সূর্যপুত্র (পর্ব চার)

সূর্যপুত্র (পর্ব এক) (পর্ব দুই) (পর্ব তিন)

****আমি স্পষ্ট করেই বলতে চাই…আমার এই লেখাটি সম্পূর্ণই বানানো। জীবিত…মৃত…কাল্পনিক কারও সাথে আমার এই লেখা মিলে গেলে সেটার দায়ভার আমার একেবারেই নেই…আছে সিসিবির প্রিন্সিপ্যাল ভাইস্যার… ভাইস প্রিন্সিপ্যাল ভাপু… অ্যাডজুট্যান্ট ভাইস্যার…ইত্যাদিসহ আমার সকল সিনিয়র/জুনিয়র ভাই/বোনদের…কারণ, বৃক্ষের আবার দায়ভার কিসের???????!!!!!]

২৮ এপ্রিল, ২০০৯।

১৬। বাংলাদেশ নেভাল একাডেমীতে ট্রেনিংরত ক্যাডেটদের মাঝে থার্ড টার্মের সাজ্জাদকে ওর ব্যাচের সবাই গাছ বলেই জানে। কারণ, ও…ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ-এর। তবে ওর আরেকটি নামও এখানে চালু হয়ে গিয়েছে… “দি রানার”। যে কোন দৌড়ে…লং হোক কিংবা শর্ট…সেরাদের সেরা ও। আজকেও আরেকটা মাইল টেষ্ট আছে… দ্বিতীয় কে হবে সেটা জানার জন্যেই সবাই উদগ্রীব। কারণ, সবাই নিশ্চিত…প্রথম স্থানটি সাজ্জাদ ব্যতীত অন্য কারও পক্ষে অর্জন করাটা প্রায় অসম্ভব এক ঘটনা।

১৭। খুলনার ন্যাভাল বেস “………”-এ স্পেশাল একটা ট্রেনিং করছে সাব লেফটেন্যান্ট সাদ বিন আব্দুল্লাহ। ওর অনেক গুণের একটি হচ্ছে…কখনও হাল ছেড়ে না দেয়া। এ কারণে প্রশিক্ষক এবং কোর্সমেটদের প্রায় সবাই ওকে সমীহ করে চলে। কারণ, সূপ্ত এই বারুদ যে কোন মুহূর্তেই সবার আশা অতিক্রম করে জ্বলে উঠতে পারে!!!

১৮। চিটাগাং ন্যাভাল বেস “……”-এ স্পেশাল ওয়ারফেয়ার এর উপরে একটি কোর্স করছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার কুদরত উল্লাহ। আপাতঃদৃষ্টে যেমনই দেখা যাক… তাঁর মতন সিরিয়াস স্টুডেন্ট সম্পূর্ণ কোর্সে বিরল। সবাই তাঁকে নিয়ে আশাবাদী…যে কোন বাস্তব সমস্যার সুশৃংখল একটা সমাধান তিনি করতে পারবেনই।

১৯। ভারতের ……এ অবস্থিত ন্যাভাল বেস “……”-এ নেভিগেশন এর উপরে একটি স্পেশাল অ্যাডভান্স কোর্স করছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সৈয়দ মুহাম্মদ এজাজুল হাসান। শুধু বিদেশী নয়… সকল ষ্টুডেন্টদের মাঝেই (ভারতীয়রা সহ) তাঁর ফলাফল ঈর্ষণীয়। তিনি শুধু পড়ালেখাতেই সিরিয়াস নন…তাঁর সকল মুভমেন্টই বাংলাদেশকে সার্থকভাবে উপস্থাপন/প্রদর্শন করে সকলের মাঝে।

২০। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একজন অর্ডিনারি রেটের নাবিক সুলায়মান শেখ। কাজে কর্মে চটপট, প্রাণবন্ত এই নাবিক সকল সময়েই হাসিখুশী থাকতে পছন্দ করে। ওর প্রেমিকা… সাবরিনার সাথে মাত্র মাস ছয়েক পরেই বিয়ে হতে যাচ্ছে… এই খুশীতে ও সবসময়েই যেন উদ্বেল হয়ে থাকে। আর, ওর একটি বিশেষ গুণ হলো… কোয়ার্টার মাষ্টার হিসাবে ও খুব ভাল জাহাজ চালাতে পারে। এই মুহূর্তে ওর কোর্স পজিশন-ও ভাল। আশা করা যায়…কোর্সটা শেষ হলেই ও বড় জাহাজে বদলী পাবে…!!

২১। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ফয়সাল কিছুদিন হলো ডিজিএফআই-এ বদলী হয়েছেন…এখন তাঁর অবস্থান কক্সবাজারে। বিদেশ থেকে ফিরেই এই এলাকায় বদলী হয়ে তিনি খুশী হয়েছেন… না কি অখুশী …..এখনো ঠিক বুঝে উঠতে পারেন নি। তবে, তাঁর প্ল্যান…শিগ্‌গীরই সকল বন্ধুদেরকে এখানে বেড়াতে আসতে বলবেন…আর স্ত্রী-পুত্রকে তো বটেই!!!

২২। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর “……” জাহাজের কোয়ার্টার ডেক এবং রেগুলেটিং অফিসার লেফটেন্যান্ট মুফতি মাহমুদ খান এই মুহূর্তে অত্যন্ত খুশী মনে সময় পার করছেন। পাকিস্তান থেকে কিনে আনা জানালার পর্দাগুলি দেখে তাঁর স্ত্রী খুবই খুশী হয়েছেন। তদুপরি, শুভেচ্ছা সফর থেকে কিনে আনা অন্যান্য সকল গিফ্‌ট আইটেমগুলিও সবাই খুবই পছন্দ করেছে। জাহাজের কঠিন শিডিউলের মাঝে থেকেও তিনি ফ্যামিলির সামান্য বিষয়ও আজ পর্যন্ত কখনও ভুলে যাননি।

২৩। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর “লিডিং মেডিক্যাল অ্যাসিসট্যান্ট (এলএমএ)” সালাহউদ্দিন-এর মনটা একটু খারাপ। ছুটিতে যাওয়ার বিশেষ প্রয়োজন ছিলো তার…বাড়িতে হঠাৎ করেই বৌ-শ্বাশুড়ীর দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। এরকম মাঝে মাঝেই ঘটে… তবে, বরাবরই নিজেদের মধ্যেই তারা মিটিয়ে ফেলতো। এবারই প্রথম…বিষয়টা বেশী সিরিয়াস হয়ে গিয়েছে। এই মুহূর্তে বৌ-শ্বাশুড়ীর মধ্যে মুখ দেখাদেখি বন্ধ। আবার ঝগড়ার বিষয়টাও কম সিরিয়াস নয়…অন্ততঃ বাড়িতে যাওয়ার জন্যে!!! চৌদ্দ বছরের সংসার জীবনে এবারই প্রথম বাবা হতে যাচ্ছে সে…। আর, বৌ-শ্বাশুড়ীর ঝগড়া শুরু হয়েছে “ তোমাকে আমার নাতির জন্যে হলেও আরও বেশী খেতে হবে…,” “আর যদি নাতনী হয় মা!! ” “অসম্ভব, এই বংশে প্রথম সন্তান অবশ্যি ছেলে হতে হবে…”-এই জাতীয় কথোপকথন দিয়ে…আর শেষ হয়েছে অত্যন্ত খারাপভাবে। নতুন জাহাজে বদলী এসেই ছুটি চাওয়ার মতন নাবিক সে নয়…তা ছাড়া ছুটি চাওয়ার কারণ হিসাবে কি লিখবে…সেটাও একটা লজ্জার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তার কাছে।
[ক্রমশঃ]

৫,১৭৪ বার দেখা হয়েছে

৫৩ টি মন্তব্য : “সূর্যপুত্র (পর্ব চার)”

  1. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    প্রতি পর্বে এসে দেখে যাই শেষ হলো কিনা! এখনো কোন পর্ব পড়িনি, শেষ হলে একসাথে পড়বো। তারপর মতামত। এখন শুধু জানাতে এলাম, অনুসরন করছি।

    চলুক।


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  2. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    লেখা তো পুরা ফোন ডিরেক্টরি হয়ে যাচ্ছে রে...
    এত জনরে তুই মিলাবি কেমনে...টেনশনে পইড়া গেলাম তো...


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  3. ওবায়দুল্লাহ (১৯৮৮-১৯৯৪)

    দোস্ত পড়তেছি।
    তোএ লেখা তো ভাল্লাগে - তয় শেষ পর্যন্ত সবটি মনে হয় আবার এক্কারে পড়া লাগবো।

    ফরম্যাটিং এর নতুনত্ব চোখাএ লাগার মত।

    সাবাশ - চলুক বন্ধু।
    :clap:


    সৈয়দ সাফী

    জবাব দিন
  4. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    তোমার লেখাগুলো শুরু করলেই শেষ করা যায়। লিখেছো কাল্পনিক ঘটনা কিন্তু মনে হচ্ছে একদম বাস্তব। লিখেছে উপন্যাস কিন্তু মনে হচ্ছে স্টাইলটা রিপোটিং ধরনের। পরে অন্যদের কমেন্ট পরে বুঝলাম একটা এক্সপেরিমেন্ট ধরনের কিছু করতে যাচ্ছ। তা অবশ্য আমার বোঝার সাধ্য নেই। আমি এখনও বংকিম যুগেই পরে আছি ‘ নাবিক তুমি কি পথ হারাইয়াছো?’

    অফটপিকঃ গতপর্বে লিখেছো আমি নাকি তোমাকে সিসিবিতে কম বয়সী বানিয়ে দিয়েছি। আর আমি তো মনে করি আমার এখনও জীবনই শুরু হয় নাই - চল্লিশ হওয়ার অপেক্ষায় আছি।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : জুলহাস (৮৮-৯৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।