ছন্নছাড়া

১. রিইউনিয়নের দ্বিতীয় দিন সকালে ব্রেকফাস্টের জন্য রেডি হচ্ছি। একজন মুখটা করুণ করে বলল,”দোস্ত ব্রেকফাস্ট করে আমার জন্য
একটা ফ্লাজিল নিয়ে আসবি”। লুকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বন্ধু ঊদ্ধারে রওয়ানা দিলাম। ব্রেকফাস্ট শেষে ইমাম সাহেবের সাথে দেখা করলাম। কিছু নীতিবাক্য একান ওকান করলাম। হসপিটালে ঢুকতে যাব, দেখি সঞ্জয় দা দাঁড়িয়ে। আমি জিজ্ঞেস করার আগেই সঞ্জয় দা, “হাসনাইন কেমন আছ? তোমার শ্বাসকষ্ট হয় এখনো?” কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকি; তারপর বলি, “হ্যা ভাল। আপনি ভাল? না সঞ্জয় দা এখন আর হয় না”। সঞ্জয়দা বলেন,”ভাল”। পাশে দাঁড়ানো নতুন মেডিকেল এসিস্টেন্ট এর দিকে তাকাই। বলি,”সঞ্জয় দা আমার যে ফ্লাজিল লাগবে”। কোন কিছু জিজ্ঞেস না করে উনি ফ্লাজিল আনতে চলে যান।

ক্লাস সেভেনে সেবার প্রথম হসপিটালে ভর্তি হই জ্বর নিয়ে, একশ চার ডিগ্রী জ্বর। রাতের বেলা প্রলাপ বকি। কিছুক্ষন পরপর কে একজন
এসে দেখে যায়। বুঝার বোধ নাই তখন। মাঝেমাঝে যখন বেশি খারাপ লাগত ধরে নিয়ে বাথরুমে নিয়ে যেত আমাকে, পানির কল ছেড়ে দিত। পাঁচদিনের জ্বরে যখন কাতর শুরু হল শ্বাসকষ্ট। সবকিছু শেষে যখন সুস্থ হলাম, বার দিন কেটে গেছে।

২.কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি দর্শনের ইচ্ছা পোষণ করলাম কয়েকজন। যুক্তিতর্ক শেষে বেশ একটা গ্রুপ বানিয়ে বের হয়ে পড়লাম। ইউনিভার্সিটির সংজ্ঞা খুঁজতে খুঁজতে ফেরত আসলাম। গেটে গার্ড ভাই দুই হাত বাড়িয়ে দিলেন। আমি পকেট থেকে রিইউনিয়ন কার্ড বের করে এগিয়ে দিলাম। গার্ড ভাই ভ্যাবাচ্যাকা খেলেন, আমার বুঝতে কিছুটা সময় লাগল। এরপর এগিয়ে গিয়ে কুলোকুলি করলাম। গার্ড ভাই বললেন, “আপনাকে চিনব না কেন? কাউকেই ভুলি নাই”। হয়ত প্রতিদিন পিটিতে দৌঁড়ানোর সময় পিছনে হাঁটতে থাকা আমাকেই মনে আছে উনার, কি জানি?

কলেজে থাকতে কোন ডাকসাইটে ক্যাডেট ছিলাম না, নিতান্ত সাদাসিধে নিরামিষ টাইপের ক্যাডেট। আমার জগৎ বলতে ছিল আমার বন্ধুরা। ঝামেলা পছন্দ করতাম না। জীবনে স্টেজে উঠেছি খুব কম। কারেন্ট এফেয়ার্স কিংবা হাউস ফাংশনে ডাক পড়ত স্টেজের বেকগ্রাউন্ডে পেরেক ঠুকতে। স্যাররা আমাকে চিনতেন,”ঐ লম্বা ক্যাডেট” নামে। একটূ আধটূ দৌড়াদৌড়ি করতাম। সেই আমি গোপনে কতজনের ভালবাসা পেয়ে গেলাম জানতেও পারলাম না। মাঝে মাঝে চিন্তা করি এটা কি আর কোথাও সম্ভব? এখন আই.ইউ.টি হলে থাকি। কিন্তু হতাশ হই। সম্পর্কগুলো কেমন যেন এক জায়গায় এসে থেমে যায়। ব্যতিক্রম শুধু ক্যাডেট কলেজ। যেখানে সম্পর্কগুলোর উপরে ইনফিনিটির বিন্দু থাকে। ভাল থাকুক আমার ভালবাসার মানুষগুলো।

১৯ টি মন্তব্য : “ছন্নছাড়া”

  1. অসাধারন।
    আমি একটু বদ টাইপ ক্যাডেট ছিলাম। এটা ছাড়া হাসনাইনের বাকি অনুভূতিগুলি যেনো আমার মনের কথা।
    @হাসনাইন
    ভাইয়া,এটাকে একটা সিরিজ করা যায় না?আমাদের এই ভালোবাসার মানুষদের নিয়ে আমরা এখানে দারুন কিছু স্মৃতির কথা বলবো।

    জবাব দিন
    • হাসনাইন (৯৯-০৫)

      ভাই মাথার মেমরির আনাচে কানাচে স্মৃতি গুলা লুকায় আছে। টাইন্না টুইন্না বাইর করতেসি। 😀

      "ভাইয়া,এটাকে একটা সিরিজ করা যায় না?আমাদের এই ভালোবাসার মানুষদের নিয়ে আমরা এখানে দারুন কিছু স্মৃতির কথা বলবো।"

      -ভাই অবশ্যই করা যায়। 🙂

      জবাব দিন
  2. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    এত অল্প কথায় এমন অসাধারণ স্মৃতিচারণ সত্যিই দুর্লভ!কামরুল ভাইয়ের সাথে সহমত।আর কামরুল ভাই-বস-মাইর দিয়েন না-আমি কিন্তু লিখেই চলছি-আশা করি শিগগিরি পোস্ট করতে পারব।লিখতে লিখতেই সিসিবিতে নজর না রেখে পারছিনা তাই কমেন্ট করে গেলাম 🙂

    জবাব দিন
  3. সামিয়া (৯৯-০৫)
    সেই আমি গোপনে কতজনের ভালবাসা পেয়ে গেলাম জানতেও পারলাম না।
    সম্পর্কগুলো কেমন যেন এক জায়গায় এসে থেমে যায়। ব্যতিক্রম শুধু ক্যাডেট কলেজ। যেখানে সম্পর্কগুলোর উপরে ইনফিনিটির বিন্দু থাকে।

    ঠিক একই কথা মাথায় আসে কিন্তু লেখায় আসে না...আবারও একই কথা...ক্যাডেটীয় অনুভূতিগুলা সব এক তারে বাঁধা কেন?

    জবাব দিন
  4. আহ্সান (৮৮-৯৪)
    সেই আমি গোপনে কতজনের ভালবাসা পেয়ে গেলাম জানতেও পারলাম না। মাঝে মাঝে চিন্তা করি এটা কি আর কোথাও সম্ভব? এখন আই.ইউ.টি হলে থাকি। কিন্তু হতাশ হই। সম্পর্কগুলো কেমন যেন এক জায়গায় এসে থেমে যায়। ব্যতিক্রম শুধু ক্যাডেট কলেজ। যেখানে সম্পর্কগুলোর উপরে ইনফিনিটির বিন্দু থাকে। ভাল থাকুক আমার ভালবাসার মানুষগুলো।

    হৃদয়টা আর্দ্র হয়ে গেলো...
    অদ্ভুত এক অনুভূতি...
    হাসনাইন, অনেক অনেক সাধুবাদ...
    মন থেকে বলছি, "এই অনুভূতির সত্যিই কোন তুলনা হয়না..."

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আহ্সান (৮৮-৯৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।