সূর্যপুত্র (পর্ব সাত)

সূর্যপুত্র
(ভূমিকাসহ পর্ব এক)
(পর্ব দুই)
(পর্ব তিন)
(পর্ব চার)
(পর্ব পাঁচ)
(পর্ব ছয়)

****আমি স্পষ্ট করেই বলতে চাই…আমার এই লেখাটি সম্পূর্ণই বানানো। জীবিত…মৃত…কাল্পনিক কারও সাথে আমার এই লেখা মিলে গেলে সেটার দায়ভার আমার একেবারেই নেই…আছে সিসিবির প্রিন্সিপ্যাল ভাইস্যার… ভাইস প্রিন্সিপ্যাল ভাপু… এডজুট্যান্ট ভাইস্যার…ইত্যাদিসহ আমার সকল সিনিয়র/জুনিয়র ভাই/বোনদের…কারণ, বৃক্ষের আবার দায়ভার কিসের???????!!!!!

০২ মে, ২০০৯।
শ্রীলংকার ত্রিংকোমালী বন্দর থেকে ৭৮০ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণ পূর্বে… … ভারত মহাসাগরের একটি স্থানে…

৩৮। সম্পূর্ণ ঘটনার আকস্মিকতায় হতবিহ্বল হয়ে পড়েছে সকল শ্রীলঙ্কান ফিশিং বোটগুলির স্কিপার ও জেলেরা। সব ফিশিং বোটগুলিকে অতি দ্রুত এবং অত্যন্ত অসামান্য তৎপরতার সাথে নিজেদের কর্তৃত্বে নিয়ে নিয়েছে ভারতীয় কোষ্টগার্ড জাহাজটি…এবং তাদের আসলে তেমন কোনই বেগ পেতে হয়নি…এই কাজটি করতে। তারা কেবল সকল স্কিপারদের হাত বেঁধে মেকানাইজ্‌ড বোটে করে তুলে তাদের জাহাজে নিয়ে চলে এসেছে…। অটোম্যাটিক্যালি…সব কয়টি শ্রীলঙ্কান ফিশিং বোট…তখন ভারতীয় কোষ্টগার্ড জাহাজটির কাছাকাছি চলে এসেছে…।

৩৯। শেষ বিকেলের আলো…বরাবরই ভারতীয় কোষ্ট গার্ড জাহাজ “……”-এর এক্সিকিউটিভ অফিসার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সুবল আগরওয়ালাকে বিষণ্ণ করে তোলে। তাঁর ক্ষেত্রে কেন এই ব্যাপারটি বারবার ঘটে…এটা অনেকবার ভেবেও বের করতে পারেননি তিনি। জাহাজের ফ্ল্যাগডেকে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে কোয়ার্টার ডেকের দিকে তাকিয়ে তিনি দেখলেন…শ্রীলঙ্কান বোটগুলির স্কিপারদের জাহাজে তুলে আনা হচ্ছে। হঠাৎ করেই বিষণ্ণতার জায়গায় একরাশ ক্ষোভ এবং ক্রোধের জন্ম হলো তাঁর মনে। দ্রুত কোয়ার্টার ডেকের দিকে এগিয়ে গেলেন তিনি।

৪০। আগত আঠারজন স্কিপারদের দিকে হেলাভরে তাকালেন ভারতীয় কোষ্ট গার্ড জাহাজ “……”-এর এক্সিকিউটিভ অফিসার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সুবল আগরওয়ালা। ছেলেবেলা থেকেই তিনি তাঁর দেশের ক্ষতিকারীদের একেবারেই দেখতে পারেন না…আর, এরা তো ভীন্‌দেশী!!! তবে…হাজার হলেও…এদেরকে তাঁর জাহাজে নিয়ে আসা হয়েছে…এবং তিনি এখন অনেক সিনিয়রও হয়ে গিয়েছেন…কোনক্রমেই নিজের মাথাটা গরম করা যাবে না…ভাবলেন সুবল আগরওয়ালা। সে মানসিকতায় ধৃত স্কিপারদের দিকে এগিয়ে গেলেন তিনি…।
– “হু ইজ দি লিডার এমাং ইউ পিপ্‌ল? ”
“আই য়্যাম” -উত্তর দিলেন গুণওয়ার্দানা।
-“ওয়েল, হোয়াই হ্যাভ ইউ এন্টার্‌ড ইন টু আওয়ার টেরিটোরিয়াল ওয়াটার ফর ফিশিং? ”
-“নো…, নো ইউর ফিশ…। উই ফিশ হেয়ার অল টাইম।” এর চেয়ে ভাল এবং যুৎসই কোন উত্তর খুঁজে পেলেন না গুণওয়ার্দানা।
-“হোয়াট্‌? ডু ইউ ওয়ান্ট টু মীন দ্যাট আই য়্যাম লাইং? ডোন্ট্‌ ইউ বিলিভ…দিস ইজ ইন্ডিয়ান টেরিটরিয়াল ওয়াটার??” আস্তে আস্তে রক্ত গরম হওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে সুবল আগরওয়ালার। ব্যাটা আমার কথা ঠিকমত বুঝতে পারছে তো!!!-একবার ভাবলেন তিনি।
-“নো…, নো লাই। হোয়াই লাই? উই ডু নট ক্যাচ ইউর ফিশ…। উই ফিশ হেয়ার অল টাইম।” কোনক্রমেই এর চেয়ে ভাল এবং যুৎসই কোন উত্তর খুঁজে পেলেন না গুণওয়ার্দানা। ব্যাটা গাধা নাকি…!! আমার কথায় বেহুদা রাগ করার কি পেল সে?-ভাবলেন গুণওয়ার্দানা।
ফাজিল বুড়োটা নিশ্চয়ই আমাকে রাগানোর জন্যে এই রকম করে আমার সাথে কথা বলছে… সুবল আগরওয়ালার ধারণা আস্তে আস্তে বদ্ধমূল হওয়া শুরু করলো।

৪১। ওদের লিডার…গুণওয়ার্দানা ইংরেজীতে দূর্বল হওয়ায় বোধহয় তার কথাগুলি ভারতীয় অফিসারকে ঠিকমত বুঝিয়ে বলতে পারছে না…, এই ভেবে হৃদয় কথা বলতে শুরু করলোঃ
-“আমি কি কিছু বলতে পারি?”
-“তুমি কে হে?”
-“আমি এই ফিশিং বোটগুলির একটির স্কিপার।”
-“তুমি কি লিডার?”
-“জ্বী না।”
-“দেন, ব্লা…… ডু নট পোক ইউর ব্লা… নোজ এমাং দিস।”
-“কিন্তু …,আমার মনে হয়…, আপনি আমাদের লিডারকে এই ধরণের যত গালি-ই দেন না কেন…, তিনি কিছুই বুঝবেন না। ইংরেজীতে তিনি বেশ খানিকটা-ই কাঁচা। সো…, হোয়াট এভার ইউ ওয়ান্না সে…ইউ হ্যাভ টু য়্যালাউ মি টু টক…অন বিহাফ অফ আস্‌”- স্বাভাবিক স্বরে…হাসি হাসি মুখেই বললো হৃদয়।
-“হাউ ডেয়ার ইউ? আমাদের জলসীমায় ঢুকে…আমাদের সব মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছ…এবং তোমার সম্পূর্ণ বিষয়টায় মজা লাগছে??? ব্লা…, তুমি আমাকে চেন?”
-“না, আমি আপনাকে চিনি না। তার দরকার আছে কি? আপনি কি আমাকে চেনেন? নিশ্চয়ই না! কাজেই কাটাকাটি…। আপনি কি আমাদের কাগজপত্র দেখতে চাইছেন? চাইলে দেখে ফেলেন…এবং দয়া করে আমাদের তাড়াতাড়ি ফিরে যেতে দিন। সবাই অহেতুক টেনশন করছে নিশ্চয়ই। ”-সামান্য মাছ ধরা নিয়ে এত উত্তেজিত হওয়ার কি আছে…এখনও বুঝে উঠতে পারছে না হৃদয়।
-“ফা… আজ তোমার একদিন কি আমার একদিন”-বলতে বলতে…উত্তেজনার বশে… নিজের অজান্তেই তাঁর ডান হাতটি প্রসারিত করে হৃদয়ের মাথার দিকে ঝুঁকে এগিয়ে গেলেন লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সুবল আগরওয়ালা।

৪২। ভাষাটা পুরোপুরি না বুঝলেও…ঘটনা ক্রমশঃ খারাপ কিছুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে…এটা বুঝতে কষ্ট হলো না গুণওয়ার্দানার । বয়স অত্যন্ত কম বিধায় হৃদয় কিছু করে বসতে পারে…এই আশংকায় হৃদয়কে ঠেকানোর জন্যে হৃদয়ের দিকে এক পা এগিয়ে গেলেন গুণওয়ার্দানা।

৪৩। দুর্ঘটনাক্রমে…দুইটি বিষয়ই একত্রে ঘটে গেল…। লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সুবল আগরওয়ালার প্রসারিত হাতের ধাক্কায় এক পা এগুনো গুণওয়ার্দানার শরীরের ডান পার্শ্ব লেগে সটান সামনে পড়ে গেলেন গুণওয়ার্দানা। সেকেন্ডের মধ্যেই তাঁর নাক দিয়ে দরদর করে রক্ত ঝরতে লাগল…পার্শ্বে দাঁড়ানো নাবিকদের কয়েকজন পড়ে যেতে থাকা গুণওয়ার্দানাকে দেখে বলে উঠলো…“ধর্‌…ধর্‌ !!” নেহায়েত রিফ্লেক্সবশতঃই হাত বাড়িয়ে গুণওয়ার্দানার শরীরের উপরে ঝুঁকে পড়লেন লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সুবল আগরওয়ালা।

৪৪। জাহাজের ওয়েদার ডেকে দাঁড়িয়ে রয়েছেন লেঃ কমান্ডার বিক্রমাদিত্য। তাঁর পার্শ্বে রয়েছেন জাহাজের কনিষ্ঠ একজন অফিসার…লেফটেন্যান্ট দার্শিল। কোন এক অজানা কারণে…… প্রথম থেকেই এই অফিসারটির প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখার প্রয়োজনবোধ করছেন বিক্রমাদিত্য। বারবারই…কেন জানিনা…তাঁর মনে হচ্ছে… এই অফিসারটির কারণেই তাঁর সকল পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে। সে জন্যেই “এর সাথে কিছুক্ষণ একান্তে কথা বলে ওর দৌড় জানতে হবে” – এই মনোভাবে লেফটেন্যান্ট দার্শিলকে ডেকে পাঠিয়েছেন লেঃ কমান্ডার বিক্রমাদিত্য…। শ্রীলঙ্কান বোটগুলি ধরার সময়ে দায়িত্বরত অবস্থায় ছিল এই লেফটেন্যান্ট… কাজেই অফিসার অফ দি ওয়াচ হিসাবে… পরবর্তী সমস্ত পর্যায়েই লেফটেন্যান্ট দার্শিলের কথার যথেষ্ট গুরুত্ব থাকবে-ভাবলেন লেঃ কমান্ডার বিক্রমাদিত্য। কথায় কথায় বিক্রমাদিত্য তাকে তাই শুধালেন,
-“হ্যালো ইয়াং ম্যান, তোমার দেশের বাড়ি যেন কোথায়?”
-“স্যার, কর্ণাটক।”
-“ওকে। সো, আর ইউ ম্যারিড?”
-“স্যার, ইয়েস স্যার।”
-“ আচ্ছা…তোমার কে যেন কোষ্ট গার্ডে আছেন না? ”
-“স্যার, ইয়েস স্যার। আমার বড় ভাই আছেন স্যার… কোষ্ট গার্ড হেডকোয়ার্টার্স-এ…ইন্টেলিজেন্স উইং-এর ডেপুটি ডাইরেক্টর তিনি…”
-“আই সি…ওনার নাম যেন কি?”
-“ স্যার, কমান্ডার আর পি দার্শিল…স্যার।”
-“ কি ব্যাপার…বোথ অফ ইউ আর হ্যাভিং দি সেইম নেম?”
-“স্যার…আই য়্যাম আর সি দার্শিল…স্যার…, রণরাজ কাপুর। মাই ব্রাদার ইজ রুদ্রপ্রতাপ দার্শিল…স্যার। এন্ড আওয়ার ফাদার ইজ জেনারেল আর কে দার্শিল…স্যার……রূপকুমার দার্শিল ।”
এই ছেলেও তো দেখি আমারই মতন ফৌজি পরিবারের…ভাবলেন লেঃ কমান্ডার বিক্রমাদিত্য।
-“ওয়েল…ভেরী গূড। আচ্ছা, দার্শিল…তোমার কি মনে হয়…? এই যে আমরা আজ এতগুলি শ্রীলঙ্কান বোট…”

হঠাৎ করেই কোয়ার্টার ডেক থেকে “ধর্‌ ধর্‌” বলে… বেশ শোরগোল শোনা গেল। দ্রুত সেখানে পৌঁছে গেলেন লেঃ কমান্ডার বিক্রমাদিত্য। সেখানে পৌঁছে যে দৃশ্য দেখলেন…তার জন্যে কোনক্রমেই মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন না তিনি…

[ক্রমশঃ]

২,৬৯৪ বার দেখা হয়েছে

১৯ টি মন্তব্য : “সূর্যপুত্র (পর্ব সাত)”

মওন্তব্য করুন : জুলহাস (৮৮-৯৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।