ভি.সি.আর-এ হিন্দি ছবি চলছে, বিধিমত নাচ-গান, মারপিট ও প্রেমের বন্যা। বাজে প্রিন্ট, তবুও সবাই বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখছে। এই মূহুর্তে একটি বিশেষ দৃশ্য- নির্যাতিত নায়িকা রুখে উঠেছে, এবং প্রেমের শক্তি নিয়ে দীর্ঘ ডায়লগ বলছে। আবহ সংগীতে ভারতীয় ছবির চিরন্তন বিদ্রোহ বাদন- রফিকের কানে “চিড় বিড় চিড় বিড় ঘট্টাং…চিড় বিড় চিড় বিড় ঘট্টাং…”- এরকমই শোনায়। চোখমুখ কুঁচকে হাই তুলে চারদিকে জরিপ করে সে- কারো সাথে যদি দু-একটা কথা বলা যেতো! হতাশ হয়- এবং সবার ভাবভঙ্গি দেখে চকিতে একটা উপমা পেয়ে যায়। রাতে ছুটে চলা গাড়ীর আলোয় খরগোশেরা যেমন থমকে দাঁড়ায়- চাপা পড়ে মরার আগ পর্যন্ত সম্মোহিতের মত অপলক চেয়ে থাকে ঘাতক আলোর দিকে। নিরাশ হয়ে আবারো জরিপ- পড়ার কিছু পেলে হয়। কিছু ছাপানো জিনিষ পাওয়া গেলো। দোকানের সর্বশেষ মূল্য হ্রাসের ফিরিস্তি, আত্ম-উন্নয়ন মূলক একটা চটি বই- যেটি পড়লে চাকরি পাবার মোক্ষম মন্ত্রটি শেখা যাবে, কোলস্টেরল কমানোর সহজ উপায়, বিবাহ ভঙ্গ রোধের ১০টি উপায়, সর্বরোগ নাশক খাদ্যভ্যাস- ইত্তাদি বিষয়ক বই ঘরে ঘরে তাকে তাকে শোভা পায় এই চির আনিশ্চয়তার দেশে- ঠিক যেমন গরিব দেশের বন্যা খরা দূর্ভিক্ষ দাঙ্গার হুমকিতে সদা ভীত মানুষ বহুবিধ দোয়া তাবিজ ও আমলের পুথি-পত্র আকঁড়ে থাকে। উন্নতির দুই মেরুতে থাকা মানুষদের মধ্যে এই গভীর আন্তঃমিল তার চেতনায় জোরে নাড়া দেয়। ডুবন্ত মানুষ খড়কুটো আঁকড়ে ধরে। রফিক ধরল টেলিফোন বই। চার খন্ডের বিরাট ব্যাপার- একটা তুলে পাতা উল্টায় সে। রাশি রাশি নাম ও ঠিকানার মাঝে পরিচিত কিছু একটা খোঁজে, এবং কৃত্তিম বিস্ময়বোধের ভিতরে আশ্রয় নিতে চায়। এতো মানুষ এই শহরে! কই- পথে ঘাটে তো এতো মানুষ দেখি না! হাটে মাঠে বাজারে কোথাও না। তবে এরা কারা? কোথায় থাকে…ভাবতে ভাবতে কখন সে পৌছে গেছে তার নিজ মহল্লায়।
অনুব্লগগুলির দারুন এক ক্ষমতা হল, হঠাৎ ফুরিয়ে গেলেও দীর্ঘ্যক্ষন ভাবায় - কি পড়লাম।
এই লিখাটা খুব সফলভাবে সেই দায়িত্ব পালন করলো।
কিছুক্ষনের জন্য আমিও "রফিক" হয়ে গেলাম......... (সম্পাদিত)
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
দারুন :hatsoff:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
ভাল লেগেছে
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ