এলোমেলো কথামালা-১

[১২ এপ্রিল ২০১০ তারিখে ইউনিফিল-এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করে লেবাননে এসেছি…অনেক সাগর/উপসাগর পাড়ি দিয়ে । এখানে অবস্থানের কিছু কিছু কথা/স্মৃতিকেই অনিয়মিত/এলোমেলোভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছি আর কি!]

০২ জুন, ২০১০।
প্রথমবারের মতন তুরস্কের মার্সিন শহরে এসেছি আমরা…মনে অ-নে-ক চিন্তা, শহরটা ভাল লাগবে তো? লেবাননের মতন দেশটা সুন্দর…দেশের মানুষেরা বন্ধুবৎসল হবে তো? এখানে কোন বাংলাদেশী আছে না কি? থাকলেও সে/তিনি/তারা আমাদেরকে শহরটা দেখাবে/চিনাবে তো!
আমার বিভাগের একজন সিনিয়র নাবিক (জেসিও) আমার কাছে রাত্রে এসে আর্জি জানালো, “স্যার, আমার একজন বড়ভাই এখানে ছিলেন…তাকে একটু আমাদের জাহাজটা ঘুরিয়ে দেখাতে নিয়ে আসতাম!”
-“আপনার না শুধু একটা বোন আছে? আপনার এলাকার বড়ভাই না কি?”
-“জ্বী স্যার। আমার বোন জামাই-এর ফ্রেন্ড, তার পার্শ্বেরই বাসার।”
-“কি নাম ওনার?”
-“স্যার, বদরুল আলম।”

জাহাজের কমান্ডিং অফিসার স্যারকে জানাতেই তিনি সাদরে সম্মতি দিলেন। এই ভিনদেশে একজন বাংলাদেশী পাওয়াটা নিঃসন্দেহে একটি বিরাট পাওয়া।

অফিসিয়াল কাজে আমি সারাদিন একটু ব্যস্ত ছিলাম…জাহাজের বাইরেও যেতে হয়েছিল। রাতে ফিরে সেই জেসিওকে শুধালাম, “কই, আপনার গেষ্ট কি এসেছিলেন?”
-“না স্যার, আমার সাথে জাহাজে আসার ব্যাপারে পোর্ট অথরিটির সাথে কোন ঝামেলা হয় কি না… সে কারনে আজ আনা হয়নি।”
-“আচ্ছা, ঠিক আছে। আগামীকাল সকালে আমাকে মনে করিয়ে দেবেন। বাই দা ওয়ে, উনি কি করেন?”
-“না মানে স্যার, এখানে উনি ব্যবসা করেন…কৃষিজাত পণ্য বাংলাদেশে রপ্তানী করে থাকেন। আসলে, ক্যাডেট থেকে পাশ করেই উনি নাকি এই দেশে চলে এসেছেন…আর ফেরেন নি।”
-“কি বললেন? উনি ক্যাডেট? কোন কলেজের? কবে পাশ করেছেন? এখানে কবে এসেছেন? এখানেই কি সেটেল্ড হয়েছেন? আমাকে আগে কেন বলেন নি যে উনি একজন ক্যাডেট?”

আমার প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়ে না কি অন্য কোন কারণে… উনি বিস্তারিত পরে জানাবেন বলে আমার সামনে থেকে ছুটে পালিয়ে বাঁচলেন।

পরদিন সকালে জাহাজের কমান্ডিং অফিসার স্যারকে আবার শুধালাম, “স্যার, গোবিন্দের বড়ভাই তো আসলে আমাদের-ই বড়ভাই… উনি না কি ক্যাডেট কলেজের।”
-“তাই না কি? ওনাকে তাড়াতাড়ি আসতে বলো!”

পুরো জাহাজে আমরা দুজন-ই মাত্র ক্যাডেট হওয়ায় বোধহয় আমাদের এই অতি উৎসাহ দেখে অন্যরা মজা পাচ্ছিল। গোবিন্দ বাইরে যাওয়ায়…তখন আর বদরুল ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করা গেল না।

দুপুর তিনটার দিকে (গোবিন্দ ফিরে আসার পরে) বদরুল ভাইয়ের নাম্বার পাওয়া গেল…সাথে এ-ও জানা গেল যে, তিনি আসলে বৃক্ষশ্রেণীরই একটি আদিম সংস্করন… (নামঃ বদরুল আলম, ক্যাডেট নং-৩৯৯, বদর হাউস, ৮ম ইনটেক, কলেজে অবস্থানকালীন সময়ঃ ১৯৭১-৭৭)। আমার খুশী আর দেখে কে??? দ্রুত তাকে ফোন দিলাম…এবং আসতে অনুরোধ করলাম। মজার (না কি দুঃখের) ব্যাপার, হি টুক অনলি টেন মিনিটস্‌ টু রান টু আওয়ার শিপ উইথ হিজ ফ্যামিলি। প্রস্তুতি নেবার আগেই দেখি, আমাদের ভাইজান হাজির!

একজন মানুষকে দেখে কারও যে এত ভাল লাগতে পারে… এত আপন মনে হতে পারে…এত নিজের মনে হতে পারে…এত দাবী… এত অধিকার (এবং কর্তৃত্ব) আসতে পারে…তা বলে বোঝাবার নয়। আমার মনে হচ্ছিলো…আমার নিজের বাবাকে কাছে পেয়েছি…আমার নিজের ভাইকে কাছে পেয়েছি…আমার খুব প্রিয় একজন বন্ধুকে বহুদিন পরে কাছে পেয়েছি।

একটা ছোট্ট শব্দ…একটা বন্ধন… “ক্যাডেট” কি অসীম ক্ষমতা রাখে!
হ্যাট্‌স অফ টু অল ক্যাডেট কলেজেস্‌… টু অল ক্যাডেটস্‌। ওয়ান্স্‌ এ ক্যাডেট, অলওয়েজ এ ক্যাডেট।

অঃটঃ আমাদের জি টু জি অফ মার্সিন, টার্কি-র ফটোসেশন দিয়ে দিলাম।

দ্যা লায়ন্‌স হার্ট-আমাদের বদরুল ভাই। ”

“বদরুল ভাইয়ের ফ্যামিলি (একসেপ্ট বড়ছেলে…ওনার বড় ছেলে, “আয়হান” আঙ্কারা ইউনিভার্সিটিতে জিওলোজিক্যাল অ্যান্ড মাইনিং-এ অনার্স পড়ছে!)”

“আমাদের জাহাজের ডেকে… ষ্টীলের উপরে কেউ কখনও বৃক্ষমেলা দেখেছেন? ”

“মার্সিনের মেরীন সাইডে…”

“মার্সিনের মেরীন সাইডে…”


“বদরুল ভাবী, বদরুল ভাই, আমি, বদরুল ভাইয়ের মেয়ে “দিবা নূর”, আমাদের জাহাজের কমান্ডিং অফিসার (পিসিসি) এবং দিবা-র বান্ধবী ”

“জাহাজের ব্রীজে”

“জাহাজের ইঞ্জিনরুমে”

“জাহাজের ওয়ার্ডরুমে”

“মার্সিনের মেরীন সাইডে…”

“জাহাজের উইং-এ”

“মার্সিনের পার্কে…”

বদরুল-ভাইকে নিয়ে বিশেষ লেখা? সে তো ইনশা-আল্লাহ্‌ ভবিষ্যতে লেখা হবেই!!!

২,৮৯২ বার দেখা হয়েছে

২৮ টি মন্তব্য : “এলোমেলো কথামালা-১”

  1. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    ইয়ে জুলাদা, ঐশ্বরিয়া-অভিষেকের "গুরু" ছিঃনেমাতে টার্কির বারে মিস মল্লিকা শেরাওয়াতের "মাইয়া-মাইয়া" গানটা খুব ভালো লাগছিলো।পিলিজ লাগে।পারলে দেইখা আইসেন 😉 (এবং সিসিবির জন্য চিত্র সহকারে ব্লগ দিয়েন,চিত্র বেশি সেন্সর্ড হইলে খোমাখাতায় দিয়েন )

    জবাব দিন
  2. ওবায়দুল্লাহ (১৯৮৮-১৯৯৪)

    দোস্ত,
    সুন্দর লেখা।
    আর সব কিছু ছাপিয়ে উঠে এসেছে - 'ক্যাডেট' নামের এক শ্রেনী প্রানীর একে অন্যের জন্য পরম ভালবাসা।
    :hatsoff:

    শুভেচ্ছা নিস অনেক প্রিয়।


    সৈয়দ সাফী

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : জুলহাস (৮৮-৯৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।