লাইবেরিয়ার ডায়েরি

লাইবেরিয়া এসেছি প্রায় ১ মাস হতে চলল। নতুন একটা দেশে আসলে কেন যেন আপনা থেকেই নিজের দেশের সাথে একটা তুলনা চলে আসে। লাইবেরিয়ার সাথে তুলনা করলে আমরা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতেই পারি কিন্তু লাইবেরিয়া তুলনা করার মত কোন দেশ কিনা সে প্রশ্নটাই প্রথমে আসে, যে দেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন চলছে সে দেশের সাথে তুলনা করা কোন কাজের কথা নয়।

লাইবেরিয়ার আবহাওয়া, ভূমি বৈশিষ্ট্যের সাথে বাংলাদেশের অসাধারণ মিল। আয়তন ১,১১,৩৬৯ বর্গ কিমি, জনসংখ্যা মাত্র ৪০ লাখ। লাইবেরিয়ার ঊর্বর জমির তুলনায় এই সামান্য জনগণের খাবারের সংস্থান কোন বিষয়ই না কিন্তু সমস্যা অন্য যায়গায়। সেদিন পেট্রল এ যাওয়ার সময় আমাদের দোভাষি জো’কে জিজ্ঞেস করলাম লাইবেরিয়ার জমি এত ঊর্বর শুনি তাহলে চাষাবাদ এত কম দেখি কেন? উত্তরে সে জানালো আসলে মানুষজন ভালভাবে চাষাবাদের উপায়ই জানে না। এই কারণের সাথে আরো অনেক কারণ আসতে পারে কিন্তু মূল কারণ এটাই, অন্যভাবে বললে “শিক্ষা”। শিক্ষার অভাব কোন জাতিকে কত পিছিয়ে দিতে পারে এর প্রকৃষ্ট ঊদাহরণ সমস্ত আফ্রিকা মহাদেশ জুড়ে। লাইবেরিয়া বা আফ্রিকার এই অঞ্চলে দীর্ঘ সময় ধরে চলা গৃহ যুদ্ধগুলোর কথা চিন্তা করে আমার কাছে বিশ্ব রাজনীতির থেকে অশিক্ষার বিষয়টিই মাথায় এসেছে সবার আগে। লাইবেরিয়ার গৃহযুদ্ধের ইতিহাস পড়তে গিয়ে শুধু মনে হয়েছে একটা দেশের মানুষ নিজ দেশের মানুষের সাথে এরকম যুদ্ধ কিভাবে করতে পারে। সাথে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি একদম স্পষ্ট হয়েছে। একটা দেশের সামনে এগিয়ে যাওয়া যে এর প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভর করে না বরং শিক্ষার উপর নির্ভর করে এর ঊদারহরণও আমার কাছে স্পষ্ট হয়েছে। হীরা বা স্বর্ণের মত দামি খনিজ সম্পদ থাকার পরও যুগ যুগ ধরে আফ্রিকা সবচেয়ে দরিদ্র মহাদেশ, অথচ বৃটিশরা সারা পৃথিবী থেকে সম্পদ আহরণ করে নিজেরা সম্পদশালী হয়েছে। কিসের জোরে? “শিক্ষা”।
অনেক দিন থেকেই বাংলাদেশ জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী প্রেরণের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থান দখল করে আছে। অনেক দিন থেকেই এর পেছনের কারণগুলো নিয়ে আমার জানার আগ্রহ ছিল । এক সময় ভাবতাম জাতিসংঘ হয়তো স্বল্প খরচে আর কোথাও থেকে ট্রুপ্স পায় না এ জন্যে আমরা শীর্ষে, কিন্তু এখানে এসে অন্য দেশের অফিসারদের সাথে যখন মিশেছি, যখন তুলনা করেছি, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর Standard-ই যে মূল কারণ এটা স্পষ্ট হয়েছে। ইংরেজী ভাষায় আমাদের অফিসারদের দখল, কর্মস্পৃহা, দক্ষতা সব কিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘে নিজেদেরকে গুরুত্বপূর্ন করে তুলেছে।
লাইবেরিয়ায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন প্রায় শেষের পথে। রাস্তা-ঘাটে, অফিসে স্থানীয় লাইবেরিয়ানদের কাছে যখন বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দেই তাদের চোখে মুখে কেমন যেন আনন্দের আভা দেখতে পাই, বুঝতে পারি আমাদের পূর্বসুরি বাংলাদেশের শান্তিরক্ষিরা তাদের মনে কতখানি ছাপ রেখে গেছে, বাংলাদেশী হিসেবে খুব গর্ব হয়।

IMG_3835 IMG_3848 IMG_3864[1]

২,১১৫ বার দেখা হয়েছে

৮ টি মন্তব্য : “লাইবেরিয়ার ডায়েরি”

  1. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    🙂 🙂 🙂 🙂

    ওয়েলকাম ব্যাক টু সিসিবি, ভাইয়া!

    লাইবেরিয়ার ডায়েরী চলতে থাকুক। তোমার চোখে আমরাও দেখতে থাকি অচেনা একটি দেশ। লেখা এবং ছবি দুটোই ভাল লেগেছে।

    জবাব দিন
  2. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    জাতিসংঘে আমাদের সামরিক বাহিনীর কর্মকান্ড নিয়ে এরকম আরো তথ্যবহুল লেখা আসা উচিৎ। লেখা চালিয়ে যাও ভাই। দিনলিপির পাশাপাশি তথ্যবহুল লিখাও চালাও। বিভিন্ন আলোচনায় উপস্থাপন করা যায়। 🙂


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
  3. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    লাইবেরিয়ান সরকারকে বলে আমাদের কাছে স্বল্পদামে জমি বিক্রির ব্যবস্থা করতে বল।
    আমরা ঝাঁকে ঝাঁকে লাঙ্গল নিয়ে হাঁটা দিই... 😀


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।