শেলী

[শুরুর কথা : এই লেখাটা আসলে ওয়াহিদা আপার ‘স্বপ্ন বনাম বাস্তবতা – ৩’ এ মন্তব্য হিসেবে লিখেছিলাম। আপা বললেন লেখাটা পোস্ট হিসেবে দিতে। বুঝতে পারছিলাম না কি করব। একটু আগে দেখলাম, মইনুল ও একই কথা বলল। শেষমেশ ভাবলাম, পোস্ট করেই ফেলি। আসলে লেখার প্রতি (এমনকি ক্লাস রিপোর্ট অথবা প্রেজেন্টেশন এর ক্ষেত্রেও) আমার এতটাই অনীহা যে, নিজেকে লেখক হিসেবে কখনও কল্পনাই করতে পারিনা। শেষ পর্যন্ত সিসিবিতে আসার ২ বছর পর প্রথম পোস্ট দিলাম (যাই, এই আনন্দে :frontroll: দিয়ে আসি)। ওয়াহিদা আপা, আপনাকে ধন্যবাদ সাহস দেয়ার জন্য। আর মইনুল, দোস্ত তোকে ধন্যবাদ Push করার জন্য।]

আমি বর্তমানে জাপানে প্রায় ১১ বছর ধরে আছি। বিয়ে করেছি ৪ বছর হলো এবং আমাদের একটি মেয়ে আছে। S.S.C., H.S.C, ক্যাডেট কলেজ থেকে বের হবার পর বুয়েট ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষা, এমনকি জাপানে আসার পর প্রথম কয়েক বছর আমার রেজাল্ট খুব একটা খারাপ ছিল না। কিন্তু, এরপর থেকেই অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন হওয়া শুরু করে।

নিজেকে হঠাৎ পাস ফেল নিয়ে টানাটানি অবস্থায় আবিষ্কার করি। এর পিছনে নিজের গাফিলতি এবং অপরিণামদর্শিতাই মূলত দায়ী, এছাড়াও কিছু পারিবারিক ঝামেলা ছিল। নিজের স্বপ্নগুলো ফিকে তো হলই, পড়াশুনার প্রতি আগ্রহটাই নষ্ট হয়ে যাওয়া শুরু করল। ঐ সময়কার বাস্তবতা মোটেও মেনে নিতে পারছিলাম না কিন্তু কিছু করতেও পারছিলাম না। কারণ, ততদিনে ধীরে ধীরে নিজের আবেগ এর উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছি।

ওরকম অবস্থায় আরও ২টি বিষয় উপলব্ধি করলাম।
১, আমি আসলে খুবই নিঃসঙ্গ এবং আমার একার পক্ষে উঠে দাঁড়ানো অসম্ভব। আমার দ্রুত একজন সঙ্গী দরকার।
২, আমি মানসিক ভাবে মোটেও দৃঢ় নই। এতদিনে যা অর্জন করেছি, সেগুলোর পিছনে কিছুটা সৌভাগ্য এবং অধ্যবসায় কাজ করেছে। কিন্তু, কোন কঠিন অবস্থায় একবার ব্যর্থ হলে ভেঙ্গে পড়ি।

সৌভাগ্যক্রমে ঐরকম সময়েই আমার বউ এর সাথে আমার পরিচয় হয়। পরিচয় থেকে বিয়ে পর্যন্ত ঘটনাগুলো এখানে বলছিনা। তবে পরিচয়ের পরে কথাবার্তা বলে বুঝতে পারলাম, আমার যে ধরনের পার্টনার দরকার তার সব বৈশিষ্ট্যই ওর মধ্যে বিদ্যমান। যে বিষয়গুলো আমাকে প্রভাবিত করেছে তা হলো,
১, আমার মধ্যে যে গুণগুলোর অভাব ঠিক সেগুলোই ওর মধ্যে আছে। যেমন, পারফেকশনিস্ট, কঠোর সময়ানুবর্তিতা, ইত্যাদি।
২, দায়িত্ব সচেতনতা। আমার ধারনা ছিল, আধুনিক বাঙ্গালী মেয়েরা নিজের সংসারকে একান্ত নিজের করে পাবার জন্য শ্বশুড়বাড়ির প্রতি একটু উদাসীন হয়। কিন্তু, ওর ব্যাপারটা আলাদা। ও যেকোনো ব্যাপারেই নিজের দায়িত্ব ও ভূমিকা সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন।

বিয়ের প্রপোজালের সময় আমার মানসিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা এবং আমার পরিবার সম্পর্কে সবকিছু খুলে বলেছিলাম। আমার এখনোও মনে হয়, আমার ঐ অবস্থায় কোন মেয়েই আমাকে বিয়ে করতে রাজী হত না। কিন্তু, আমাকে অবাক করে দিয়ে ও রাজী হয়েছিল। বিয়ের পরে ওর উৎসাহ এবং ঠেলা-গুঁতো খেয়ে আমি আবার নতুন করে উঠে দাঁড়ানো শুরু করেছি। আমার জীবনে যতগুলো টার্নিং পয়েন্ট আছে, তার মধ্যে নিঃসন্দেহে আমার বউ একটি।

বিয়ের সময় আমি কি চাই শুধু সেটাই আমার মনে ছিল কিন্তু ও কি আশা করে সেটা মাথায় ছিল না। এটা করা আমার উচিত হয়নি। মাঝে মাঝে মনে হয়, ওকে পেয়ে আমি জিতে গেছি, কিন্তু ও আমাকে পেয়ে ঠকে গেল কিনা। যাহোক, সংসার সুখী করার জন্য নিচের বিষয়গুলো প্রয়োজন বলে আমার কাছে মনে হয়েছে।
১, পারষ্পারিক বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধাবোধ। এটা এমনিতেই পাওয়া যায়না, অর্জন করে নিতে হয়।
২, পারষ্পারিক সহযোগিতা এবং ত্যাগ করার মানসিকতা।
৩, পারষ্পারিক চাহিদা সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং তা পূরণে সচেষ্ট হওয়া।

উপরোক্ত বিষয় ছাড়াও, সাইফ ভাইয়ের ‘৪০ বছরের অভিজ্ঞতা’র মতামতগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। হয়তো আরও কিছু ফ্যাক্টর থাকতে পারে। যদি সেগুলো আপনাদের নজরে পরে, তাহলে শিখিয়ে দিবেন প্লিজ।

[শেষের কথা : ওয়াহিদা আপার কথামত এই মন্তব্যের কথা আমার বউকে জানিয়েছিলাম। সব শুনে সে বলে কিনা, “তোমার বউকে আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে!” :-/ ]

১,১৯১ বার দেখা হয়েছে

১৩ টি মন্তব্য : “শেলী”

  1. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    বিয়ের প্রপোজালের সময় আমার মানসিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা এবং আমার পরিবার সম্পর্কে সবকিছু খুলে বলেছিলাম।

    তোমার এই লাইনটা যারা বিয়ে করেনি তাদের জন্য খুব লক্ষনীয় বলবো। অনেক মেয়েই বিয়ের পরে বাবার অবস্থার সাথে স্বামীর অবস্থার তুলনা করে বা বিয়ে সম্পর্কে তার এক্সপেক্টেশন না মিলাতে সারা জীবন ক্ষোভ পুষে রাখে। পারলে প্রতিটা ছেলেরই তার হবু বউএর সাথে বিষয়টা নিয়ে খোলা মনে কথা বলা উচিত। যদিও মেয়েদের তখন মুখ ফোটে না অবস্থা তার পরও পরবর্তী জটিলতা এড়াতে এইসব বাস্তব বিষয়গুলো সম্পর্কে দুজনেরই সম্যক ধারনা থাকা উচিত।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
    • হায়দার (৯২-৯৮)

      ধন্যবাদ সামিয়া। কিন্তু, ভাবীকে যে এখানে আনা যাবে না। :((
      ও এখন বাংলাদেশে আছে এবং এপ্রিলের শেষ নাগাদ ফিরে আসার কথা।
      আমি হটাত করে অফিসের কাজে একটু বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ায়, উইকেন্ডে পুরো সময় হয়তো দিতে পারবো না।
      ওদেরকে অনেক মিস্ করলেও, নিজেই বলেছি দেরী করে ফিরে আসতে।

      জবাব দিন
  2. রকিব (০১-০৭)

    এমন একজন মানুষের সাথে ঘর করাটা বোধহয় অনেক ভাগ্যের ব্যাপার। 🙂
    ভাইয়া, লেখালেখিটা চালু রাখেন।
    শুভ ব্লগিং!!


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ইসতিয়াক (২০০০-২০০৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।