সূর্যপুত্র (পর্ব তিন)

সূর্যপুত্র (পর্ব এক) (পর্ব দুই)

****আমি স্পষ্ট করেই বলতে চাই…আমার এই লেখাটি সম্পূর্ণই বানানো। জীবিত…মৃত…কাল্পনিক কারও সাথে আমার এই লেখা মিলে গেলে সেটার দায়ভার আমার একেবারেই নেই…আছে সিসিবির প্রিন্সিপ্যাল ভাইস্যার… ভাইস প্রিন্সিপ্যাল ভাপু… অ্যাডজুট্যান্ট ভাইস্যার…ইত্যাদিসহ আমার সকল সিনিয়র/জুনিয়র ভাই/বোনদের…কারণ, বৃক্ষের আবার দায়ভার কিসের???????!!!!!]

২৭ এপ্রিল, ২০০৯।

১১। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর “………” জাহাজের এক্সিকিউটিভ অফিসার (নির্বাহী কর্মকর্তা) কমান্ডার জামাল উদ্দিন একটা পারিবারিক সমস্যা নিয়ে খানিকটা ঝামেলায় পড়েছেন। দেশের বাড়ি থেকে যে কাজের ছেলেটাকে এনেছিলেন…সেই ফাজিলটা গত রাতে বাসা থেকে ভেগেছে। অবশ্য তেমন কিছু নিয়ে যায়নি…। সমস্যা হলো…নিজেকে সেয়ানা ভাবলেও…ছেলেটার বয়স আসলেই কম…এখনও চৌদ্দ হয় নি। কোথায় যে গিয়েছে গাধাটা…এখন ওর মাকেই বা কি জানাবেন তিনি!! টেনশনে তাঁর সুন্দর চেহারাটা… সার্ভিসের জুনিয়রদের অনেকেই যে সুদর্শন চেহারার জন্যে আড়ালে তাঁকে টম বলে ডাকে…সেটা মলিন হয়ে গিয়েছে।

১২। বাংলাদেশ নেভাল একাডেমীতে ট্রেনিংরত প্যালেষ্টাইন ক্যাডেটদের মাঝে থার্ড টার্মের পাঁচ জন হতাশ মনে বসে আছে। ওদের কারওই এখনও দেশ থেকে বেতন আসে নি। একাডেমীর সব বকেয়া বিলগুলি কিভাবে শোধ করবে…ভাবতেই লজ্জা করছে! এমন কি দেশেই বা কিভাবে কথা বলবে? যদিও বাংলাদেশী সহকর্মীরা টাকা ধার দিতে চাচ্ছে…কিন্তু অন্যের কাছ থেকে টাকা ধার করতে খারাপ লাগে না!!!!!!

১৩। জনৈক বিষয়ে তদন্ত করতে বসে নিজেকে শাপশাপান্ত করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর “………” জাহাজের লেঃ কমান্ডার সৈকত। শুরুতে সবাই তাকে আশ্বস্ত করেছিল…এটা মাত্র দুই সপ্তাহের কাজ। কিন্তু, টানা ৪৬ দিন সকাল থেকে গভীর রাত অবধি কাজ করার পরেও কোন কূল কিনারা করতে পারছেন না তিনি। আর কয়েকদিন গেলে হাল ছেড়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হবে বলেই মনে হচ্ছে তার!!!!!

১৪। বাংলাদেশ নেভাল একাডেমীতে ট্রেনিংরত মালদ্বীপের ক্যাডেট “সিনান” নিজেকে আর নিজের আত্মীয়দেরকে দুষছে একাডেমীর ট্রেনিং ব্লক-এ বসে। কি দরকার ছিলো……কমার্স ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে মালদ্বীপ নৌবাহিনীতে যোগ দেওয়ার??? আর, কি এমন ঠেকা পড়েছিলো…যে সেখানে ইনিশিয়াল ট্রেনিং-এ প্রথম হওয়ার??? প্রথম না হলে তো আর এই ভীন্‌দেশে পড়তে আসতে হয় না!!! আর, দেশের সিনিয়ররাও সেইরকম…। আরে, কমার্স ব্যাকগ্রাউন্ডওয়ালা ছেলেকে কেউ নৌবাহিনীর ট্রেনিং-এ বাংলাদেশে পাঠায়!!! এখানে এই দেশের ……. সাইন্স ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে আসা ছেলেরা-ই ট্রেনিং-এর ধাক্কায় সাইন্সের সাব্জেক্টগুলিতে ডাব্বা খাওয়ার জন্যে মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছে…সেখানে সে কি করতে পারে!!! অবশ্য…মনে ক্ষীণ একটা আশা রয়েছে…শেষ পর্যন্ত…এখানকার সবাই নিশ্চয়ই তাকে ফেল করিয়ে দেবে না!!! হাজার হলেও বিদেশী বলে কথা……!!

১৫। বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে পাঙ্গা ফলেন নিতে যাচ্ছে ফাইনাল টার্মার……বিএসইউ জাকারিয়া। নতুন ট্রেনিং-এ আসা ডাক্তারগুলির সিভিলিয়ান সব রস বের করে দেবার কথা রয়েছে আজ। ওর সাথের অন্যরা এই আয়োজন শুরু করার কথা…… ও শুধু গিয়ে ফিনিশিংটুকু দেবে……মরাল দেয়া সহ। ডাক্তারগুলির কাছে গিয়ে……একবার টাচ্‌ এন্ড ব্যাক করতে দিয়েই মেজাজটা খাপ্পা হতে শুরু করে জাকারিয়ার। সিভিলিয়ানগুলির মুভমেন্ট দেখো!! সামান্য টাচ এন্ড ব্যাকটুকু-ই ঠিকমত করতে পারে না, আর এরাই মাত্র কয়েকদিন ট্রেনিং করেই ওদের চেয়ে সিনিয়র হয়ে যাবে!!!! আরও কাছে এগিয়ে একজনকে দেখে জাকারিয়ার শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল,……হায়দার ভাই!!!!! ওর কলেজের…… ওরই হাউজের (এফসিসি/……হাউজ) পাঁচ বছর সিনিয়র ছিলেন হায়দার ভাই। বলতে গেলে, সারাটা কলেজ জীবন আদর্শ হিসাবে হায়দার ভাইকেই ফলো করে এসেছে জাকারিয়া। আর আজ কিনা…..তিনিই ওর কাছে পাঙ্গা খাচ্ছেন!!!!! আস্তে করে হায়দার ভাইয়ের কাছে এগিয়ে গেলো ও। বললো……“হায়দার ভাই, ভাল আছেন?” সেই আগের মতন তিনি বললেন……“কেমন আছ জাকারিয়া? কোন কষ্ট হচ্ছে না তো!!!” একরাশ লজ্জা নিয়ে জাকারিয়া তখন বলে উঠলো……“হায়দার ভাই, স্যরি। আমি বুঝতে পারিনি……আপনি এই ডাক্তারদের মাঝে আছেন। আজ থেকে আপনাদের সবার সকল পাঙ্গা যাতে মওকুফ হয়…তার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।” “শোন, জাকারিয়া………, বিএমএ-র ট্রেডিশন নষ্ট করার দরকার নেই…, তুমি বরং একটু দেখো…সবাই যেন আমাদেরকে ঠিকমত অনার করে। বোঝই তো…সবাই বয়ষ্ক… ইনিশিয়াল ট্রেনিংটা ঠিকমতন না হলে যেমন ভবিষ্যতে আর কখনওই শিখবে না…, তেমনি বেশী ধাক্কা খেলে…ভাঙ্গার আশংকাও কম নয়!!! ”
[ক্রমশঃ]

৪,৩১৬ বার দেখা হয়েছে

৪২ টি মন্তব্য : “সূর্যপুত্র (পর্ব তিন)”

  1. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    কোর্সে যাবার আগেই আরেক পর্ব দিয়ে যা....

    একটা জিনিস মানতে পারলাম না....বি এম এ তে কেউ মাত্র দুই বছরের সিনিয়রকে ডাক্তার হিসেবে কেমনে পায়??


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  2. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    কিন্তু সূর্যপুত্রের শেষ পর্যন্ত কি হইলো?

    জুলডাক (কপিরাইট : জুনা) : সিরিজটার প্রথম দুটো পর্ব যেন একটা গল্পের রূপ নিচ্ছিল। এটায় ছন্দপতন ঘটলো। তোমার মতিগতি বুঝতে পারছি না। যাউগ্যা, আরো লিখো, তখন বুইঝ্যা নিমুনে।

    ভাতিজার স্কুল পর্ব কেমন চলতাছে?


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
    • জুলহাস (৮৮-৯৪)

      প্রিন্সিপ্যাল ভাইস্যার...সালাম। 🙂 🙂

      "তোমার মতিগতি বুঝতে পারছি না। যাউগ্যা, আরো লিখো, তখন বুইঝ্যা নিমুনে।"

      -আপনার এই বক্তব্যে যে নিজেরে কি "ধাঢ়ূণ খ্যাৎ " মনে হইতাছে...আপনারে ক্যামনে বুঝাই। যাউক, এতদিনে মনে হয় বিখ্যাত হওনের খোয়াবটা পূরণ হইবো...দোয়া কইরেন বস্‌!!! 😀 😀 😀

      আপনাদের পিয়ারের ভাতিজা...ষ্কুল যাওনের মজা পাইয়া গ্যাছে...। হ্যায় এখন খালি আমগোরে জিগায়, "স্কুল কবে বন্ধ হবে?? 😉 😉 😉 "


      Proud to be an ex-cadet..... once a cadet, always a cadet

      জবাব দিন
    • জুলহাস (৮৮-৯৪)

      দুস্ত..., তুমি তো নতুন আইস্যা ঢোলে বাড়ি দিয়া ফাটাইয়া ফালাইছো!!!!! 😉 😉 😉
      আহা রে..., আমগো সময়ে...কি দিন ছিলো...!!!
      খালি প্রিন্সিপ্যাল না..., অ্যাডজুট্যান্ট স্যারেও যে :frontroll: :frontroll: গুলা দেওয়াইছে!!!
      উইলখাম ঠূ আউর উয়ার্ল্ড ঢুস্থ!!!!!!!!! 😀 :)) :)) :))


      Proud to be an ex-cadet..... once a cadet, always a cadet

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : জুলহাস (৮৮-৯৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।