কেমন সরকার চাই

প্রায়ই মনে হয়, আমরা একটা অস্থির সময় পার করছি। আমি নিশ্চিত, অনেকেরই মনে হয় এমনটা। এই অস্থির সময় নিয়ে চিন্তা করতে যেয়ে মাথায় আসল, আচ্ছা, তাহলে স্থির সময়টা কবে ছিল? ভাবতে যেয়ে পেছনের দিকে তাকাই। মনে হল, আমরা কি আদৌ কখনও কোন স্থির সময়ে ছিলাম? হয়তবা ছিলাম। তবে খুব সামান্য সময়ের জন্য। এজন্যই মনে পড়ে না। অথবা, মানব মনের ধর্মই হয়ত খারাপ সময়গুলোকে মনে রাখা। ভালটা তার কাছে ডিফল্টের মত স্বাভাবিক। কবে অসুস্থ ছিলাম- সেটাই তো আমরা মনে রাখি, তাই না?

তারপর মনে হল, সবকিছু স্বাভাবিক ভাবে চলার জন্য একটা চলনসই “স্বাভাবিক” সিস্টেম থাকা চাই। যেই সিস্টেমে নিয়মানুযায়ী সবকিছু চলতে থাকবে। আর অনিয়মগুলো এই সিস্টেমের মধ্যে চাপে পড়ে নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যাবে। অস্থিরতায় পরিণত হওয়ার সুযোগ পাবে না। হয়ত কেউ কেউ এখন এসব নিয়ম-কানুন টাইপের কথা শুনে এরই মধ্যে আমার লেখাটাকে স্রেফ একটা অবাস্তব কল্পনা ধরে নিয়েছেন। আমি নিজেও হয়ত সেই দলে। নিজের কথাকে আপাতত কল্পনার বেশি কিছু ভাবছি না। তবে সেই ভাবনাটাও প্রকাশ হওয়া দরকার বিধায় লেখাটা।

যাই হোক। বলছিলাম সিস্টেমের কথা। আর এই সিস্টেমটা হল দেশ চলার সিস্টেম। যেই সিস্টেমের মূল অংশ হল নীতি-নির্ধারণ। এরপর বাস্তবায়ন। সোজা কথায় একেই বোধহয় সরকার বলে। সেজন্যই শিরোনাম কেমন সরকার চাই। সরকারের রূপরেখা নিয়ে আমার একটা কনক্রীট বা বিস্তারিত প্রস্তাবনা আছে। তবে তার সাথে সাথে সরকারের বৈশিষ্ট্য হিসেবে কিছু সাধারণ অ্যাবস্ট্র্যাক্ট ধারণাও আছে। আর আমি এই সাধারণ ধারণাগুলোকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। প্রথমে এগুলোই বলে যাই-

ক্ষমতার ভারসাম্য: দেশের নীতি-নির্ধারণ, তা বাস্তবায়ন, আর তার সাথে সাথে সাধারণ নিয়মমাফিক জনগণের স্বার্থ ও আইন-শৃঙ্খলা ঠিক রাখার দায়িত্ব মূলত সরকারের। এই দায়িত্ব পালনের জন্য সরকারকে কিছু ক্ষমতা দেওয়া হয়। আসলে কিছু না, অনেক বেশি ও বড় ক্ষমতাই দেওয়া হয়। আমরা জানি- “Power corrupts. Absolute power corrupt absolutely.” কার উক্তি জানি না। তবে বড় সত্য কথা। এজন্য সরকারের কাছে যে ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে, তার অপব্যবহার রোধে ক্ষমতার একটা ভারসাম্য থাকতে হবে। এই ভারসাম্যের মূলনীতি হল- “সমস্ত ক্ষমতা যেন একজনের অথবা একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত হয়ে না পড়ে। এটা নানাভাবে হতে পারে। দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভার মাধ্যমে হতে পারে। আমেরিকার মত প্রেসিডেন্ট-আইনসভার মধ্যে ভারসাম্য থাকতে পারে। এমনকি প্রদেশ গঠন করে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যেও থাকতে পারে। যেখানে সবার ক্ষমতার একটা সীমা টেনে দেওয়া থাকবে। সিস্টেমটাই এমন হবে যে এই সীমা সে অতিক্রম করতে পারবে না।

দলের প্রভাবমুক্ত আইনসভা: এই পয়েন্টটা আমাদের দেশের প্রেক্ষিতেই আনা। আমার মূল প্রস্তাবটা হল- আইনসভাতে সদস্যরা নিজেদের মত প্রকাশের ক্ষেত্রে “দলের সিদ্ধান্তের পক্ষে যোগ হওয়া স্রেফ আরেকটা সংখ্যা” হিসেবে কাজ করবেন না। তারা দলের চেয়ে যাদের দ্বারা নির্বাচিত হয়ে আইনসভায় এসেছেন তাদের প্রতিনিধিত্বের কথাই বেশি চিন্তা করবেন। একই সাথে দেশের স্বার্থের কথা চিন্তা করে নিজস্ব মতামত দেবেন। দলীয় সিদ্ধান্তের নির্লজ্জ সাফাই গাইবেন না। একাজটা করার একটা খুব সহজ উপায় হতে পারে- দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করে আইনসভার নির্বাচন করা। এখন অনেক মানুষ ভোটটা মার্কাতেই দেয়। প্রার্থী যেই হোক। যদি সেই দলীয় মার্কাটাই না থাকে, তাহলে মানুষজন কিছুটা হলে চিন্তা করবে, কে প্রার্থী হিসেবে বেশি যোগ্য। আর এভাবে নির্বাচিত প্রার্থীরা আইনসভায় নিজের এলাকার প্রতিনিধিত্ব বেশি করবেন, এটাই আশা করা যায়।

যোগ্য ব্যক্তিদের সুযোগ দেওয়া: দেশের নীতি-নির্ধারণ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। আর একাজে সবচেয়ে যোগ্য লোকদের প্রয়োজন। দেশের মধ্যে এমন মানুষ আছেনও। তবে সিস্টেমটা যদি তাদের প্রতিকূলে থাকে, তাদেরকে আনার সহায়ক না হয়, তাহলে তো আর তারা আসতে পারবেন না। সিস্টেম বানাতেই হবে এমনভাবে, যেন যোগ্য ব্যক্তিরা নিয়মমাফিক নীতি-নির্ধারণে আসতে পারেন। আমরা যে গণতন্ত্রে আছি, তাতে তাত্ত্বিকভাবে জনগণকে খুব বড় আসনে বসানো হলেও, প্রকৃতপক্ষে তাদের ক্ষমতা কতটুকু আমরা জানি। আমরা নিজেরাই সেই জনগণ কিনা। পাঁচ বছরে বড়জোর দুই-একবার অদ্ভুত কয়েকটা অপশনের মধ্য থেকে যেকোন একটাকে সীল দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। তাও হয়না অনেক সময়। আমার মনে হয়, আরও বেশি জনগণের ক্ষমতায়ন করতে পারলে, তেমন সিস্টেম দাঁড় করালে, জনগণ যোগ্য মানুষদেরই নীতি-নির্ধারণ করতে দিবে। কারণ জনগণ নিজেরাও জানে, কারা যোগ্য। কিন্তু তাদেরকে নীতি-নির্ধারকের আসনে বসানোর সুযোগটা জনগণের নাই। আছে শুধু “কে কম খারাপ” টাইপের একটা কিছু নির্বাচনের সুযোগ। এজন্য নির্বাচনের সিস্টেমে পরিবর্তন আনতে হবে।

এই হল মোটামুটি আমার অ্যাবস্ট্রাক্ট নীতিগুলো। এবার আসা যাক আমার কংক্রীট সরকার/নির্বাচন পদ্ধতিতে। আগেই বলে নিই, যা লিখছি সবই আমার মস্তিষ্কপ্রসূত। সুতরাং বাস্তবতা-বিবর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সেটা মেনে নিয়েই লিখছি। আর এটা মূলত বাংলাদেশকে চিন্তা করেই লেখা। পয়েন্ট আকারে-

১) আমার প্রস্তাবনার সরকারটা হবে রাষ্ট্রপতি শাসিত। তিনি হবেন দেশের প্রশাসনিক প্রধান। অবশ্য এখানে পদটির নাম “প্রধান প্রশাসক” ধরণের কিছুও রাখা যেতে পারে, যেখানে রাষ্ট্রের একজন সম্মানিত ব্যক্তিকে এখনকার মত “রাষ্ট্রপতি” পদটি দেয়া হবে। তবে আমি বাকী লেখাতে সুবিধার জন্য “প্রধান প্রশাসক” ইত্যাদি না বলে “রাষ্ট্রপতি” শব্দটাই ব্যবহার করব।
২) রাষ্ট্রপতি সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন। বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রচলিত নিয়মানুসারে ৫০% ভোট পেয়ে আসাকেও এখানে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
৩) সরকারের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হবে আইনসভা। স্বাভাবিক ভাবে আইন প্রণয়ন ছাড়াও আইনসভা রাষ্ট্রপতির কিছু ক্ষমতাকে সীমিতভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে।
৪) আইনসভার সদস্যরাও জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন।
৫) নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি উনার পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়ে মন্ত্রীসভা গঠন করবেন। তবে আইনসভা যেকোন সময় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে অনাস্থা প্রস্তাব এনে যেকোন মন্ত্রীকে মন্ত্রীত্ব থেকে অপসারণ করতে পারবে।
৬) আরও কিছু জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আইনসভার অনুমোদন লাগবে। বাৎসরিক বাজেট আইনসভার দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে।
৭) ক্ষমতার মেয়াদ: রাষ্ট্রপতি এবং আইনসভার মেয়াদের ক্ষেত্রে এসেই মূলত ক্ষমতার ভারসাম্যটা তৈরি হবে। বর্তমানে আমাদের দেশে এবং অনেক দেশেই সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর। কোথাও কোথাও চার বছর। আমার মনে হয়, কেউ দেশের উন্নয়ন করতে চাইলে পাঁচ বছর খুবই কম সময়। কিন্তু দেশের ক্ষতি করার জন্য আবার পাঁচ বছর বেশ বড় সময়। এজন্য রাষ্ট্রপতি এবং সংসদ উভয়েরই সম্ভাব্য মেয়াদ হবে দুইটা- চার বছর অথবা ছয় বছর। এটা ম্যানেজ করা হবে এভাবে- রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তিন বছর পর আইনসভা নির্বাচন হবে। এই আইনসভা নির্বাচনের এক বছরের মাথায় রাষ্ট্রপতি আইনসভারে আস্থাভোটের সম্মুখীন হবেন। যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পান, তাহলে তিনি আরও দুই বছর অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন। আর যদি তিনি আইনসভার ভোটে না জিততে পারেন, তাহলে এই চার বছরের পরেই তাঁর মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে এবং নতুনভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে। যথানিয়মে তার তিন বছর পর আবার আইনসভা নির্বাচন হবে। অর্থাৎ যেই আইনসভা রাষ্ট্রপতির উপর অনাস্থা এনে তাঁকে চার বছর মেয়াদে সরিয়ে দেবে, সেই আইনসভার নিজের মেয়াদও হবে চার বছর। আবার যদি আইনসভা রাষ্ট্রপতিকে ছয় বছর মেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে দেয়, তাদের নিজেদের মেয়াদও হবে ছয় বছর। তবে যেমনই হোক, জনগণ প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর প্রত্যক্ষভাবে অথবা পরোক্ষভাবে সরকারের বিষয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানাতে পারবে। আর সুশাসনের জন্য এটা সরকারের উপর একটা চাপ হিসাবে থাকবে।
৮) রাষ্ট্রপতি এবং আইনসভা, উভয় নির্বাচনই হবে নির্দলীয়। অর্থাৎ, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হবে না, প্রার্থীদের নিজস্ব প্রতীকে হবে। আর অফিশিয়ালি দল থেকে কাউকে মনোনয়ন দেওয়ারও কোন সুযোগ থাকবে না। তবে রাজনৈতিক দল থাকতে পারে। এটা রাজনৈতিক দলের উপর একটা চাপ হিসেবে কাজ করবে, যেন তৃণমূলের এবং সাধারণ মানুষের কাছে ভাল ইমেজ থাকা ব্যক্তিরাই দলে বেশি গুরুত্ব পায়। দলের কেন্দ্রীয় মহল যেন প্রার্থী বাছাইয়ে স্বেচ্ছাচার করতে না পারে।
৯) না-ভোটের অপশন থাকতে পারে।
১০) প্রতি নির্বাচনের আগে সমস্ত প্রার্থীদের নিয়ে জনগণের উদ্দেশ্যে একটা অনুষ্ঠান হবে। এখানে প্রত্যেক প্রার্থী নিজের পরিচয় দেবেন, সংক্ষেপে ইশতেহার তুলে ধরবেন। আর এর সাথে সাথে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু সম্পর্কে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরবেন। এই ইস্যুগুলো এলাকার ভিত্তিতে আলাদা হতে পারে। আবার জাতীয় ইস্যুও হতে পারে। সবশেষে, উপস্থাপকের মাধ্যমে উপস্থিত শ্রোতাদের প্রশ্নের উত্তর দিবেন। তবে অন্যদের সমালোচনা করা যাবে না। শুধু নিজের এজেন্ডা তুলে ধরতে হবে। সব প্রার্থীকেই এই সুযোগ দেয়া হবে। সবার জন্য একটা নির্ধারিত সময় (যেমন ১ ঘন্টা) থাকবে। এভাবে সব প্রার্থীদের যদি একই দিনে সম্ভব নাও হয়, তাহলে দুই-তিন দিনে করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন, সবার কথাই গুরুত্বের সাথে শোনা যায়, এভাবে ব্যবস্থা করতে হবে। তাতে সময় লাগে লাগুক। এই বক্তব্য সেশনগুলো রেকর্ড করা হবে। এই অডিও/ভিডিও যেকেউ সংগ্রহ করতে পারবে। এই বক্তব্যগুলো হবে জনগণের প্রার্থী যাচাইয়ের মূল ক্ষেত্র। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এই কাজগুলো আরও সময় নিয়ে করা যেতে পারে।
১১) বছরে একবার রাষ্ট্রপতি জনগণের সামনে এমন একটা উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তরের মুখোমুখি হবেন।
১২) দুইবার বা তিন বারের বেশি কেউ রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না – এমন মতের দিকে না যেয়ে আমার মনে হয় বয়সের একটা সীমা টেনে দেওয়া যেতে পারে। যেমন- দায়িত্ব গ্রহণকালে রাষ্ট্রপতির বয়স ৬৫/৭০ বছরের বেশি হতে পারবে না।
১৩) আইনসভায় জনগণের এলাকাভিত্তিক প্রতিনিধিত্বের সাথে সাথে পেশাভিত্তিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। কারণ, বর্তমান বাস্তবতায় অনেক বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা এলাকাভিত্তিক প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে আসতে পারবেন না। পেশাভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব থাকলে উনাদেরকে নীতি-নির্ধারণে উনাদের অংশগ্রহণ সহজ হবে। তবে এক্ষেত্রে কিছু জটিলতা আছে। যেমন- একই আইনসভায় দুই ধরণের প্রতিনিধিত্ব থাকবে নাকি দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা লাগবে। পেশাভিত্তিক নির্বাচনের ধরণ কেমন হবে। কারও একটি আবার কারও একাধিক ভোটের সম্ভাবনা তৈরি হবে। এই বৈষম্য কতটা গ্রহণযোগ্য। আবার কোন কোন পেশা থেকে প্রতিনিধি নির্বাচন হবে(অনেক পেশা আছে), কোন পেশা থেকে কতজন প্রতিনিধি থাকবেন এসব নির্ণয় করাও জটিল বিষয়। তবে জটিলতা সত্ত্বেও যোগ্য ব্যক্তিদের নীতি-নির্ধারণে আনতে এমন কিছু সহায়ক ব্যবস্থা করতে হবে। নয়ত দেখা যাবে, বিশেষজ্ঞরা টিভিতে টক-শো, পত্রিকায় কলাম লিখন আর সংবাদ সম্মেলন করবেন বড়জোর। তাদের থেকে দেশ উপকৃত হতে পারবে না।

আপাতত এটুকুই। মোটামুটি সরকারের এমন একটা সিস্টেম, বাকী সিস্টেমগুলোকে ঠিকমত চালাবে, অনিয়ময়গুলো দূর করবে বা সাধারণ মানুষের স্বার্থ ও নিরাপত্তার জন্য কাজ করবে, এমনটা আশা করি।
[নতুন পয়েন্ট যোগ করা হয়েছে]

২৩ টি মন্তব্য : “কেমন সরকার চাই”

  1. ইফতেখার (৯৫-০১)

    ক্ষমতার ভারসাম্য বা চেক্স এ্যান্ড ব্যালেন্সেস সিস্টেম বিশ্বের সব গনতন্ত্রের সংবিধানেই থাকার কথা, বাংলাদেশেরও হয়ত আছে। বিচারবিভাগ (জুডিশিয়াল পাওয়ার - এখানে পুলিশ বিভাগও এনফোর্সমেন্ট ব্রান্চ হিসেবে যোগ হবে) যদি স্বাধীন না হয়, তাহলে এই ধারনা তাত্ত্বিকভাবে বই-ব্লগেই থাকবে।

    দ্বিকক্ষের আইডিয়াটা খারাপ না, আলাদা ভোটের মাধ্যমে প্রধান প্রশাষক খুবই দরকার (আমেরিকার সিস্টেমটা এইরকমই)। প্রশাষনীক সীমাবদ্ধতা (আর পলিটিকাল অবস্ট্যাকল) কাটিয়ে এইটা প্রয়োগ করতে পারবে খুবই ভালো হয় বাংলাদেশে।

    প্রতীকবিহীন নির্বাচনের আইডিয়া এইভাবে কাজ করবে না। জামাতী ভোটার জামাত সামর্থীত প্রার্থীকে কাক মার্কায়ও ভোট দিবে। এইটা ভোটার এডুকেশনের সমস্যা, ভোটিং সিস্টেমেরনা।

    জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)
      বিচারবিভাগ (জুডিশিয়াল পাওয়ার - এখানে পুলিশ বিভাগও এনফোর্সমেন্ট ব্রান্চ হিসেবে যোগ হবে) যদি স্বাধীন না হয়, তাহলে এই ধারনা তাত্ত্বিকভাবে বই-ব্লগেই থাকবে।

      আমার মতে, মূল বক্তব্যটা বলে দিলেন। এই এক জায়গা ঠিক করলে চেইন রিয়্যাকশানে সম্পূর্ণ ঠিক না হলেও অনেক কিছুই ঠিক হবে। কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

      তবে সাম্প্রতিক আমেরিকা কিন্তু অনেকটাই বিপদে আছে। দ্বিকক্ষ নিয়ে কিন্তু শেষ রক্ষা হচ্ছে না। ফাউন্ডিং ফাদাররা বর্তমান কংগ্রেস দেখলে বাবরী চুল ছিড়তে ছিড়তে (ইংরেজীতে) বলবে, "আমরা কি এই যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিলাম?" উদাহরণ হিসেবে টানতে চাইলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে খুবই নিন্মমানের একটি উদাহরণ।


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন
        • ইফতেখার (৯৫-০১)

          দ্বিক্ষের বড় সমস্যা হৈলো আমলাতান্ত্রিক রেডটেপ। নির্বাচিত নেতারা ডেলিগেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে নাকি ট্রাস্টি হিসেবে এইটার উপর এলাকার কি লাভ হবে তা অনেকাংশেই নির্ভর করে। বেশিরভাগদেশেই এইটা অনেকটাই ট্রাস্টি মডেল যেইটা পপুলার ডেমোক্রাসির একটা প্রায়োগিক ত্রুটি (থিওরিটিক্যালি এইটা একটা ভালো ধারনা যদিও)।

          এই সমস্যা একটু ভালোভাবে বুঝতে হাউস অফ কার্ডস সিরিজটা দেখতে পারো। আর ইন ডিটেইল বুঝতে (বই পড়া বাদে) ওয়াইসম্যানের স্টে্ট লেজিস্লেচার ডকুটা দেখতে পারো।

          এক গাদা জার্গন মেরে দিলাম, বাট এইগুলা সব এই খানে ব্যাখ্যা করা কঠিন কাজ। থিওরিটিক্যালি অনেক কিছুই অনেক ভালো মনে হৈলেও ভিতরে ঢুকলে বা প্রয়োগ শুরু করলে বুঝা যায় একেক জায়গায় (কালচারাল, সোশ্যাল আর অর্থনৈতিক পার্থক্যের কারনেই, যদিও মুল সমস্যা রুল অফ ল আর একাউন্টিবিলিটি না থাকাই) একেকরকম সমস্যা।

          জবাব দিন
        • ইফতেখার (৯৫-০১)

          একটা সমস্যা দেখাই, কিছুটা ক্লিয়ার হবে। অনেক স্টে্টেই (আর কংগ্রেসে) এই নিয়ম টা আছে যে যদি একই বিল দুই কক্ষ থেকেই একেবারেই অভিন্ন ভাবে পাশ না হয়, তাহলে সেই বিল ইনভ্যালিডেটেড। একটা বিল ফুল বডি (সিনেট বা হাউস) এর সামনে যাওয়ার আগে অনেক গুলা কমিটি পার হয়ে যায়। প্রতিটা কমিটির চেয়ারম্যানের ক্ষমতা আছে বিলটাকে স্ক্যাজিউলড না করার, মানে বিল হিয়ারিং এই যাবে না। তাহলে সেই বিল পাশ হওয়ার কারনই নাই। তার পর বিলে ছোটো একটা এ্যামেন্ডমেন্ট যোগ করে বিলের মুল বক্তব্য বা লক্ষ্য বদলিয়ে দেয়া যায়। তাহলে এই বিল পাশ হৈলেও দেখা গেলো তার কার্যকরীতা নাই আর তেমন। দ্বিকক্ষের ক্ষেত্রে এইটা এখন ডবল হয়ে গেলো। একটা বিল ইনভ্যালিডেট করতে অল্প একটু 'পলিটিক্স' ই লাগে, পাশ করতে লাগে অনেক। ট্রেইনের মতন চিন্তা করতে পারো; গন্তব্যে পৌছাতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়, সব কিছু ঠিক থাকতে হয় কিন্তু ডিরেইল করতে ঐ শতশত মাইলের মাঝে একটা লিঙ্ক খুলে দিলেই গেলো। দ্বিকক্ষের ক্ষেত্রে ট্রেনলাইনের দুইটা রেইল আলাদা ভাবে কাজ করে বলে কল্পনা করে দেখতে পারো।

          তার পর সাধারনত উচ্চ কক্ষের ভয়েস কিছুটা বেশি, আবার নিম্ম কক্ষে রিপ্রেজেন্টাটিভ বেশি বলে তাদের মাঝে 'পলিটিক্স' টাও বেশি।

          যদিও উপরের কোনোটাই অবশ্যিকভাবেই খারাপ না, মানে খুব বেশি পরিবর্তন ঠেকাতেও এর দরকার কাছে, কিন্তু সেইসাথে এইগুলা কোনো অপরিহার্য পলিসির বাধা হিসেবেও কাজ করে।

          জবাব দিন
          • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

            সত্যি কথা বলতে তাত্বিক ভাবে এই পদ্ধতি কাজ করবে এই চিন্তা করেই ফাউন্ডিং ফাদাররা এভাবে সাজিয়েছিল। ফলে গত প্রায় দুইশ বছর কিন্তু এই দ্বিকক্ষ ব্যবস্থার ফল আমেরিকা ভালই ভোগ করে এসেছে। সমস্যাটা বাধছে গত দুই দশকের রাজনীতিতে। "পার্টিসান পলিটিক্স" সিন্দাবাদের ভূতের মত চেপে বসেছে ওদের ঘাড়ে।


            \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
            অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

            জবাব দিন
      • ইফতেখার (৯৫-০১)

        দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার প্রাতিষ্ঠানিক উদহারন হিসেবে আমেরিকা পারফেক্ট, এইখানে ফেডারেল, স্টেট (একটা বাদে) সবই বাইক্যামেরাল।

        কার্যকরিতা হিসেবে এই উদহারন (আমেরিকা) একেবারেই ভালো না। এইটা থেকে শিক্ষা নেয়া যেতে পারে।

        জবাব দিন
        • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

          তারপরেও ওদের যেটা মন্দের ভাল (অথবা বলবো বেশ ভাল) সেটা হলো, স্বাধীন এবং বেশখানিকটা শক্তিশালী বিচারব্যবস্থা। হয়তো সাম্প্রতিক সময়ে কংগ্রেসের অচলাবস্থায় খুব বেশী কিছু করার নেই কিন্তু রাষ্ট্রের অন্যান্য সার্ভিসগুলো এই বিচারব্যবস্থা বেশ সাফল্যের সাথেই দিয়ে আসছে এবং এর পিছনে কারণ যেটা বলেছিলেন--স্বাধীনতা এবং একই সাথে কাউন্টার ব্যালান্সিং জবাবদিহিতা।


          \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
          অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

          জবাব দিন
    • গুলশান (১৯৯৯-২০০৫)

      প্রথমে প্রতীকবিহীন নির্বাচনের কথা বলি। প্রথমত, প্রতীকসহ নির্বাচন হলে, দল কোন একজন প্রার্থীকে অফিসিয়ালি মনোনয়ন দিতে পারে এবং সবাই সেটা বুঝতেও পারে। এখন দেশের বর্তমান কালচার অনুযায়ী, দল যদি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে যোগসাজশ করা কাউকে মনোনয়ন দেয়, তৃণমূলে রাজনীতি করা অন্যদের সেটা অপছন্দ হলেও করার তেমন কিছু নাই। কারণ সবাই দলের মার্কাতেই ভোট দিবে। অন্যদিকে দলীয় মার্কা না থাকলে, কে দলের অফিসিয়াল মনোনয়ন পেল, সেটা সবার সামনে স্পষ্ট না। আর ভোট ভাগ হওয়ার আশঙ্কায় কেন্দ্রও যে এলাকায় জনপ্রিয় তাকেই সাপোর্ট দিবে। বা অন্ততপক্ষে চুপ থাকবে। এতে দলগুলোর মধ্যে তৃণমূলের হাতে কিছু নেগোশিয়েশানের অবকাশ থাকবে, ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হবে কম। এক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জের মেয়র নির্বাচন দ্রষ্টব্য। আর দ্বিতীয়ত, সব দলেরই গোঁড়া সমর্থক থাকে, যারা প্রতীক খুঁজে হলেও ভোট দিবে। কিন্তু আরও অনেকে ভোট দেন অবস্থা বুঝে। তারা এখন দলের পলিসির কারণে পক্ষে বা বিপক্ষে ভোট দেন। কিন্তু প্রতীকবিহীন নির্বাচন হলে, প্রার্থীর যোগ্যতা এখানে আরও একটু বেশি ভূমিকা পাবে। আর যেহেতু নির্বাচিত প্রার্থী সংসদের কোন দলীয় মার্কার ভোট নিয়ে আসেনি, অটোমেটিক্যালি সেখানে মত প্রকাশেও সে স্বাধীন - দলের অনুগত নয়। এতেও ক্ষমতার ভারসাম্য কিছুটা বাড়বে।

      জবাব দিন
    • গুলশান (১৯৯৯-২০০৫)

      বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন ইত্যাদি ছাড়া এসব ধারণা বাস্তবায়িত হবে না এটা আসলেই সত্য কথা। তবে প্রশাসনে এক/কিছু ব্যক্তির মধ্যে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকলে বিভিন্ন কারণে/কৌশলে এসব বিভাগও সেই কেন্দ্রমুখী হয়ে যেতে পারে।

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মোস্তাফিজ (১৯৮৩-১৯৮৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।