আদর্শের রাজনীতি বনাম স্বার্থের রাজনীতি

না, আমি কোন বিশাল আলোচনা করে প্রবন্ধ লিখতে বসিনি। চলা-ফেরায় কিছু কথা মাথায় আসল, তাই লিখতে বসলাম।

তবে রাজনীতি প্রসঙ্গে যাবার আগে বিজ্ঞাপন সম্বন্ধে কিছু বলে নিই। বিজ্ঞাপন কি জিনিস তা তো আমরা সবাই জানি এবং প্রতিনিয়ত চারপাশে দেখতেও পাচ্ছি। বিজ্ঞাপনের মূল কাজ হল, নির্দিষ্ট কোন পণ্য বা ব্রান্ডকে Promote করা অর্থাৎ সেটা যেন মানুষের মধ্যে চালু হয়ে যায়। যদি বিজ্ঞাপন অনেক সুন্দরও হয় কিন্তু এই ‘চালু করে দেওয়ার’ কাজটি করতে না পারে, তবে বিজ্ঞাপনের আসল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ।

আজকাল রাস্তাঘাটে চলাচল করলে, বিষেশ করে ঢাকার রাস্তায় চলাচলের অভ্যাস থাকলে এমন অনেক বিজ্ঞাপনই আপনি দেখতে পাবেন। আমি নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের কথা বলছি না, কিছু মানুষের কথা বলছি যারা নিজেকেই পণ্য বানিয়েছে। কেউ আবার ভাববেন না যে আমি মডেলদের কথা বলছি। আমি বলছি কিছু পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনের কথা (বিলবোর্ড এখনো চোখে পড়েনি)। এগুলোকে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের বিজ্ঞাপন বলাই ভাল মনে হয়। আর এখান থেকেই মাথায় আসল আদর্শের রাজনীতি আর স্বার্থের রাজনীতির পার্থক্যটা আসলে কেমন।

এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন আমি কাদের কথা বলছি। বিভিন্ন জাতীয় দিবস, ঈদ বা অনুষ্ঠানে এসব পোস্টার বা ব্যানার বা দেয়ার লিখন আপনার চোখে পড়বে। যদি একটু খেয়াল করেন, তাহলেই দেখবেন পুরো লেখাগুলোর মধ্যে বিশেষ একটা অংশ চোখে পড়বে। এবং সেটা ঐ বিশিষ্ট নেতার নাম। পোস্টারগুলোর উপর দিয়ে যদি আলগোছে চোখ বুলিয়ে যান, তাহলে শুধু একটা চেহারা ছাড়া আর কিছুই নজরে আসবে না। আরে বাবা, তুই মুক্তি্যোদ্ধাদের স্বরণই করিস আর জনগণকে ঈদের শুভেচ্ছাই দিস, তোর নিজের নাম আর ছবিকে এইভাবে দেখাতে  হবে কেন? কেন জানেন? ওটাই যে আসল উদ্দেশ্য। বিজ্ঞাপন। নিজের নাম আর চেহারাকে জনসাধারণের মাঝে চালু করা। স্বাধীনতা দিবস বা ঈদ শুধুই উপলক্ষ মাত্র।

আমি এটা দিয়েই আদর্শের আর স্বার্থের রাজনীতির মধ্যে পার্থক্য করতে চাই। আমাদের আজনৈতিক দলগুলো যদি কোন আদর্শকে সামনে রেখে চলত, তাহলে দেয়াল-লিখন, ব্যানার আর পোস্টারগুলো এমন হত না। দলের নেতা-কর্মীরা দলের আদর্শকেই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করত, নিজের নামকে নয়। জনগণকে নিঃস্বার্থভাবেই শুভেচ্ছা জানাত। নিজ চেষ্টায় জনগণকে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করার চেষ্টা করত। এতে সংগঠনের নাম আসলেও আসতে পারে, তবে ব্যক্তির নাম কোনভাবেই নয়। অবশ্য এধরণের প্রচারণা যে একদম দেখতে পাবেন না, তা না। কিন্তু প্রধান দলগুলোর কাছে এসব একেবারেই পাওয়া যায় না। এর মানে কি? এই সংগঠনগুলো নিজেদের নেতা-কর্মীদের সামনে কোন আদর্শ উপস্থাপন করতে পারেনি। যারা এই রাজনীতি করছে, বেশীর ভাগই করছে নিজের আখের গুছিয়ে নেয়ার জন্য। হয়ত কোন কারণে ঐ বিশেষ দলটির প্রতি তার সমর্থন তৈরী হয়েছে। পারিবারিক, আঞ্চলিক বা অন্য কোন কারণে। এজন্য সে ঐ দল করে। কিন্তু এর মধ্যে আদর্শের স্থান নগণ্য। স্বার্থই মুখ্য।

তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে আরও একটি কথা থাকে। এখানে সাধারণ মানুষের শিক্ষা এবং সচেতনতার যে অবস্থা, তাতে একটা আদর্শকে তাদের সামনে উপস্থাপন করাটাও একটা দুরূহ ব্যাপার। এর চেয়ে একজন ব্যক্তিকে উপস্থাপন করা অনেক সোজা। বড় বড় দলগুলো এমন কিছু ব্যক্তির কারণেই জনসমর্থন পেয়েছে। কিন্তু এখন সেই ব্যক্তিদেরও এতভাবে এতবার উপস্থাপন করা হচ্ছে, যে তাদের নামও ক্রমশঃ আমাদের কাছে অনাকাঙ্খিত হয়ে উঠছে।

শুরুতে লিখেছিলাম বিশাল কোন আলোচনা করব না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মনে হয় বেশ বড়ই হয়ে গেল। এজন্য ক্ষমাপ্রার্থী।

২,০৪৭ বার দেখা হয়েছে

৯ টি মন্তব্য : “আদর্শের রাজনীতি বনাম স্বার্থের রাজনীতি”

  1. রুম্মান (১৯৯৩-৯৯)

    এই ব্যাপারে আমারো একটা


    আমার কি সমস্ত কিছুই হলো ভুল
    ভুল কথা, ভুল সম্মোধন
    ভুল পথ, ভুল বাড়ি, ভুল ঘোরাফেরা
    সারাটা জীবন ভুল চিঠি লেখা হলো শুধু,
    ভুল দরজায় হলো ব্যর্থ করাঘাত
    আমার কেবল হলো সমস্ত জীবন শুধু ভুল বই পড়া ।

    জবাব দিন
  2. রুম্মান (১৯৯৩-৯৯)

    এই ব্যাপারে আমার ও একটা প্রশ্ন আছে । আমাদের আওইয়ামী লীগ,বি এন পি এর এউ এস এ,এউ কে কিঞবা সিঞগাপুরে শাখা আছে। এদের কাজ/থাকার যৌক্তিকতা কিংবা নিয়ম কি ? আমাদের দেশে তো তঁনমূল বা কঞগ্রেস এর ও কোন শাখা নাই


    আমার কি সমস্ত কিছুই হলো ভুল
    ভুল কথা, ভুল সম্মোধন
    ভুল পথ, ভুল বাড়ি, ভুল ঘোরাফেরা
    সারাটা জীবন ভুল চিঠি লেখা হলো শুধু,
    ভুল দরজায় হলো ব্যর্থ করাঘাত
    আমার কেবল হলো সমস্ত জীবন শুধু ভুল বই পড়া ।

    জবাব দিন
  3. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    কত সমীকরণ কাজ করে এসব ক্ষেত্রে!
    নিজেকে জাহির করা, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে নিজেকে প্রয়োজনীয় করে তোলা, পরের বারের নমিনেশন পাওয়া -- এগুলাই তো আসল। ভোটে দাঁড়াতে না পারলে জিতবে কি করে? না জিতলে 'সেবা' করবে ক্যামনে? সব কিছুর শুরু অই ব্যানার থেকে। ব্যানারের টাকা কেমনে জোগাড় হয় সেটা আরেক কাহিনী।
    একটু সিরিয়াসলি: এটাই যদি আজকের রাজনীতির কালচার হয় তাহলে সৎ (সংখ্যায় যাঁরা নেহাতই লঘু) রাজনৈতক ব্যক্তিদেরো তো এসবই করতে হবে, কোন উপায় নাই। ভালো মানুষেরা বেশি সংখ্যায় রাজনীতিতে এলেই পরিবর্তন সম্ভব।

    জবাব দিন
    • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

      এতকিছু করেও কোন লাভ হয়না-রাস্তাঘাটে মার খেয়ে,মিটিং মিছিলে দৌড়াদৌড়ি করে পরিশ্রমী কর্মীটির সর্বোচ্চ পদ হয় জেলার আহবায়ক আর আজীবন বিদেশে পড়াশোনা করে দেশের রাজনীতির র ও না জানা এম্পি/মন্ত্রীপুত্রটি হয় বাপের জায়গায় নমিনেশন পাওয়া পরবর্তী মন্ত্রী/এম্পি।আমরা সাধারণ মানুষেরা আরো বেশি দায়ী,নাক টিপলে দুধ বের হয় এরকম বিদেশফেরত মন্ত্রী/এম্পিপুত্রের পদধূলি নিতে লম্বা লাইন দেই।সানা ভাইয়ের একটা লেখায় পড়েছিলাম জনৈক স্বনামধন্যা খালার আন্ডারগ্র্যাজুয়েট আমেরিকাফেরত কন্যার কাছ থেকে আমেরিকান নির্বাচনের বয়ান নিতে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের বাঘা বাঘা প্রফেসরেরা উপস্থিত হয়েছিলেন।

      দেশের রাজনীতিবিদদের আমি একবিন্দু দোষ দেইনা।আমরা নিজেরা যেরকম,আমাদের নেতারাও ঠিক তারই প্রতিচ্ছবি।সামান্যতম অসুবিধায় নিজের দেশকে মা-বাপ তুলে গালি দেই,দেশের সেরা জায়গা থেকে পাস করে সরকারী চাকুরিতে ঢুকি কিভাবে নিজের আখের গোছানো যায় সেই ধান্ধা নিয়ে,এক পয়সা ফাঁকি দেবার সুযোগ থাকলে সেটুকুও দিতে কার্পন্য করিনা-আর এই আমরাই মহামানব টাইপের নেতা আশা করি।

      আনটিল উই চেঞ্জ আওয়ারসেলভস,ইট সার্ভস আস পারফেক্টলি রাইট দ্যাট উই গেট সাচ লিডারস এ্যাজ ওয়েল এ্যাজ পলিটিকাল সিস্টেম।

      জবাব দিন
  4. গুলশান (১৯৯৯-২০০৫)

    শুধু নেগেটিভ চিন্তা করে কোন লাভ নেই। এতে শুধু হতাশাই বাড়বে। যদিও আমার এই পোস্টটাও মূলতা একটা নেগেটিভ পোস্টই ছিল। এখন দেখতে হবে আমরা কি করতে পারি। আমরা কিন্তু সংখ্যায় নেহায়েত কম না। আমরা যদি আমাদের কাজটুকু করি, তাহলেও অনেক কিছু হতে পারে। অনেক কিছু। আমরা কি এগিয়ে আসতে পারিনা? এই দেশটার জন্য। এই দেশের মানুষগুলোর জন্য...

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : কিবরিয়া (২০০৩-২০০৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।