ভিশন চাই

আমি এখানে ভীষণভাবে কিছু চাইছি না। বা ভীষণ কিছুর কথাও বলছি না। আমি যেই ভিশনের কথা বলছি, সেটা হল টেলিভিশন শব্দের ভিশন বা Vision। সাধারণভাবে এই ভিশন মানে দৃষ্টিশক্তি হলেও, আমি বলতে চাচ্ছি অন্য এক ভিশনের কথা।

এই ভিশনকে মোটামুটি তিনটি জিনিসের সমন্বয় বলা যায়। প্রথম হল একটা লক্ষ্য। অবশ্য লক্ষ্য একাধিকও হতে পারে। একটু কাব্যিকভাবে বললে একে স্বপ্নও বলা যেতে পারে। দ্বিতীয় হল, ঐ লক্ষ্য পূরণের জন্য পরিকল্পনা। সেটা একদম পূঙ্খানুপূঙ্খ ডিটেইলও হতে পারে। আবার মোটামুটি একটা অ্যাবস্ট্রাক্ট পরিকল্পনাও হতে পারে। আর শেষটা হল, পরিকল্পনা অনু্যায়ী লক্ষ্য পূরণের প্রচেষ্টা। ইংরেজিতে একে মনে হয় commitment বলা যেতে পারে। এই তিনটি জিনিস একসাথে করে যা হয় তাকেই আমি বলতে চাচ্ছি ভিশন।

যেকোন জিনিসের উন্নতির সাথে এই ভিশনের একটা সম্পর্ক আছে। কোনকিছু এমনিতে চলতে পারে। কোন একটা সিস্টেম শুধু চলার জন্য ভিশন না হলেও হয়। কিন্তু যদি কেউ উন্নতি চায়, সেটা একজন সাধারণ কৃষকের কাজ হতে পারে, একটা চায়ের দোকান হতে পারে, একটা কোম্পানী হতে পারে, একটা দেশও হতে পারে, তখন কিন্তু একটা ভিশন থাকার দরকার হয়। কেউ একা কাজ করলে ভিশনটা শুধু তার মধ্যে থাকলেই চলে। যে অমুক সময়ের মধ্যে হয়ত একটা ট্রাক্টর কেনা হবে, কিংবা দোকানের ঘরটা বড় করতে হবে, ব্যবসা নতুন দিকে নিতে হবে। কিন্তু অনেকে মিলে কাজ করতে গেলে, যেমন একটা বড় কোম্পানী বা একটা দেশ, এই ভিশনটাকে সবার মধ্যেই ছড়িয়ে দেওয়া দরকার। তাহলেই উন্নতি হবে।

আমি মূলত যে কারণে ভিশনের কথা বলছি, সেটা আমাদের দেশের জন্য। দেশ যারা চালাবেন, এমন বড় বড় রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে দেশ নিয়ে একটা ভিশন থাকা দরকার। যেটাকে সামনে রেখে উনারা চলবেন। অন্যদের সামনে যেটাকে উপস্থাপন করবেন। দায়িত্বটা যত বড়, ভিশনের প্রয়োজনও তত বেশি। দুঃখের বিষয় আমাদের বেশির ভাগ নেতাদের সেটা নাই। নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে মানুষ ভাল খাবে এমন একটা ইশতেহার হয়ত অনেকে দেন, যেটার বেশির ভাগ নির্বাচনের রাতেই তারা ভুলে যান। এটাকে ভিশন বলা যায় না। অনেকে নিজের নানা গুণের কথা বলে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। কিন্তু মানুষের সামনে কোন ভিশন তারা রাখতে পারেন বলে মনে হয় না। অবশ্য “ডিজিটাল বাংলাদেশ” ঘরানার কিছু শ্লোগান দিয়ে কেউ কেউ ভাল কিছু কাজও করে ফেলতে পারেন। তবে অধিকাংশের কাছে ব্যাপারটা অস্পষ্ট থেকে যায়। সুতরাং, একেও ঠিক ভিশনের মধ্যে ফেলা যায় না।

আমার কথা হল, নেতারা যখন আমাদের সামনে কোন ভিশন রাখতে পারছেন না, আমরা মানে অন্তত ইন্টারনেটের লোকজন আমাদের পক্ষ থেকে একটা ভিশন তাদের সামনে রাখতে পারি কিনা। ধরুন প্রথমে ব্লগে, ফেসবুকে নানাজনের মত থেকে আমাদের পয়েন্টগুলো জমা করা হল। দরকার হলে গুরুত্ব ঠিক করতে ভোটাভুটিও হল। এরপর মোটামুটি দাড়িঁয়ে গেলে এক একটা কথাকে ঘষে-মেজে স্পষ্ট একটা রূপ দেওয়া হল। এরপর সেটা তাদের কাছে উপস্থাপন করা হল। এতে তাদের সামনে অন্ততঃ আমাদের চিন্তা-ভাবনার, ভিশনের কিছু একটা রূপ তো যাবে।

আপাতত আমার চিন্তাটা ঢাকার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে। আর প্রথম যে পয়েন্টটা মনে আসছে তা হল, ঢাকার পরিকল্পিত বিকেন্দ্রীকরণ। যদিও জানি না এটা সিটি কর্পোরেশনের কাজের মধ্যে পড়ে কিনা। আগে একবার ঢাকা নিয়ে অনুবাদভিত্তিক একটা লেখা লিখেছিলাম। আশা করি সেখান থেকে বিকেন্দ্রীকরণের প্রয়োজনীয়তাটা সবার সামনে একটু হলেও আসবে। আর এনিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়া লোকজন আরও ভাল বলতে পারবেন।

মাথায় একটা আইডিয়া আসল। সবার সাথে শেয়ার করলাম। আমি অতি ক্ষুদ্র মানুষ। এর বেশি হয়ত আমার আর কিছুই করার নেই।

১,০৪৯ বার দেখা হয়েছে

৩ টি মন্তব্য : “ভিশন চাই”

  1. রাশেদ (৯৯-০৫)

    আমাদের কী দরকার আর কী দরকার নেই তা মনে হয় এক অর্থে সবাই জানে। সেই দিক দিয়ে ধরলে ভিশন আমাদের সব সময় আছে তবে সেটা বাস্তবায়ন করা হয় কীনা সঠিক ভাবে সেটাই আসল প্রশ্ন। প্রতি নির্বাচনের সময় কিন্তু এফবিসিসিয়াই সহ বিভিন্ন শক্তিশালী পেশাজীবি সংগঠনগুলো তাদের বিভিন্ন চাহিদা দলগুলোর কাছে তুলে ধরে, তাদের প্রতিনিধিরা দলগুলোর সাথে দেখা করে। দলগুলোও তাদের নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে এইসব বিষয় তুলে আনে কিন্তু নির্বাচন শেষ তার সামান্য অংশ বাস্তবায়ন হয়। তাই আমাদের উচিত দলগুলোর বেশি করে চাপ প্রয়োগ করা যে তারা তাদের নির্বাচনী মেনিফেস্টোর কতটুকু বাস্তবায়ন করেছে তার হিসেব চাওয়া। ভোটের রাজনীতিতে ভোটারের চাওয়া পাওয়ার সব সময় একটা মূল্য আছে। সেই হিসেবে যদি ভোটের আগে ভোটাররা হিসেব নেওয়া শুরু করে আগের দেওয়া প্রতিশ্রুতির কতটুকু তারা পালন করতে পেরেছেন তাহলে তারা হয়ত মেনিফেস্টোতে অংগীকার করার আগে এবং নির্বাচনের পর সেই অংগীকার পালনে আর সর্তক হবেন।

    ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সামনে, প্রচারণার সময় দেখা যাবে অধিকাংশ প্রার্থী ঢাকার বিকেন্দ্রিকরণের পক্ষে কথা বলবে কিন্তু নির্বাচিত হলে সেটা সত্যিকার অর্থে কতটুকু করবে আর কতটুকু করতে পারবে সেটাই দেখার বিষয়। কারণ সিটি কর্পোরেশন একটা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান কিন্তু ঢাকার বিকেন্দ্রিকরণ শুধু স্থানীয় সরকারের ব্যাপার নয় এর সাথে জাতীয় সরকারো জড়িত, সঠিক ভাবে বললে এখানে জাতীয় সরকারের ভূমিকা মূখ্য।

    আর "ডিজিটাল বাংলাদেশ" যদিও এখন দলীয় সরকারের অনেকক্ষেত্রে একটা হাস্যকর স্লোগানে পরিণত হয়েছে তার পরেও আমার মনে হয় এটা অনেকাংশে একটা স্মার্ট পদক্ষেপ। আওয়ামে লীগ এটা বুঝে বা না বুঝে যেভাবেই নিক না কেন এর কারণে এই সেক্টরে কিছু কাজ হচ্ছে। দাতারা এই সেক্টরে আগে অনেক চাপ দিয়েও যে কাজ গুলো করতে পারে নাই এখন সরকার নিজেই সে কাজ গুলোর উদ্যোগ নিচ্ছে। হয়ত সরকার এই ক্ষেত্রে অনেক কিছুই না বুঝে, নিজের সক্ষমতা সঠিক ভাবে নিরুপন না করে কাজ করছে তাও আমি আশাবাদী কারণ উন্নয়নে ট্রায়াল এন্ড এরর একটা বড় চলক।


    মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

    জবাব দিন
    • গুলশান (১৯৯৯-২০০৫)

      কমেন্টের আশা তো ছেড়েই দিয়েছিলাম। পেয়ে ভাল লাগছে।

      ভিশনের মধ্যে আমি যে তিনটি জিনিসের কথা বলেছিলাম, তার শেষেরটা হল- চেষ্টা অব্যাহত রাখা। সোজা কথায় কমিটমেন্ট। জাতীয় বা এমন বড় পর্যায়ের কাজ করতে গেলে একজন বা কয়েকজনের কমিটমেন্টে কাজ হয় না। এই কমিটমেন্ট সাধারণের মাঝেও ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়োজন হয়। কিন্তু এইটা একটা কঠিন কাজ। আর একজন ভাল নেতা এটাই করবেন। আমি এই ব্যাপারটাই চাচ্ছি। যদি কোন নেতা না করেন, আমরা নিজেরাই কি কিছুটা করতে পারি না? স্বপ্ন দেখা সহজ, অন্যদের মাঝে স্বপ্নটা ছড়িয়ে দেয়া কঠিন। এটাই আমাদের করা দরকার মনে করি। জ্ঞানীরা যদি শুধু কিছু প্রস্তাব রাখেন, তাতেই সবার কমিটমেন্ট তৈরি হয়ে যাবে না। এজন্য আরও বেশি কিছু করতে হবে।

      ঢাকা বিকেন্দ্রীকরণ আসলেই শুধু সিটি কর্পোরেশানের কাজ না। আমার নিজেরও লেখার সময় এমনটা মনে হয়েছিল। কিন্তু আমি ঢাকার সব সমস্যার সমাধান এই একটা জিনিসের মধ্যেই দেখি। এই মাথায় শুধু এইটাই ঘুরপাক খায়। লেখায়ও এটাই চলে আসছে। যাই হোক, সিটি কর্পোরেশান নির্বাচনকে সামনে রেখে অন্যান্য কথাও আসতে পারে। আর জাতীয় নির্বাচনের সময় বিকেন্দ্রীকরণের কথা মাথায় রাখা যেতে পারে। তবে স্বপ্ন ছড়িয়ে দেয়া, সাধারণের মাঝে কিছুর কমিটমেন্ট তৈরি করা অনেকদিনের কাজ। একাজে আজকালকার ইন্টারনেট সহযোগী হতে পারে। এটা আমাদের মাথায় রাখা দরকার।

      "ডিজিটাল বাংলাদেশ" একটা অসম্পূর্ণ ভিশনের উদাহরণ। তবে এই অসম্পূর্ণ ভিশনেও অনেক কাজ হয়েছে। ভিশনটা সবার মাঝে, বিশেষ করে দায়িত্বশীলদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া গেলে আরও ভাল কাজ হত। আর এমনটা সব ক্ষেত্রেই দরকার।

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : গুলশান (১৯৯৯-২০০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।