন ব্যক্তি কি করে…ভাবতেই পারেন নি-এভাবে সর্ষেতেই ভূত থাকবে!!! তিনি প্রধানমন্ত্রীকে সব জানাচ্ছেন বলে ফোন রেখে দিলেন।

‘যতসব আজাইরা প্যাঁচাল! মনে মনে ভাবল কায়সার। চীফও আছেন তার দুনিয়ায়! আরে বাবা এদের আবার নীতি বলে কিছু আছে নাকি! স্বার্থের কারনে নিজের ছেলেমেয়েকে বিসর্জন দিতে পারে, দেশ তো অনেক পরের কথা।’ ভাবতে ভাবতেই চোখ চলে গেল গাড়ির ড্যাশ বোর্ডে। সকালের সেই লিষ্টটা দেখা যাচ্ছে। দুম করে মনে পড়ল, প্রতিমন্ত্রীর ফোন ট্যাপ করার কথা। দ্রুত জামানকে ফোন করে প্রতিমন্ত্রীর ফোন থেকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোন ট্যাপ করতে বলে দিল। এরপর ওর কাছ থেকে প্রতিমন্ত্রীর নম্বর নিয়ে তাঁকে ফোন দিল,
-‘স্যার, আমি এসএসবি’র মেজর কায়সার চৌধুরি বলছি।’
-‘ওহ্‌ ইয়েস, দ্যা গ্রেট কায়সার চৌধুরি। বলুন কেন ফোন করেছেন???’

এরপর ও একনাগারে সব বলে গিয়ে শেষে ফোন ট্যাপ করার জন্য দুঃখ প্রকাশ করল। সবশেষে প্রশ্ন করল,
-‘স্যার একটা কথা জিজ্ঞাসা না করে পারছি না, আপনি এই ডেটাবেজ তৈরির বিরোধিতা কেন করছিলেন???’
-‘ইয়াং ম্যান, আমি কম্পিউটার সম্পর্কে কম জানতে পারি…কিন্তু এটা জানি এই ডেটাবেজ তৈরি করতে কত অর্থ ও পরিশ্রম ব্যয় করতে হবে। তাছাড়া এ ব্যাপারে অভিজ্ঞতা আছে এমন দেশের সাথে যৌথ উদ্যোগে ডেটাবেজ করার পক্ষে ছিলাম আমি। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী ‘অভ্যন্তরীন ব্যাপার’ বলে বাইরের কারো সাহায্য নিতে রাজি হচ্ছিলেন না। এত কিছুর পরও তিনি রাজি না হওয়াতে আমি শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছি।’
-‘থ্যাংক ইউ স্যার। এবার সব পরিষ্কার হয়েছে।’

ফোন রেখে দিয়ে ভাবল, ‘দেশের সব রাজনীতিবিদই দেখি খারাপ নন। এদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা আসলেই দেশের জন্য কিছু করতে চান। সমস্যা হচ্ছে, এই সমস্ত সত্যিকার রাজনীতিবিদরা সংখায় কম এবং থাকলেও তারা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী পদে নেই।’ মনের দুঃখ মনে রেখেই গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগল কায়সার।

১০।

এসএসবি’র অফিসে ঢুকতেই নাদিয়া উড়ে এসে বুকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। হতভম্ব হয়ে কায়সার কি করবে ভেবে না পেয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর সম্বিত ফিরে পেয়ে নাদিয়া কায়সারকে ছেড়ে দাঁড়াল।
-‘তোমার কিছু হয় নি তো? কোথাও লাগে নি তো?? দোষীরা কি সবাই ধরা পড়েছে?? আমরা কি এখন বিপদমুক্ত?’
-‘আরে না, আমার কিছু হয় নি। তবে, তোমরা এখনো পুরোপুরি সেফ নও, কেননা পালের গোদাকে এখনো ধরা হয় নি। তাকে সহ তার সকল সংগী-সাথীকে ধরে শাস্তি প্যাঁদানী দেবার পর তোমরা বিপদমুক্ত হবে। ভাল কথা, এখন তো আমি আর জামশেদ নই…এখনো কি তুমি করে বলব, নাকি আপনি করে??’

জবাবে কিছু না বলে শুধু ছোট্ট করে একটু হাসল নাদিয়া। কবি-সাহিত্যিকরা ভুল বলেন না, ‘আসলেই সব কথা মুখে বলার প্রয়োজন নেই!!’

১১।

পরের ঘটনা খুব দ্রুত ঘটল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সব কিছু স্বীকার করে নিলেন। অপরাধীদের সাথে বিভিন্ন যোগাযোগ ঢাকার জন্য তিনি ডেটাবেজ প্রকল্পকে পিছিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তাকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছে বেশ কিছু মন্ত্রী, আমলা এমনকি বিরোধীদলেরও কিছু নেতা!!! লোকে তো আর খালি খালি বলে না, রসুনের সব কোঁয়ার গোঁড়া একটাই…একে একে সবাইকে গ্রেপ্তার করে জেলে ভরা হল। ধরা পড়ল অনেক চিহ্নিত সন্ত্রাসী! অনেকে গ্রেফতারে বাধা দিতে গিয়ে মারাও গেল।

মাস খানেকের মধ্যে ডেটাবেজ প্রকল্প চূড়ান্ত করা হল। ইন্টারপোলের কাছ থেকে দুই জন বিশেষজ্ঞ এনে তাদেরকে দলে শামিল করা হল। আর দলের প্রধান করা হল নাদিয়া ইসলামকে। ঠিক হল, সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে থাকবে এসএসবি। আশা করা যায়, দুই বছরের মধ্যেই বাংলাদেরশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই ডেটাবেজ তৈরির কাজ শেষ হবে। আর হ্যাঁ, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে বানানো হয়েছে দেশের পূর্ণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

কায়সার এবং নাদিয়া এখন খুব ভাল বন্ধু। প্রায়ই তারা বাইরে ঘুরতে যায়। অবশ্য আগের মতন এসএসবি’র কোন এজেন্ট আর ওদের পিছনে থাকে না। দুই বন্ধু যখন একসাথে ঘুরতে বের হয়, তখন তৃতীয় কারো থাকাটা ঠিক শোভন দেখায় না…!!!

৪২ টি মন্তব্য : “এসএসবিঃ সর্ষেয় ভূত!!! শেষ পর্ব”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    :gulli2: :gulli2: :gulli2:

    সন্দেহ মিলছে B-)

    ( জনগনের প্রানের দাবি উপেক্ষা করে সেই রকম কিছু সীন ছাড়াই খানি শেষ করায় আপনার... না থাক চাইলাম না... পরের বার একটু খেয়াল রাইখেন 😛 )


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. জুনা ভাই,

    ইংরেজী থ্রিলার পড়তে পড়তে খালি ভিনদেশী জায়গার নাম শুনতাম-কিন্তু আইডিবি ভবন, নেভী হেডকোয়ার্টার ইত্যাদি অতি পরিচিত জায়গার কথা পড়ে আর সেই সাথে দুর্দান্ত থ্রিলের মিশ্রণে একেবারে অভিভূত হয়ে গেছি।

    মিয়া কলেজে থাকতে তো ভিজা বিলাই ছিলেন এইখানে দেখি এক্কেরে ছুপা রুস্তম!!!!! :salute: :salute: :salute:

    জবাব দিন
  3. রকিব (০১-০৭)

    ৯০% স্বার্থক স্পাই সিরিজ, বাকি ১০% ও হতো যদি **** কিছুর বর্ণনা থাকতো 😛 😛 । জুনা ভাই দি গ্রেট। কায়সারের স্মীথ এন্ড ওয়েসনের পিস্তলটার যেই বর্ণনা দিয়েছেন, পুরাই মাসুদ রানার মতো। তবে এত তাড়াতাড়ি শেষ কেন করলেন :bash: :bash: । যাই হোক, বিশেষ অনুরোধ, পরবর্তী কোন সিরিজ করলে মাসুদের সাথে যেমন গগল অথবা সোহেল থাকে, ঐরকম কারো চরিত্রে আমাকে নিয়ে এসেন B-) ।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  4. দিহান আহসান

    জুনা ভাইয়া, অনেক অনেক ধন্যবাদ এত তাড়াতাড়ি সিরিজ টা শেষ করার জন্য।
    মন্তব্যে আর কি লিখব। এইখানে আসার পর থেকে থ্রিলারতো অনেক দুরের ব্যাপার,
    বাংলা বই'ই পাচ্ছিলাম না পড়তে। :awesome: :guitar:
    সময় করে নাও, আবার আরেকটা শুরু করতে হবে যে। ;;;

    জবাব দিন
  5. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    এত তারাতারি শেষ কেন???????????????? x-( x-( x-( x-(


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  6. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    শেষে এসে সব কিছু কেমন তাড়াহুড়ো করে ঘটে গেলো।
    এছাড়া বাকিটা ঠিক আছে, একটা নতুন ডাইমেনশন এসেছে সিসিবিতে।
    থ্রিলার আরো আসবে নিশ্চয়ই।

    লিখতে থাক। পড়তে থাকবো।


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  7. তানভীর (৯৪-০০)

    জুনা, খুব ভাল লিখছিস্‌! কিন্তু এত তাড়াতাড়ি শেষ করে দিলি কেন? আরও সাসপেন্স, একশন, কাহিনীতে আরেকটু টুইস্ট থাকলে ভালো লাগত।
    যাক, সিসিবিতে এই জাতীয় প্রথম গল্প। অভিনন্দন গরীব্জুনা। :thumbup: :thumbup:

    জবাব দিন
  8. আদনান (১৯৯৪-২০০০)

    গরীবজুনা 😀
    সিসিবি এর প্রথম থ্রিলার হিসেবে পরবর্তী লেখকদের জন্য বেশ উঁচু একটা বেন্চমার্ক রেখে গেলি । তবে টুইস্ট গুলা আরেকটু টুইস্ট খাওয়ালে, আর আরেকটু ক্যারেক্টার বিল্ডিং আশা করছিলাম । আরেকটু মনে হয় বড় করাই যেত । এবার বেশি কঠোর সমালোচনা করলামনা, আগামীবার করব B-) । একটা প্রিকুয়েল লিখে ফেল এস এস বি কে নিয়ে । :clap: :clap:

    জবাব দিন
  9. আমারো ইচ্ছা ছিল কাহিনীতে অনেক টুইষ্ট আনার জন্য...কিন্তু কি আর করা...আপাতত নেটে থাকতে পারব না বলে তাড়াতাড়ি শেষ করে দিতে হল...ইনশাল্লাহ্‌, পরে আবার হাজির হব...অন্য কোন দিন...অন্য কোন কাহিনী নিয়ে... ;;) ;;) ;;)

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।