লেইক্ষ্যং ম্রোং এর খোঁজে

লেইক্ষ্যং ম্রোংনৌপথে পাবেন অনেক সাথী
বান্দরবানের পথে পথেঃ
“খুম” এবং “ম্রোং” এর দেশ বান্দরবান এর প্রতিটি পাহাড়ে পাহাড়ে ছড়িয়ে আছে বিচিত্রতা । লুকিয়ে আছে এমন সব স্থান যা দেখতে আমদের দেশের ভ্রমন পিপাসুরা ছুটে যান নানা দেশে। আকাশ ভরা মেঘ এর মাঝে লুকিয়ে থাকা পাহাড়, পাথরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া স্রোত যা স্থানীয় ভাষায় খুম নামে পরিচিত,বর্ষার মাঝে তৈরী হওয়া অজস্র ঝরনা যা কিনা ম্রোং নামে পরিচিত,কিংবা পাথরের বুকে বেয়ে চলা ঝিরিতে আমরা খুজে পেতে পারি চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য্য আর রোমাঞ্চের হাতছানি। বান্দরবানের অবারিত সৌন্দর্য্যের সন্ধানে আপনিও ছুটে যেতে পারেন এই অজানের দেশে। সাথে পাবেন নতুন কিছু আবিষ্কারের উন্মাদনা এবং বান্দরবানের দুর্গম পথের মাতালতা।
এমনি এক উদ্দেশ্যে আমরা ঢাকা ও সলিমুল্লাহ মেডিকেলের ছয় বন্ধু যাত্রা শুরু করেছিলাম বান্দরবানের উদ্দেশ্যে। লক্ষ্য ছিল পরিচিত স্থান গুলোর পাশাপাশি আরও কিছু নতুন স্থান ভ্রমন পিপাসুদের জন্য উন্মুক্ত করা। ভ্রমনের উত্তেজনা শুরু হয়ে যায় আমদের লক্ষ্যস্থানে পৌছাবার অনেক আগেই, শ্যামলী পরিবহনের অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় ড্রাইভারের কল্যাণে। তার মাতাল ড্রাইভিং আরেকবার আমদের মিশুক মুনীর এবং তারেক মাসুদের কথা মনে করিয়ে দেয়। আমদের বাস ভর্ত্তি টুরিস্ট দ্বারা ভর্ত্তি থাকার কল্যাণে অবশ্য তেমন কোন প্রতিবাদও হয়নি।
সকাল ৮ তার সময় আমরা পৌছে যাই বান্দরবান শহরে, সেখানে গিয়ে দেখা হয়ে যায় ঢাকা মেডিকেল খেকে আসা আরেক দলের সাথে। তাদের কে সাথে নিয়ে আমরা জিপ ভাড়া করি থানছি এর জন্যে। জিপ ছাড়াও আপনি যেতে পারেন বাসে,যেটি সকাল ৮ , ১০ এবং ১২ টায় থানছির উদ্দেশ্যে। ভাড়া পরবে ১৬০ টাকা। আর জিপ ভাড়া করতে পারবেন ৪০০০ টাকায়। এখন অবশ্য বলিপাড়ায় রাস্তা ভেঙ্গে থাকার কারনে সরাসরি বাস থানছি যায় না। এই ক্ষেত্রে বাসে এ ্যাওয়াই সুবিধা জনক। বাসে করে আপনি ৪ ঘন্টায় পৌছে যাবেন থানছি। যারা নাফাখুম যেতে চান তারা ইচ্ছে করলে রেমাক্রী চলে যেতে পারেন। আমরা ওই রাত থানছি গেস্ট হাউসে থাকার সিন্ধান্ত নেই কারন সবাই ছিলাম খুব ক্লান্ত। রাতে বারবিকিউ উৎসবে স্থানীয় ওসি সাহেবের সাথে অনেক মজা করেই প্রায় কাচা মাংশই সেবন করলাম।
পরদিন খুব ভোরে উঠে সকালের নাস্তা সেরে, ঘাটে গেলাম নৌকা আর গাইড ঠিক করতে, এবং এটাই ছিল আমদের ট্যুরের টর্নিং পয়েন্ট। কারন আমরা যে এত জটিল মঝি এবং গাইড পাব তা আমরা বুঝতেই পারি নি, এই গাইডই যার নাম পাতং ব্যোম সেই আমদের আপাত উত্তেজনা বিহীন ট্যুরটিকে এক অসমান্য পরিনতি দান করে। সে কথায় পরে আসছি।
রাজাপাথরের এলাকা
সাংগু নদীর মাঝে বয়ে চলাঃ
লালপীয়াম ব্যোম ভাই এর নৌকায় চরে আমদের রেমাক্রীর পথে যাত্রা শুরু। আড়াই ঘন্টার নদীপথের যাত্রা নিঃসন্দেহে আমাদের জীবনের দেখা সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্যগুলোর একটি ( একটু সামান্য বিপজ্জনক), খরস্রোতা সাঙ্গু নদী তার অপার সৌন্দর্য্য নিয়ে আমদের জন্য অপেক্ষা করছিল। মাঝখানে রাজাপাথর পার হতে গিয়ে নিজেকে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি এর ডকুমেন্টারিগুলোর অংশ মনে হচ্ছিল। স্রোতের বাকে বাকে লুকিয়া থাকা বিশাল বিশাল পাথর গুলো সাথে পানি ধাক্কা লেগে তৈরী করছিল ঘূর্ণিপাক। কিন্তু ভয় লাগছিল না, কারন এখানকার স্রোতের মতি অদম্য এখানকার মাঝিগুলো। লালপীয়াম ব্যোম মাঝির অবিশ্বাস্য দক্ষতায় আমরা পার করলাম রাজাপাথরের এলাকা এক অদম্য আনন্দে। সামনেই চলে এলো তিন্দু বাজার যেখানে মাঝিদের সাথে আমরা দুপুরেরে খাওয়া খেয়ে নিলাম পাহাড়ী Bodybuilder মুরগির মাংস দিয়ে যা আমাদের দাঁত ও মাড়ীর শক্তি পরীক্ষা করে নিল একবার, সেই সাথে পাহাড়ী মরিচের ঝাল মিটিয়ে নিলাম পাহাড়ী এলাকার জাতীয় ফল কলা দিয়ে।
এবার আবার যাত্রা শুরু রেমাক্রীর উদ্দেশ্যে। পথে দেখে নিলাম রেমাক্রীখুম , যার গা ঘেষে আড়াই ঘন্টা চললেই পাওয়া যাবে নাফাখুম। নৌকার মাঝেই মাঝি এবং গাইড এর কাছ থেকেই তখন লেইক্ষ্যং ম্রোং এর কথা জানতে পারি। যেটি কিনা নাফাখুমের চেয়ে অনেক বড় এবং সুন্দর। কিন্তু ওইদিকে আমাদের গাইড কোনদিনও যাই নি, এবং রেমাক্রীর অধিকাংশ মানুষ যায়গাটার নাম শুনলেও যায়গাটায় কারও যাওয়া হয় নি, কারন ওইদিকে যুম চাষ ও করা হয় না। রেমাক্রী নেমে গিয়ে দেখি গেস্ট হাউস ইতিমধ্যে লোকারণ্য, থাকার যায়গা নেই। নাফাখুম যাবার জন্যেই প্রায় তিনটা গ্রুপ এসে গেছে। এই কথা শুনে আমাদের মাঝে নাহিদ , যে কিনা নাফাখুম একবার ঘুরে এসেছিল সে বেকে বসল। আমদেরও নতুন একটা যায়গা দেখার ইচ্ছে পেয়ে বসল, যেখানে আগে কখনো কোন ট্যুরিস্ট যায় নি। রেমাক্রীর গাইড এর কাছে যানতে যায়গাটাতে যেতে আসতে নাকি ৪ ঘন্টা লাগবে।ততক্ষন পর্যন্ত পাহাড়ী মানুষদের ঘন্টা সম্পর্কে ধারনা ছিল না। আর সেও ছোট বেলায় একবার গিয়েছিল, আর যায় নি। ও শুধু জানেন যে কচ্ছপ ঝিরি (লেইক্ষ্যং) দিয়ে গেলেই সেখানে পৌছানো ্যাবে। ততক্ষনে ১ টা বেজে খেছে। আমরা লালপীয়াম ভাই এর দোকানে আমদের ব্যাগ গুলো রেখে উনার নৌকায় করেই আবার রওনা দিলাম। এখান থেকে আবার নদী মোটামুটি শান্ত (আগের তুলনায়)। ঘন্টাখানেকের মাঝেই চলে এলাম কচ্ছপ ঝিরির তীরে। এরপর শুরু হল আমাদের যাত্রার আসল পর্ব।
পথে পাবেন অসংখ্য ঝিরি
লেইক্ষ্যং ম্রোং এর উদ্দেশ্য যাত্রাঃ
কচ্ছপ ঝিরি দিয়ে শুরু হলো আমাদের যাত্রা। পাথরের বুকে ভেসে থাকা পাথর , কখনো হাটু পানি, কখনো কোমড় পানি, কখনো বুক পানি দিয়ে হেটে যেতে বেশ ভালি লাগছিল, পথে পড়ছিল অসংখ্য ঝরনা, তাও ৩০ থেকে ৪০ টির মত। পাথর ছোট থেকে ধিরে ধিরে বড় হতে লাগল। মাঝে মাঝে রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে দাড়াল পিচ্ছিল পাথর। তখন দক্ষ গাইড আমদের গাইড আমদের কে নিয়ে যেতে থাকল পাহাড়ের উপড় দিয়ে ঘুড়িয়ে। যেখানে পথ নেই সেখানে তিনি উনার দা ব্যবহার করে গাছ ও ঝোপঝাড় কেটে রাস্তা তৈরী করলেন। পথ থেমে গেলেও আমদের চলা থামলো না। গাইড চলতে লাগলেন দ্রুত গতিতে, আর আমরা কচ্ছপ ঝিরি দিয়ে চলতে লাগলাম কচ্ছপ গতিতেই। দুই ঘন্টা পরে ঝিরির পাড়ে গাইড কে দাঁড়িয়ে থেকে আমদের জন্যে অপেক্ষা করতে দেখে ভাবলাম পথ বুঝি শেষ। গাইড এর কাছ এ গিয়ে জিজ্ঞেস করে জানা গেল আমরা মাত্র অর্ধেক পথ। তখন আমাদের অনুভূতিটা অনেকটা তামিল ছবির মাঝামাঝিতে থাকা অবস্থার মতই। এতক্ষন পরে এসে পাহাড়ি দের এক ঘন্টা আর আমদের এক ঘন্টার পার্থক্য বুঝলাম। কিছু করার নেই, তাই আবার পথ চলা শুরু হলো, এবার কিন্তু নতুন উদ্যমে, এবং গতিতে। এর ফলে আমদের মাঝে স্বাস্থ্যবান একজনের খুব সমস্যা হয়ে গেলে। পথও ধীরে ধীরে দুর্গম থেকে দুর্গম হতে লাগল, পাথর গুলোর আকার যেনন বড় হতে লাগল,তেমনি সমপরিমান পিচ্ছিল। দিনের আলোও প্রায় শেষের দিকে, এই ভাবে প্রায় দুই ঘন্টা হাটার পর সামনে এগিয়ে থাকা আমদের বন্ধুদের চিৎকার শুনতে পেয়ে ছুটতে থাকলাম (পাহাড়ী রাস্তায় যতটুকু ছোটা যায়)।সামনে এগিয়ে দেখি পথ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে, একটা পথ দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকলাম। তারপর একটা ঝোপ সরানোর পর দেখি পেলাম ম্রোং (ঝরনা) টিকে যারা চূড়া দেখতে আমাকে আরেকটু আগাতে হলো। এরপর চোখের সামনে ভেসে উঠলো লেইক্ষ্যং ম্রোং। যার বিশালতার সামনে কিছুক্ষন সম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম। আমদের দেখা সর্বোচ্চ ঝরনা এইটি। আমি এখনো নিশ্চিত না এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ কিনা। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের কাছে উচ্চতা মাপার কোন কিছুই ছিল না। অনেক উচু এক পাহাড়ের চারপাশ থেকে ভেসে আসছে স্রোতধারা। পাহড়ের চারপাশ সমান। আমদের মাঝে দীপ, অপু ও মোস্তাফিজ দৌড়ে চলে গেলো ঝরনার পানিতে ভিজে যেতে গাইড দের নিষেধাজ্ঞা সত্বেও। আসলে চার ঘন্টা হাটার হাটার পর কারও উচ্ছাসই বাধ মানার মত না। কিন্তু আমাদের উচ্ছাস এর মাঝে পানি ঢেলে দিয়ে আসল বৃষ্টি , একই সাথে সু্য্যিমামাও অস্ত গেলেন।
তারপর কি হলো তা এখন বলতে গেলে নিজেকেই নিজে বিশ্বাস করতে চাইবে না, যে রাস্তায় দিনের বেলায় চলায় রীতিমত অসহনীয়, সেই পাথুরে রাস্তায় রাতের বেলায় পুরো চার ঘন্টা হাটতে হবে। নিজেকেই যেন নিজের বিশ্বাস হতে চাচ্ছিল না । চাদের আলো ও হাতের লাঠির উপর ভরসা করে আগাতে লাগলাম। কপাল কিছুটা ভাল, আমদের দুই গাইড এর এক জন ২টা টর্চ লাইট নিয়ে এসেছিল। কিন্তু পাহাড়ী জংগলের মাঝে , যেখানে দিনের বেলাই ঠিক মত দেখা যায় না, চারপাশে উচু নিচু ছড়ানো পাথর। তখন মাথায় আসলে কিছুই কাজ করছিল না, এমন যে হবে আমরা কখনই কল্পনাও করি নি। চলতে লাগলাম ঝিরির মাঝে দিয়ে। এইবার আর কোন সংক্ষিপ্ত রাস্তা নাই। পুরো রাস্তাই যাচ্ছি পানি দিয়ে। কিভাবে যাচ্ছি নিজেও বুঝতে পারছি না, সবকিছু কেমন যেন স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে। মাঝে মাঝে বৃষ্টির পানিতে পাহাড় ধসে পড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে । সবাই একটা ঘোরের মাঝে , গাইডরা ছাড়া। আমাদের থেকে তাদের টেনশন অনেক বেশি। কারো যেন কোন হুশ নেই।
হাটতে হাটতে অবশেষ রাত সাড়ে ন টার দিকে আমরা ঝিরির শেষ মাথায় পৌছালাম। কিন্তু আমাদের কাহিণী আরও বাকি ছিল।ঝিরির মাথায় পৌছে সেখানে অবস্থিত জুম ঘরের বাসিন্দা দের কাছ থেকে জানতে পারলাম আমদের দেরী দেখে আমদের ফেলে রেখেই মাঝি চলে গেছে ৮ টার দিকে। হাসব না কাঁদব বুঝতে পারছিলাম না। এই অবস্থা দেখে সামি ওই জায়গাতেই শুয়ে পড়ে পুরো নেতিয়ে পড়ল। বাকি সবার অবস্থাও দেখার মত। কিন্তু তখন বুঝি নাই যে মাঝি চলে যাওয়া তে আমাদের আসলে ভাল হয়েছিল। নাহলে জুম ঘরে রাত কাটানোর মত অসমান্য অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বঞ্চিত হতাম।জুমঘরে আমাদের সাথী

জুম ঘরে রাতঃ
ততক্ষনে জুমঘরে থাকার জন্য এক জন এসে আমদের অনুরোধ করলো। আমরা প্রথমে বুঝে উঠতে পারি নাই যে ব্যপারটা কি। পরে জানতে পারলাম যে এই ব্যপারটা এই অঞ্চলের জন্য একটা স্বাভাবিক ঘটনা। কারন পাহড়ী এলাকায় কেও কাজ করতে এসে বিপদে পড়লে সেইখানেই যে কারো ঘরে উঠতে পারে। কিন্তু আমাদের কাছে তো কোন কাপড় নেই। যেগুলো আছে সেই গুলো আট ঘণ্টা পানিতে চুবানি খেয়ে বুনো গন্ধে সুবাসিত। আবার জুম ঘরের অধিবাসীরা এগিয়ে আসলেন। উনাদের কাছে তেমন কিছুই ছিল না। কোন মতে ২ টা লুঙ্গি, একটা গামছা আর একটা হাফপ্যান্ট যোগাড় করা গেল। এগুলো নিয়েই ঘরে ঢুকলাম। ওই ঘরটি একটি মাচার উপর ছিল। ঘরে ঢুকে দেখি ঘরের ভিতর ৩ জন মহিলা। প্রথমে ভাবছিলাম উনারা হয়তো কিছুটা সঙ্কোচিত থাকবেন,অবাক হবেন। ঢুকে দেখি পুরো ব্যপারটাই অন্যরকম।বরং বেশিরভাগ সময় আমরাই সঙ্কোচিত হয়ে ঘরের কোনায় বসে থাকলাম আর উনারা আমাদের কে নিয়ে হাসাহাসি করলেন। আট ঘন্টায় আমাদের পেটে কিছু শুকনো বিস্কিট ছাড়া আর কিছুই পড়ে নাই। সবার পেটি ক্ষিধায় অস্থির। জিজ্ঞেস করে জানতে পারা গেল উনাদের কাছে ভাত আর মারফা ছাড়া আর কিছুই নেই। আর আছে পথের মধ্যে আমদের আরেক গাইড ক্ষ্যয় ভাই এর ধরা কাঁকড়া। এগুলোই রাঁধতে অনুরোধ করা হলো। রান্না বলতে সিদ্ধ মারফা এর মাঝে সিদ্ধ কাঁকড়া। কারন পাহাড়িরা তেল মসলা ছাড়াই রান্না করে থাকে। ভাত দেয়া হলো। বাকীগুলো তো আর মুখে দেয়া যাবে না, তাইই লবন আর মরিচ দিতে বললাম। কিন্ত ভাত মুখে দেওয়া মাত্রই সবাই খুশি হয়ে গেলাম। অসাধারন ভাতের স্বাদ। অনেকটা আমদের দেশের বিরই চালের মত, কিন্তু পুরোপুরি না। খালি ভাত , লবন , মরিচ আর পানি দিয়েই তিন প্লেট সাবাড় করলাম। তারপর তারা আমদের জিজ্ঞেস করলো আমরা বাংলা মদ খাই কিনা। তাদের অথিতীয়তায় আমরা সবাই সম্ভিত হয়ে গেলাম। কত নিঃসঙ্কোচে আমদের কে তারা যা খায় তা খেতে অনুরোধ করল, কত সহজ ও সাবলীল ভাবে আমদের আপন করে নিল। ওদের হয়ত জীবন ধারনের প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই নেই, নেই কোন সোশ্যাল নেটওর্য়ার্কিং এর সাইটের অ্যাকাউন্ট। কিন্তু ওদের সামাজিকতা ও ব্যবহার আমদের যে কোন সভ্য মানুষকে হার মানাবে। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমদের নিতে মাঝি লালপীয়াম ভাই চলে এসেছ। সারারাত উনার ঘুম হয় নি আমদের চিন্তায়। কারন ট্যুরিস্টদের প্রতিটই ব্যপারেই এলাকার সবাইকেই জবাবদিহি করতে হয়। আর লালপীয়াম ভাই শুধু মাঝি নন , তিনি এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও মেম্বার।তাই উনার দায়িত্ববোধটা আরও বেশি। জুম ঘরের ঘরের সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দেখলাম একদিনেই ওরা কত আপন আর ঋণী করে গেছে আমাদের।ঝুম ঘর থেকে বিদায় নিলাম, সেই সাথে সাথে নিলাম অসমান্য কিছু স্মৃতি, এবং অবিস্মরনীয় কিছু মুহুর্ত।

১,১৯৯ বার দেখা হয়েছে

৯ টি মন্তব্য : “লেইক্ষ্যং ম্রোং এর খোঁজে”

  1. রাব্বী (৯২-৯৮)

    :thumbup:

    দারুন লাগলো। জায়গাগুলিতে একইভাবে গিয়েছি এবং স্থানীয় কিছু মানুষের সাথে মিশেছি সেজন্য তোমাদের উত্তেজনা কিছুটা বুঝতে রলাম। থানচি, তিন্দু, রেমাক্রি সব দুর্দান্ত সুন্দর। মানুষগুলি অসাধারণ ভাল!

    জুম ঘরে থাকা। মরিচ দিয়ে মারফার ভর্তা। নাপ্পি দিয়ে তরকারি। এবং সাথে আরাক। আহ! ব্যাপক মিস করি।

    লেখা পড়ে খুব ভাল লাগলো। এভাবে না মিশলে পাহাড়ের মানুষগুলিকে দূর থেকে চেনা বা জানাবোঝা যায় না। নিচের এই দুইটা নাম ঠিক করে দিও।

    খুম>খুমি
    ম্রোং> ম্রো/ম্রোচা


    আমার বন্ধুয়া বিহনে

    জবাব দিন
  2. সামিয়া (৯৯-০৫)
    জুম ঘরের ঘরের সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দেখলাম একদিনেই ওরা কত আপন আর ঋণী করে গেছে আমাদের

    কি চমৎকার লেখাটা...খুবই সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন...

    নাফাকুমের পথে ঠিক এভাবেই গেছি, রাত্রে বেলার পাথুরে পথে টর্চ জ্বেলে জ্বেলে...তীব্র শীতের মাঝে কখনও কোমর পানি, কখনও গলা পানিতে ডুবে...সেইরকম এডভেঞ্চার...আমাদের সবার পোশাক আশাক মায় জুতা পর্যন্ত এডভেঞ্চার উপযোগি।
    এই রাতের বেলাতে এক পাহাড়ী মেয়েকে উলটো দিক থেকে আসতে দেখে আমি হঠাৎই চুপসে গিয়েছিলাম এজন্য যে, আমরা যেটাকে এডভেঞ্চার ভেবে নিয়ে থ্রিলড হচ্ছি, সেটাই এখানকার মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা।
    এই পাথুরে সৌন্দর্য পাহাড়ীদের কষ্টের কারণ, জুম চাষকে কঠিন করে দেয়। আমার খুবই লজ্জা হচ্ছিল সেখানে বেড়াতে গিয়ে। আমাদের নৌকার মাঝি ছিল সমতলের, সে বলছিল, নৌকা চালানো খুব কষ্টের, আর একটু টাকা জমলেই সে ব্যবসা শুরু করবে। এখানে ব্যবসা করা নাকি খুব সোজা, কারণ ৫টাকার জিনিস এখানে বিশ টাকায় বেচা যায়, আবার পাঁচ টাকার বাঁশ কিনে বাইরে বেচা যায় একশ টাকায়, পাহাড়ীরা এতই সহজ সরল। তিনি বলছিলেন খুব স্বাভাবিক ভাবেই, যেন এটাই ন্যায়। আমরা মোটামুটি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম।

    জবাব দিন
  3. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    চমৎকার বর্ণনা, আমারো এই পথে ঘুরে আসতে মনে চাচ্ছে 🙂 সাথে কিছু ছবি হলে মন্দ হত না।

    প্রথম ব্লগ দেবার পরে একটা নিয়ম কানুন আছে, সেটা তাড়াতাড়ি করে ফেলো... আর নামের শেষে কলেজে অবস্থান কালটা জুড়ে দিলে সবার এড্রেসিং এ (বাংলা মাথায় আসছে না ~x( ) সুবিধা হয়।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  4. হাসিব (১৯৯৯-২০০৫)

    ছবি তো অনেক তোলা হইছে কিন্তু লেখাটি তে লাগাইতে পারি নাই ...... মুখছবি (facebook) লিংক দিলাম, সবাই কে দেখার জন্য আমন্ত্রন...
    http://www.facebook.com/media/set/?set=a.2474267414525.2140358.1187634090&type=1

    এইটা নিয়া একটা ভিডিও বানাইসি
    http://www.facebook.com/photo.php?v=2474013248171

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ইমরান (১৯৯৯-২০০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।