ঘুমরঙ্গ

আমাদের ক্লাস নাইন আর টেনে জ্যামিতি পড়াতেন যিনি, তাঁর বিখ্যাত “চাপ”-এর কথা আমাদের কলেজের সবারি জানা। সবার কাছেই ভয়ের আর বিরক্তিকর নাম। স্যারের ক্লাসে ঘুমানোর সাহস ত দূরে থাক তাঁর ধারে কাছে কেউ ঘেঁষত না পারতপহ্মে, আমিও পারলে তাই করতাম। কিন্তু আমার কপালে অন্য কিছু ছিল।ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হয়ে আমি পাঁচ মিনিট টাইম পাইলেও ঘুমানোর ট্রেনিং পাই। কিন্তু আমার নিক নেইম অন্য কিছু ছিল। যাই হোক নিক নেইম আমার এবারের সাবজেক্ট না, আমার এবারের সাবজেক্ট জ্যামিতির স্যার। স্যারের সাথে আমার কোথায় যেন আত্নার বাঁধন ছিল। স্যারের এমন কোন ক্লাস ছিল না যেটাতে আমি ঘুমাইনি। হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার কথা নিশ্চয় মনে আছে সবার, ঐযে বাঁশিওয়ালা শহরের সব বাচচাদের মুগ্ধ করে অজানার উদ্দেশ্যে নিয়ে গিয়েছিল। আমি মনে হয় ঐ বাচ্চাদের কোন একজনের বংশধর, তা না হলে আমার এমন হবে কেন? স্যারের কথার মধ্যে যেন সুর ছিল। সেই সুরে যাদু ছিল। সেই যাদুতে মুগ্ধতা ছিল, আর ছিলাম আমি। আমাকে মাতোয়ারা করে তুলত। আমি হারায়ে যেতুম সুরের ভুবনে। ঐ সুরে আমি এতই মজে যেতুম যে খবরই থাকত না আমার। খবর হত তখন, যখন স্যারের এক মণ ওজনের হাত(বিখ্যাত “চাপ”) আমার পিঠে ল্যান্ড
করত। ল্যান্ড করেই ক্ষান্ত না হয়ে আমার কানও পরিস্কার করে দিতেন পরম মমতায়! স্যারের মাধুর্য ভরা আহবানে আমি সাড়া না দিয়ে পারতুম না, “কী ব্যাপপার হাসনাইইন ঘুমাচ্ছু!!! ঘুমাচ্ছু নাকি? এদিকসু এদিকসু”। বাংলা সিনেমায় ভিলেন যেমন শিকার পেলে জগৎ বিখ্যাত হাসি দেয়, তেমনি হাসি দিয়ে স্যার আমাকে বরণ করে নিত, তবে সিনেমার নায়ক আমি কখনই হতে পারিনি কারণ প্রতিবার আমাকেই পরাজয় মেনে নিতে হত। এটাই স্যারের প্রতিদিনের রুটিন হয়ে দাঁড়ায়, আর আমি প্রতিদিনকার শিকার। ক্লাস শেষ হত আর আমার বন্ধুরা অবাক হত। আমি কিভাবে তাদের বুঝাব যে আমি কি পেয়েছিনু তাহার সনে। তাই ত কবি বলেছেনঃ
” ধন্য এ জীবন ঘুমাতে তোমার ক্লাসে
ধন্য এ জীবন তোমার ছুঁয়া পেয়ে” (বাহ্‌ বহুত খুব)

(বিঃদ্রঃ আমার লেখা পরে কেউ আবার ভাইবেন না স্যারের কথায় মধু ঝরত, তাঁর গলা কাওয়ার মত কর্কশ আর সেকেন্ড প্রেপের মত যন্ত্রনাদায়ক ছিল)

২,৯৯৩ বার দেখা হয়েছে

১৭ টি মন্তব্য : “ঘুমরঙ্গ”

  1. শাহরিয়ার (২০০৪-২০১০)
    তাঁর গলা কাওয়ার মত কর্কশ

    উনার গলা তো ভাইয়া খুব চিকন ছিল!!!

    উনাকে আমরা ডাকতাম ফেনারগন।

    আমরা ডাকতাম বটম,সেটা ওনার কানমলা'র জন্য!তবে স্যার আর যাই হোক খুব সৎ ছিল!


    People sleep peaceably in their beds at night only because rough men stand ready to do violence on their behalf.

    জবাব দিন
  2. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)
    স্যারের কথার মধ্যে যেন সুর ছিল। সেই সুরে যাদু ছিল। সেই যাদুতে মুগ্ধতা ছিল, আর ছিলাম আমি। আমাকে মাতোয়ারা করে তুলত। আমি হারায়ে যেতুম সুরের ভুবনে। ঐ সুরে আমি এতই মজে যেতুম যে খবরই থাকত না আমার।

    আহ, ঘুমের কি সুন্দর উছিলা :)) 😀 !!! আমি মুগ্ধ 😛 ।
    খুব ভালো লাগছে :clap: :clap: ।


    Life is Mad.

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : amitavo

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।