আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম……

যেদিন চলে আসি সেদিন কেঁদেছিলাম, জানিনা কেন। হয়তবা অন্যদের কান্না দেখে কিংবা নিজে থেকেই। সবার সাথে হ্যান্ডশেক করার পর এডজুটেন্ট স্যার যখন কলেজ গেটে অপেক্ষারত বাসে উঠতে বললেন কোন হারামজাদা যেন কান্না শুরু করে দিল। কান্না যে মহামারীর মত এর আগে টের পাই নাই। নিজেকে অনেক বড় মনে হত। কান্নাকাটি? তাও আবার আমি? চোখের পানিতে বিশ্বাস করতে হ্ল। কারও বাসের কাছে যাওয়ার নামগন্ধ নেই দেখে শেষে বাসকেই আমাদের কাছে আসতে হ্ল। বাসে অন্যদের দিকে তাকাতে ভয় হচ্ছিল, আবার কেউ যদি শুরু করে দেয়! সেই-ই প্রথম কলেজ থেকে বের হতে খারাপ লাগা শুরু হয়েছিল, এখন প্রতিবার কলেজ থেকে বের হওয়ার সময় খারাপ লাগে। অনুভূতিগুলোর উল্টে যাওয়ায় অবাক হই, কিন্তু তা সত্ত্বেও ভাল লাগে। বহুদিন পর ঝাপসা চোখে দেখা ঝাপসা চেহারাগুলো মনে পড়ে।

কলেজে থাকতে যা যা করতে চাইতাম তার সবই করি এখন। হুটহাট করে ফ্রেন্ডদের নিয়ে বের হয়ে যাই। মন চাইলেই ঢাকার বাইরে চলে যাই, পারলে দেশের বাইরে। কিন্তু কোথায় যেন অপূর্ণতা রয়ে যায়। ঠিক ধরা যায় না। কলেজে থাকতে যা যা করতে চাইনি তাই বড় বেশি করে করতে ইচ্ছে হয়, কিন্তু পারি না। এখন ত দিনে দু-একটা মুভি দেখে ফেলি কিন্তু কলেজে বৃহঃস্পতিবারের সেই ডিভিডি শো-র মত মজা পাই না কেন? চাইনিজ, বিএফসি, হেলভেসিয়া সবকিছুর পরও কেন কলেজের স্পেশাল ডিনারের কথা মনে পড়ে? সবকিছুতে মান আর যোগান বাড়লেও এক সপ্তাহ প্রতীক্ষার পর সবার সাথে সেই ডিভিডি শো বা স্পেশাল ডিনার অনেক বেশী স্পেশাল থেকে যায়। বিকেল বেলার গেমস আওয়ারকে মিস করি; বাস্কেটবল নিয়ে শত দৌঁড়াদৌঁড়ি আর ভলিবলে লাফালাফিতে আগের সেই উচ্ছ্বাস আর থাকে না। আইসিসি প্রাক্টিসের সময়ে গরম গরম পরোটার কথা এখনো মনে আছে, নাসিমের একটার পর একটা পরোটা খাওয়া কিভাবে ভুলি। প্যারেন্টস ডেতে মা যখন হটপট থেকে খাবার বের করে দিতেন, তখনকার খাবারের সেই মোঁ মোঁ করা গন্ধ এখনো লেগে থাকে নাকে। আইনস্টাইন বেটা এত কিছু বানাতে পারছে, একটা টাইম মেশিন বানাতে পারে নাই। টাইম মেশিন থাকলে জীবনের কতগুলো সময় আমি আগেই পার হয়ে যেতে চাইতাম আর কতগুলো সময়ে আমি বারবার ফিরে যেতে চাইতাম। সময় অনেক বড় ধোঁকাবাজ। কেউ রেহায় পায় না, আমিও পাই নি।

(আমার বড় ব্লগ লিখতে ইচ্ছা করে না, কিন্তু এবার খুব ইচ্ছে হয়েছিল। অনেক টানা-হিছঁড়া করেও বড় করতে পারলাম না। কষ্টের লেখাগুলো বোধহয় এমনই হয়)

৪,৩৭১ বার দেখা হয়েছে

৪৪ টি মন্তব্য : “আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম……”

  1. ঠিক ঠিক, আইনস্টাইনকে দুই দিনের ইডি তিন দিনের ডিপি লাগানো উচিৎ।
    সেই প্যারেন্টসডে...আর পেটিস..., আমাদের কলেজে পেটিস খাওয়ার এক উদ্ভট নিয়ম চালু ছিলো, পেটিস একবারে খাওয়া যাবে না, উপরের শক্ত অংশ এবং ভেতরের নরম অংশ আলাদা করে ভেঙ্গে নিয়ে খেতে হবে। একবারে খেলে সাথে টেবিলমেটের ঝাড়ি ফাউ।
    কে এই নিয়ম চালু করসিলো আল্লাহ জানে।

    জবাব দিন
  2. জবরদস্ত লিখসো ভাইয়া।
    তবে শুরুতে "হারামজাদা" শব্দটা বেমানান লাগলো। যেমন বাংলা গ্রামার বইয়ে ছিল,"আমার হৃদয় মন্দিরে আশার বীজ উপ্ত হইলো"...
    নামকরণও আকর্ষণীয় হইসে।

    জবাব দিন
  3. @ ahmed bhai,
    কলেজে এই আলু ভর্তার জন্যই বাইচচা ছিলাম...... 😀
    আমি কিন্তু ভাই খুব অবাক হইসি আপনার কমেন্ট পেয়ে...যাক এবার বুঝা গেল এই ব্লগ অনেকদূর যাবে...। নীরব থেকে সরব হইসেন; এইবার আশা করি কষ্ট করে লেখাও দিবেন।
    আপনার কমেন্ট পেয়ে ভাল লাগল।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রায়হান আবীর

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।