দেউলিয়া পূর্ণিমায়

বিষণ্ণ সময়ে জীবনবাবুর ভূতে ধরেনি এমন কবিতাখোর পাওয়া দুষ্কর হবে। এমনকি, কলেজের কাঠখোট্টা পরিবেশেও শীতের রাতে যখন কুয়াশায় ভেসে আসত তরল জোছনা, তখন ক্যাডেট-মগজের কোনও এক গহীন কোনে জীবনবাবু নাকি সুরে আওড়াতেন- “বাঁশপাতা-মরা ঘাস-আকাশের তারা! / বরফের মত চাঁদ ঢালিছে ফোয়ারা / … … … / ঝিমায়েছে এ পৃথিবী / তবু পাই টের / কার যেন দুটো চোখে নাই এ ঘুমের / কোনও সাধ!” গতকাল রাতে চাঁদহীন আধো-আধো কুয়াশায় বৃহত্তর ময়মনসিংহের রেলপথে রাত্রিকালীন ভ্রমণে আবার কামড়েছে জীবনের ভ্যাম্পায়ার, যার কিনা কোনও প্রতিষেধক নেই।

 

______________________________________________________________________________________

 

 

বিষণ্ণ সময়ে- কখনও, অযথাই দীর্ঘ হয়ে ওঠে বিষন্নতর বিকেল!
কেউবা অপেক্ষায় থাকে- কুৎসিত বরফের মত একখন্ড পূর্ণিমার।

হাজার বছর পথ হাঁটবার বদলে, উদ্ভট উটের উন্মাতাল নৃত্য দেখে-
কুড়ি বছর পড়ে হঠাৎ মনে পড়ে যায় পঁচিশ বছর আগের একদিন।
লোকেন বোসের জার্নাল থেকে- ঝড়ে ভেসে আসে দুটো ছেঁড়া পাতা।
কাহার যেন সকল গান ছুটে চলে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে, কেউ শোনে না তা!
অচেনা যুবকের কথায়, সুরঞ্জনার হৃদয়ে, বেড়ে ওঠে, লকলকে ঘাস।
দিগন্তের জলসিঁড়ি নদীর পানিশূন্য তীরে আছড়ে পড়ে গুলিবিদ্ধ হাঁস।
বুড়ি চাঁদ আজকাল বানের জলে ভেসে যাবার বদলে আটকে যায় বাঁধে,
মহীনের ঘোড়াগুলি ঘুমিয়ে পড়ে বীভৎস বৈশাখী পূর্ণিমার কালরাত্রে।
ট্রেনে কাটা পড়া আত্মারা ক্যাম্পিং করে বনের কাছে দখিনা বাতাসে
আজও ভরা পূর্ণিমার মাঝরাত্তিরে- গলা চেপে ধরে জীবনবাবুর ভূত

ভোররাতে ডুবে যায় বিদঘুটে চাঁদ, বিষাক্ত ইউক্যালিপটাসের আড়ালে।
তারপর নামে অন্ধকার; যেন, জীবনের প্রথম ও একমাত্র স্বাভাবিকতা।

১,২২৫ বার দেখা হয়েছে

৬ টি মন্তব্য : “দেউলিয়া পূর্ণিমায়”

  1. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    চমৎকার শিরোনামে খুবই সুন্দর একটা কবিতা।
    কবিতার গঠনশৈলীও চমৎকার। শুরুর আর শেষের দুটো করে পংক্তি মানিয়েছে বেশ। মাঝের কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে পড়ার মত, হয়তো এক নিঃশ্বাসে লেখাও হয়েছে।
    সিসিবিতে কবিতানুরাগীর সংখ্যা কম। নীচে এসে বেশ বোঝা গেলো।

    জবাব দিন
    • ইশহাদ (১৯৯৯-২০০৫)

      বাহ! চমৎকার পর্যবেক্ষণ, খায়রুল ভাই। আসলেই কবিতাটা তিন ধাপে লেখা, মাঝেরটা সবচেয়ে দ্রুত। 😀

      বাইরের দুনিয়ার সাথে কবিতাপ্রেমীর শতকরা পরিসংখ্যান মেলালে খুব একটা এদিক-ওদিক হবে কি? 😕



       

      এমন মানব জনম, আর কি হবে? মন যা কর, ত্বরায় কর এ ভবে...

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ইশহাদ (১৯৯৯-২০০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।