দোস্ত দুশমান

বন্ধু আমার বড়ই দুষ্টু। মস্তিষ্কের নিউরনে অনুরণন করে ঠিক যেমন বড় বড় ক্যাল্কুল্যাস এর শেষ টেনে ছাড়ে, যেমন করে সব সময় স্যারের শেখানো, দেখানো নিয়মের বাইরে তাকে অংক করার নেশা চেপে ধরে, ঠিক তেমনি সেই গুচ্ছগুচ্ছ নিউরন দিয়েই ছুটিতে গিয়ে কিছু একটা বাগিয়ে নিয়ে আসে। বাগাবে না কেনো? সেতো বাগানোরই বয়স। তো যাই হোক, বন্ধু আমার গত ছুটিতে এক বালিকার সাথে ফোনআলাপের তুঙ্গে পৌছে এসেছে। আমরা ধরে নেই বালিকার নাম কমলা কিম্বা কারিশমা। বালিকাও বে…এশ দুষ্টু। ভিকারুন্নিসার মেয়েরা নাকি একটু দুষ্টু ই হয়। সারা ছুটিতে বন্ধুর সাথে আমার একবার ও দেখা করে নি। পিছলেই গেছে বারবার। দুই মাসের পুরোটা টার্ম আমাকে বন্ধুর এই না পাবার হাহাকার ই শুনে যেতে হল নাক মুখ খিচে। তারপরও বন্ধুর পরাজয়ে মোর পরাজয়, সেটাও মাথায় গেঁথে নিয়ে আগামী ছুটিতে মিশন একোমপ্লিশ হয়ে যাবে… এই ভরসায় দিতে থাকলাম। ছুটিতে এলাম। এখানে ঘুরি ওখানে ঘুরি, লাউড স্পীকারে কমলা কিম্বা কারিশমার রিনিঝিনি দুষ্টামী শুনি। আমার সাথেও বালিকার বন্ধুর বন্ধু হিসাবে গল্প জমে গেল, মোবাইল নাম্বার আদান প্রদান হয়ে গেল। একদিন হটাতই রাত একটা ছুই ছুই, বন্ধুর ফোন এলো। কারিশমা কিম্বা কমলা, আচ্ছা ধরে নেই কারিশমাই…… বন্ধুর সাথে আগামিকাল সকালে দেখা করতে চায়। কনকর্ড আরকাডীয়া, সকাল ১০ টা। কারিশমার সাথে তার বান্ধবী থাকবে, সুতরাং বন্ধু একা যাবে না, যেকোন অঘটনে ট্যাকেল দেবার জন্য আমি তার সাথী হব।

সকালে দুই বন্ধু ফার্মগেট থেকে রিকশাযোগে রওনা দিলাম।আচ্ছা, আমার বন্ধুর নাম বলা হয়নি। ধরে নিন বন্ধুর নাম কদ্মফ(আজব নাম দিলাম, যাতে কারো সাথে মিলে না যায়)। রিকশায় উঠেই বন্ধু বলে দিল “ দোস্ত ভুলেও প্রথমে গিয়ে তুই হা-মীম আর আমি কদ্মফ বলবি না। মেয়ে কিন্তু আমাকে চেনে না। আমিও চিনি না। আগে ওকে পরিচয় দিতে দিবি। যদি দেখি সুবিধার না তাইলে দোস্ত তুই কদ্মফ আর আমি হা-মীম”… বুঝতেই পারছেন কত বড় রিস্ক নিতে যাচ্ছি আজ বন্ধুর সাথে। পৌঁছে গেলাম কনকর্ড আরকাডিয়ায়। বালিকাদের ফুডকোর্টে থাকার কথা। ফুড কোর্টে পৌঁছে এক কোনায় দুই বালিকার রিনিঝিনি শুনলাম এবং আন্দাজ করে ওদিকেই এগিয়ে গেলাম। এরমধ্যে একজন মাথা খারাপ করে দেবার মত সুন্দর, যার পাশে অন্যজন কোন ভাবে কারিশমা হলে বন্ধু যে ঘরে ফিরে পুরোনো দিনের বিরহের গান শুনবে সেটা আমি নিশ্চিত।

এগিয়ে কাছে যেতেই হাসি দেখলাম দুইজনের মুখে। দুইজনই হাত নেড়ে হাই দিল। এরমধ্যে যেটা আমি চাচ্ছিলাম না সেটাই হোলো এবং সুন্দরী ব্যাতীত অন্যজন নিজেকে কারিশমা বলে পরিচয় দিয়েই ফেলল। সাথে সাথে আমি একটা খোচা খেলাম এবং বুঝলাম যে ঠিক এই মুহূর্ত থেকে আমি ই কদ্মফ। আমি হাসি দিয়ে বললাম “ হাই আমি কদ্মফ”। প্রথমে সন্দেহ হোলো যে ফোনের কণ্ঠ শুনে বুঝে না ফেলে। দেখলাম নাআআআআআআআআ। কাজ হয়ে গেছে। কারিশমা আমার দিকে তাকিয়েই সেইইইইইইই একটা হাসি দিয়ে ফেলেছে। ওখানকার হা-মীম ইতিমধ্যে সুন্দরীর সাথে খুটুশ খুটুশ করে গল্প জমিয়ে ফেলেছে আর আমি যে কারিশমার সাথে কি বলব সেটাই বুঝতে পারছি না। একটু পরে বন্ধু বেঈমান বলে বসলো তোমরা দুইজন কথা বল তাহলে আমরা দুইজন ( সে আর সুন্দরী ) একটু ঘুরে আসি। আমি নিয়ত করলাম আজকে যদি ভালোভাবে ফিরি তবে ওকে আমি মেরেই ফেলবো। আধা ঘণ্টা হয়ে গেলো। আমি হমম, হাম্মম্মম , হ্যা, না, ছাড়া আর কোন কথাই বলতে পারছি না কারিশমার সাথে। অনেক কথার ঘুরিয়ে পেচিয়ে উত্তর দিচ্ছি। হটাত বালিকা বলে উঠলো তার দেরি হয়ে যাচ্ছে, পড়া আছে তার। আমি হাফ ছেড়ে বাচলাম। বালিকা ঢং করে বলল “ আচ্ছা হা-মীম ভাইয়া আর অমুক কোথায় গেলো, আমাকে তো যেতে হবে, কল দেই দাড়ান”। কথা বলাও শেষ তার হা-মীম ভাইকে কল দেওয়াও শেষ। হঠাত করে টেবিল এর উপর ভাবের সাথে রাখা আমার ফোন বেজে উঠলো এবং তাতে বড় বড় করে ভাসতে থাকলো “কারিশমা কলিং” । আমি ড্যাব ড্যাব করে বালিকার দিকে তাকালাম, দেখি বালিকা আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি আস্তে করে উঠে বললাম “ওকে সি ইউ লেটার” বলেই দৌড় দিলাম। পেছন থেকে রিনিঝিনি কণ্ঠে বালিকার অস্রাব্য গালাগালি ভেসে এলো। সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে কদ্মফ কে ফোন দিলাম। যত ধরনের বাচ্চা থাকা সম্ভব সব ধরনের বাচ্চার নাম শেষ করে বললাম “জান, মান, সম্মান বাচাইতে চাইলে দৌড়াই রিকশায় উঠ, সোজা ম্যাবস এর গলিতে আয়, এই জায়গা এখন আমাদের জন্য নিষিদ্ধ। এই এলাকায় বালিকাদের বড় ভাইদের অভাব নাই”।

রিকশায় উঠে ফার্মগেট ম্যাবস এর গলি পৌছালাম আর চিন্তা করতে থাকলাম বন্ধু আমার কি ধোলাই খেয়েই গেল আজ ?? না … নবাব কিছুক্ষণ পর হাপাতে হাপাতে এসে নামলেন। নেমে আমাকে প্রথমেই ফাপর দিয়ে দিলো “ ধূর বেটা এত ভয় পাইলে হয়?”

আমি বললাম “দোস্ত, দম সেভ কর , এভাবে দম নষ্ট করিস না তাড়া খেয়ে, জায়গা মত গিয়ে দম পাবিনা, টায়ার্ড হয়ে যাবি, পারফর্মেন্স খারাপ হবে”

বন্ধু ক্যালাতে ক্যালাতে বলল “ চল চা বিড়ি খাই”।
আমিও ক্যালাতে ক্যালাতেই দোকানদার মামাকে বললাম “ এই মামা, ফ্রেশ পাত্তি, কড়া লিকার, দুই কাপ চা।“

৯০২ বার দেখা হয়েছে

৪ টি মন্তব্য : “দোস্ত দুশমান”

মওন্তব্য করুন : আহসান আকাশ (৯৬-০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।