উত্তরকুরু

আর মালয়েশিয়া নয়- আসুন ঘুরে আসি উত্তরাপথে…

মধ্যযুগীয় ঘরবাড়িগুলোর পাথুরে দেয়াল আর গীর্জার চূড়োয় আছড়ে পড়ছে বিষন্ন একটা সুর। হেমন্ত শেষের ঝরা পাতা নেচে যায় উত্তর সাগরের হিমেল দোলায়। কালো পাথরে বাঁধানো পথ- তার উপরে ভারী পোষাকে ত্রস্ত ব্যাস্ত পথচারীর দল। মৃত কচ্ছপের খোলের মত বিবর্ণ আকাশ। বেলা দুপুর না বিকেল, নাকি সন্ধ্যে- বোঝা যায় না।
ট্রন্ডহাইম শহরের কথা বলছি। ইয়োরোপের উত্তর পাশ্চিম প্রান্তে স্কান্দিনেভিয় উপদ্বীপ। তারই কোল জুড়ে আজকের নরওয়ে। পুবে সুইডেন ও রাশিয়া, দক্ষিনে ডেনমার্ক। পশ্চিমে সমুদ্র, যেখানে একসময় রাজত্ব করতো এদের পুর্বপুরুষ ভাইকিং জলদস্যুরা। শহরের একেবারে মাঝখানে উঁচু এক স্তম্ভ। তার উপর রাজা ওলাফ ট্রিগভাসনের ব্রোঞ্জ মূর্তি, এক হাতে ক্রুশ, অন্য হাতে উদ্যত কৃপাণ। অপলক চেয়ে আছেন সমুদ্রের দিকে, যেন বিজয়ী নৌবহরের ফেরার অপেক্ষায়। ইনিই প্রথম দূরন্ত ভাইকিংদের শক্ত হাতে শাসন করে এক রাজত্বের অধীনে এনেছিলেন। খৃষ্ট ধর্মের প্রচারও হয় এরই সময়ে।
রাজস্তম্ভের বেদীতে দাঁড়িয়ে আমিও সাগরপানে তাকাই। হ্যাঁ, জলদস্যুদের আস্তানা হবার মত জায়গাই বটে। দেশে বেজায় শীত, চাষবাসের সু্যোগ সামান্যই। এই শক্তিমান মানুষগুলো খাবে কি। রূক্ষ পাথুরে উপকূল থেকে কিছু দূরে প্রায় সমান্তরাল মালার মত পাহাড়ের সারি। মাঝখানের জলভাগকে উপসাগর বা হ্রদ বলা যাবে না। একে বলা হয় ফিয়র্ড। যথেষ্ট গভীর, অনায়সে জাহাজ ভাসানো যায়। গত বরফ যুগের শেষে নাকি এগুলোর সৃষ্টি। সংকীর্ন জলপথে কোথাও কোথাও খোলা সমুদ্রের সাথে ভেতরের যোগ রক্ষা হয়েছে, অনেকটা খাইবার পাসের মত। এখানে আসতে চাইলে ওই পাহাড়ের ঘেরাটোপ পার হতে হবে। এলাকার অন্ধি সন্ধি খুব ভালো না জানলে কাজটা খুবই কঠিন, তার উপরে আবার ঘন কুয়াশায় চেনা পথও হারিয়ে যায়। ভাইকিংরা তাদের অভিযান সেরে চেনা পথে ফিরে আসে নিরাপদ ঘাটিতে। ওদের ধাওয়া করে, তা আদৌ কেউ যদি সে সাহস করে থাকে, মূল ঘাঁটি অবধি আসা নেহায়েত অসম্ভব ব্যাপার।
রাজা ট্রিগভাসনের রাজধানী ছিল এই ট্রন্ডহাইমেই। সেই রাজধানীর একটা মডেল স্থানীয় যাদুঘরে আছে। একতলা কাঠের তৈরী কিছু কুঁড়েঘর। একেবারেই ছোট, ভেতরে একজন মানুষ সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে কিনা সন্দেহ। পথঘাট বলতে সরু আলিগলি। সেযুগে ভীষন ঘিঞ্জি আর নোংরা ছিল বোঝা যায়। আজকের নরওয়ের সাথে কি নিদারুন পার্থক্য।
(ক্রমশঃ)

১,৩৫০ বার দেখা হয়েছে

৮ টি মন্তব্য : “উত্তরকুরু”

  1. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    মাহবুব ভাই,
    খুব ইচ্ছে আছে কলেজের বেশ কয়েকজন বন্ধু মিলে একবার লম্বা ইউরোপ ট্যুর দেবার- দক্ষিণ থেকে একেবারে উত্তরের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত! কবে যে সামর্থ্য হবে?? 🙁

    লেখাটা পড়তে খুব ভাল লাগছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন শেষ হয়ে গেল! পরের কিস্তিটা আরেকটু বড় করে দেবার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।
    ভাল থাকবেন। 😀


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  2. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    গতরাতে যখন লিখাটা এসেছে দেখলাম, তখন আমি ক্লাবে।
    ভাবলাম, সময় নিয়ে আয়েস করে পড়বো।
    সকালে যখন আয়েস করে পড়বার ফুরসৎ পেলাম, সুরু করতে না করতেই শেষ?
    সেকি????


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  3. মাহবুব (৭৮-৮৪)

    লেখাটা আসলেই একটু ছোট হয়ে গেছে, পাঠক ক্ষমা করবেন। পড়ে মন্তব্য করার জন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ। পুরো কাহিনিটা লিখতে একটু সময় লাগবে। শেষ না করে তড়িঘড়ি কটা প্যারা পোষ্ট করা ঠিক হয়নি।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।