সূর্যপুত্র (পর্ব পাঁচ)

সূর্যপুত্র (পর্ব এক) (পর্ব দুই) (পর্ব তিন) (পর্ব চার)

****আমি স্পষ্ট করেই বলতে চাই…আমার এই লেখাটি সম্পূর্ণই বানানো। জীবিত…মৃত…কাল্পনিক কারও সাথে আমার এই লেখা মিলে গেলে সেটার দায়ভার আমার একেবারেই নেই…আছে সিসিবির প্রিন্সিপ্যাল ভাইস্যার… ভাইস প্রিন্সিপ্যাল ভাপু… অ্যাডজুট্যান্ট ভাইস্যার…ইত্যাদিসহ আমার সকল সিনিয়র/জুনিয়র ভাই/বোনদের…কারণ, বৃক্ষের আবার দায়ভার কিসের???????!!!!!]

০২ মে, ২০০৯।

২৪। ভারত মহাসাগরের একটি স্থানে…শ্রীলংকার ত্রিংকোমালী বন্দর থেকে ৭৫০ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণ পূর্বে অবস্থান করছে “সূর্যপুত্র”। খুশীমনে জাহাজ চালাচ্ছে হৃদয়। যে পরিমাণ মাছ ধরা পড়ছে…তাতে মনে হয় আর মাত্র দিন দুয়েক পরেই ফিরতে শুরু করতে হবে। এত পরিমাণ মাছ…এত অল্প সময়ে বোধহয় গত কয়েক ট্রিপে ধরা পড়ে নি!!! ওদের সাথে আসা অন্য ১৭টি বোটের সবাই অবশ্য অত ভাগ্যবান নয়। রেডিওতে নাথুরাম কাকা-র বোটটির স্কিপার হেরাথ-এর সাথে সকালেই কথা হয়েছে হৃদয়ের…ওদের বোট ভরে যেতে আরও কমপক্ষে ৩ দিন লাগবে মনে হয়।

২৫। বরাবরের মতন ফেরার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবার জন্য সব ক্রুদের নিয়ে বসলো হৃদয়। সঞ্জীব আর নিরঞ্জন এখনই ফেরার বিষয়ে একমত হলেও নীলন এবং পুষ্পকুমারা নিরাপত্তাজনিত কারণেই সবার সাথে একত্রে ফেরার পক্ষপাতী। এখন হৃদয়ের মতামত (ক্রু হিসাবে) যেদিকে যাবে…সেটাই হবে ফাইনাল সিদ্ধান্ত। বেশ খানিকক্ষণ চিন্তা করলো হৃদয়। পরে, আবেগ এবং মনের ইচ্ছেটাকে চাপা দিয়ে বোট এবং সব ক্রুদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বাকী সব বোটগুলির সাথেই বন্দরে ফেরার পক্ষে ভোট দিল।

২৬। একত্রে আসা ১৮টি বোটের অলিখিত নেতা হিসাবে সবাই সবচেয়ে বয়স্ক এবং অভিজ্ঞ গুণওয়ার্দানা-কেই মানে। নিজের বোট…জলকুমারী-র স্কিপার সে। সব বোটগুলির মাঝে তারটিই সবচেয়ে বড়…প্রায় ৮৫ ফুট। অবশ্য, অন্যান্য বোটগুলি যখন ফিরে যেতে চায়…, গুণওয়ার্দানা তার বোটে যে পরিমাণ মাছ-ই থাকুক না কেন, সবার সাথে ফিরে চলে।

২৭। গুণওয়ার্দানা-কে সেটের মাধ্যমে নিজেদের মাছের পরিমাণ জানিয়ে সকলের সাথেই ফিরে যাবার ইচ্ছের কথা জানাল হৃদয়। কথা প্রসঙ্গে গুণওয়ার্দানাও হৃদয়কে জানাল, গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই প্রথম… গুণওয়ার্দানার বোটও এতো অল্প সময়ে মাছে ভরে গিয়েছে!!!

২৮। সঞ্জীব, নিরঞ্জন, নীলন ও পুষ্পকুমারা কার্ড খেলতে বসে গেল…বরাবরের মতন। শুধু হৃদয় থাকলো একা নিজের সুখস্বপ্ন আর ভবিষ্যত কল্পনা নিয়ে……আর চাঁদকুমারী-র সাথে নিজের ঘর বাঁধার হিসাব নিকাশ নিয়ে। আচ্ছা…, কত টাকা জমবে এবার??? কতদিন লাগবে…, বিয়ের টাকা যোগাড় করতে?? এখনকার এই প্রেম…প্রেম জীবনটা ঠিক থাকবে তো!! সে নিজে…কিংবা চাঁদকুমারী কখনও বদলে যাবে না তো?? কোথায় ঘর বাঁধবে ওরা? ও কি আসলেই চাঁদকুমারী-র অনুরোধমত এই প্রফেশন বদলাতে পারবে?? এবার ফিরেই কি বাবাকে বিয়ের কথাটা বলবে? না কি হোটেল ম্যানেজমেন্ট-এ ডিগ্রী করার জন্য ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্তের কথা বলবে?? ভাবতে ভাবতে কিছুটা অসহায়বোধ করে হৃদয়।

২৯। জাহাজ নিয়ে টহলে বেড়িয়েছেন লেঃ কমান্ডার বিক্রমাদিত্য। কিছুক্ষণ আগেই ভারতের নিজস্ব সমুদ্রসীমা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক জলসীমায় এসে পৌঁছেছেন। খুব বেশীক্ষণ এখানে থাকবেন না বলে ঠিক করেছেন… রাতের মধ্যেই আবার নিজেদের জলসীমায় ফিরে যাবার ইচ্ছে আছে তাঁর। নতুন কমান্ড পাওয়ার পরে এটাই তাঁর প্রথম টহল…এখনও পর্যন্ত সবকিছুই ঠিক মতই চলছে…শুধু একটা কোন বড় ধরণের অ্যাচিভমেন্ট থাকলেই…!!! না, নিজের বিষয়ে কোন কিছু জানতে বাকী নেই তাঁর। তাঁকে অন্যদের সাথে যতটা না প্রতিযোগিতা করতে হয়…তার চেয়ে বেশী লড়তে হয় তাঁর বাবার রেকর্ড নিয়ে। ভারতীয় নৌবাহিনীর অ্যাডমিরাল হয়েছিলেন ভদ্রলোক…বলতে গেলে, সবচেয়ে কম বয়সেই তিনি এই বিরাট কার্য সাধন করেছেন। কিন্তু তিনি তো এখনকার মতন এত কম্পিটিটিভ যুগে ছিলেন না!!!! তাঁদের সময়ে লোক কম ছিল…সে কারণেই অনেক মাঝারী ক্যালিবারের অফিসারই…শীর্ষে উঠতে পেরেছিলেন। কিন্তু এখন হলো প্রতিযোগিতার যুগ…একটিবারের জন্যেও যদি কারও পা একটুও হড়কায়…সে পিছিয়ে গেল…হারিয়ে গেল খাদের মাঝে…। এখন দ্বিতীয় হওয়ার জন্যে আর কোন পুরষ্কার অপেক্ষা করে না। সে কারণেই…বাবার সাথে তাঁর নিজের তুলনা বিক্রমাদিত্য খুবই অপছন্দ করেন। আবার, ভারতীয় নৌবাহিনীর কিংবা কোষ্টগার্ডের সিনিয়র অফিসাররা আবার প্রতিটি পদক্ষেপেই বিক্রমাদিত্যকে তাঁর বাবার সাথে তুলনা করে থাকেন। এমনকি, এই কম্যান্ড পাবার সময়েও তার জোনাল কমান্ডার মন্তব্য করেছেন…“ তোমার বাবা কিন্তু তোমার এই বয়সের চেয়ে আরও দুই বছর আগেই জাহাজ কম্যান্ড করেছেন…আর তাঁর প্রথম ভয়েজেই কিন্তু বিরাট অ্যাচিভমেন্ট ছিলো…!!!” এবার…এখানে…,পারলে তাঁর বাবা তো বটেই, সমসাময়িক অন্যদের চেয়েও এগিয়ে থাকতে চান বিক্রমাদিত্য…এবং যতখানি পারেন…বাবার প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ তেমন কোন অবদান ছাড়াই!!

৩০। এইসব ভাবতেই হঠাৎ করে জাহাজের অফিসার অফ দি ওয়াচ (ওওডব্লিউ)…লেফটেন্যান্ট দার্শিল জানাল… ফিশিং বোটের বেশ বড় একটা গ্রুপ দেখা যাচ্ছে…প্রায় সাড়ে সাত মাইল দক্ষিণ পশ্চিমে…। কি করবে জানতে চাইলো সে লেঃ কমান্ডার বিক্রমাদিত্যের কাছে। বোটগুলি তাঁদের দেশের না কি ভিন্‌দেশী…নিশ্চিত করতে জানালেন তিনি। ঘন্টাখানিক পরে ওওডব্লিউ নিশ্চিত করলো…বোটগুলি শ্রীলংকান। যদিও এই মুহূর্তে ভারত-শ্রীলংকা সুসম্পর্ক বিদ্যমান…তবুও…সামনে বিরাট একটা ব্যক্তিগত অ্যাচিভমেন্ট-এর সমূহ সম্ভাবনা দেখলেন লেঃ কমান্ডার বিক্রমাদিত্য।

[ক্রমশঃ]

৩,২৩১ বার দেখা হয়েছে

৩২ টি মন্তব্য : “সূর্যপুত্র (পর্ব পাঁচ)”

  1. তানভীর (৯৪-০০)

    দারুণ লাগল এই পর্বটা ভাইয়া।

    বেশ উত্তেজনার গন্ধ পাচ্ছি, এই ব্যাটা বিক্রমাদিত্য কি আকাম কইরা বসে আল্লাহই জানে!

    এতগুলা পাশাপাশি চরিত্র, কাহিনী- গল্পটা অনেক বড় হবে বলে ধারণা করছি। খুব ভালো লাগছে জুলহাস ভাই।

    জবাব দিন
  2. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    বাকী চরিত্রগুলোকে কিভাবে মিলাবেন দেখার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছি।বিশেষ করে আমার গাছ ভাই সাজ্জাদকে কিভাবে দৃশ্যপটে আনবেন এইটা।এই পর্বটা অনেক গোছানো মনে হয়েছে।ভাল ছিল 🙂

    জবাব দিন
  3. ওবায়দুল্লাহ (১৯৮৮-১৯৯৪)

    দোস্ত,
    সাথে আছি এইবারও।
    তোর সূর্যপুত্রের পাঙ্খা হইয়া যাইতেছি। :clap:
    শেষ হইলে আবার পড়ুম এক লগে - ব্যাপারটা ভিজুয়ালে গেলেও জমবে মনে হইতেছে।
    লেখা জারি থাহুক শত ব্যস্ততার মাঝেও।


    সৈয়দ সাফী

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : জুলহাস (৮৮-৯৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।