২৫শে ফেব্রুয়ারীতে পিলখানায় শহীদ’দের স্মরণে হেলাল মুহাম্মদ এর ‘হৃদয়ের রাজপথে’ থেকে শোক গাঁথা

 

২৫ শে ফেব্রুয়ারী। দেখতে দেখতে পিলখানা হত্যাকান্ডের আর ও একটি বছর পার হয়ে গেল। ফেব্রুয়ারীতে কেন যে এত শোক! শোকের এই দিনটির উপলক্ষ্যে আপনাদের সাথে নিচের কবিতাগুলো ভাগাভাগি করলাম। কবিতগুলো নেয়া হয়েছে এবারের একুশে বইমেলায় হেলাল মুহাম্মদ (সিলেট ক্যাডেট কলেজ এর ক্যাডেট, সেনাবাহিনীর প্রাক্তন মেজর) এর লেখা কবিতার বই ‘হৃদয়ের রাজপথে’ (প্রকাশকঃ পাঠসূত্র, স্টল নং- ৩০৭) থেকে। কবিতাগুলো ২০০৯ এর ফেব্রুয়ারীতে  পিলখানায় শহীদদের স্মরণে লেখা ।

 

‘একটি পুরস্কারযোগ্য সফলতার গল্প’

 

আর কত লাশ পড়লে একে ব্যর্থতা বলবে তোমরা?

ওই দেখ জাহিদ শুয়ে চুপচাপ-নিলয়-নির্ঝরের কথা ভুলে,

সমুদ্র-সৈকত ফেলে পুকুরের পাড়ে চিৎ হয়ে পড়ে আছে এমদাদ-

লক্ষ্যভেদী ছত্রীসেনার কী লক্ষ্যহীন করুন মৃত্যু!

এদিকে মমিনের লাশ ছড়ায় অনাগত সাবরির নরম ঘ্রাণ-

কী ফুটফুটেই না হয়েছে ছেলেটা, সোনিয়ার চোখে শুধু শুধু ভয়।

মাসাহেদের বাবা এনশাদ ওদিকে উপুড় হয়ে,

নি:সঙ্গ ছেলেটি-বাবা নেই, যার কোথাও কিচ্ছু নেই।

বহুক্ষণ ম্যানহোলের ভেতরে ছটফট করেছে বুলেটবিদ্ধ এলাহী,

যখন লবির মাথায় হাত বুলিযে সাকিব-‘আর কেঁদো না, মা;

এমনকি মার মুখে কচি হাত বুলিয়ে ইকবাল-কন্যা নুসাইবা-

পিতার স্পর্শ যার কাছে জরায়ু ছুঁয়ে থাকা কানের স্মৃতিমাত্র।

 

আর কত অশ্রু ঝরলে একে লজ্জা বলবে তোমরা?

এই প্রশ্ন স্পষ্ট দেখেছি লেখা আবদুল হকের প্রাচীন শ্মশ্রু জুড়ে,

তথাকথিত দেশবাসীর প্রতি, যে কিনা পুত্রশোকে অবাক

‘কি দোষ ছিল আমার বাবার? ও তো শান্ত- ছিল খুব’!

অবশ্যই শান্ত- ছিল মাহমুদ, তাই এই বেলা প্রশান্ত চোখে

নিষ্পলক চেয়ে আছে প্রাণহীন আকাশের দিকে।

অতএব এ একটি সফল নৈশ অভিযানের গল্প,

যার শেষ পাতায় সাতান্নটি স্বপ্ন এবং

সতেরটি কল্পনার বীভৎস মৃত্যুর সালতামামি,

এবং পাদটীকায় একটি অবান্তর প্রশ্নের জন্মগ্রহণ-

‘ঠিক কত মৃত্যু হলে একটি পুরস্কারযোগ্য সফলতা

ব্যর্থতার আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়?’

 

‘উদভ্রান্ত- যুবকেরা শোনো’

 

পঁচিশ ফেব্রুয়ারীতে বনানীর পথ জুড়ে ফুল,

অথচ কী আশ্চর্য-

ক্যান্টনমেন্টের রাস্তা জুড়ে ভুলের পসরা সাজিয়ে

উদভ্রান্ত- বসে আছি আমরা ক’জন।

 

আমরা, নকশা-করা-জামা-পরা অদ্ভূত যুবকেরা

যারা কবরবাসীদের পরিচিত মুখ, সম্ভবত:

একই মেসের মেম্বার, একই টেবিলের নাস্তা ছেড়ে

অফিসে ছোটা সহকর্মী, অনেকেই এমনকি

ভাই এবং বন্ধু।

 

আমাদের উটের গ্রীবার মত সটান শিরদাঁড়া,

মোটামুটি অনুসন্ধিৎসু মন, যদিও

ছোট করে ছাঁটা চুল আর কষে বাঁধা বেল্ট নিয়ে

মাটির দিকে চাইতে মানা, এবং

ডাইনে-বায়ে দৃষ্টিপাত কারাযোগ্য অপরাধ।

 

অথচ মার্চপাস্টের রোদ্দুরে চকচকে জুতোর আয়নায়

আততায়ী সত্যের ছবি স্পষ্ট হয়।

 

‘তোমাদের প্রস্থান’

 

তোমরা নিয়েছো প্রস্থান, – তাই সময়েরা হারিয়েছে ঢেউ,

নিভেছে  আলো সমুদ্রের, নৈরাশ্যে লুকিয়েছে নীলিমার নীল;

তোমরা উড়ে গেছো ঝড়ে, তাই প্রিয় প্রোজ্জ্বল পতাকাখানি

নিয়েছি মুড়ে কাফনের শ্বেতে, ভুলেছি বসন্তের গান,

তোমরা লুকিয়েছো অভিমানে, তাই বিক্ষোভে  জেগেছে সীমান্ত-,

টহলেরা ভুলেছে পথ, সুদীর্ঘ তারে বিদ্ধ ফেলানীর দেহ;

তোমরা ঘুমিয়েছো, তাই ছায়াপথ ঘিরে দেখি স্তব্ধতা;

তোমরা মিলেছো শূন্যতায়, তাই অজস্রতায় ভরেছে আকাশ

তোমরা একীভূত হলে ঔদার্যে, বুঝি তাই ঔদাস্যে তরুনীর

সরে গেছে শাড়ি, অসহ্য রৌদ্রে গলে ঝরে গেছে প্রেম;

শিশিরের মতোন, তোমরা ছুয়ে দিলে সূর্য, তাই – ঐ দেখো

ঘাসেরা ছেড়েছে  উষ্ণীষ, নিয়েছে তুলে শিরস্ত্রাণ এই বেলা;

তোমাদের খোঁজে কালো ব্যাজ বুকে মিছিলে নেমেছে ফেব্রুয়ারি

তোমাদের প্রিয় রক্তে সেজেছে দিগন্ত-, অসিত্ব রাঙ্গিয়েছে রুধিরের লাল;

তোমরা লুকিয়েছো আঁধারের দেশে, এখন তাই প্রহর জুঁড়ে মধ্যরাত;

তোমাদের হারিয়েছি তান্ডবে, — তাই কিনা হৃদয়ে খান্ডবদাহ।

 

 

৫০৪ বার দেখা হয়েছে

৩ টি মন্তব্য : “২৫শে ফেব্রুয়ারীতে পিলখানায় শহীদ’দের স্মরণে হেলাল মুহাম্মদ এর ‘হৃদয়ের রাজপথে’ থেকে শোক গাঁথা”

  1. আজিজুল (১৯৭২-১৯৭৮)

    কর্নেল এনশাদের আর মাত্র অল্প কদিন ছিল অবসরে যাবার। সেই সপ্তম শ্রেণী থেকে কখনই স্মিত হাসি ছাড়া শান্ত মানুষটির আর কোন মুখ কখনো দেখিনি। আল্লাহ ওঁদের সকলকে বেহেশত নসিব করুন!

    They rejoice in what Allah has bestowed upon them of His Bounty, rejoicing for the sake of those who have not yet joined them, but are left behind (not yet martyred) that on them no fear shall come, nor shall they grieve....... AL-Qur'an 3.170


    Smile n live, help let others do!

    জবাব দিন
  2. ২৫ ফেমব্রুয়ারী পিলখানায় নরপশুদের হাতে জীবন দিয়েছেন ৫৭ জন বীর - নিপীড়নের স্মৃতিনিয়ে বেঁচে আছেন অসংখ্য জন। পিলখানা কু-অধ্যায়ের পর্দার আবড়ালে থাকা অমানুষগুলোকে চিহ্নিত করা আর তাদের বিচারের মুখোমুখি করা আমাদের প্রাণের দাবী।

    জবাব দিন
  3. ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

    আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া
    করিতে পারিনি চিৎকার
    বুকের ব্যথা বুকে চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার
    কত ব্যথা বুকে চাপালেই তাকে বলি আমি ধৈর্য
    নির্মমতা কতদূর হলে জাতি হবে নির্লজ্জ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আজিজুল (১৯৭২-১৯৭৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।