একটি সাময়িক পোষ্ট – “নীলা” ও এর “শেষ পর্বে”র প্রাক্কথন

আমার এই পোষ্টটি দেওয়ার পিছনে বেশ ক’টি কারণ আছে। “নীলা” সিরিজটার গ্রহণযোগ্যতা এবং আমার সমসাময়িক সমস্যাগুলোর কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করছি।

প্রথমত, আমি গল্প লেখক নই, কবিতা লেখক। আমি সাধারণ ভাষায় যা ব্যাখ্যা করতে পারি না, কবিতার শব্দ ও ছন্দ আমার সে অভাব পূরণ করে দেয়। কবিতার মধ্যেই আমি আমাকে প্রকাশ করতে পারি, তীক্ষ্ণ অনুভূতিগুলো উপলব্ধি করতে পারি। কবিতার কম্প্রেসড কলেবরে বিশাল ভাব প্রকাশ করা আমার জন্য খুব সহজ ও আনন্দের। “নীলা”র প্রতিটি পোষ্ট ছোট হওয়ার পিছনে এটি একটি বড় কারণ।

“নীলা” যদি কোন কবিতা হত, হয়তো কোন কাব্য বানাতে পারতাম, নয়তো ৮ লাইনে পুরো প্লটটাকে ধরে দিতে পারতাম। তাতে আমার অন্যান্য কবিতাগুলোর মত ওটারও স্থান হত আমার ডায়েরীর পাতায়।

দ্বিতীয়ত, কবিতা দিয়ে সাধারণ ও অসাধারণ মানুষ গুলোকে আকৃষ্ট করার ক্ষমতাও আমার নেই। এ সত্যটুকু সিসিবি তে কয়েকটি কবিতা পোষ্ট দেয়ার পর উপলব্ধি করতে পেরেছি। কারণ আমি কবিতা লিখি নিজের মনের খেয়ালে। প্রতি রাতে আমার দৈনিক কষ্ট, হতাশা আর আনন্দগুলো কবিতা হয়ে ধরা দেয় আমার সামনে। আমি নতুন করে সৃষ্টি করি আমাকে, আমার সত্বাকে, আমার কবিতার অপার রূপে। সিসিবিতে তখন লিখতে খুব ইচ্ছে করত। প্রতিটা পোষ্ট দিয়ে তীর্থের কাকের মত দিনের পর দিন সিসিবি খুলে বসে থাকতাম কারও কমেন্টের প্রতীক্ষায়। কিন্তু কবিতার ভরাডুবির পর, “নীলা” প্লটটা মাথায় আসে। সিসিবিতে তখন প্রতিদিনই গল্পবৃষ্টি হচ্ছে। তাই এটাকে গল্পের প্লাটফর্মে সাজাই। আমার জীবনের প্রথম লেখা গল্প “নীলা”।১ম পর্ব টা খুব বেশি রকম এক্সপেরিমেন্টাল ছিল।

তৃতীয়ত, “নীলা”র ৩য় ও ৪র্থ পর্বের মধ্যে বিশাল সময়ের পার্থক্য। ৩য় পোষ্ট দেবার পর কুয়েট প্রায় ১ মাসের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। তাই ইন্টারনেট কানেকশনও ১ মাস বন্ধ থাকে। সিরাজগঞ্জে ইন্টারনেট ও আমার জন্য পিসি সহজসাধ্য না হওয়ায় প্রচন্ড ইচ্ছা থাকা সত্বেও কোন পোষ্ট দিতে পারিনি। এই বিশাল গ্যাপের জন্য “নীলা” তার পাঠক অনেকাংশে হারায়।

চতুর্থত, ৪র্থ পোষ্টটা শুধুমাত্র মাহমুদের অনুরোধেই দেয়া হয়। তাই পরদিন সকালে পরীক্ষা থাকা সত্বেও আগের রাতে তা লিখে সাবমিট করি। ইচ্ছে ছিল, “নীলা”র গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু আছে যাচাই করা। কারণ, একমাসে অনেককিছুই বদলে যায়। দেখলাম কয়েকজন মানুষ তখনো “নীলা”র জন্য অধীর অপেক্ষা করছিল। তাদের মূল্যবান কমেন্টগুলোকে পুঁজি করেই “নীলা”র ৫ম পর্ব আসে। যদিও আমি বুঝতে পারি, কোথায় যেন একটা সুঁতো ছিঁড়ে গেছে। “নীলা”র ভারে আমি এখন ভারাক্রান্ত।

পঞ্চমত, “নীলা”কে কয়েক হাজার সিরিজের চুইংগাম টাইপের মেগাসিরিয়াল করার ইচ্ছা আমার কখনো ছিল না,এখনো নেই। কারণ এত বেশী লেখা কম্পিউটারে টাইপ করা কষ্টকর। তাছাড়া, পড়ালেখার প্রেসারের জন্য সময় বের করাও কঠিন। কারণ, ২ সপ্তাহ পর ৪-১ সেমিস্টার ফাইনাল শুরু হরে।

ষষ্ঠত, গল্পের অধিকাংশ আমার জীবন থেকে নেয়ার জন্য “নীলা” লিখতে গিয়ে আমার বেশ কিছু সমস্যা হয়। প্রতিটি পর্বের প্লট ও কথাগুলো সাজানোর সময় এবং লেখার সময় আমি খুব ইমোশোনাল হয়ে পড়ি, যার এফেক্ট অনেক সময় ধরে আমায় তাড়া করে।

উপর্যুক্ত ব্যাপারগুলো বিবেচনা করে, আমি “নীলা” সিরিজের “শেষ পর্ব” লিখতে চাচ্ছি, যদিও এটাকে আরো প্রায় ৫-৬ পর্বে শেষ করার ইচ্ছা ছিল।

পাঠকের উপরেই নির্ভর করে কোন গল্পের সার্থকতা। কারণ পাঠকের মাঝেই গল্পগুলো বেঁচে থাকে। “নীলা” রচনায় আমার অনাকাঙ্খিত ভুলগুলো পাঠকের ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করছি এবং সেইসাথে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি ইতিপূর্বে গল্পটি পড়ার জন্য ও মূল্যবান কমেন্ট করার জন্য।

তাই নীলার ভবিষ্যৎ পথচলা পাঠকের উপরই ছেড়ে দিলাম। সৃষ্টির আনন্দ অনেক মধুর!

১,৬৯৭ বার দেখা হয়েছে

২৫ টি মন্তব্য : “একটি সাময়িক পোষ্ট – “নীলা” ও এর “শেষ পর্বে”র প্রাক্কথন”

  1. আহারে !!
    দোস্ত, লোকজন একটু কম কমেন্ট করছে দেইখা তুমি এত্তো কষ্ট পাইছ ???
    তুই তো দেখি আমার চাইতে বেশি কমেন্ট খোর
    😀 😀 😀

    ব্যাপার না। দেখিস্, সবাই পড়বে আগামীতে
    সিসিবি'র মতো ভালো পাঠকগোষ্ঠী পৃথিবীতে আছে কিনা আমার সন্দেহ :hug: :hug: :hug: :hug:

    জবাব দিন
  2. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    ঐ ব্যাটা, মকরামি করস????
    প্রথম যখন সিসিবিতে লেখা শুরু করি, তার আগে ব্লগ লেখা তো দূরের কথা জীবনে কোন কবিতা, গল্প-এই রকম কিছুই লিখি নাই...
    লোকে কি ভাবব, লেখা কেমন হইল...এত কিছু চিন্তা করলে আমাদের মতন কেউ কোন কিছু লেখার সাহস পাইত না...

    এত কিছু বললাম কারন, তুই দেখি তাড়াহুড়া করে সিরিজটা শেষ করতে চাচ্ছিস...
    কোন অতৃপ্তি নিয়ে লেখা শেষ করিস না...কাহিনীর প্রয়োজনে, নিজের স্যাটিসফেকশনের প্রয়োজনে যতদূর যাওয়া দরকার, যা...সিসিবির সবাই তোর সাথে আছে...


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  3. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    মনের আনন্দে লিখো। তাহলেই লেখাটা ভালো হবে। সিসিবিতে দুষ্টুমি, মজা হয়। আবার ভালো মন্তব্যও আসে। লিখতে থাকো দেখবে একসময় ভালো প্রতিক্রিয়া পাবে। আর সিরিজের ব্যাপারে আমার মত এটা দ্রুত শেষ করতে হয়। ঝুলিয়ে দিলেই বিপদ। নিজেকে পাঠক হিসাবে ভাবো। সমস্যাটা সহজেই বুঝবে।


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  4. আদনান (১৯৯৪-২০০০)

    শেষ করার জন্য শেষ করার মানে হয়না । আমার কাছে তো গল্পটা ভালই লাগছে । আর সব গল্পের মাঝে আমাদের আশেপাশের জীবন খানিকটা ঢুকে যায় । তোর যেভাবে ভাল লাগে সেভাবেই শেষ কর ।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।