ভ্রমন কাহিনীঃ বৃষ্টির দেশে -১

২০০৭ এর ফেব্রুয়ারী মাস। আমরা ৩ বন্ধু গ্রামীনফোন এর বোরিং (???!!!!) চাকরি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দূরে কোথাও যাওয়ার জন্য নিয়্যত করলাম। শেষ পর্যন্ত ঠিক হলো শিলং এবং চেরাপুঞ্জি ঘুরে আসার। ২৮ ফেব্রুয়ারী দিবাগত রাতে সোহাগ পরিবহন এ চেপে রওনা দিলাম সিলেট এর উদ্দেশ্যে। ভোরে সিলেটে ঘন্টা দুয়েক যাত্রা বিরতি দিয়ে তামাবিল এবং ইমিগ্রেশন, কাস্টমস পার হয়ে ওপারে ডাউকী চেকপোস্ট। একটা ট্যাক্সি নিয়ে শিলং পথে রওনা। শুরুতেই জাফলং থেকে উজানে যেই ব্রিজ টা দেখা যায় তা পার হলাম।
জ়াফলং


ব্রিজের উপর থেকে ভাটির দিকে

ব্রিজের উপর থেকে ভাটির দিকে


মাত্র ৫ মিনিট এর যাত্রাতেই ভোজবাজির মতো আবহাওয়া, ল্যান্ডস্কেপ পরিবর্তন এবং ২০ মিনিট এর মাথায় ১৭০০ ফুট উচ্চতায় নিজেদের আবিস্কার করলাম।

meghalaya
meghalaya-1
এক পাশে পাহাড় আর অন্য পাশে ২০০০ ফুট খাদ ঘেষে চলা আর অসম্ভব সুন্দর প্রাকৃতিক রুপ দেখতে দেখতে যখন আমরা রোমাঞ্চিত এবং শিহরিত তখন বেরসিক এর মতো এক বন্ধু বলে বসলো, “ড্রাইভার জী, আক্সিডেন্ট হোতা হায় কেয়া?”। ড্রাইভার সাহেবের ততোধিক ভাবলেশহীন উত্তর, “হার হামেশাই হোতা হায়, আজ সুবহা ম্যায় নে তো এক কার ও ছামনে কা যো পাহার হায় না, উচ্ছে গির গিয়া”। বন্ধুও থামবার পাত্র না, পরের প্রশ্ন ” উছি কার কি আদমি কো কিয়া হুয়া, কই রেসকিউ?” ড্রাইভার সাহেব চিকন হাসি দিয়া বললেন, “ইয়ে ২০০০ ফুট হায় ভাইসাব, পর গিয়া তো মর গিয়া, নো রেসকিউ, নো চান্স, সিম্পলি ডেড”। প্রথমবার এর মতো টের পাইলাম যে পৈতৃক প্রাণটারে আমি কতো ভালবাসি।

৩ ঘন্টা আল্লাহর নাম জপতে জপতে অবশেষে শিলং পৌছালাম। শিলং শহরটা সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ৩৫০০ ফুট উপরে, মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী। মেঘালয় নামটা কেন হয়েছিল তা আমার জানা নাই কিন্তু এ নামটা যে সার্থক (মেঘ + আলয়) তা নিয়ে আমার মনে কোন সন্দেহ নাই। শিলং শহর দার্জিলিং এর মতো ৬৫০০ ফুট উচ্চতায় না এজন্য মেঘ ছোয়া যায়না কিন্তু মেঘের খুব কাছে, তাই এখানে মেঘের রুপ যেন অনন্য। এ যেন খুব কাছ থেকে দেখা কোন অপ্সরার মতো। দেখা যায়, ডাক শোনা যায়, সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় কিন্তু ছোয়াঁ যায়না এবং তাতে আকর্ষণ তীব্রতর হয়। আহ, একটা গানের কথা মনে পড়ল, চলুন সবাই একসাথে শুনি,

Get this widget | Track details | eSnips Social DNA

প্রিয়ার ছলনা, খুনসুটি আর নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখার ( 😡 ) জন্য কারো যদি হৃদয়ে হাহাকার করে উঠে তাহলে সেইসব ছলনাময়ীদের জন্য হাহাকার হৃদয়ের এই গান…………

Get this widget | Track details | eSnips Social DNA

শিলংটা ছিলো অনেকটা যাত্রাবিরতীর মতো, সেখানে উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ক্রিসেন্ট লেক (স্থানীয় নাম ভুলে গেছি)। চমকপ্রদ ব্যাপার হলো লেকটা আর্টিফিসিয়াল। পাহাড়ের উপরে অবস্থানের কারনে পানি ভাটিতে গড়িয়ে চলে যায় এজন্য বাঁধ দিয়ে লেকটা তৈরী করা এবং এই লেকটা পুরো শহরের পানির একমাত্র উৎস, বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে। ব্যাপারটা সেই “Ancient Mariner” এর মতো, এত বৃষ্টি হয় কিন্তু পানযোগ্য পানি সব গড়িয়ে চলে যায়।
meghalaya-31
meghalaya-33
meghalaya-40
meghalaya-75

ডন বসকো ক্যাথেড্রাল। স্থানীয় মানুষের দাবি অনুযায়ী এই চার্চটি নাকি দক্ষিন এশিয়ার সবচেয়ে বড় চার্চ। যদিও আমার এই ব্যাপারে কোন ধারণা নেই কিন্তু দোতলা এই চার্চ যার নিচতলা প্রোটোস্ট্যান্ট এবং উপরতলা ক্যাথলিকদের জন্য আর এই ফিচারটা আমাকে খুব অবাক করেছিল। আমার জানা মতে, প্রোটোস্ট্যান্ট এবং ক্যাথলিক চার্চ আলাদা থাকে। উপরি পাওনা হিসেবে আমরা যখন চার্চে ঢুকি তখন দেখি একটা ক্যাথলিক বিয়ে হচ্ছে। হলিউড মুভিতে কৃশ্চিয়ান বিয়ে দেখে একটা সখ ছিলো সামনা সামনি দেখার, সত্যিই অসাধারন। আমার এক বন্ধু বলেই বসলো, কৃশ্চিয়ান মতেই বিয়ে করবে। “Now you may kiss the bride”, আহাআআআআআ।

meghalaya-145_1
meghalaya-1461
meghalaya-152_1
meghalaya-1581
এরপরে আমরা গেলাম, শিলং টপস, শিলং এর সর্বোচ্চ পয়েন্টে। দুর্ভাগ্যজনক কারনে আমরা যখন টপস এ পৌছাই তখন বৃষ্টি হচ্ছিলো তাই মেঘের খুনসুটির ছবি তোলার সুযোগ হয়ে ওঠেনি, তারপরেও এই ছবিটি থেকে শিলং শহরটাকে দেখা যায়। একটু খেয়াল করলে বুঝা যাবে যে, ঠিক ওই সময়টাতে শিলং এর দুই প্রান্তে বৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু মাঝখানে আকাশ তুলনামুলক পরিস্কার।
meghalaya-89

এভাবে একটা দিন পার হয়ে গেল। পরদিন রওনা হলাম আমাদের মুল গন্তব্য চেরাপুঞ্জির দিকে……… (চলবে)

২,৮৯৫ বার দেখা হয়েছে

৩৯ টি মন্তব্য : “ভ্রমন কাহিনীঃ বৃষ্টির দেশে -১”

  1. সাদা কালো ওয়েডিং ড্রেসে পাত্র পাত্রী দাঁড়িয়ে।
    পেছনে পাত্রীর পোশাকের দুটি লম্বা অংশ ধরে আছে ফুটফুটে দুজন ফ্লাওয়ার গার্ল।
    সামনে ফাদার।
    do you take take x as your life partner?
    I do.
    do you take take y as your life partner?
    I do.
    You can exchange rings.
    I now pronounce you man and wife.
    You may kiss the the bride now.

    আহ... ক্রিশ্চিয়ান বিয়ের সিস্টেমটাই অসাধারণ।
    বিয়া করার ইচ্ছা নাই, তয় যদি করি, ওই ভাবেই করুম।

    কবুল, কবুল, কবুল... পুরা খ্যাত একটা সিস্টেম।

    জবাব দিন
  2. প্রথমে রবিন ভাই, এর পরে আপনে, পাইছেন কি আপনেরা, এই ভাবে ট্যুরের সব ছবি গুলা দেখায়া খালি আমাগো কষ্ট বাড়ান। পরীক্ষাডা শেষ হউক। আমিও দিমু।
    ইস.. কত্তদিন কোথাও ঘুরতে যাই না ... 🙁
    শিলং যাইতে মঞ্চায় :((

    পরের পর্বের অপেক্ষায়।

    জবাব দিন
  3. জিহাদ (৯৯-০৫)

    বৃষ্টির দেশে না হইলেও শিগগির বৃষ্টির শহর শ্রীমঙ্গল যাচ্ছি। তাই বেশি হিংসিত হইলেও পরে সেইটা কমে গেলো খানিকটা :duel:

    চলুক জোরে শোরে। বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে।


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আদনান (১৯৯৪-২০০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।