হারানো বন্ধুরা

মুনির

সে হাসতে জানতো। অমন প্রান ফাটানো হাসি সবাই পারে না। বিষেশ আমি ছেলেবেলা থেকেই ব্যজারমুখো। তাই ওকে কিছুটা হিংসাই হতো। নিতান্ত সহজ সরল ভালোমানুষ বন্ধুটি আমাদের, কলেজের সীমানা পেরোবার আগেই তার মা কে হারিয়েছিল। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্ব ও পেশাদারী জীবন, ঘরকন্না সংসার ইত্যদির ঘুর্নিপাকে আমরা অনেকেই ছিটকে গেছি। সবার সাথে আগের মতন যোগাযোগ নেই। মাঝে মধ্যে ওর খবর পাই। মেলাতে পারি না। ওর তো আর্থিক টানাপোড়েন থাকবার কথা নয়। সংসারও পেতেছে ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে, আছে ভালোবাসার ফসল একটি কন্যা। তবে? লাশকাটা ঘরের সেই চরিত্র কি, যার ‘মরিবার হল সাধ…’! সবার কাছ থেকে একরকম বিচ্ছিন্ন, স্বেচ্ছা নির্বাসনে, পরিবার থেকে দূরে প্রায় বনবাস। হতাশায় আচ্ছন্ন বেদনার জীবন। এই আত্মবিনাশী পথে কখন কিভাবে তার যাত্রা তা হয়তো আর কোনদিনই জানা যাবে না। হয়তো অনেক মানুষের ভিতরেই সম্পূর্ন বিপরীত দুটি ভাব খেলা করে। একটি বেঁচে থাকার প্রবল আকুতি- জীবন তৃষ্ণা। অপরটি আত্মবিনাশী, জেনে বুঝেও মানুষ এমন করে যা আসলে ক্ষতিকর। বসন্তের এই দিন- আলোয় ভরা চারদিক, এমন দিনে কারো চলে যাওয়া মানতে বড় কষ্ট হয়। মার্চের ৮, ভোরবেলা, কাউকে কিছু টের পেতে না দিয়ে, সে চলে গেল! আমরা যখন সংবাদ পেলাম ততক্ষনে অনেক দেরী হয়ে গেছে, সে তখন ঢাকা থেকে অনেক দূরে, আপন ঠিকানা সীমান্ত শহর চুয়াডাঙ্গার পথে, শেষ বিশ্রামের জন্য। শেষ দেখা বলে একটা রীতি আছে, সেটাও আমরা পেলাম না। হয়তো ভালোই হলো, ওর অসুস্থ ক্লান্ত বেদনাদীর্ন রূপটি দেখা হল না, চীরস্থায়ী হয়ে রইল ওর প্রানখোলা হাসিমুখ।

 

শহীদুল

ঠিক পরের দিন ৯ই মার্চ, কয়েক বছর আগে, আমাদের আকাশচারী বন্ধু, আকাশের মতই ছিল যার মনটা, এক দূর্ঘটনায় চলে যায়। মার্চ মাস, বসন্তের এই সময়, যখন সারা প্রকৃতি হাসছে, আমাদের জন্য নিয়ে এসেছে পরম শোকের দুটি দিন। শেষ বিশ্রামের স্থানটিতে গিয়েছিলাম, সেখানে ওর বাবা মা বোন ও আরো দুএক জন আত্মীয়ের সাথে ঘটনাক্রমেই দেখা হয়ে যায়। সবাই মিলে ওর জন্য প্রার্থনা করি। ঠিক তখনি দেখি, সন্তান হারা সেই মা পরম মমতায় কবরের মাটি স্পর্শ করছেন। এই মা একদিন তাঁর নবজাত শিশুকে ওই হাত দিয়েই- হয়তো ঠিক এমনি ভাবে স্পর্শ করেছিলেন। ভারী চশমার পেছনে বাবার বিহবল দৃষ্টি ঘোলাটে হয়ে আসে। বোনের চোখ ছাপিয়ে বন্যা। আমি আর সেখানে দাঁড়াই না। মনে মনে বলি, বন্ধু তুমি যেখানেই আছ ভালো থেকো।

১,০৮৮ বার দেখা হয়েছে

৫ টি মন্তব্য : “হারানো বন্ধুরা”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    মন্তব্য করার ভাষা নেই, শুধু শ্রদ্ধা জানিয়ে গেলাম।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : পারভেজ (৭৮-৮৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।